বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
আমার লেখার ঘরের ঠি ক উল্টো দিকে মানে জানলার কাছে দাঁড়ালে দেখা যায় গাছভরা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাঞ্চন গাছ। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানলার কাছে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলি ' ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল'। সেই কবে পড়েছিলাম আজও মনে গেঁথে আছে। ফুলের ভারে নুইয়ে পড়া গাছে হরেক রকম পাখির আনাগোনা। গাছের নিচে একটা বড় পাত্রে কে যেন প্রতিদিন জল ভরে রেখে যায়। সব পাখিরা সে খবর রাখে। বড় ছোট সব পাখিরা একে একে এসে জল খেয়ে যায়, স্নান করে, গাছের ডালে বসে রোদের ওম গায়ে জড়িয়ে কলকাকলিতে মুখর করে তোলে। কত রকম পাখি যে আসে চিনতে পারি না। কুচকুচে কালো ছোট্ট চেহারার পাখি ধারালো ঠোঁটকে গাছের ডালে ঘষে যেন আরো ধারালো করতে চায়। হলুদ কালো মিলেমিশে একাকার শরীরটা নিয়ে ছটফটে পাখিটা এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে না। এ ডাল থেকে ও ডালে ফুরুৎ করে উড়ে যায়। প্রতি বছর কাক বাসা বাঁধে এই গাছে। তাই কোকিলের আনাগোনা লেগেই থাকে। গাছের নিচে দাঁড়ালে কাক এসে ঠোকর দেয়। জানলা দিয়ে পাখিদের ( কাক ) সন্তানস্নেহ উপভোগ করি। ওদের দেখে আমি একটা অন্যরকম সুখ খুঁজে পাই।
কাঞ্চন গাছের অল্প কিছু দূরেই কাঠগোলাপ গাছ। আমি কিছুদিন আগেও প্রতি সন্ধ্যায় গাছতলা থেকে দু হাত ভরে সুগন্ধি কাঠগোলাপ কুড়িয়ে আনতাম। তারপর দুর্গা পুজোর আগে গাছের ডাল অনাদরে ছেঁটে দেওয়া হল। আর ফুল ফোটে না। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অভিমান ভেঙ্গে আবার অল্প অল্প করে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। প্রকৃতির এই যে রূপ বদল এ সবই আমার কাছে ভালোবাসা। বরাবরই আমি প্রকৃতিপ্রেমিক । প্রকৃতির কোন ভণিতা নেই, নেই দেখনদারি। যে গাছে কদিন আগেও পাতার আড়াল ছিল,আজ পাতা ঝরার দিনে নিঃস্ব হয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। আবার অমলতাসের কুঁড়ি জানান দিচ্ছে কদিন পরেই গাছে গাছে দুলবে অমলতাস। গাছভরা ফুল রং ছড়িয়ে যে মুগ্ধতায় ভাসিয়ে রাখে তাকে আমার একমুঠো সোহাগ বলে মনে হয়। সে মুগ্ধতা সে সোহাগ জমিয়ে রাখি নিজের কাছে। এরা হল গাছের পাতার ফাঁকে রোদের ঝিলিকের মতো । এ আবেগ এ অনুভূতি ফুরিয়ে গেলে জীবন শূন্য বারান্দায় গড়াগড়ি খায়। তাই ত প্রকৃতির রূপকথা আমার কাছে একমুঠো ভালবাসা.....
Comments
Post a Comment