নিবন্ধ - রণজিৎ কুমার মিত্র

কথা বাগিচা


১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে রামকুমার বিদ্যারত্ন লিখেছিলেন  "কুলি কাহিনী", দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীও সেই সময় আসাম উত্তরবঙ্গের চা - কুলি আন্দোলন নিয়ে লেখেন,  দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের "চা-কর-দর্পন"  নামে একটি নাটকেরও সন্ধান পাওয়া যায়। এঁদের লেখায় বেশিরভাগ জায়গা নিয়েছিল চা- শ্রমিকদের প্রতি ভয়ঙ্কর অত্যাচার ও শোষণের কথা। ১৯৩৭ এ মুলুকরাজ আনন্দের "দুটি পাতা একটি কুড়ি" ছিল আসামের চা বাগানের প্রেক্ষাপটে ইংরেজ ম্যানেজারের চা- কুলি দমন ও তাদের সুন্দরী বধূ ও কন্যা ধর্ষণের রোমাঞ্চকর আখ্যান। এই ধারা বাংলা উপন্যাস, যাত্রা, থিয়েটার,  সিনেমায় বহুদিন সুপারহিট ছিল। এরইমধ্যে বাঙালি জীবনে টি-পার্টি ঢুকে গেলো। শান্তিনিকেতনে আদি চা - চক্র, "সুসীম চা চক্র" যা রবীন্দ্রনাথ তাঁর চীনা বন্ধু সা-সুমোর নামানুসারে করেন। একটি গানও লেখেন "চা স্পৃহ চঞ্চল/ চাতক দল, চল-চল হে"। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র আরো অনেকের উপন্যাসে চায়ের বাটি, কাপ, পেয়ালা, পিরিচ এর প্রসঙ্গ এলো। এই সেইদিন পর্যন্তও গয়েরকাটা চা বাগানের সমরেশ মজুমদারের "ট্রিলজি উত্তরাধিকার - কালবেলা - কালপুরুষে" পশ্চিমবঙ্গবাসী মজে ছিলো। কিন্তু "কুলি কাহিনী"  অপঠিতই থেকে গেলো। আমার ঠাকুরদা কমলা চা বাগানের,  জেঠামশাই চৈবাড়ির, পিসেমশাই ভান্ডিগুড়ির, মেসোমশাই নেপু ছাপুর, ভগ্নিপতি কাঁঠালগুড়ির। এই সব বাগানের আত্মীয় পরিজনদের  বাগানবিলাসের গল্প একসময়ে বাগানবিলাপ হয়ে গেলো। জয়চন্দ্র সান্যাল, গোপাল ঘোষ, রহিম বক্স, তারিণী রায়দের চায়ের শহর জলপাইগুড়ি এখন ইতিহাসের পাতায়। বাঙালির চা বাগানগুলো একে একে  হাতছাড়া হলো। ক্লোজার, লক-আউট, হেড অফিস উধাও, অর্ধাহার, অনাহার, মৃত্যুতে  বাবু লাইন, কুলি লাইনের সব রোমান্স ভেসে  গেলো।  কিন্তু আজো লেখা হলো না চা বাগানের সঠিক কোনো গদ্য উপাখ্যান।

চিত্র - শ্রীহরি

Comments