গল্প - সুদীপ কুমার বোস



বাস্তব


গতকাল থেকে অনিন্দিতা শুভ্রার কোন খবর পাচ্ছে না। অনেক বার মোবাইলে চেষ্টা করেছে কিন্তু কয়েক বার রিং হবার পর এখন সুইচ অফ বলছে। 


অনিন্দিতার বাড়ি থেকে শুভ্রার বাড়ির দূরত্ব অনেকটা। বাস থেকে নেমে টোটো বা রিক্সায় যেতে প্রায় ঘন্টাখানেক লেগে যায়। তাই তো ঘরের কাজকর্ম ছেড়ে সবসময় যাওয়া সম্ভব হয়না। তাই মোবাইলই ভরসা। 


শুভ্রার মেয়ে জামাই দুজনেই বিদেশে থাকে। অনেক চেষ্টা করেও শুভ্রাকে নিয়ে যেতে পারেনি। ও অনেক কাকতি মিনতি সত্বেও স্বামীর ভিটে ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি। টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। স্বামী ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন। অবসরের এক বছরের মধ্যেই মারা যান। শুভ্রা নিজেও স্কুলে চাকরি করত। গত বছর সেচ্ছাবসর নিয়েছে। টাকা পয়সার কোন অভাব নেই। ব্যা়ংকের লকারে সোনা দানাও প্রচুর। একজন কাজের লোক আছে, মালতি। সেই ঘর পরিস্কার করা, বাসন মাজার মতো কাজগুলো করে। রান্না বাজার এগুলো শুভ্রা নিজেই করে। এই মালতির ফোন পেয়েই অনিন্দিতা ছুটে এসেছে।ঘর খোলাই ছিল। মালতি ওর আসার অপেক্ষাতেই বসে ছিল।


মালতির মুখ থেকে যা শুনল তা এই রকম, গতকাল রাত থেকে শুভ্রা কিছুই খায়নি।সকাল বেলা অনেক ডাকাডাকির পর দরজা খুলে দেয়। চোখ মুখ ফোলা। সারারাত বোধহয় কান্নাকাটি করেছে। অনেক চেষ্টা করেও মালতি শুভ্রার কাছ থেকে কিছুই জানতে পারেনি, একা একা ছেড়ে যেতেও সাহস পাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই অনিন্দিতাকে ফোন করেছে। অনিন্দিতা আসার পরে মালতী চলে গেল। 


শুভ্রার ঘরে ঢুকে দেখে ও বালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছে। আলতো করে ওর পিঠে হাত ছোঁয়াতেই বালিশ থেকে মুখ তুলে তাকায়। অনিন্দিতাকে দেখতে পেয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কান্না শুরু করে দেয়। অনেকক্ষণ কান্নার পর যখন একটু শান্ত হোলো তখন শুভ্রার কাছে এত কান্নাকাটি করছে কেন জানতে চাইল। একটু ধাতস্থ হয়ে কান্নার কারন বলা শুরু করল। 


শুভ্রা গতকাল দুপুরে স্নান খাওয়া করে বাজার করার জন্য বের হয়। দুপুর বেলা বের হবার কারন এই সময় রাস্তা,দোকান,বাজার একটু ফাঁকা থাকে। টোটোতেই যাতায়াত করে। সেদিনও টোটোতেই বাজারে যাচ্ছিল। যাত্রী ও একাই ছিল। বাইকে বসা দুটো ছেলে অনেকক্ষণ থেকেই টোটোর পিছন পিছন আসছিল। কখনও এগিয়ে যাচ্ছিল। সামনে গিয়ে দাড়িয়ে পরছিল। এভাবেই চলছিল। ও ব্যাপারটাকে অতটা গুরুত্ব দেয়নি। কিছুটা এগিয়ে কালি মন্দিরের সামনে টোটো চালক টোটো থামিয়ে বিড়ি কিনতে যায়। এই সুযোগে মোটর সাইকেলে বসা ছেলে দুটো টোটোর পাশে এসে দাঁড়িয়ে পরে। পেছনে বসা ছেলেটি শুভ্রার গলার সোনার চেন ধরে টান দেয়। ও টের পেয়ে ছেলেটির হাত ধরে ফেলে চোর চোর কোরে চিৎকার করে ওঠে। এরমধ্যেই টোটো চালকও ফিরে এসে চোর চোর বলে চিৎকার করতে শুরু করে দেয়। তাড়াহুড়াতে পেছনের ছেলেটা বাইক থেকে পড়ে যায়। ইতিমধ্যেই আশেপাশের দোকানদার ও পথচলতি মানুষরা ওই দুজনকে ধরে ফেলে। তারপর শুরু হয় মার। কি বিভৎস সেই দৃশ্য। মূহুর্তের মধ্যে মারের চোটে ছেলেদুটোর মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়তে শুরু করল। তবুও মার দেওয়া থামল না। ছেলেদুটো যখন মার খেয়ে নেতিয়ে পড়ল তখন পাথর দিয়ে মাথা দুটো থেতলে দিল। উফ কি বিভৎস দৃশ্য। চোখ বন্ধ করলেই সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মনে হচ্ছে ছেলে দুটোর মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ি। আমার লকার ভর্তি সোনা, ব্যাংক ভর্তি টাকা ওই দুটো ছেলের জীবনের থেকেও কি মূল্যবান? বলেই অনিন্দিতার গলা জড়িয়ে ধরে শুভ্রা আবার হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে।

Comments

  1. সুব্রত ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি lApril 27, 2024 at 11:31 PM

    একটু অন্য রকম চিন্তা নিয়ে লেখা l ভালো লাগলো l

    ReplyDelete

Post a Comment