গল্প - অদিতি চট্টোপাধ্যায়

 


অপেক্ষা 


মৌমিতার বিয়ে ঠিক হয়েছে সামনের মাঘে | পাত্র কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার | ব্যাঙ্গালুরুতে পোস্টিং | সম্মন্ধ করে দেখা শোনা করে বিয়ে ঠিক হয়েছে | বিয়ের পর থেকেই সেই যে কথা শুরু হয়েছে আর যেন থামতেই চায় না | দেখা সাক্ষাৎ কম হলেও একে অপরকে যেন চোখে হারায় | পাত্র অভিরূপও প্রথম প্রথম একটু লাজুক থাকলেও মৌমিতার সঙ্গে কথা হতে হতে তার সমস্ত জড়তা কেটে যায় | মাঝে মাঝে ছুটিতে বোলপুরের বাড়িতে যখন আসে অভিরূপ তখন মৌমিতার সঙ্গে তার দেখা হয় | কখনো মৌমিতা রানাঘাট থেকে যায় তো কখনো বা আবার অভিরূপ বোলপুর থেকে যায় |


ছ' মাস হল মৌমিতা আর অভিরূপের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে | আর এরপর থেকেই ওরা একে অপরকে বন্ধনের আবদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছে | রিনা মাসি অর্থাৎ মৌমিতার সেজো মাসিই মৌমিতার জন্য সম্বন্ধ টা এনেছিল | অভিরূপ বাবা-মায়ের একটাই ছেলে | ভালো চাকরি করে, দেখতে শুনতেও খাসা | মৌমিতাও মাস্টার ডিগ্রি করে একটা বেসরকারী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ায় | সুতরাং দেখতে এসেই একবারে দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেল | মৌমিতা কে লাল শাড়িতে দেখেই পছন্দ হয়ে গেল অভিরূপের বাবা-মায়ের | অভিরূপও সেদিন আর চোখে ভালোই তাকাচ্ছিল মৌমিতার দিকে | আসলে ছোট থেকেই মেধাবী অভিরূপ নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ার দরুন হোস্টেলে মানুষ | বিটেকের পর এমটেক করেই ব্যাঙ্গালুরুতে চাকরি | দুজনেই অধীর আগ্রহে বিয়ের দিন গুনতে থাকে | কবে যে চারি চক্ষুর মিলন হবে তা তারা মনে মনে স্বপ্নের মায়াজ্বাল বুনতে শুরু করে | 


অবশেষে এল সেই মাহেদ্রক্ষণ | লাল বেনারসি আর হালকা কারুকার্যে ভরা গয়না, ফুলের সাজে আজ মৌমিতাকেও অপরূপ সুন্দরী লাগছে | অভিরূপকেও ধুতি পাঞ্জাবিতে অনবদ্য লাগছে | পান পাতা সরিয়ে শুভদৃষ্টির মুহূর্তে একে অপরের দিকে যেন চোখই ফেরাতে পারছে না | আচমকা বা দিকের বুকে হাত দিয়ে অভিরূপ মাথা ঘুরে পড়ে  গেল | যে যেখানে আছে অভিরূপের কাছে ছুটে এল | মুহূর্তের মধ্যেই বিয়ে বাড়ির আনন্দ ঘন পরিবেশ বিষাদে পরিণত হল | এই ডাক ডাক আম্বুলেন্স ডাক | অভিরূপকে নিয়ে যাওয়া হল নিকটবর্তী নার্সিংহোমে | অপরদিকে মৌমিতার যেন নড়নও নেই চরণও নেই | কপালে কলকা আঁকা রয়েছে তার | গলায় বরমাল্য পড়ে বধূবেশে এখানেই অপেক্ষা করবে সে যতক্ষণ না অভিরূপ ফিরে আসে !

Comments