গল্প - সুদীপ কুমার বোস



শহীদ


রাঙামাটি সবাই বলে, আসল নামটি সেন্ট্রাল ডুয়ার্স টী এস্টেট। কালচিনির জনপদ ছাড়িয়ে রেলগেট পেরিয়ে ডানে বামে চা বাগানের সবুজের গালিচা ছাড়িয়ে উত্তরের ভুটান পাহাড়ের কোলে পানা আর বাসরা নদীর মাঝে ডুয়ার্সের আরও এক রাজকন্যা রাঙামাটি। শীতকালে শুকনো পানা বা বাসরা নদী দেখে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না যে বর্ষাকালে পানা বা বাসরা নদীর কি ভয়ংকর চেহারা হয়ে যায়। বর্ষা আসতেই পাহাড় থেকে জল নেমে দুকুল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মানুষের কি দুর্ভোগ তখন। দৈনন্দিন প্রয়োজনের জিনিস যোগার করতে খরস্রোতা নদীর বুক জল পেরিয়ে কালচিনি বা জঁয়গা যেতে হয়। নদী পার হবার সময় অনেকেই নদীর জলে পরে যায়। কেউ কেউ আবার তলিয়েও যায়। কথিত আছে পানা আর বাসরা নদী একজনের প্রাণ না নেওয়া পর্যন্ত শান্ত হয়না। নদী পার হয়েই ফরেস্ট। মাঝে মাঝেই ফরেস্ট থেকে হাতি,লেপার্ড,জংলি শুয়োর, হরিণ, ময়ূর, জংলি মুর্গি বেরিয়ে আসে। লেবার লাইন গুলোতে হাতি খুব উৎপাত করে। ঘর ভেঙ্গে চাল আটা সব খেয়ে যায়। লেবার লাইনে অনেকেই হাড়িয়া বানায়। হাড়িয়ার গন্ধেও হাতি পাগল হয়ে যায়। সেজন্যও লেবার লাইনে চলে আসে। মাঝে মধ্যে হাতির পায়ের তলায় মানুষও মারা যায়। শীত পরলে লেবার লাইনের কোন এক জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে আগুনকে ঘিরে অনেক রাত পর্যন্ত মাদল বাজিয়ে নাচ গান চলে। অনেক দুর থেকে মাদলের দ্রিদিম দ্রিদিম মায়াবী আওয়াজ কানে ভেসে আসে। 


এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। পানা নদীর উপর ব্রিজ হয়েছে। রাস্তা ঘাট ভাল হয়েছে। প্রচুর গাড়ি ও মোটর সাইকেলও চলে আজকাল। দোকান গুলোতেও শহরের মত জিনিসপত্র পাওয়া যায়। পাশেই পাশাখা। ভুটান সরকার এখানে প্রচুর ফ্যাক্টরী তৈরি করেছে। প্রচুর লোক এই সব ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। খুব ভোরে এরা দল বেধে কাজে বেরিয়ে যায় এবং ফেরে আঁধার নামার পর। রাতের আঁধারে পাহাড়টাকে অপুর্ব লাগে। বাসরা নদীতে দাড়িয়ে পাহাড়ের দিকে তাকালে মনে হয় কেউ যেন হাজার হাজার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে। 


এখানেই চা বাগানের সীমানা পেরিয়ে একটি টিলার উপর মধুমায়ার ঘর। পাহাড়ের ঢালে বেশ খানিকটা জমি আছে। সেই জমিতেই ভুট্টা,রসুন,আদা,রাই শাক আর অন্যান্য মরসুমি সব্জী চাষ করে। এছাড়া আছে গরু, মুরগী । গরুর দুধ যা হয় তাতে নিজেরা খেয়ে বাকিটা মাখন বানায়। প্রতি রবিবার নিচে নেমে মাখন, ডিম চা বাগানের বাবু বাসায় বিক্রি করে চাল, ডাল, তেল, নুন কিনে আনে। এখানে জলের খুব সমস্যা। অনেকটা নেমে একটা জায়গায় মাটির নীচ থেকে একটু একটু জল বের হয়। পাশেই গর্ত করা আছে। সেখানে জল জমা হয়। সেই জলই সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। স্থানীয় ভাষায় এই জলের নাম জরোয়া পানি। মধুমায়ার বুড়া (স্থানীয় ভাষায় স্বামীকে বুড়া বলে সম্বোধন করে) ধন বাহাদুর হাট্টা কাট্টা লোক। সারাদিন ক্ষেতে কাজ কাজ করে, আর সময় পেলেই চলে যায় নদীতে ভেসে আসা জ্বালানি কাঠ আনতে। সন্ধ্যা হলেই তার রক্সী চাই। রক্সী খেয়ে বুড়ো ঝিমোতে থাকে। সন্ধ্যা লাগতেই রাতের খাবার দাবার চুকিয়ে শুয়ে পরে। পরদিন সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠতে হয়। ধন বাহাদুর ক্ষেতি বারি করে আর কখনো কখনো চা বাগানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে। রোশন ওদের তিন বছরের ছেলে। ফুটফুটে দুরন্ত। 


ধন বাহাদুর একদিন জ্বালানি কাঠ আনতে গিয়ে জ্বালানি কাঠের সাথে একটি বছর নয় দশের বোবা কালা ছেলেকে এনে মধুমায়াকে ডেকে বলল, মধু তিমরো লাগি ঠুলো ছোরা লায়ো। মধুমায়া এসে দেখে শত ছিন্ন জামা প্যান্ট পরা একটা ছেলে ওর বুড়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটাকে দেখেই মধুমায়ার মায়া পরে গেল। ছেলেটা অঙ্গভঙ্গি করে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু মধুমায়ার কিছুই বোধগম্য হচ্ছিল না। তখন ধন বাহাদুর এগিয়ে এসে ছেলেটা কি বলতে চাইছে বুঝিয়ে বলে। ওর বাবা মা কেউ নেই। নদীর চরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, ধন বাহাদুরকে দেখে এগিয়ে এসে ইশারায় খাবার চাইল। দেখে মায়া পরে গেল। তাই বাড়িতে নিয়ে এসেছে। মধুমায়া ছেলেটাকে সাবান দিয়ে ভালো করে স্নান করিয়ে ধনবাহাদুরের একটা লুঙ্গি ভাজ করে পরিয়ে দিল। কাল রবিবার। হাট থেকে নতুন জামা প্যান্ট এনে দিতে হবে। ছেলেটাকে পেট পুরে ভাত খাওয়াল। ওর খাওয়া দেখে মনে হল বহুদিন খাওয়া পায়নি।ছেলেটার নাম দিল ঠুলো (বড়)। 


ঠুলোকে পেয়ে সবচেয়ে বেশি খুশি হোল রোশন। সারাদিন ওর কোলে পিঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনো প্লাস্টিকের বল নিয়ে খেলছে। রোশন বড় হচ্ছে সাথে বড় হচ্ছে ঠুলো। ঠুলো আকার ইঙ্গিতে কি বলতে চাইছে এখন মধুমায়া বুঝতে পারে। ঠুলো এখন মধুমায়ার হাতে হাতে অনেক কাজ করে দেয়। গরু মুরগীর দেখভাল ঠুলোই করে। এভাবেই একদিন রোশনকে স্কুলে ভর্তি করার দিন এসে গেল। চা বাগানের প্রাইমারী স্কুলের হেড মাস্টার মশাইয়ের সাথে কথা বলে সেখানেই ভর্তি করে দিল।
 

বর্ষা শুরু হয়েছে।পাহাড়ী এলাকার বর্ষা ভয়ংকর এবং সুন্দর। সুন্দর এজন্য ,বর্ষার জলে পাহাড় এবং তার আশেপাশের গাছপালাগুলো নতুন রুপে সেজে ওঠে।কিন্তু ভয়ংকর হয়ে ওঠে নদীগুলি। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঘোলা জল নদীর দুকুল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। রোশন এখন কালচিনির হাই স্কুলে পরে। মাঝে মাঝেই নদীর জন্য স্কুল কামাই করতে হয়। এভাবেই চ‌লছিল। হটাৎ একদিন ধন বাহাদুর খুব অসুস্থ হয়ে পরে। কোনক্রমে বাগানের হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যায়। ডাক্তার দেখে বলেন, এখানে অক্সিজেন নেই, অক্সিজেন ছাড়া রোগীকে বাঁচানো যাবেনা। ডাক্তার আলিপুরদুয়ার সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললেন। প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। আ্যম্বুলেন্সে রোগীকে নিয়ে পানা নদীর পাড়ে গিয়ে আটকে গেল। পানা নদী ফুসছে। পাহাড় থেকে ঘোলা জল নেমে দুকুল ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই জলে আ্যম্বুলেন্স নামানো কোন ভাবেই সম্ভব না। অনেক সময় পাহাড়ে বৃষ্টি কমলে নদীর জল কমে যায়। তাই জল কমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকল। এদিকে যত সময় যাচ্ছে ততই রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়ছে।শ্বাসকষ্ট বাড়তে বাড়তে একসময় শ্বাস থেমে গেল। আ্যম্বুলেন্স নিথর দেহ নিয়ে ফিরে এল।মধুমায়ার বাড়ির পাশে পারিবারিক সমাধিস্থলেই ধন বাহাদুরকে সমাধিস্থ করল। 


রোশন বড় হয়ে উঠছে। ফুটবল পাগল ছেলে। শরীরটাও ওর বাবার মতই সুঠাম। ওর মধুমায়ার কাছে আব্দার সবই ফুটবল কেন্দ্রিক। বুট কিনতে হবে,জার্সি কিনতে হবে। মাঝে মাঝে আব্দার কোরে পুরো ফুটবল টিমের জন্য ডিম সেদ্ধ নিয়ে যায়। ছুটির দিনে বাড়ির উঠোনে সারাদিন চলত ঠুলোর সাথে ফুটবল খেলা। মধুমায়া রোশনের সব আব্দারই মানত। মাঝে মাঝেই দুরে দুরে খেলতে যেত। অনেক পুরস্কারও পেত। ঠুলোর সাথে খুব মিল ছিল। কখনো কখনো ঠুলোর পেছনেও লাগত। ঠুলো মধুমায়ার কাছে গিয়ে আকার ইঙ্গিতে নালিশ জানাত। মধুমায়াও রোশনকে বকে দিত। 


রোশন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত ফল বের হবে। রোশন ফুটবল খেলায় মেতে আছে। এর মধ্যে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ এনে পারিবারিক সমাধিস্থলের পাশে লাগিয়েছে। ঠুলো আর রোশন দুজনের যত্নে গাছটা বেড়ে উঠেছে। এর মাঝেই একদিন বন্ধুদের সাথে গিয়ে হাসিমারা সেনা ছাউনিতে গিয়ে সেনাতে ভর্তির পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। পরীক্ষা ভালই হয়েছে। মধুমায়াকে আগে জানায়নি। যদি রাগ করে। মাধ্যমিকের ফল বেরিয়েছে। রোশন টেনেটুনে পাশ করেছে। হটাৎ একদিন ডাকপিওন একটা Registry Letter নিয়ে এল। খুলে দেখে Appointment letter. আগামী সপ্তাহে ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগ দিতে হবে। মধুমায়া শুনেই কান্নাকাটি জুরে দেয়। শেষমেষ মাস্টার মশাই এসে অনেক বুঝিয়ে মধুমায়াকে রাজি করায়।
 

রোশন আর্মি ট্রেনিং এর জন্য রওনা হওয়ার দিন মধুমায়ার চোখের জল আর বাধা মানেনি। ঠুলোও হাউমাউ করে কান্না জুরে দেয়। অঙ্গভঙ্গি করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে বলে। রোশনও চোখের জল মুছতে মুছতে এগিয়ে যায়। মাঝে মাঝে মাকে চিঠি লেখে। যেহেতু মধুমায়া পড়াশুনা জানেনা তাই মাস্টার মশাইকে C/O করে চিঠি পাঠায়। মাস্টার মশাই এসে মধুমায়াকে চিঠি পড়ে শোনায়। চিঠি পড়ার সময় ঠুলো ঠায় বসে থাকে। মাস ছয়েক পরে একটা চিঠিতে লেখল, ট্রেনিং খুব ভালো মতো হয়েছে। সাথি বন্ধুদের সাথে খুব ভালো কেটেছে। কাশ্মীরে পোস্টিং হয়েছে। Join করে ছুটিতে বাড়িতে আসবে। কাশ্মীর কতদূর মধুমায়া জানেনা। শুনেছে খুব সুন্দর জায়গা। একমাত্র বাইরের যোগাযোগ বলতে মাস্টার মশাই।রোশন প্রতি মাসে মানি অর্ডার করে টাকা পাঠায়। কিন্তু মধুমায়া খরচা করেনা। রোশনের সাদির জন্য জমিয়ে রাখে। 


মধুমায়া রোশোনের আসার অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে। কতদিন হয়ে গেল ছেলেকে দেখতে পাচ্ছে না, বুকে জড়িয়ে ধরতে পারছে না। রোশন ফৌজি পোশাক পরা একটা রঙিন ছবি পাঠিয়েছে। সেই ছবিটাকেই মাঝে মাঝে বুকে জড়িয়ে ধরে। এভাবেই দিন কাটে। সেদিনও বৃষ্টি ছিল। মাস্টার মশাই ছাতা মাথায় দিয়ে সঙ্গে একজন ফৌজি পোষাক পরা লোককে নিয়ে মধুমায়ার বাড়িতে এল। দুজনেরই মুখ থমথমে। কিছু একটা বলতে চাইছে। কি ভাবে বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।মধুমায়ার পাশে ঠুলোও এসে দাড়িয়েছে। নিরবতা ভেঙে ফৌজি পোষাক পরা লোকটি বলে, আম্মা, এক হাদসা হো গয়া। দুশমন কে সাথ গোলিবারি কে সময় এক গোলি রোশন কো ছতিমে লগ গয়া। বহুত কৌশিষ করনে কা বাদ ভি বীর জওয়ান কো বাচা নহি সকা। আগামী কাল বীর শহীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। আপনি চাইলে আপনাদের পারিবারিক সমাধিস্থলেই বীর শহীদকে সমাধিস্থ করা হবে।একথা কানে যেতেই মধুমায়া জ্ঞান হারায় ।মধুমায়ার যখন জ্ঞান ফিরে এল দেখল ঠুলো ওর মাথাটা কোলের ওপর নিয়ে বসে আছে। চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে। মাস্টার মশাই পাখা দিয়ে মাথায় হাওয়া দিচ্ছে। 


পরদিন টিলার উপর ছোট্ট বাড়িটা লোকে লোকারণ্য। আর্মি অফিসাররাও এসেছে। মধুমায়া এককোনে ঠুলোকে জরিয়ে ধরে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে পাথরের প্রতিমা। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে। রোশনের কফিন বাক্সটা তেরঙ্গা পতাকা দিয়ে ঢেকে আনা হয়েছে। রোশনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও গান স্যালুট দিয়ে পারিবারিক সমাধিস্থলে সমাধিস্থ করা হলো। 


এরপর অনেকদিন কেটে গেছে। মাস্টার মশাই মাঝে মাঝে এসে খবর নিয়ে যায়। সেদিনও মাস্টার মশাই খোঁজখবর নিতে এসেছে। মধুমায়া ঘরের ভিতর থেকে একটা কাপড়ের পুটলি এনে মাস্টার মশাইয়ের হাতে দিয়ে বলল, এর মধ্যে আমার সঞ্চিত টাকা আর পারিবারিক গয়না আছে। এগুলি আমার বুয়ারির (বৌমা) জন্য রেখেছিলাম। এগুলো আর কোনো কাজে লাগবে না। আমার কিছু হয়ে গেলে হাবা গোবা ছেলেটাকে দেখার কেউ নেই। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি আমার কিছু হয়ে গেলে ছেলেটাকে দেখবেন।
 

অনেক গুলি প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস পার হয়ে গেল। মধুমায়ার বাইরের জগৎ সম্পর্কে কোন আগ্রহ নেই। প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবসে শহীদের সমাধিতে সবাই শ্রদ্ধা জানাতে আসতে চেয়েছিল কিন্তু মধুমায়া আপত্তি করেছে ,বলেছে আমার রোশন ওখানে ঘুমিয়ে আছে। তোমরা কেউ বিরক্ত কোরো না। মধুমায়ার শরীর ক্রমশঃ ভেঙে পরছে। খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। বেঁচে আছে শুধুমাত্র ঠুলোর জন্য। 


এইরকম এক স্বাধীনতা দিবসে মাস্টার ম‌শাই টিলার নিচের রাস্তা দিয়ে ছাত্রদের নিয়ে পতাকা হাতে মিছিল করে যাচ্ছে এমন সময় ঠু্লো টিলার উপর থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে নেমে মাস্টার মশাইয়ের সামনে দাড়াল। হাঁপাতে হাঁপাতে মধুমায়ার বাড়ির দিকে ইশারা করে কিছু বলতে চাইছিল। মাস্টার মশাই কিছু একটা হয়েছে আচ করে টিলার রাস্তা ধরে মধুমায়ার বাড়ির দিকে দৌড় লাগাল। ছাত্ররাও মাস্টার মশাইয়ের পেছনে দৌড়ল । মাস্টার মশাই ঠুলোর পিছন পিছন ঘরে ঢুকে পরল। ঘরে ঢুকে দেখে, মধুমায়া রোশনের ছবিটা বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। রোশনের সমস্ত জিনিস গুলি যত্নের সাথে মাথার কাছে সাজিয়ে রেখেছে। গায়ে হাত দিয়েই মাস্টার মশাই বুঝতে পারল মধুমায়া আর নেই। মধুমায়ার দেহ মাস্টার মশাই আর ছাত্ররা মিলে বাইরের উঠানে এনে শুইয়ে দেয়। মাস্টার মশাই ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আজকের স্বাধীনতা দিবস বীর শহীদের মাকে উৎসর্গ করা হবে। এখানেই পতাকা উত্তোলন করা হবে।ছাত্ররা রোশনের লাগানো কৃষ্ণচূড়া গাছের ফুল দিয়ে মধুমায়ার শরীর ঢেকে দিল। ঠুলো মধুমায়ার পা জরিয়ে ধরে এক নাগাড়ে কেঁদেই চলেছে । মধুমায়ার মাথার কাছে পতাকা উত্তোলন করে মাস্টার মশাই খুব জোরে বলে ওঠে, ব ন্দে মা ত র ম ছাত্ররাও একসাথে বলে ওঠে বন্দমাতরম। বন্দমাতরম ধ্বনি পাশের পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে অনেক দুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পরল। এই প্রতিধ্বনির মধ্যেই হয়ত মধুমায়ার মত হাজার হাজার মায়েরা পৃথিবীর সব মানুষের কাছে একটাই আবেদন জানাল, আমাদের আদরের সন্তানদের আর কেড়ে নিওনা। আমরা যুদ্ধ নয় শান্তি চাই।

Comments

  1. অপূর্ব প্রাকৃতিক বর্ননা ঠিক সেরকমই পরিচ্ছন্ন সহজ সরল ভাষায় গল্পের গ্রন্থনা, খুবই ভালো লাগলো। আরও নতুন কিছু লেখার আবেদন রইল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার লেখা ভালো লাগার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাই "কথা লহরী " সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক মহাশয়কে আমার লেখা নির্বাচন করার জন্য।পাঠকের আমার লেখা ভালো লাগলে আরও নতুন নতুন লেখার অনুপ্রেরণা পাবো। ধন্যবাদ।

      Delete

Post a Comment