গল্প - তাপসী চক্রবর্তী লাহা

স্বপ্নের জাল 


কখনো মৃত মাছের গহ্বর থেকে

ডিমজনম নেওয়া শব্দরা। 


               চমকে যায় রাজীব। বাহ আজ বেশ ভালোই লেখা আসছে। সস্তার সাদা দিস্তা খাতায় কলম বুলোতে  বসে সকালের চা টা এক্কেবারে জল হয়ে গেছে। ঠান্ডা চাটাই গলায় ঢেলে তৃপ্তি অনুভব করে একরকম।   চনচনে   ক্ষিদাটা  একটু মেটে চা চিনি জলের কৃপায়। বিস্কুট শেষ।


রান্না ঘরের  দিকে হাঁক পাড়তে ছোট বাটিতে মুড়ি এনে হাজির করে স্মিতা। লেখা লাইনগুলো পড়ায় সে।   বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করা স্মিতার  মাথায় কিচ্ছু ঢোকেনা  এসব। ঘরের একপাশে বইয়ের  আলমারির নীচে রাখা সোফায় বসে থাকা কুট্টুস চোখ পিটপিট করে ওঠে। চুলগুলোকে মুঠি করে মাথার উপর ক্লিপ আঁটে, ঘাম জামার হাতায় মুছে ছুটে  যায় রান্নাঘরে কলিং বেলটা বেজে ওঠে  ।


সবাই কাজে ব্যস্ত। কেউ আর আসেনা গেট খুলতে।একরাশ  বিরক্তি নিয়ে গেট খুলতে হাজির হয় রাজীব। দরজা খুলতেই অবাক হয়ে যায়।  ছোট পিসেমশাই এসেছেন। সাথে বন্ধু অয়ন। পাড়াতেই  থাকে। প্রিন্টি়ং প্রেস আছে ওর। সাতসকালে     পিসেমশাই ।দু ঘন্টা  ট্রেন জার্নি  করে এত দরকারি কি বলার ছিল।ফোনে বললেই হত। 


           এসব যুক্তি  শুনে ষাটোর্দ্ধ প্রৌঢ় শুধু মুচকিটি হাসেন।  


আমার একটা   রঙিন মাছের ব্যাবসা আছে  ,পল্টুদা   চালায়     জানিস তো। ব্যবসা ভালো  চলছিল  না অনেকদিন।  হঠাৎ একদিন কাস্টমারের ফোন। একটা গোল্ড ফিশ নিয়েছিল গেলবার। তারপর থেকে একের পর এক উন্নতি। লটারি  জেতা, দোকানের ব্যাবসা বাড়া, একমাত্র ছেলে বিদেশে  পাকাপাকি  সেটল  করেছে। মা বাবাকে নিয়ে যাচ্ছে  সদ্য কেনা বাড়িটাতে।



 তাই তোকে জানাতে এলাম।  তোর একুয়ারিয়ামের সেই। গোল্ড ফিশ দম্পতিরই ছানা এসব  প্রচুর অর্ডার  আসছে। ক্লায়েন্ট নেবে। এর লাভ তোর ও প্রাপ্য। এই 


টাকাটা  রাখ। রাজীবের না কিছুতেই শুনলেন না। পাঁচ  হাজার  টাকার বান্ডিল  রাজীবের টেবিলে  রেখে দ্রুত  ঘর থেকে বেড়িয়ে  যান। আবার  লিখতে শুরু  করে  রাজীব স্মিতাকে টাকাটা ধরিয়ে। কল্পনায়  সেই গোল্ডফিশ দম্পতি  । শারদ সংখ্যায় তার সবকটা লেখা ও বই  হটকেকের মত বিক্রি হচ্ছে। দেদার অটোগ্রাফ  বিলি করছেন। প্রচুর রয়ালটি পেয়েছেন।    মাছগুলো দেওয়াল জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। গোল চোখগুলো  চিকচিক করে। হাসির রেখার মত  কিছু যেন  লেগে আছে ওদের মুখে।

Comments