গদ্য- সুবীর সরকার



মৃত্যু আসলে বলখেলার মাঠ


.

মৃত্যু আসলে দীর্ঘ কবিতার মত।মৃত্যু আসলে বলখেলার মাঠ।মৃত্যু নিয়ে কত রহস্য কাহিনীর আদল।কত জানা অজানা মিথ।
এই যে থাকা,মানুষের বেঁচে বর্তে থাকা,সেই থাকাটা আর থাকা থাকে না।জীবিতের মৃত হয়ে যাওয়া।
মৃত্যু অনিবার্য সত্য।প্রত্যেক জীবিতকে জড়িয়েই থাকে মৃত্যু।

২.
মৃত্যু নিয়ে আমার আলাদা করে কোন আকুলতা নেই।ব্যাকুলতা নেই।আমি মৃত্যুর চোখে রাখতে শিখে গেছি।
মধ্যরাতের কোন এক লোকগানের আসরে অনেক বছর আগে এক ঝাকড়া চুলের বয়াতির কণ্ঠে শোনা মরমিয়া গান আমাকে প্রথম মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। আজও কানে বাজে_"তুই জীবন ছাড়িয়া গেইলে/আদর করিবে কায় জীবন রে"।

৩.
দিদির মৃত্যুর দিন বৃষ্টি পড়ছিল।দিদির মৃত মুখের চারধারে বৃষ্টি পড়ছিল।দিদির মৃত মুখে শেষ বিকেলের বিষন্ন আলো।চিলতে হাসি জেগে ছিল সেই মৃত মুখে।
এত এত বছরের দূরত্বে এখনও সেই দৃশ্য তাড়া করে আমাকে।
পাড়ার মোড়ে সাইকেল সারাইয়ের দোকান ছিল শৈলেন কাকুর।হাসিখুশি শৈলেন কাকু ছিলেন গল্পের খনি।আমি তখন ক্লাস নাইন।রোজ গল্প শুনতে যেতাম।আগের দিন স্বাভাবিক শৈলেন কাকু।পরদিন সকালে শুনি শৈলেন কাকু আর নেই।আত্মহনন বেছে নিয়েছিলেন।
শৈলেন কাকুর মৃত মুখে কিন্তু কোন ব্যথার চিহ্ন ছিল না।

.
হাসপাতাল জুড়ে জীবনের গন্ধ।হাসপাতাল জুড়ে মৃত্যুর গন্ধ।পৃথিবীর সমস্ত হাসপাতালে জন্ম আর মৃত্যু।হর্ষ ও বিষাদ।
আমি একসময় হাসপাতালে খুব ঘুরে বেড়াতাম।
মুমূর্ষ রোগীর সন্ধান দিতেন রুনু অধিকারী,প্রতিমা দাস,সাবিত্রী নন্দী নামের নার্সরা।
আমি মুমূর্ষ রোগীর শিয়রে শিয়রে দাড়িয়ে থাকতাম।শেষ মুহূর্তের সাক্ষী হতে।
কত মানুষকে ঢলে পড়তে দেখেছি মরণের কোলে।
এভাবে মৃত্যুর অনুষঙ্গ বহন করেছি জীবনের এক পর্বে।

5.
মৃত্যু আমার কাছে মাঘ নিশীথের শিস।মৃত্যু একটা গম্ভীর হাইফেন।আসা আর যাবার খেলা খেলতে খেলতে এই পৃথিবীতে স্থিরচিত্রের মত কেবল জেগে থাকে জন্ম আর মৃত্যু। সে এক চিরদিনের খেলা।
আর মৃত্যু আছে বলেই তো এই পৃথিবী এত সুন্দর।
পুরনো মানুষের চলে যাওয়ার শুন্যতা পুরন করে নুতন মানুষ।নুতন প্রাণ।
মৃত্যু আসলে সমুদ্র পাখি,যে অনেক জলস্তম্ভ পেরিয়ে  চায়।

Comments

Post a Comment