দিনটা ভালো ই গেলো
এমনের সংগে রানুর ধুমধাম করে বিয়ে হলো অনেক আশা নিয়ে সে ঘর বাঁধলো।নতো ভালো ব্যবসায়ী চেহারা দেখতে মন্দ নয় একদম ফকফকা। শোনা কথা দুবাইয়ে কয়েক বছর ছিলো অনেক সম্পদের মালিক বিয়ের পর ফ্লাট ব্যবসা শুরু করবে রংপুরে এখনো ফ্লাট ব্যাবসা শুরু হয়নি কেবল আনাগোনা চলছে। সংসারে সেই রকম ঝামেলা নেই। ভাইয়েরা সবাই আলাদা নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আরও জানতো গুপ্তপাড়ায় আগে থেকে বনেদি পরিবার বাস করে আসছে, তাই এ-সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না।
সেই আশা এখন গুড়ে বালি কেউ বলে বাবুই পাখির বাসা দেখতে সুন্দর হলে কি হবে যেন আটিয়া কলার গাছ একদম মাকাল ফল গরম গরম জিলাপি। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। দেখতে দেখতে এক যুগ হলো
রানুর বাবা সামাদ মন্ডল ব্যবসায়ী। কামালকাছনা গুঞ্জন মোড়ে বাসা। একসময় এলাকাটি খুব একটা প্রসিদ্ধ ছিলো না খাল-বিলে ভরা, মস্ত বড় বট পাকুরের গাছ সকাল বিকেল পাখিদের ডাক দূর দেখে গুনগুন ডাক শোনা যেতো সেখান থেকে এলাকাটি গুঞ্জন পাড়া হিসেবে পরিচিত পায়। আগে তারা গ্রামে বাস করতো গ্রামগুলো আগের মত সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে কাজিয়া কেচাল লেগে আছে। মোটকোথা ব্যবসা বাণিজ্য পড়াশুনা সবকিছু শহর কেন্দ্রীক এ-রকম নানা কারণে তাদের এখানে চলে আসতে হয়েছে।
তাঁর বাবা ঘটকের মাধ্যমে শুনছে ছেলেটি মন্দ নয় আর গুপ্তপাড়া বেশি দূরে নয়,সেখান থেকে যাওয়া-আসার সুবিধে হবে। এখন ভালো ছেলে পাওয়া সহজে পাওয়া যায় না,পরিবারটি বেশ খানদানি, ভালো ছেলে পাওয়া মুশকিল তাই ঘটকের আম ভোলানো কথায় রাজি হ’য়ে গেলো।
কিন্ত স্বামীর বর্তমান কারবার দেখে সে বিরক্ত হয়ে মাঝে মধ্যে বাবার বাড়ি চলে এসে অভিযোগ করে বাবাকে বললে তার বাবা তাকে বলে
-একটু ধর্য ধর সবুরে মেওয়া ফলে শুনলাম ফ্ল্যাটের ব্যবসা শুরু করবে চিরকাল সমান যায় না অবস্থা পরিবর্তন ঘটবে। কিছুক্ষণ পর তার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে সংসারটা চালিয়ে নে আমিতো আছি, সে কি করবে, রিকসায় চড়ে গুপ্তপাড়ায় চলে আসে।
স্বামীর বন্ধুদের কাছে শুনছে শেয়ার ব্যবসার ধস নামার কারণে এরকম অবস্থা হয়েছে।
আফসোস করতে করতে সে এখন তিন সন্তানের মা। প্রথমটির বয়েস পাঁচ দ্বিতীয়টির দুই তৃতীয়টি কোলজুড়ে।
কি করবে না করবে আবারো কি বিদেশে চলে যাবে,ভাবতে ভাবতে এমনের মাথার চুলে পাক ধরেছে মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে কুকুরে গেছে। এর মধ্যে কয়েক জায়গা থেকে ধার দেনা করে টাকা নিয়েছে। অনেকদিন হলো তারাও পাওনা টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। বাজার করার ভয়ে সকাল সকাল ঘর থেকে বাহির হয়ে যায় তার স্ত্রী এদিক সেদিক করে চালিয়ে নেয় তার বাবা মাঝেমধ্যে এটা ওটা পাঠিয়ে দেয়। রাতে স্বামী ফিরলে অনেক কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিঞ্জেস করে কিন্তু একটা কথার উত্তর না দিয়ে গা চুলকাতে থাকে তার এরকম হাভভাব দেখে কি করবে সে ভাবে শেষ পর্যন্ত পাগল হয়ে না যায়।
এরকম ঘটনা প্রায় ঘটছে, নতুন কিছু নয়,আদিকাল থেকে একাল পর্যন্ত,ভেবে চিন্তে নিজের পথ চলা সুগম করতে হয়। মুখে লজ্জা ঢেকে না রেখে মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তারপরও বিয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
শোনা যায় রানুর বাবা রাজনীতির সংগে জড়িত, দলে প্রভাব বাড়ানোর জন্য বাসায় মাঝেমধ্যে বড় খানার আয়োজন করে,কর্মীদের দাওয়াত করে খাওয়ায়। রাজনীতির চিত্র বদলে গেছে টাকা থাকলে সব পাওয়া যায় বাঘের দুধ মেলে, খাই দাই অনুষ্ঠানে রানুরও ডাক পড়ে,
মনটা তখন খুশিতে ভরে যায় বাবার প্রতি অভিমান কমে যায় আর স্বামীর প্রতি রাগ থেমে। যায় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে এদিক সেদিক করে একমুঠ খেয়ে এক ছেলেকে কাঁধে আর একটার হাত ধরে আর কোলেরটা কোলে নিয়ে বাসা থেকে বাহির হয়ে বাবার
বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে এবং মনে মনে বলে আজকের দিনটা ভালো-ই গেলো।
Comments
Post a Comment