গল্প - এ,এস,এম,হাবিবুর রহমান


াদা মেঘ


কোলকাতার ১২নং মানিক তলা ষ্ট্রীটে সৈয়দ পরিবারে রায়হান জন্মগ্রহণ করে। জন্মগত ভাবে তার পরিবারের সদস্যরা সেখানকার বাসিন্দাকোলকাতা এক সময়ে এত বড় শহর ছিলো  না,দুটি গ্রাম নিয়ে এই শহরের  গোড়া পত্তন হয় বলতে গেলে অনেক বড় ইতিহাস য়ে দাঁড়াবে,মানিকতলা হলো কলকাতার একটি  জনবহুল এলাকা। মাছের বাজার আছে এখানে এ-জন্য জায়গা টি তার পছন্দ নয় লেখা পড়ার শেষে  রেলওয়ে বিভাগে টিকিট কালেক্টর এর চাকরি নিলে আলিপুর দুয়ারে রেল জংশন  স্টেশনে পোস্টিং হয়যদিও জংশনটি বড় দিনরাত ট্রেন চলাচল   করে ব্যস্ত থাকতে হয়,জুট ঝামেলায় পড়তে হয় তারপরও জায়গা টি দেখে তার  মন ভরে গেছে কার খুঁজলে নানাবিধ মাত্রা এসে   ভিড় করে আর একটি মাত্রা হলো নৈসর্গিক দৃশ্য সবুজবীথি জয়তি পাহাড় জলদি ফরেষ্ট,বক্সার জাতীয় উদ্যান,ভুটান সীমান্তে আসামঅন্যদিকে  কোচবিহার রাজ্য  চাকরি করতে যেয়ে সে নাজনীন সুলতানাকে বিয়ে করে,রেল লাইন পার হয়ে রোয়ারী পট্রিতে বাসা নেয়। নাজনীন এখানকার বাসিন্দা  না অন্য গ্রহের তার জন্মের  পরিচয়  বলতে গেলে রায়হান  েমে  িয়ে,বলে ওসব শুনে কি হবেসে   বলে,’ আমি কোলকাতার ছেলে অনেক কিছু দেখেছি রাজা বাদশা তারপর বৃটিশের আমল,শুধু ওলোট পালোট দাঙ্গা হাঙ্গামা মিছিলের মধ্যে  বড় য়েছি সমস্ত জঞ্জাল থেকে মুক্ত  য়ে এখানে থিতু য়েছি   ভালোবাসা কোন  বাঁধ মানে না তবু সে তাকে একটু বলতে   চেয়েছিলে সে বললো,” সময় নষ্ট  করে লাভ কি তার চেয়ে সব   ঝেড়ে সামনে  এগিয়ে চলো,তোমার হাতে পরশ দিয়ে সোনালী দিনের কথা বলো, ‘ এ-ভাবে তাদের  সংসার গড়িয়ে যাচ্ছিলো  ব্যস্ততার মাঝে সুখ পেতে মাঝে মধ্যে শেষ বিকেলে রোদে তারা   বক্সার ফরেস্ট বেড়াতে যায় সেখানে হাতী কিংবা বাইসন দেখার   জন্য উঁচ টিলায় চুপটি বসে থাকে, বনবিভাগের লোকজন লবন   রেখে দেয় বাইসন তা খেতে আসে।  নাজনিন তাকে বলে একসময় এটি ভুটান রাজা দখল করে নিয়েছিলো অনেক যুদ্ধ তারপর রাজা মিলে সন্ধিচুক্তি হবার পর রাজারা   একত্রে  মিলে ভাত খাবারের আয়োজন করে ছিলো ফলে জায়গাটি ভাতমারা হিসাবে খ্যাত হয়ে আছে । মাঝে মধ্যে তারা হাসিমারা ফরেষ্টের কুঁড়ে ঘরে রাত যাপন করে সেখানেই জোছনার  আলোতে সারা রাত ঝরাপাতা গান শুনে ঘুমিয়ে  পড়ে।  

এভাবে রঙ বদলাতে থাকে কোল জুড়ে এলো  আবিরতার বয়স  এখন অনেক সে তার বাবার মত বেড়াতে ভালোবাসে,    আলিপুর দুয়ার ডুয়ার্সের রাণীচা বাগানকালজানি নদীর উত্তরে   আলিপুর দুয়ার,  ভুটান  ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্যর প্রবেশ দ্বার,  সিনচুলা আলিপুর দুয়ারের সর্ব্বচ শিখরডুর্য়াস জুড়ে সাদা মেঘ মেঘের ডাকে আবিরকে নিয়ে যায় বউটি   নদীর  তীরে বানেরশরহাট তারপাশে ঘটঘটিয়া নদী, নদী  পার হলে বোকালিয়া মাঠ বাজার এই বয়সে ছেলের এত ঘোরাঘুরি দেখে তার মা নাজনিন সুলতানা   একদিন বললো ছেলেকে, ‘কিরে এত ঘোরাঘুরি করিস  কেন একট পড়াশোনায় মন দে যা দিন কাল পড়েছে তোকে অনেক বড় হতে হবে এখন তোর ক্যারিয়ার   তৈরি  করা সময় আর একটু সাবধানে চলতে হবে,কখন যে কি হয় তোর বাবা খুব চিন্তিত দাঙ্গা লেগে আছে কোলকাতায় খুব গোলমাল শুরু  হয়েছেতোর দাদু সেখানে চলে যেতে বলছে সে তার মাকে জিজ্ঞেস করে এত গন্ডগোল কিসেরসহেলী  আমার মাঝে কোন গন্ডগোল দেখছি না, আমাকে অনেক কিছু বলতে চায়আবার বলতে যেয়ে চুপ করে থাকে। হাসিমারা শহর থেকে বাসে করে স্কুলে আসে বাসের লোকজন তাকে দেখে দুএক জন মন্দ  কথা বলে ওরা ওর সংগে অমন করে কথা   বলে কেন  ওনাকি দলিত সমাজের অনেকে বাস থেকে নেমে যেতে বলেমা ওকে আমাদের বাসায় একটু আশ্রয় দেওয়া যায়  পাগল ছেলের কথা শুনে মা কি বলবে কিন্ত পড়াশোনাতে ভালো একটা  বিষয় একবার শুনলে সংগে সংগে মুখস্ত বলতে পারে। সুন্দর করে কবিতা  আবৃত্তি করে গুনগুন করে গান গায় তার মা   শুনে বলে ওর সংগে বেশি  কথাবার্তা বলিস না।‘ রাতে পড়ার   টেবিলে পড়তে বসলে সহেলির কথা মনে হয় কোথাও যেন আকাশে একটু করে বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে পেপার পত্রিকায় অশনি সংকেতকলকাতার রাস্তায় বন্দেমাতরম স্লোগান আর এক অংশ বলছে   লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান হুর হামাঙ্গা বেড়ে চলছে এমন একটা   অবস্থা সৃষ্টি  হয়েছে কেউ কারো মুখ দেখতে চায় না। স্কুলে আগের মত ক্লাস হয় না শিক্ষকদের মাঝে একরকম দলাদলি  তার সহপাঠী রাহুল একদিন তাকে  শাসিয়ে বলে তুই সারাদিন   সহেলির পিছে ঘ্যানর ঘ্যানর করিস কেনএর পর যদি দেখি একদম পালিশ করে দিবো ওরা ঠিক স্কুলে এভাবে  কথা  বলে  ছুটির দিন   অন্য কোথাও নিরিবিলি জায়গায়  ঘুরতে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।  বাবা-মায়ের করা শাসন পাড়া মহল্লায় গন্ডগোল

,তাই দুটি মন একহয়ে সকল বাধা এড়িয়ে চিলাপাতা জঙ্গলে বন্যপ্রাণীর জীবন দেখতে ব্যস্ত য়ে পড়ে একে অপরকে প্রশ্ন করে ওরা   নাকি বন্য প্রাণী ওদের মধ্যে  হিংস্রতা কই? তাদের দেখে  তেড়ে   সে না আপন মনে খাবারের সন্ধানে ঘুরে  বেড়ায়,  খাবার পেলে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে অতটা হিংস্র মনে  হয় নাএখন এমন এক সংকট কোন পাহাড়ে গেলে  সমাধান মিলবে,  কোথায় তাদের কল্যান হবে কুলকিনারার না পেয়ে এক বন থেকে  অন্য বনে  খুঁজে বেড়ায় আপনজনটানাপড়োনের মধ্যে দিয়ে এখন তারা কলেজ ছাত্র-ছাত্রীএকদিন তারা নলবাজগড়ে গুপ্ত যুগের তৈরি নল রাজাদের  দুর্গে   এসে পড়লো আর ভাবতে থাকে এখানে থেকে তারা লোকালয়ে   ফিরে  যাবে না সাদা মেঘের লুকোচুরি খেলতে খেলতে অনেক বছর কেটে গেলো   বর্ষা অনেক আগে চলে গেছে কিন্ত মেঘ আবারও যেন ডাকতে শুরু করে দিলোনাজনিন হাজার হলেও খন  অনেক চড়াইউতরাই  পেরিয়ে তার বয়েস অনেক, পঞ্চাশের  কাছাকাছি পুর হলে কাকগুলো কা কা করে ডেকে বেড়ায় রাতে ঘুমাতে গেলে পেঁচা বিকট সুরে ডেকে থাকে। আগে এরকম ডাক শোনা যেতো না এখানকার শান্ত পরিবেশ   তাদের আকৃষ্ট করছে লে তারা স্রোতের নদী সাঁতরিয়ে এখানে বাস করছে কেমন যেন মারমার কাটকাট সাধারণ জন একজন আর একজনকে দেখলে  এরিয়ে যায়একটা কিছু  ঘটে গেলে পিছুটান দিতে হবে সে আরও পিছনে ফিরে  যায় উত্তরের সমাধান খুঁজতে থাকে । আবিরকে তার মা সাবধানে চলার কথা বললে বলে,’ রাখো ওসব   কথা এরকম গন্ডগোল  একটু আধটু হয় বাঙালি চিরকাল  আবেগি ঝড় কেটে যাবে সে বলে জানো মা সহেলি আমাকে একটু সাবধান  থাকার কথা বলছে সেও বেশ আতংকিত নানারকম কানা ঘুষা চলছে দেশের লোকজন হঠাৎ করে বদলে গেলো কি কারণে বোঝা  যাচ্ছে  না শেষ পর্যন্ত কি-না তাদের দেখে  চেপে যায়এক সময় সংকট ঘনিয়ে আসেরায়হানকে তার বাবা জানিয়ে  দেয় কলকাতায়  থাকা সম্ভব নয় পূর্ববঙ্গের কোন  একটি জায়গায় চলে  যাওয়ায় চিন্তা  ভাবনা করছে সে তাদের সংগে যাবে কিনা ভালো করেভেবে   জানাতে বলছেনাজনিনকে জিজ্ঞেস করলো সে কি করবে?

এভাবে তারা একদিন  শেকড়ের মায়া ছেড়ে পর্ববাংলা মানে পূর্বপাকিস্তানে চলে আসলো আপাতত

Comments