রঙিলা দালানের মাটি - সুবীর সরকার

 

সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল জুড়ে নিয়মিত চলছে কবিতাচর্চা। কবিতা নিয়ে প্রবল স্বপ্ন দেখা। বাংলা কবিতা লেখা হচ্ছে প্রান্তে প্রান্তে। অন্তর্জাল এবং মুদ্রিত পত্রিকার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেও কিছু ভালো আর সৎ কবিতার মুখোমুখি দাড়াতে পারছি আমরা। কত প্রানবন্ত নুতন কলম নুতন কবিতা লিখছেন। পাঠক হিসেবে আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এই উত্তর জনপদ জুড়েও অনেক তরুণতম কবি খুব নিবিড়তা নিয়ে লিখে চলেছেন বাংলা কবিতা। 

তেমনই কিছু কবিকে নিয়েই এই লেখা লিখছেন 

কবি সুবীর সরকার আজ ত্রয়োদশ কিস্তি। 




"ঘুমের ঘোরে জেগে ওঠা ধুমসি বিড়াল তার ধুসর থাবা এগিয়ে ধরে, কুয়াশা আর বিড়ালকে আলাদা করা যায় না,ধন্দে পড়ি বার বার।
রংচটা দেওয়ালে সেঁটে থাকে ছাই ছাই কান্না,বাতাসে পোড়া গন্ধ সাঁতরে পার করে বসন্ত আসে নাগরিক বস্তিতে। আবির খেলার পরও দেখি থাবা পেতে বসে আছে ধোঁয়ারঙা বিড়াল,শিরদাঁড়া চিবিয়ে চুরমার করার অপেক্ষায়"




উপরের কবিতাটি লিখেছেন কবি দেবলীনা বিশ্বাস। দেবলীনার জন্ম ও যাপন রাজনগর কোচবিহার শহরে।পেশায় শিক্ষিকা।দেবলীনা নাটকের মানুষ।অভিনয় তার অন্তর্গত রক্তপ্রবাহে নিরন্তর খেলা করে।নিজে তৈরী করেছেন নাটকের দল "মৃত্তিকা"।
ভারত ও বাংলাদেশ জুড়ে তৈরি হয়েছে এই নাটকের দলের নিজস্ব দর্শক।
নাটক নিয়ে গবেষণার কাজ করছেন এখন দেবলীনা।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার কবিতার বই_"শীর্ষবিন্দু"।কবিতা,নাটক নিয়ে আদ্যন্ত এক যাপনেই রয়েছেন তিনি।
দেবলীনা বিশ্বাসের কবিতায় অন্তহীন এক জীবনের ঘ্রাণ।মানুষের জীবন তার লেখায় ঘুরে ঘুরে আসে।
মেয়েদের নিজস্ব এক পৃথিবীর গান ও গল্প তার লেখায় নির্মিত আর বিনির্মিত হয়ে উঠতে থাকে অকৃত্রিম ভাবেই।
দেবলীনা লেখেন_
"প্রথম আলোর মতো মাতৃগর্ভে  নিকষ কালো অন্ধকারে জড়িয়ে রেখেছিলে,প্রথম সম্বোধন খুঁজে পেয়েছিলাম একটা অক্ষরে, বীজ অস্তিত্ব। 
পথ চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি বহুবার,ক্ষনে ক্ষনে লড়াই, রক্ত ঝরেছে ট্রয় অথবা কলিঙ্গের ধুসর প্রান্তরে,সোচ্চার ধ্বনি উড়ে যায় দিগবিদিক, কান পাতলে শোনা যায় প্রথম চিৎকার, আবেশ শিৎকার; সব হেরে যাওয়ার রসদ জমে বারুদ হয় আগামীর বর্নমালা।
নদীর পাড় ভেঙে তৈরি হওয়া নতুন সভ্যতার মতো ক্লান্ত প্রাণ, বিষাদসিন্ধু পেরিয়ে এসে  দুদণ্ড শান্তি পায় মাটির প্রদীপের আলতো আঁচ নিয়ে, শিমুল তুলোর মতো নরম আদর ছেয়ে আছে কন্ঠস্বরে, শেষ বারের মতো যেন উচ্চারণে ছুঁয়ে থাকতে পারি তোমায়, তুমি ভালো থেকো মাতৃভাষা"।

দেবলীনার নিজস্ব এক দেখা আছে।সেই দেখা নিখুঁত।মানুষের মগ্ন চৈতন্যের প্রবাহ সুরের দুলুনির মত তার কলম ইশারায় সংকেতে বিস্তারিত হয়ে ওঠে।
দেবলীনা লিখছেন_
"এলোচুলের ঢেউ এ ঢাকা পড়ে আধভাঙ্গা চাঁদ,
দোতারা সারিন্দার সুর খেলে যায়
শরীরের বাঁকে বাঁকে আনাচে কানাচে,
ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলা অনাঘ্রাতা জীবন তুই
মাঝপথে ঝড় তুলিস?"

এই কবির ভেতর ঘোর আছে।কবিতার দানাশস্য রয়েছে।প্রেম,আবেগ,স্বপ্ন নিয়েই সে নিরন্তর এক জীবনের জলছবি আঁকতে চায় কবিতায়।নাটকে।
দেবলীনা বিশ্বাস আগামীর এক তীব্র মুখ হয়ে উঠতেও পারেন আমাদের বাংলা কবিতায়।

Comments