ভুত ভুত খেলা
রাত এগারোটা। ট্রেনটা
এত দেরি করবে ভাবতে পারিনি। কালিয়াগঞ্জ ষ্টেশন খা খা করছে। দু’তিনজন যারা ট্রেন থেকে নেমেছিলো কোথায় যেন ভ্যানিশ হয়ে
গেলো। কয়েকটা সারমেয় এদিক ওদিক কুন্ডলীী পাকিয়ে শুয়ে আছে। বুঝতে
পারছি, রাতে ষ্টেশনের দায়িত্ব ওদের হাতে ছেড়ে নিশ্চিন্ত আছেন রেল আধিকারিকরা।
গোপেশ আমাকে নিয়ে এসেছে সাথে কোরে। ওদের
গ্রামের বাড়ি দেখাবে বলে। আসামে
আমরা একসাথে চাকরি করি। সেই
সূত্রে আজ আসা। ষ্টেশন থেকে বেড়িয়ে তাকালাম কিছু পাওয়া যায় কিনা।এত
রাতে কিছু পাওয়া যাবেনা জানা ছিল। আকাশটা
কালো হয়ে আছে। তারার চিহ্ন মাত্র নেই। ঠান্ডা
হাওয়া দিচ্ছে। মনে হোল আশেপাশে বৃষ্টি হচ্ছে। তাকালাম
বন্ধুর দিকে। বললাম – কিরে কিভাবে যাবি? আকাশের অবস্থা সুবিধার নয়। বৃষ্টি
আসতে পারে।
-আসতে পারে না এসে গেছে। দু’এক
ফোটা গায়ে পড়ল মনে হয়। শালা, ট্রেনটা এত লেট করলো। এখন
পায়ে হেটে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। অনেকটা
হাটতে হবে।
-কতদূর? বৃষ্টি
এসে গেছে। চল,আর দাড়িয়ে থেকে লাভ কি।
গোপেশ চিন্তিত মুখে বলল- বড় রাস্তা ধরে ঘুরে গেলে আমাদের
শান্তিপুর গ্রাম সাত কিলো মিটার। ষ্টেশনের
ওপাশ দিয়ে আর একটা কাঁচা রাস্তা
আছে। সেই রাস্তা দিয়ে গেলে চার কিলো মিটারের মত।
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। এই
রাতে সাত কিলো মিটারের বদলে
চার কিলোমিটার! আমি প্রায় লাফিয়ে উঠলাম। ব্যাগটা
কাঁধে নিয়ে বললাম- আর দেরি কেন? চল চল
সেই রাস্তা দিয়ে যাই।
গোপেশ নট নড়ন চরণ। চিন্তিত
মুখে কয়েক মিনিট দাড়িয়ে বড়
রাস্তা দিয়ে হাটতে উদ্যত হোল।
আমি বিস্মিত হয়ে গোপেশকে টেনে ধরলাম। বললাম
– কিরে বড়
রাস্তা দিয়ে কেন? এদিক দিয়ে হাটতে হাটতে রাত কাবার হয়ে যাবে।
-এত রাতে ওদিক দিয়ে যাওয়া ঠিক হবেনা। আমিও
এত রাতে কোন দিন যাইনি। শুনেছি, তেনারা ঘোরাফেরা করে। অনেকে
দেখেছে।
-তেনারা ? মানে
অশরীরী আত্মা। ভুত ? তুই
সাইন্সের ছেলে হয়ে এসব বিশ্বাস করিস ? আমি
এসব বুজরুকি বিশ্বাস করিনা। চল, এই কাঁচা রাস্তা দিয়েই যবো। দেখি
তেনাদের সাথে দেখা
পাই কিনা। অনেক
দিন ধরে আমার ইচ্ছে।
গোপেশ নীচু স্বরে হাতটা কপালে ঠেকিয়ে বলল- দীপক তুই এসব বিশ্বাস
করিসনা তাই বলছিস। এই রাস্তায় শ্মশান, বড়
একটা বিলও পড়বে। খুব
প্রয়োজন না হলে রাতে এই রাস্তা
কেউ ব্যবহার করেনা। আর গেলেও কয়েকজন মিলে হাতে মশাল লাঠি নিয়ে যতায়াত করে। তাছাড়া আমার
কথা বাদ দে, তোর যদি কিছু হয় তবে
তোর বাবা মা’র কাছে কি জবাব দেবো। ?
আমি হাসতে হাসতে বললাম- তোকে আমার জন্য জবাবদিহি করতে হবেনা। আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট সিওর আমাদের কিছু হবেনা। আমি
বুঝতে পারছি তুই ভয় পাচ্ছিস। বিশ্বাস কর,ভয় পাবার কিছু নেই। ওসব সব
মানুষের মনগড়া। গোপেশ, ভাবতে ভাবতে প্রায় বারোটা বাজতে চলল। বৃষ্টিও
পড়ছে। এই অবস্থায় আমরা যদি বড় রাস্তা ধরে যাই তোদের গ্রামে যেতে সিওর রাত কাবার হয়ে যাবে। তার থেকে চল, ষ্টেশনের বেঞ্চে বসে মশার কামড় খেতে খেতে রাতটা কাটিয়ে দেই। ভোর হ’লে কিছু একটা পেয়ে যাবো।
গোপেশ নিমরাজি হয়ে বলল- চল আর কি করি। সেই দুপুরে খেয়েছি, আমার পেটে ছুচো ডন দিচ্ছে। এই
অবস্থায় মশার কামড় খেয়ে বেঞ্চে বসে রাত কাটাতে পারবোনা।
-ঠিক বলেছিস। এই তো
মরদের মত কথা ! কথা বলতে বলতে আমরা ব্যাগ
থেকে বাথ টাওয়ালটা বের কোরে পেঁচিয়ে
নিলাম মাথায়। যাহোক ছিচকে বৃষ্টি থেকে অন্তত মাথাটা বাঁচবে। গোপেশের হাতটা শক্ত কোরে ধরে কয়েকটা লাইন টপকে নেমে পড়লাম কাঁচা রাস্তায়। গোপেশের
পদাঙ্ক অনুসরন কোরে এগিয়ে চলছি। এদিক
ওদিক ঠোক্কর খেতে খেতে। বৃষ্টি
গায়ে ফুটছে ছুচের মত। চারিদিকে
ঘনান্ধকার। দেখতে পাচ্ছিনা কিছুই। মাঝে
মাঝে চমকে উঠছে বিদ্যুৎ। তাতেই
দেখতে পাচ্ছি বিশাল একটা বিলের পাশ দিয়ে আমরা যাচ্ছি। বিলের
অনেকটাই কচুরি পানায় ভরে
আছে। গোপেশ হাতটা ধরে ফিস ফিস কোরে বলল- গভীর রাতে এখানে বিলের আশেপাশে আগুন জ্বলে ওঠে। অনেকে দেখেছে।
হাসতে হাসতে আমি বললাম- আলেয়া!
এটা তো ন্যাচারাল ফেনোম্যানা। তুইও
জানিস। আহাঃ আজ যদি দেখতে পেতাম। আলেয়ার
জন্য এটাই পারফেক্ট ওয়েদার।
-জানি সবই। বললে
গ্রামের লোকেরা উলটে ধাওয়া দেয়। এসব
আগুন নাকি তেনারা জ্বালায়। যারা
দেখতে পায় তাদের নাকি বংশ নির্রবংশ হবে। বংশে
বাতি দেয়ার লোক থাকবেনা। গ্রামের
লোকেরা এসব আকথা কুকথা বিশ্বাস করে রাতের বেলা একা একা এদিকটা মারায়না। দিনের বেলায়ও আশে পাশের গ্রামের লোকেরা দল বেঁধে যাতায়াত করে।
গোপেশ জোড়ে জোড়ে কথা বলছিলো। আমি
বুঝতে পারছিলাম, মনের ভেতরের ভয়টাকে তাড়ানোর জন্য উচ্চস্বরে কথা বলছিলো আমার
বন্ধু। আমি ওকে সাহস দেবার জন্য বললাম- ঠাকুমা বলতো, এরকম ঘনঘোর ঘনান্ধকার রাতে রামনাম জপ করলে তেনারা
পারবেনা কাছে ঘেসতে। চল
আমরা গলা চড়িয়ে পা চালাই রাম নাম জপ করতে করতে ।
-ঠিক বলেছিস। গ্রামের
রাস্তায় সব যায়গায় লাইট ফাইট
থাকেনা।মাষ্টারের বাড়ি পড়তে গিয়ে ফেরার পথে রাত হয়ে গেলে অন্ধকারে ভেতরটা কেমন ছম ছম করতো। সে সময় রামরাম করতে করতে বাড়ি ফিরতাম। সত্যি বলছি, রাম নাম নিলে ভয় লাগতোনা।
ছোটবেলা থেকে আমার ভয়ডর বিশেষ ছিলোনা, বন্ধুদের কাছ থেকে ভুতের গল্প
শুনতে শুনতে ভুত দেখার ব্যাপারে আমার কৌতুহল ছিলো। আজ আমি
গোপেশের কাছ থেকে শুনে উৎসাহী হয়ে একরকম জোড় করে ওকে নিয়ে এসেছি এই
কাঁচা রাস্তায়। চারিদিক ঘণান্ধকার, ঝিড় ঝিড় বৃষ্টি পুরোপুরি গিয়েছি ভিজে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, ভাবছি গোপেশের কথা সত্যি হলে এই পরিবেশে তেনাদের সাক্ষাত পাওয়া যাবে।
গোপেশ রাম নাম করতে করতে দ্রুত হাটছে। আমিও হাটছি, এবড়ো খেবড়ো রাস্তা। অন্ধকারে
তাল মেলাতে কষ্ট হচ্ছে, খানিকটা পিছিয়ে পড়লেও তবু চলছি। চলতে
চলতে গোপেশ দাড়িয়ে পড়লো হঠাৎ। আমার
কাছে এসে ভীত সন্ত্রস্ত স্বরে ফিস্ ফিস্ কোরে বলল- শুনতে পাচ্ছিস
কিছু!
এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম- না, সেরকম কিছু শুনতে পাচ্ছিনা, পাখির ডাক ছাড়া।
- কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিস না ? মানুষের
গলায় পেত্নীর কান্নার আওয়াজ ! মনে হয়,আশে পাশের কোন গাছে বসে ওরা
কাঁদছে। কথাটা বলে গোপেশ আমার গা ঘেসে দাড়ালো, ফিস ফিস কোরে বলল- আমাদের
আর কেউ বাঁচাতে পারবেনা। এখন
ওরা আমাদের রক্ত চুষে খাবে।
আমি গোপেশকে জোড়ে জোড়ে ঝাকিয়ে বললাম- দূর্! আমি শুনেছি শকুনের
বাচ্চারা এরকম মানুষের মত
কাঁদে। ওরা কাছেই কোন গাছে আছে। চল্
ভীতু কোথাকার।
-এই তোর দোষ! কোন
কিছু মানতে চাস না। আমরা এখানে থাকি। আমরা
জানি। প্রায়ই দু’একটা ডেড বডি এখান পড়ে থাকে। তাদের সবার গলায় ক্ষত। দাঁতের দাগ। পেত্নীগুলো
মানুষের রক্ত চুষে এখানে ফেলে
যায়। আমার গলা শুকিয়ে আসছে, পা চলছে না।
মহা মুশকিল। অনেকটা
পথ এসে গেছি। এখন ফেরা যাবেনা। ঠিক
করলাম কপালে যা কিছু থাক, একহাতে গোপেশের হাতটা ধরে বললাম- চল পা চালা। এখানে দাড়িয়ে থাকলে পেত্নীদের হাতে নিশ্চিত মারা পড়বো। এরপর অনোন্যপায় হয়ে গোপেশকে টানতে টানতে নিয়ে চললাম। চললাম বললেও চলতে পারছিনা। চারিদিকে
ঘুটঘুটে অন্ধকার, তার
ওপর নন্ স্টপ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। পায়ে
হাটা পথ কিছু আছে কিনা তাই বুঝতে পারছিনা। বিজলির
চমক আমার ভরসা। তবে মাঝে মাঝে পিলে চমকানো প্রচন্ড বাজের আওয়াজে পরিবেশটাকে আরো ভীতিজনক করে তুলেছে। বেশ কিছুটা যাবার পর আর কোন কান্নার আওয়াজ শুনতে না পেয়ে গোপেশ খানিকটা যেন ধাতস্থ হোল। স্বভাবিকভাবে হাটতে লাগলো। ভেতর ভেতর খুব আতঙ্কিত বেশ বুঝতে পারছি।
বিলটা পেরিয়ে বা দিকে ঘুরে আরো কিছুটা যাবার পর দূরে মাঠের মাঝে
দাউ দাউ কোরে আগুন জ্বলতে দেখলাম। গোপেশ
বলল- শ্মশান। কিছুক্ষণ আগেই দাহ করা হয়েছে মনে হচ্ছে। রাত বিরেতে ডেড বডি কোন মতে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায় শ্মশান যাত্রীরা। তেনাদের
অত্যাচারে আধাপোড়া ডেড বডি শ্মশানেই ফেলে আসতে হয়।
গলাটা কাঁপছে গোপেশের। আমি
অবাক হয়ে বললাম- কেন ? তেনারা মানে ভুত পেত্নীরা ? যত সব
বুজরুকি।
রেগে গেল গোপেশ- তোদের মত শহুরে লোকদের নিয়ে মহা মুশকিল। অশরীরী আত্মা আ ছে বলে বিশ্বাস করতে চাস না! শুনেছি শ্মশানে বিশেষ করে রাতে ওরা নাকি সুরে কান্নাকাটি
করতে থাকে ডেড বডি ওদের হাতে দিয়ে দেবার জন্য। না
দিলে নির্বংশ করে দেবে বলে ভয় দেখায়। ওদেরকে দেখে একজন নাকি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো শ্মশানে। বাকিরাও ভয়ে ওকে ওখানে ফেলে রেখে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে আসে। পরে
গ্রামে এসে আরো লোকজন জোগাড় কোরে শ্মশানে
গিয়ে মানুষটাকে আর পায়নি। কিছু
হাড়গোড় ছাড়া ! আমার খুব ভয় করছে! পা
চালা, আর কিলো মিটার খানেক।
-আচ্ছা গোপেশ তুই বলছিস ভুত পেত্নীরা সব অশরীরী। ভালো কথা, তবে কি করে ওরা মানুষের মাংস খেতে পারে ? ভয় বা কি কোরে দেখায়, বলতে পারিস ?
চুপ থাকলাম, কথায় কথা বাড়বে বলে। খানিকটা
দূরে চলে এসেছি শ্মশান পেড়িয়ে । বৃষ্টি
ধরে আসলেও মাঝে মাঝে বিজলী চমকাচ্ছে।এতে
হঠাৎ দূরে দেখলাম, একটা আলো ক্রমাগত এগিয়ে আসছে এদিকে। আরো খানিকট এগিয়ে বুঝতে পারলাম কয়েকজন আসছে আলো নিয়ে। নির্জন রাতে ওদের কথার আওয়াজ কিছু কিছু শুনতে পচ্ছি। আরও
মনে হোল, ভয় পেয়ে আসছে থেমে থেমে। বেশ
খানিকটা দূর হলেও বিজলীর চমকে খুব সম্ভবত আবছা আবছা দেখতে পেয়েছে আমাদেরকেও। আমি নিশ্চিত, আমাদের যেরকম হুলিয়া সারা মাথায় মুখে টাওয়াল জড়ানো তাতে এই পরিস্থিতিতে কল্পনায় তেনাদের কথা ভেবে থাকলে আশ্চর্য্যের
কিছু নয়।
হঠাৎ মজা করবার সুযোগটা হাতছাড়া করতে ইচ্ছে হোলনা। দুহাত তুলে হা হা করে উৎকট চিৎকার করতে করতে ছুটতে লাগলম
ওদের দিকে। গোপেশও আমার মতলব বুঝতে পেরে ছুটতে লাগলো আমার পেছন পেছন। উল্টো
দিকের আগন্তুক মানুষগুলো এমনিতেই
ভয়ে কাঁটা হয়েছিলো, আচমকা দৈত্য দানো ভুতের হা হা চিৎকারে আতঙ্কিত হয়ে প্রাণ বাচাতে লাঠিসোটা, লন্ঠন ফেলে উল্টোদিকে প্রাণপনে লাগলো দৌড়াতে। আরো
দৌড়াতাম, গোপেশ আমাকে টেনে ধরলো। বললো-
দীপক থাম থাম ! না হলে ভয়ে মারা পড়বে লোকগুলো।
ভোরের আলো ফুটছে। হাসতে
হাসতে প্রায় আধঘন্টা পরে আমরা
পৌছালাম গোপেশদের গ্রামের বাড়িতে। বাড়িতে
ঢুকে যা দেখলাম, আমরা প্রস্তুত ছিলাম না এরজন্য। বাড়ির প্রশস্ত উঠোনে কয়েকজন লোক, কেউ পড়ে আছে উপুর হয়ে কেউ চিৎ হয়ে। ওদের
জ্ঞান আছে কিনা বোঝা যাচ্ছেনা। তাদের
মধ্যে দু’জন যারা খানিকটা সুস্থ ছিলো তারাই ঘটনা বর্ণনা করছে
সবিস্তারে। ওদের প্রত্যেকের হাত পা শরীর কাদায় মাখামাখি। বক্তার
আর শ্রোতাদের আতঙ্কিত মুখগুলো
দেখে মনে হচ্ছে, ওরা এখনও যেন দেখতে পাচ্ছে চোখের সামনে বিকটাকৃতি
দৈত্যের মত চেহারার মামদো ভুত। বক্তারা
ভুতের চেহারার বর্ণনায় একজন আর একজন থেকে টপকিয়ে যাবার
চেষ্টা করছিলো। একজন বলছিলো- লম্বায় পাঁচ হাত, মেঘের গর্জনের মত হা হা কোরে ওরা
ছুটে আসছিলো আমাদের দিকে। আর একজন বলছিলো না সাত হাত হবে, চোখ গুলো জ্বল
জ্বল করছিলো ভাটার মত।
আমরা একপাশে দাড়িয়ে চুপচাপ শুনছিলাম ওদের কথাগুলো। হঠাৎ গোপেশের মায়ের চোখ পড়লো আমাদের ওপর। উপস্থিত আত্মীয় স্বজন যারা ছিলো তারা সবাই বিস্মিত হয়ে
দাড়ালো ঘিরে। কেউ কেউ গায়ে হাত দিয়ে পরখ কোরে নিলো। ভুত নয়তো ! গোপেশের
মা উৎকন্ঠিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন- তোরা এখন আসলি ? কোন
রাস্তা দিয়ে ? পরে কপালে মাথা ঠেকিয়ে বললেন- যাক বাঁচা গেল। কি যে
চিন্তা হচ্ছিলো।
-এসেছি সর্ট কাট রাস্তা দিয়ে। ট্রেনটা
এত লেট করলো, কিছু পেলাম না। তাই
ঘোরা পথে না হেটে চলে এসেছি শ্মশানের পাশ দিয়ে।
সবাই একসাথে বলে উঠলো- বাব্বা তোদের সাহস আছে।
আমি আর চুপ কোরে থাকতে পারলাম না। বললাম-
মাসিমা এদের কি হয়েছে ? এভাবে
হাত পায়ে কাঁদা মেখে শুয়ে
আছে কেন ?
তোমাকে নিয়ে আজ আসছে আগেই জানিয়েছিলো গোপু। ট্রেনের অস্বাভাবিক দেরী আর বৃষ্টি দেখে ভাবলাম তোমরা ঘুরপথে না এসে এই শ্মশানের রাস্তা দিয়ে আসতে পার। রাতের বেলা এই রাস্তায় একা একা কেউ আসেনা। অনেক ঘটনা ঘটে গেছে।
- এদের পাঠিয়েছিলেন আমাদের আনতে ?
=হ্যা। । গ্রামের ছেলে, আমাদের মুনিসরা বলল- গোপু তো জানে। তবু
যদি আসে, তেনারা তোমাদের অনিষ্ঠ করতে পারে। আমি
বিশেষ কোরে তোমার কথা চিন্তা করছিলাম শহরের ছেলে, কিছু একটা হ’লে অল্পতে ঘাবড়িয়ে যাবে। তাই ছেলেদের পাঠিয়েছিলাম তোমাদের আনতে। বেশি দূর যেতে পারেনি। ভাটার
মত চোখ, কয়েকটা বিরাটা দৈত্যাকৃতি মামদো ভুত ওদের নাকি
তাড়া করেছিল হা হা করে। ভাগ্য ভাল, পালিয়ে এসেছে। না
হ’লে কি যে হোত। স্বস্তিতে
কপালে হাতে ছোয়ালেন মাসিমা।
গোপু মুখ খুলল- মা, আমরা ত চলে এসেছি ঠিকঠাক। তুমি এতজনকে আমাদের আনতে পাঠালে, উল্টে ওরা নাকি মামদো ভুত দেখে পালিয়ে
আসলো ভয় পেয়ে। কই মামদো ভুততো দুরের কথা শ্মশানের আশেপাশ একটা কুকুরেরও দেখা পেলাম না।
-হ্যা। তাইতো দেখছি। চোখের
সামনে দেখতে পাচ্ছিস, জোয়ান
জোয়ান মরদগুলো ভুতের ভয়ে কেমন খাবি খাচ্ছে।
মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে আমি বললাম- অনেক আশা করেছিলাম ভুতের দেখা পাবো, পেলাম না। ওরা ভাগ্যবান, অন্তত মামদো ভুতের দেখা পেয়েছে।
Comments
Post a Comment