সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল জুড়ে নিয়মিত চলছে কবিতাচর্চা। কবিতা নিয়ে প্রবল স্বপ্ন দেখা। বাংলা কবিতা লেখা হচ্ছে প্রান্তে প্রান্তে। অন্তর্জাল এবং মুদ্রিত পত্রিকার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেও কিছু ভালো আর সৎ কবিতার মুখোমুখি দাড়াতে পারছি আমরা। কত প্রানবন্ত নুতন কলম নুতন কবিতা লিখছেন। পাঠক হিসেবে আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এই উত্তর জনপদ জুড়েও অনেক তরুণতম কবি খুব নিবিড়তা নিয়ে লিখে চলেছেন বাংলা কবিতা।
তেমনই কিছু কবিকে নিয়েই এই লেখা লিখছেন
কবি সুবীর সরকার। আজ দ্বাদশ কিস্তি।
হাবিবুর রহমান।কুচবিহার জেলার প্রান্তিক জনপদ তুফানগঞ্জের বারকোদালিতে বসে বাংলা কবিতা নিয়ে তার জীবনযাপন।
পেশায় শিক্ষক এই কবির ইতিমধ্যে ৩ টি বই প্রকাশিত হয়েছে।সহজ,সরল এক তীব্র প্রাণশক্তি তার কবিতা এবং ব্যক্তিত্বে গভীরভাবে বহমান।
হাবিবুর রহমান আদ্যন্ত এক স্বপ্নময় মানুষ।কবিতার হলুদ খামার দিয়ে ছায়া আর মায়া বিছিয়ে তিনি নিরন্তর হেঁটে যেতে থাকেন।
হাবিবুর লেখেন_
১.
লালা ঝরে বৈধতাহীন,
মকর ক্রান্তি দিনে
জলপাই বনে
নেচে ওঠে হরিণী
ঘুঙুর বাঁধা নর্তকীর মতো।
২.
ঋতুহীন দমকা বাতাসে
নিভে যায় ফুৎকারে
উজলা বাতি।
পাখিপ্রবণ সকালে
আবার সূর্য উঠবে।
৩.
চৈতালী দুপুরে
কে যেন ডাকে
ধূ ধূ কাঠপোড়া দেশে
হলুদ বর্ণ পাতাটির নিচে,
বিষণ্ণ সে সুর
তরঙ্গায়িত রোদে,
শূন্যতায় এখনও
পাতা ঝরার গান,
শূন্য থেকে উড়ে আসে
মাটির ঘরে।
প্রেম,প্রকৃতি,মানুষ,চিরকালীন সব দৃশ্য তার কবিতার পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে।
পাশাপাশি প্রতিবাদ, দেশ,কাল,সময়ের নানান দিক গভীর ভাবে কবি দেখেন।অনুভব করেন।সমাজ আর সমাজের বিভিন্ন কোরাস হাবিবুর তার কবিতায় তুলে আনেন।আমরা দেখি তিনি লিখছেন_
রাস্তায় দাঁড়িয়ে জনগণ প্রতিবাদ করলে
ঝলসে ওঠে পুলিশের লাঠি,
বৃহন্নলা রাতে যোনিপথ দিয়ে
হেঁটে যায় রক্তবীজ।
কবিতা মোচ্ছবে
প্রতিবাদের কবিতা তেমন পাঠ হয়না।
অথচ দ্যাখো
রাত গভীরে
নিষিক্ত ডিম্বাণু ফেটে ওঠে আসে করুণ কান্না।
বোনের ব্রা খুলে
যদি খুবলে নেয় বুকের সুগন্ধি পরাগ,
হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে কি তুমি?
চারপাশের নানান ক্লেদ, কালো,অসংগতি কবিকে ভাবায়। বিদ্ধ করে।তিনি সব কষ্ট,যন্ত্রণা তার কবিতাতেই
লিখে ফেলতে থাকেন_
আর কত ক্লেদজ কুসুম ফুটবে
হাড় ঝিরঝিরে রমণীর জরায়ু ছিঁড়ে?
শীতে কুঁকড়ে যাওয়া সময়ে
ঘাম ঝরা উষ্ণ আদরে ভ্রূণ খসে যায়
কিলবিল পোকার মতো
লেজ নাড়তে নাড়তে।
লম্বা গলা জিরাফের মতো
ঠোঁট ফাটা ঘনিষ্ঠ কামড়ে
পাথর গলে জড়ো হয় জল,
অগণিত মৃত্যু ভ্রূণ ডুবে থাকে,
দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বরাবর বর্গাকার
ভূমি জুড়ে,
গোপনীয় অশালীন উৎসবে মেতে ওঠে পরস্পর।
খুব সহজ তার কবিতার ভাষা।কোন উচ্চগ্রাম নেই।শব্দ ব্যবহারে জটিলতা নেই।তার কবিতার সবচেয়ে বড় শক্তি অদ্ভুত এক মায়া!সারল্য।তার দেখবার নিজস্ব এক ঘরানা রয়েছে।তিনি শুধু দেখেন না,পাশাপাশি পাঠককেও দেখান।
হাবিবুর রহমান,আগামীতে আরো লিখবেন,এটুকুই আপাতত বলি।
প্রণাম কবি
ReplyDeleteধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আন্তরিক ভাবে।
Delete