সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল জুড়ে নিয়মিত চলছে কবিতাচর্চা। কবিতা নিয়ে প্রবল স্বপ্ন দেখা। বাংলা কবিতা লেখা হচ্ছে প্রান্তে প্রান্তে। অন্তর্জাল এবং মুদ্রিত পত্রিকার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেও কিছু ভালো আর সৎ কবিতার মুখোমুখি দাড়াতে পারছি আমরা। কত প্রানবন্ত নুতন কলম নুতন কবিতা লিখছেন। পাঠক হিসেবে আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এই উত্তর জনপদ জুড়েও অনেক তরুণতম কবি খুব নিবিড়তা নিয়ে লিখে চলেছেন বাংলা কবিতা।
তেমনই কিছু কবিকে নিয়েই এই লেখা লিখছেন
কবি সুবীর সরকার। আজ একাদশ কিস্তি।
বিজয় বর্মণ। কোচবিহার জেলার সীমান্ত জনপদ কুচলিবাড়ি তে তার জন্ম। বেড়ে ওঠা।
বর্তমানে কর্মসূত্রে শিলিগুড়ির বাসিন্দা।
বিজয় বর্মণ কবিতা লিখছেন। খুব ভালো তার লেখা।
বিজয়ের লেখার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তার ভাষার সারল্য। খুব প্রাণ বিছিয়ে থাকে তার কবিতায়।
বিজয় লেখেন_
প্রিয় মানুষ
এক গাল হাসি লেগে আছে চোখে মুখে,
ভিজে যায় অন্তর,
কি যেন বলবো,আর কি যেন ভাবছি,
সব গুলিয়ে যায়,
চোখের পিপাসা তবু মিটে না,
আমি ছেড়ে যাচ্ছি নাকি তুমি?
এ আবর্তন যেন থামছেই না।
তোমার সাক্ষাৎ হবে , আমার মন জানে,
আমার কাছে তুমি তো প্রিয়,
তোমার খবর তুমিই জানো,
এ আবহ তোমাতেই প্রকাশিত,
সব ভাবনা প্রস্ফুটিত,
তাই বুঝি এত প্রিয়,
একটু দূরত্ব,একটু প্রত্যাশা,
হাসিটা থাকুক গাল ভরা,
প্রিয় মানুষ তুমি আরো প্রিয় হয়ে ওঠো,
মানুষের ভিড়ে।
বাংলা ভাষার পাশাপাশি রাজবংশী ভাষাতেও বিজয়ের কবিতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। মাটি, মানুষ আর জীবনের কথা লিখছেন তিনি তার আই ভাষায়_
অগন মাস মোর, খিব ভাল নাগে,
পোড়া মুখোত মাখোঙ সোনা রঙ,
প্যাটটা চিরি কায় দ্যাখে,
বাবা গেইসে বিদ্যাশ,
পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ,
মার মন যে খারাপ, বুঝিবার নাদিলেও,
মুই কিন্তুক বুঝোঙ,
ক্যানে মাও মোর গুনগুনায়,ওকি ও বন্ধু কাজল ভোমরা ........!
মনটায় কয়,
এই বয়সোত,ইমার বিচ্ছেদের জৈন্যে মুই দায়ী,
মোক মানষি করি কি লাভ হৈল,
লেখাপড়াটায় কাল হয়া গেলো,
হাজিরা কাজোত গেইলে,
গারোস্ত হাসে,...তুই বাপোই !
মাস্টার মানষি, বারে,
এইল্লা কষ্টের কাজ,না পাবেন করিবার,
ক্যানে নৈজ্যা দ্যান,
টিউশনি কৈল্লেএ না মেলা পাইসা,
মুই মনে মনে হাসোঙ মাথা হ্যাট করি,
আজিও জুটিল না কাজ,
আর, মুইতো জানোঙ,
কুন গার্জিয়ান যে ক্যামোন,
বেকার মাস্টারের ঘর যতোয় ভাল পড়াউক,
টাকা পাইসার বেলায়,বেজায় পিচিলা।
বুক ফাটি যায়, মুখ ফোটে না,
খালি বাবার একটা কথা মনোত পড়ে খুব,
ছাওয়া না কান্দিলে,মায় দুধে না দ্যায়,
কিন্তুক, উচ্চ শিক্ষা যে,
কান্দিতেও বাঁধা দেয়!
অগন মাস মোর খিব ভাল নাগে,
পত্তি বছর,বাবা বাড়ি আইসে,
মাও এর মুখোত হাসি দ্যাখোঙ,ভাল নাগে,
মাও কয় তোর জন্ম দিনের গিফট্ কি নিবু,
মুইও মাক কঙ,
মা এই মাস না,তোমার বিয়াও এর মাস,
ও মা, তুই কি নিবু...।
একে সঙ্গে দুই ঝনে কোয়..য়া উটি
আসুক না আগোত , বাবা .....!
সম্প্রতি শিলিগুড়ি জংশন পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে বিজয়ের প্রথম কবিতার বই _"এক বিন্দু থেকে"।
বইটি পাঠ করে আমি তার সহজ গলিপথে হারিয়ে গিয়েছি।
বিজয়ের একটা নিজস্ব দেখা আছে,দর্শন আছে। বেচেঁ থাকবার চলাচলে নিজেকে জাগিয়ে রেখে বিজয় এক দূরাগত স্বপ্নের হাওয়ায় বারবার নিজেকে জড়াতে থাকে।
বিজয় লেখেন_
খাঁচায় বন্দি পাখিটির কাছে রেখেছি পাটিগণিত খাতা,
সিঁড়ি ভাঙা অংকটা শেখাতেই পারলাম না,
তবুও সে, কথা দিয়েছে !
শুধু ডানা ঝাপটায়, উড়তে ভুলে গেছে কবেই,
সেও জানে তার আয়না ভেঙ্গে চুরমার ।
জমানো কথার পাহাড়ে, জলরঙা মেঘ,
যেদিন শীতল ছোঁয়া আসবে ,
সেদিন ঝরনা হয়ে নদী হব,ভেসে যাব দুজনেই ।
দুলবে খাঁচা মৃদু হাওয়ায়,
ঊর্ধ্বমুখে উত্তর খুঁজে পাবে, পাষাণ হলেও ক্ষতি কি ?
কবি বিজয় বর্মণ আমাদের আগামীর এক তীব্র উচ্চারণ হয়ে উঠবেন এই প্রত্যাশা রইলো।
Comments
Post a Comment