গল্প - আশিস ধর


ওরা  অস্পৃশ্য                                                     

        

যাতায়াতের রাস্তায় গোটা তিনেক বড় হোটেলকে পাশ কাটিয়ে যেতে হয় আমাকে। একটা
হোটেলের পাশে ট্রাইসাইকেলে হাতে পায়ে কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত ভিখারীকে সকাল বেলা থেকে বসে থাকতে দেখি।
যে পাশ দিয়ে যায় তার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দেয়। আমার দিকেও দেয়। মুখটা ঘুরিয়ে যেতে যেতে
ভাবি ও জানেনা আমি একজন বেকার। শিক্ষিত বেকার! ওর থেকে আমার অবস্থা আরো খারাপ। এক
দু টাকা ভিক্ষে দেওয়ার মত অবস্থাও নেই। আমার হিংসে হয়। কি লাভ হোল বাবার পয়সা নষ্ট করে
এত কষ্ট করে পড়াশুনা করে?

একদিন পাশে দাড়িয়ে পড়লাম। অযত্নে অপরিচ্ছ্ন্ন চেহারা। বয়সটা অনুমান করা যায়না।
চল্লিশ হতে পারে, পঞ্চাশ বল্লেও চলে যাবে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, বাপমায়ের দেয়া গণেশ নামটা
আজ কেউ বলেনা। সকলের কাছে গণা বা ঘেও নামেই ওপরিচিত। ঘেও? এটা আবার কি ধরনের
নাম? ঘেও কুকুর শুনেছি। কিন্তু মানুষের নাম! বিস্ময় প্রকাশ করতেই ও দু হাতের দশটি আঙ্গুল
ছড়িয়ে দেখাল। দশটা আঙ্গুলের কোনটাই অক্ষত নয়। কোনটা বা দুকর অথবা তিনকর। আঙ্গুলের
মাথাগুলোতে দগদগে ঘা। ভেতরটা ঘিনঘিন করে উঠল। ও বিষাদের হাসি হাসল। বুঝতে অসুবিধা
হচ্ছেনা কেন অনেকে ঘেও নামে ডাকে।

গণার নিজের বাপ মায়ের কথা এখন আর সেরকম মনে পড়েনা। সাত আট বছর বয়স
থেকে এই ঘৃন্য রোগটা দেখা দিলে ওরা ওকে রাস্তায় ফেলে কোথায় হারিয়ে যায়। তারপর থেকে রাস্তায়
রাস্তায় ভিক্ষে করেই ওর দিন কেটেছে। পরিবার? হ্যা আছে। রাস্তায় ও মানুষ। রাস্তাই ওকে খুঁজে দিয়েছে
মনের মত মেয়ে মানুষকে। হাসতে হাসতে যা বলল, চমৎকৃত না হয়ে পারলাম না। রানীও কুষ্ঠ রোগী।
নাক কান অনেকটাই গলে গেছে। অন্য কাউকে আর কোথায় পাবে? একজন কুষ্ঠ রোগীর দুঃখ কষ্ট
মনোবেদনা আর একজন কুষ্ঠরোগী বুঝতে পারবে। অন্তত ঘৃনা করবেনা।

প্রতিদিন ওই রাস্তায় যাওয়া হয়না। বুঝতে পারি ও আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। না
যেতে পারলে আমার মনটাও বিষন্নতায় ভরে যায়। প্রতদিন হয়না। সকালের দিকে মাঝে মাঝে মাকে
বলে দুটো রুটি আর ঘরে যা থাকে গণার জন্য নিয়ে যাই। ও খুব খুশি হয়। ও বলেছে, ওদের ইচ্ছে
থাকলেও রুটি বানিয়ে খাওয়া সম্ভব নয়। একটা রুটি খেয়ে আর একটা রেখে দেয় ওর স্ত্রী আশার
জন্য। মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। জিজ্ঞেস করি আশা কোথায়? কথাটা শুনে চোখটা খুশিতে চকচক্
করে ওঠে। ও স্টেশনের কাছে বসে। দুজনে যা পয়সা কড়ি ভিক্ষে পায় মোটামুটি চলে যায় ওদের। কি্ন্তু
মাস তিনেক হোল ওদের মেয়ে হয়েছে। খুব সুন্দর ফর্সা টকটকে। গণা আশাকে বলেছে, কষ্ট হয়ত হবে।
তবু ওকে ভিক্ষে করতে হবেনা। মেয়েকে দেখভালের জন্য আশাকে ঘরেই থাকতে হবে। ওদের ইচ্ছে
মেয়েকে যে করেই হোক এই হীনতা অস্পৃশ্যতা থেকে মুক্ত করে মানুষের মত মানুষ করে তুলবে।
আমার মনের কথাটা যেন বুঝতে পারছে গণা। মাথা নেড়ে বলল, ওর ভয় ছিল, ওরা
দুজনে কুষ্ঠ রোগী। বাচ্চাটারও সেরকম কিছু হওয়া বিচিত্র নয়। কিন্তু মেয়েটার শরীরটা তন্নতন্ন করে
খুঁজেও এতটকু ক্ষত দেখতে পায়নি ওরা। তবু সাবধানের মার নেই। মেয়েকে নিয়ে সরকারী হাসপাতালে
গিয়েছির ওরা। ডাক্তারবাবু বলেছেন, যদি হয়ও, আজকাল ভাল ভাল ঔষধ বেড়িয়ে গেছে। নিয়মিত
খেলে অসুখ নাকি সেরে যায়। আমি যারপরনাই অবাক হ’লাম। যদি সত্যিসত্যি ঔষধ খেলে অসুখ ঠিক
হয়ে যায়, তবে গণার মত যারা এই মারাত্মক ছোয়াচে অতি প্রাচীন, মহাভারতেও যার উল্লেখ আছে।
রোগটার থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ঔষধ তো খেতে হবে। শুনেছি বিনামূল্যে সরকারী হাসপ।তাল থেকে
পাওয়া যায়। তবে খেতে অসুবিধা কোথায়?

গণা অকপট। ওদের ঘরে অনেক ধরনের স্বে্ছাসেবী সংস্থা মাঝে মাঝে আসে। সময়ে সময়ে
নানারকম সরকারী বেসরকারী সাহায্য চিকিৎসাও পায়। ওরাই বলে ভাল ভাল ঔষধ বেড়িয়েছে। রোগের
প্রাথমিক অবস্থায় নিয়মিত কিছুদিন ঔষধ সেবন করলে কুষ্ঠের মত খতরনাক রোগও ভাল হয়ে যায়।
ওদের মত পুরানো পাপী সমাজে অস্পৃশ্য ঘৃন্য রোগীদের বেশ কিছুদিন ঔষধ খেতে হবে। ঔষধও দিয়ে
যায় অনেক। কিন্তু, গণার গলাটা ধরে আসে। দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। গলায় পেচানো গামছাটা
দিয়ে প্রায় খসে পরা আঙ্গুলগুলো দিয়ে চোখ দুটো মোছে। আদ্র হয়ে ওঠে আমার মনটা। ভুলে যাই ও
একজন অস্পৃশ্য কুষ্ঠ রোগী। মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে সান্ত্বনা দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করি, মনে
হয় তোমরা ঔষধ খাচ্ছ না। কিন্তু কেন?

গনা যা বলল, কথাগুলোর যৌক্তিকতা অস্বীকার করতে পারলাম না। যদি ধরে নেওয়া যায়
ওরা একদম সুস্থ্য হয়ে গেল। তাহলে কি হাত পায়ের বিকৃত আঙ্গুলগুলো কি আবার গজাবে? আশার
হাতের মুখের বিকৃতি ঠিক হয়ে আবার কি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে? তা যদি না হয় তবে তো ওদের
কোন কর্মক্ষমতা থাকবেনা। কিছু কাজ করতে না পারলে গ্রাসাচ্ছদনের জন্য সেই অন্যের ওপর ভরসা
করে থাকতে হবে। মানুষ তথাকথিত সমাজের কাছ থেকে যে ঘৃনা অবজ্ঞা যা এতদিন পেয়ে আসছে তার
এতটুকু পরিবর্তন হবেনা। তাহলে লাভ কি! তার থেকে এই অবস্থা অনেক অনেক ভাল। আজ সমবেদনা
দয়া যাই হোক মানুষ দু পাঁচ টাকা ভিক্ষে দেয়। এতে কোনমতে চলে যায়।
আমি হাতের আঙ্গুলের দিকে তাকালাম। দিনে দিনে আরো খসে যাবে। একসময় ঠুটো হাত পা
নিয়ে চলতে হবে। তখন এটাই হয়ত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করবে। দরদী জনতা আরো সমব্যথী হয়ে
টাকা পয়সা দিতে কার্পণ্য করবেনা। কিন্তু যারা কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত তারা হয়ত রোগটাকে আশ্রয় করে
বাঁচার পথ হিসাবে ব্যবহার করছে। একবারও ভেবে দেখছেনা, এই ছোয়াচে রোগটার জীবানু অতি সহজে
ওদের ব্যবহার্য জামা কাপড় গৃহস্থালি বাসন কোসনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। অশিক্ষিত গণাকে
নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি। বারবার বলছি, দেখ স্বার্থপরের মত তোমরা নিজের কথা বেশী
ভাবছ। তুমিও একজন মানুষ। সমাজের ভাল মম্দের দায় তুমি এড়াতে পারনা। তোমাকে অবশ্য সচেতন
হতে হবে।

গণা হয়ত তুমি বলবে, সমাজ তোমাদের একঘরে করে রেখেছে। কয়েকটা পরিবার শহর থেকে
বাইরে নদীর পারে কোনমতে ছাপরা বানিয়ে আছ। তথাকথিত সমাজের কেউ তো একবার উঁকি মেরেও
দেখেনা। ওরা কেমন আছে। বাঁচল কি মরল, কারো মাথা ব্যথা নেই। তাহলে ওরাই বা অন্যের কথা
ভাববে কেন? আমি তখন বলি, তুমি মারাত্মক ছোয়চে রোগটার কথা ভাবছনা। সুস্থ্য কোন লোকের
ভয় পাওয়া স্বভাবিক! তোমার মেয়ের কথা একবার ভেবে দেখেছ? তোমাদের সাথে থাকতে থাকতে ও
আজ না হয় কাল হয়ত কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত হতে পারে। সেজন্য বলছি, সবাইকে বল সময় নষ্ট না করে
নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মত ঔষধ খেতে।

গণা আমার কথা শুনে ভাল মন্দ কিছু বলল না। বুঝতে পারলাম কথাটা মনঃপুত হোলনা।
জীবনটা এতদিন যেভাবে কাটিয়ে এসেছে সেভাবেই কাটিয়ে যেতে চায় ও। প্রতিদিন সকালে কোনমতে
ট্রাইসাইকেল চালিয়ে এখানে পৌঁছাতে পারলে হোল। তারপর হাত পেতে বসে থাকা। কোন রকম কায়িক
পরিশ্রম নেই। টেনশন্ নেই। সারাদিনে যতটুকু পাওয়া যায় তাতেই তৃপ্ত থকলে নিস্তরঙ্গ জীবনটা চলে
যাবে। সময়ে সময়ে দরদী অথবা পূণ্য লোভাতুর মানুষেরা টাকা পয়সার সাথে সাথে এটা সেটাও দিয়ে
যায়। কোন কোন দিন গণার সনির্বন্ধ অনুরোধে কলাটা আপেলটা ওর হাত থেকে নিয়ে খেতে হয়েছে।
মা আমাকে চাড়াল বলে ডাকে। আমার নাকি ঘৃণা পিত্তা বলে কিছু নেই। সেই আমারও ভেতরটা
ঘিনঘিন করে। বমি আসে। ইচ্ছে না থাকলে তবু খেয়ে নি। গণাকে কষ্ট দিতে মন চায়না!
ইদানিং আমি দুপুর বেলায় যেতাম গণার কাছে। তখন রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা থাকে। ছায়ায়
গাড়ীটা প্লেস্ করে একটা উচু যায়গা দেখে বসে নানা সুখ দুঃখের গল্প হোত ওর সাথে। এরমধ্যে বাবার
অসুস্থ্তার জন্য দিন পনের আমাকে খুব ব্যস্ত থকতে হয়েছে। গণার খোঁজ খবর করতে পারিনি। বাবা
খানিকটা সুস্থ্ হ’তে যথারীতি দুপুরে গেলাম দেখা করতে। কাছাকাছি গিয়ে আমি হতবাক! গনার
ট্রাইসাইকেলটা আশেপাশে কোথাও নেই। বুঝতে পারছিনা কি হোল। বৃষ্টি বাদলার দিন হলে তবু কথা
ছিল। মনটা খারাপ হয়ে গেল। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে চলে আসলাম।

পরপর তিনদিন ফিরে আসলাম। পরদিন সকালে ঠিক করলাম, একবার দেখে আসি। নিশ্চয়
কিছু অসুবিধা হয়েছে। বাচ্চাটারও কিছু হতে পারে! কিন্তু কুষ্ঠ রোগীদের বস্তিটা ঠিক কোথায় জানিনা।
গণা বলেছিল নদীর পারে। মনে হয় অসুবিধা হবেনা। কিন্তু পাদুটো সরছেনা। আমার পারিবারিক
অহঙ্কার, অন্ত্যজ কারো বস্তিতে যেতে আমাকে বাধা দিল। তার ওপর কুষ্ঠ রোগীদের বস্তি! আমার
আজম্ম মানবিকতার শিক্ষা, আমাকে পথ দেখাল। আমি সেসব বস্তাপচা জড়তা কাটিয়ে পৌছে গেলাম
নদীর পারে কুষ্ঠ বস্তিতে। পরপর দশ বারোটা টালির ঘর বা ছাপরা। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে
শারীরিক বিকৃতি নিয়ে কয়েকজন বসে আছে। ওরা অপরিচিত হাট্টাকাট্টা সুস্থ্ আমাকে দেখে একটু যেন অবাক হোল। ওদের একজনকে জিজ্ঞেস করে গণার ঘরটা বের করতে অসুবিধা হোলনা।
দিনের বেলতেও ভেতরটা প্রায়া্ন্ধকার। ঘরে জানলার কোন বালাই নেই। ঢোকার সময় বাইরে
চোখে পড়ল ট্রাইসাইকেলটা। ভেতরে ঢুকে প্রথম কিছুই নজরে আসছিলনা। আমাকে ঘরের মধ্যে দেখে ওরা ভুত দেখার মত চমকে গেল। গণা উঠতে গিয়ে অসহায়ের মত আবার শুয়ে পড়ল। বুঝলাম উঠে বসার ক্ষমতা নেই। তবু হাত দিয়ে ইঙ্গিতে পাশের বাঁশের মাচায় বসতে বলল। মাচায় না বসে আমি ওর
মাথার পাশে বসলাম। আশা মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বিস্ফারিত নেত্রে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়ত ওভাবে গণার পাশে বসতে দেখে আমার মাথার সুস্থ্তা সম্বন্ধে সন্ধিহান। ঘরের পরিবেশ কহতব্য নয়। নাকে পেচ্ছাব পায়খানার তীব্র গন্ধ আসছে। এখানে সুস্থ্ মানুষও অসুস্থ্ হয়ে পড়বে। আমি নিজের ভালমন্দ নিয়ে ভাবছিনা। একজন রোগগ্রস্থ চিরঅক্ষম মানুষের পাশে দাড়াবার জন্য এখানে এসেছি। 

জিজ্ঞেস করে আশার কাছ থেকে জানতে পারলাম কয়েকদিন ধরে দাস্ত বমি আর জ্বরে ভুগছে।
কাহিল হচ্ছে দিনকে দিন। ঔষধপত্র কিছুই পড়ছেনা। কেনর জবাব না দিয়ে মুখ নীচু করে দাড়িয়ে
থাকল আশা। বুঝতে অসুবিধা হোলনা, গণার চিকিৎসা দূরে থাক কারোই কিছু পেটে পড়ছে কিনা
সন্দেহ। হাড় জিরজিরে চেহারার বাচ্চাটাকে দেখে আরো খারাপ লাগল। গনার কাছে শুনেছি, মাঝে মাঝে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আসে। ঔষধপত্র দেয়। সুবিধা অসুবিধার খোঁজখবর নেয়। খুব দরকারে ফোন করলে ওরা চলে আসে। আমি আর বসে না থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। এখনই কিছু খাবারের বন্দোবস্ত করতে হবে। ফোন নম্বর জোগাড় করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ফোন করা জরুরী। তাড়াতাড়ি আসবার জন্য। কিছু খাবার দাবার নিয়ে এসে দেখি, ওরা ফোন পেয়ে চলে এসেছে। ভাল লাগল ভেবে, গণা
এ যাত্রায় বেচে যাবে। মনে হয় কয়েকদিন বিশ্রাম নিতে হবে। ঠিক আছে, কিন্তু সংসার চলবে কি
করে? গণাকে বলে আমি বেড়িয়ে পরলাম ট্রাই সাইকেলটা নিয়ে। একটা পিচবোর্ডে বড়বড় করে লিখলাম,কুষ্ঠরোগী গণা মরণাপন্ন। ওকে মুক্ত হস্তে সাহার্য করুন। আগের যায়গায় হোটলের পাশে বোর্ডটা ট্রাইসাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে, একটা থালা রেখে দাড়িয়ে পড়লাম পাশে।

Comments

  1. দুঃখিত। গল্পটা আংশিক প্রকাশ হয়েছে। বুঝতে পারছিনা পুরো গল্পটা কি পাওয়া যায়নি ?

    ReplyDelete

Post a Comment