বৃত্ত
১
"ঝুটমুট কে ওয়াদে ভী সব ইয়াদ করা দো,
ও ভেজওয়া দো মেরা ও সামান লওটা দো......"
গানের কথাগুলোয়
চোদ্দ বছরের আগের একটা সন্ধ্যা মনের
ক্য৷নভাসে ভেসে উঠতেই জানালা দিয়ে বাইরে চোখ রাখল শ্রী----বৃষ্টি দিয়ে আঁকা ঝাপসা সাঁঝে , বাতি জ্বলেছে ঘরে ঘরে I
মুহূর্তে গানটা বন্ধ---
"আবার এটা বাজাও না ,
রাজু ,,প্লিজ "--- রাজুকে মৃদু স্বরে বলল শ্রী ৷
----দুঃখবিলাসে জড়িয়েছে মনI ধীর গতির গাড়ি--ক্লান্ত শরীর আর অঝোর ধারা ----
"এক আকেলি ছত্রী মে যব আধে আধে ভিগ রহে থে ----"
সেদিনও ঘরে আশাজীর কন্ঠে এই কথাগুলোই সুরের আবেশ ছড়িয়েছিল ,হঠাৎ টেলিফোনের ওপার থেকে শান্ত সোমের গলায় তখন---
"বাবা কিছুতেই সম্পর্কটা মানছেন না শ্রী ,তুমি নতুন করে ভেবে নাও ,sorry ".....
"কি ভাবব সোম !!! কিভাবে সম্ভব !! আমি তো তোমাতেই শুরু ,তোমাতেই শেষ --তুমি আর বুড়ো বাবা-মা ---এই তো আমার জগৎ ৷ এমন ভাবে সরে যেওনা ,
শোনো না-- শোনো....."
শ্রী'র কান্নাজড়ানো কথাগুলো থামিয়ে
নিরুত্তাপ স্বরে সম্রাটের গোছানো উত্তর---
"না,শ্রী ,বাবা এমনিতেই সম্পর্কটা মানছিলেন না ,তারপর তোমার সুগারের রিপোর্টটা জেনে আর কোনোভাবেই মত দিচ্ছেন না৷ বুঝতেই তো পারছ একমাত্র ছেলে ,কাজেই ......"
চোখ মুছতে মুছতে শ্রী এক শ্বাসে ঝড়ের গতিতে তখন----"হ্যালো-হ্যালো ,
শুনতে পাচ্ছ সোম , শোনো প্লিজ ---প্লিজ শোনো ....."
ওপারে নিস্তব্ধতা ---
"এক ইজাজত দে দো বাস যব ইসকো দফ্নাউঙ্গি....."
দশ বছরের সম্পর্কের ইতিটা গানটার সাথে যেন মিশে গেলI
সেই পনেরো বছরের কিশোরীর ধুকপুকানি,একুশের লজ্জা ,পঁচিশে ঘর বাঁধার প্রস্তুতি .......দুটো বাক্যেই শেষ. ....!!!
হতে পারে !!!
বৃষ্টিভেজা সন্ধ্য৷য় পথ চলতে চলতে শ্রী ফিরে গেছে ফেলে আসা জীবনটাতে ....
"সেদিন থেকে আজ --মাঝের এই চোদ্দটা বছরে আমিটাই তো বদলে গেলাম ---মা চলে গেল--বাবার কথা ভেবে প্রেমহীন বিয়ে করলাম ,বছর খানেক যেতেই মেয়ের মা I
কমতি তো নেই কোথাও,বরের সাথে প্রেম না হোক বন্ধুত্ব হল,টান এল I বিয়ের আগে ফেলে আসা মুহূর্ত গুলোকে মেলে ধরেছিলাম অনির্বাণের কাছেI"
" উফ্"
"Sorry দিদি...."
জোরে একটা ব্রেক মেরেই রাজু ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাল I
রাজুর কথায় সিটে এলানো শরীরটাকে গুছিয়ে নিয়েই -- "একটু তো খেয়াল করে চল--- "
পরক্ষনে ভাবল -"নিজেই তো বেখেয়ালী ছিলাম,সম্বিত পেয়ে আবার সেই চেনা পথে ৷ কি হবে আর ওসব ভেবে!!
সব ক্ষত হয়ত সারাতেও নেই ....."
২
মনটাকে গুছিয়ে নিয়ে শ্রী চিন্তা করল--
"বাড়ি গিয়েই মাসিকে ছুটি দিতে হবে,সারাটা দিন বাবাকে বড্ড আগলে রাখে I জিয়াকেও যে কত যত্ন
করে I
ওহো ,ডাঃ সাক্সেনার appointment টা অনি নিল কি না জানতেই ভুলে গেলাম, মানুষটাও বড় ভোলা,একবার জানাবে তো !"
appointment টা শনিবার পাওয়াতে ভালোই হয়েছে ---
সময়মতো নার্সিংহোমে পৌঁছেই অনির্বাণ শ্বশুরমশাইয়ের হাতে আলতো করে হাত চেপে বলল--
"মাসি আছে বাবা,একটু বস,আমরা রিপোর্টিং টা করে আসি I"
তাড়াতাড়ি রিসেপশনে গিয়ে শ্রীতমা একটু জোর গলাতেই বলে ফেলল-
"Excuse me . paitient's name is Mr.S paul....."
serial no যে কত হয়, সেটা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ঘাড়ের কাছে একটা চেনা শ্বাস--
"কেমন আছ ? "
পিছন ফিরে না তাকালেও গলাটা তো ভোলার নয়, শ্রীতমা পাশ কাটিয়ে চলে যাবে ভাবলেও
পারল না, ঘুরে বলল --
"কেমন দেখছ ?
অনি --অনি ,শুনছ--ইনি সম্রাট ,তুমি তো সবই জানো I তোমরা কথা বল,সোম ৷ অনি ,মানে অনির্বাণ
তোমাকে গল্পে বেশ চেনে ৷
আমি একটু বাবাকে দেখে আসিI "
"কাকিমা কেমন আছেন ,শ্রী ?"
"মা ! !মা তো নেই ৷"
একটু অস্বস্তিতে সম্রাটের উত্তর "ও হো sorry "
"সরি কেন !! যাক, কথা বল কেমন"
বলেই শ্রী হনহন করে হেঁটে waiting lounge এর দিকে এগিয়ে গেল৷
"বলুন সম্রাট, সব ঠিকঠাক তো ? "
সপ্রতিভ প্রশ্ন অনির্বাণের ৷
জড়তা নিয়ে উত্তরটা এল--
"এই আর কি, wife আছে chamber -এ ,
প্রবলেমটা মানসিক,বেড়েই চলেছে৷ কিছুই তো ঘাটতি নেই, তবু বুঝিনা I"
"হুম্ ,তা ,কবে থেকে ?"
"এই ২ বছর I"
"ইস্যু? "
"আড়াই বছরের ছেলে, যমজ৷
আপনার -- I mean আপনাদের অনির্বাণ ?"
চোখেমুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে অনির্বাণ বলল-
"একটি মেয়ে...জানেন ,একদম মায়ের মতো ৷"
"অনির্বান --আপনি --মানে-- প্রফেসন ?"
"ও হ্যাঁ ,আমি ডঃঅনির্বান দাশগুপ্ত,কলেজে পড়াই ,ব্যসI
আপনি তো SBI তে ?"
"হুম, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ৷"
"আচ্ছা সোম ,ওহ্ please don't mind সোম বলে ফেললাম,আসলে এটাতেই তো আপনাকে বেশী জানি ,তা আপনার wife ......মানে হঠাৎই !! নাকি পুরানো ?"
দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলল সোম--"জানিনা "
একটু ভেবে অনির্বান বলতে থাকল--Don't take it otherwise , মানে হতে পারে পূর্বপুরুষ এর কোনো সূত্রে, অনেক প্রজন্ম আগে --ওনারা হয়ত জানতেনও না ৷"
হতাশ কন্ঠ শোনা গেল-" may be ..."
মুহূর্তের মধ্যে অনির্বাণের কথাগুলো তীরের মতো বিঁধে গেল সোমকে ---
"আমি শ্রীতমার সবটা জেনেছিলাম, আসলে জানলাম বা না জানলাম সেটা বড় নয় ,দায়িত্বটা নিয়েছিলাম ,ইচ্ছে টা ছিল বাধাটুকু জয় করারI
একটা দিশাহারা মানুষকে বন্ধু করে নিয়ে লড়াইটা চালিয়ে গেছি ,সুস্থ ভাবেই মেয়েটাকে কোলে পেয়েছে শ্রীI
এখন জীবনযাত্রা দুজনার ----এই পথ যদি না শেষ হয় এমন আর কি------ --হা হা হা, রোজ বন্ধুত্বটা নিয়ে বাঁচা ভায়া, একটু একটু প্রেমও ...."
রিসেপশন থেকে ডাক এল--"Paitient no 28 Mr. S.Paul--- আসবেন প্লিজ I"
অনির্বাণ ঝটপট উঠে দাঁড়াল "চলি স্যর৷ আপনার মিসেস তাড়াতাড়ি সেরে উঠুন,
শুভ কামনা -----এই তো শ্রী এসে গেছ৷
ওঠো বাবা ,আস্তে --চল I"
শ্রী বাবার হাতটা অণির হাতে ধরিয়ে দিল--সোমের দিকে তাকিয়ে একটা তির্যক হাসি হেসে অনির্বানকে বলল "তুমি বাবাকে নিয়ে যাও অনি, আমি আসছি৷"
"OK boss"
যত্ন করে ধরে ধরে শ্বশুরমশাইকে নিয়ে এগিয়ে গেল।
সোমের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে শ্রীর কথাগুলো যেন সোমের চোখের কোনটাকে অজান্তে ভিজিয়ে দিল---
"চলি সম্রাট,দেখা হবে ভাবনি তো,যাক ভালো থেকো
আর হ্যঁ৷ ভালো রেখো ৷"
বাঙালীর রবি ঠাকুরকে ছাড়া সব যে অপূর্ণ....
শ্রীতমা চলে যেতে যেতে ভাবে...
"দূর হতে যদি দেখ চাহি ,
পারিবে না চিনিতে আমায় ,
হে বন্ধু বিদায় ৷৷"
Excellent Marvellous
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো।👌👌
ReplyDelete