সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল জুড়ে নিয়মিত চলছে কবিতাচর্চা। কবিতা নিয়ে প্রবল স্বপ্ন দেখা। বাংলা কবিতা লেখা হচ্ছে প্রান্তে প্রান্তে। অন্তর্জাল এবং মুদ্রিত পত্রিকার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেও কিছু ভালো আর সৎ কবিতার মুখোমুখি দাড়াতে পারছি আমরা। কত প্রানবন্ত নুতন কলম নুতন কবিতা লিখছেন। পাঠক হিসেবে আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এই উত্তর জনপদ জুড়েও অনেক তরুণতম কবি খুব নিবিড়তা নিয়ে লিখে চলেছেন বাংলা কবিতা।
তেমনই কিছু কবিকে নিয়েই এই লেখা লিখছেন
কবি সুবীর সরকার। আজ দশম কিস্তি।
স্পর্শ ধ্বনি
বর্ণজিৎ বর্মন
এক একটা স্পর্শ ধ্বনি এক একটা বাঘ আর এখানে
হেমন্ত রাত শুয়ে থাকে
অজান্তে
জন্ম নেয় একটা গাছ;
জন্ম নেয় একটা গল্প বলার পাখি
এভাবে একটা শতাব্দি এগিয়ে যায়
নদী তে বয়ে যায়
জল
হিল্লোল তুলে আত্মহারা হয়ে পড়ে
নাগরিকের ছায়া পরে নদীর জলে
রঙ্গিন মাছ গোধূলির আলোয় ভেসে বেড়ায়
গাছ এবং মাটি
বর্ণজিৎ বর্মন
সম্পর্ক গুলো ঠিক সেরকম হওয়া উচিত
গাছ এবং মাটির সংসারের মতো
কৃষ্ণ পক্ষ হোক বা শুক্ল পক্ষ
রাত কিংবা দিন জীবন সুখ সেতুতে বাঁধা
মাছ আর জলের কোনো দিন ব্রেক আপ হয়নি
স্রোতের অনুকূল বা প্রতিকূল
ঢেউ আসুক না কেন এই উন্মুক্ত বুকে
সামলে ওঠার নিয়ম তারা জানে
যেমন মা তার সন্তানকে সামলায়
কিন্তু অনুঘটক প্রবেশ করলেই
সব রাসায়নিক বিক্রিয়া ছটফট করতে করতে আত্মা মুক্তি চায়
গাছ এবং মাটি সংসার সাজায়
শিল্প
বর্ণজিৎ বর্মন
তুমি যে ভাবে কথা বলো
আমি তা পারি না-
হাঁটা এবং চাহনিতে লেগে থাকে পরশ ভঙ্গি
পারি না; তোমার কৃতী ধরতে
টেরাকোটা মহিমা
আমি তো আল পথে হাঁটি
গাঁ এর গন্ধ মাখা , পক্সের দাগ মুখে
আলমারি
বর্ণজিৎ বর্মন
আলমারির মতো কখনই
জীবনটা কে সাজাতে পারলাম না
দরিদ্র মুখ গাছতলায় সাজাই -
আয়না ভেঙে গেছে
মুখ জুড়ে কালোজিরে দাগ
এখন
নদীর অভিশপ্ত অভিমান গুলো
শোকেসের ভাই বোন
লালনকথা
বর্ণজিৎ বর্মন
কোথা থেকে বেরিয়ে আসে কৃষ্ণ অত সুর
সুদূরের আহ্বান এখানে কত মিলনমধুর
কিছুক্ষণ আগে যে ফুল ফুটেছে
তার সৌরভ আকাশে বাতাসে ভাসছে
প্রজাপতি জেনে গেছে
লোভে লোভে অলিকুল এখানে নবীন ঘ্রাণে ব্যাকুল হৃদয়ে ছুটিয়া আসিতেছে
খবর পেয়েছে দক্ষিণের জানালাও
শোক করে যে বসে ছিল খাদের কিনারে
সে স্বপ্ন দেখে কচুরিপানা ফুলের
মতো ভাসতে হবে অনবরত
গহীন জীবনের গাঙে
তারপর শোক কেন? ভালবাসায় শ্রদ্ধা আনো
নিবেদন করি চরণে চরণে
ওদিকে দেখো কতো ভক্তি ,
কত ভক্ত সমাগম
এদিকেই দুঃখ ভুলিয়া যাওয়া যায় পথে পথে
সুখ লালন করে
ফকির বাউল আগামীর স্বপ্ন মুখ
দুলালি হেমব্রম
বর্ণজিৎ বর্মন
যে দিকে চোখ যায়
ভারতবর্ষ দেখি
বীরভূম, হবিবপুর দেখি
বস্তিতে বস্তিতে-
বিপ্লবী নারী চোখে ভাসে
রেণুকা মার্ডি , হাসিনা মুর্মু হাসে
শহরে গ্রামে -
নারী মানে মা কে দেখি
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ধরণী
__ভোরের আকাশে ফোঁটা
আদিবাসী নারী তুমি
রক্তে লেগে আছে সিধু কানু
যে দিকে চোখ যায়
এই দেশ এই জম্নভূমি
শ্রদ্ধায় হয়েছি নতজানু
ঘুম ভেঙে ডেকে তোলে-
মা ভাত বেড়ে দেয় মুখে
উজ্জ্বলা কিস্কু , মনোরমা সোরেন
যে দিকে চোখ যায়
দুলালি হেমব্রম দেখি
পাকুয়াহাট কেন্দপুকুরে
ঝিনঝিনি উচ্চ বিদ্যালয়ে
আমার ছাত্রী সে আমার ছাত্রী
ভবিষ্যতে নার্স-স্ত্রী-নারী
দেশ স্বাধীন হয়
দুলালি হেমব্রম
পুরুলিয়া,মালদায়
যে দিকে চোখ যায়
প্রাণের এই দেশ
বিচিত্র ভারতবর্ষ
দুলালি হেমব্রম আগুন জ্বালায়
মাননীয় পাঠক। উপরের কবিতাগুলি লিখেছেন তরুণ কবি বর্ণজিৎ বর্মণ।
জন্ম কোচবিহার জেলার গোসানিমারিতে 1990 সালের জুন মাসে । লেখা শুরু ক্লাস নাইন থেকে মূলত কবিতা দিয়েই তার যাত্রা শুরু। এখন গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা মূলক প্রবন্ধ, মুক্ত গদ্য লিখছেন। পিতার অমৃতলোকে গমন, দাদা নিরুদ্দেশ, এক করুণ হতাশার মেঘ আর অপমানের আগুনে পুড়ে পুড়ে কবির জীবন যাপন।
এখন মালদায় থাকেন। পিএইচডি করছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পাশাপাশি বেশ কিছু ওয়েব ও মুদ্রিত পত্রিকায় নিয়মিত লিখে চলেছেন লেখক। তৈরি হচ্ছে তার নিজস্ব পাঠক বৃত্ত।
বর্ণজিৎ বর্মণ সব সময় অনন্ত এক স্বপ্নের খামার বহন করেই বাঁচেন।তার বুকের ভেতর আবহমান এক জীবন খেলা করে।
সময়, জীবন, সম্পর্ক, গ্লানি, দেশ, সমাজ,পরিপার্শ্ব, মান অভিমান, অপমান, উপেক্ষা সব কিছুকেই তিনি তার লেখায় সাবলীল তুলে আনেন।
মানুষের ভেতরের যে শূন্যতা বুঝি সেটাকেই তিনি অনুবাদ করেন।
বর্ণজিৎ বর্মণের শব্দ ব্যবহারে পরিণত এক জায়মান ব্যাপ্তির ছোঁয়া।
তার কাব্যভাষা ম্যাজিকের ছায়ায় ছায়ায় ভেসে চলে।
দুলালী হেমব্রম,হাসিনা মুর্মু,গল্প বলার পাখি,শুয়ে থাকা হেমন্ত রাত,মুখে পক্সের দাগ নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষ_বর্ণজিৎ এর কবিতার জোতজমিতে বুনো মহিষের মত নেমে আসে।সেই বুনো মহিষের নরম চোখে চিরকালীন এক জন্মভূমির মায়া বিছিয়ে থাকে।
তবে বর্ণজিৎ কে এখন একটু ভাবতে হবে আবেগের নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে।আত্মপ্রস্তুতি আর মেদহীন আবেগ দিয়ে নিজের কবিতাকে আরো ধারালো বল্লমের মুখের তীক্ষ্ণতায় রূপান্তরিত করে তুলবে আমি এই প্রত্যাশাই করি।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি বর্ণজিৎ এর জীবন ও যাপনের অনেকটাই জানি।
এটুকু বলতে পারি কবিতাই বর্ণজিৎ এর ধ্যানজ্ঞান।
কবিতার আঙুল ছুঁয়েই তার সমস্ত আগামী।
তরুণ কবি বর্ণজিৎ বর্মণ আগামীতে বাংলা কবিতাকে আলোকিত করবেন এই স্বপ্নই আমি দেখি।
খুব সুন্দর।। ❤️❤️
ReplyDeleteআন্তরিক ধন্যবাদ রইল দাদা
Deleteখুব ভালো লাগলো। লিখে যাও। একরাশ ভালোবাসা থাকলো তোমার পাশে।
ReplyDeleteআন্তরিক ধন্যবাদ 🙏
Deleteভালো থাকবেন সব সময়
সুন্দর
ReplyDeleteআন্তরিক ধন্যবাদ
Delete