খোঁজ খবর - শৌভিক রায়


ডুয়ার্সের পথে পথে এই পুজোতে


শরতের প্রকৃতিতে বোধহয় এমন কোনও অনুঘটক আছে যে আপামর বাঙালিকে এই সময় বারমুখী করে তোলে। বিষয়টি ভাববার। ভারতবর্ষে এত সংখ্যক মানুষ থাকতে, বাঙালিরা কেন এই সময় বাক্স-প্যাঁটরা বেঁধে এদিক-সেদিক দৌড়ে পালায়, তার কারণ ঠিক জানা নেই কারও। কিন্তু বাঙালিরা যায়। এমনিতেও সম্বৎসর তারা ঘুরে বেড়ায়। অন্য সময় কখনও সখনও যদিও বা তাদের আটকে রাখা যায়, শরতের এই সময়, দুর্গাপুজোর পর, বাঙালিদের আটকাবে এরকম সাধ্যি বোধহয় কারও নেই। ফলে, দেশের সর্বত্র তো বটেই, এই সময় তাদের বিদেশেও দেখা যায়। কিন্তু এই নানা জায়গা দেখতে গিয়ে, আমরা অনেক সময় `ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া` স্থানগুলিকে ভুলে যাই। অথচ এই সব জায়গার টানে বাংলার বাইরের বহু জায়গা থেকে মানুষ আসছেন প্রতিনিয়ত!


তাই এবারে আমাদের ডেস্টিনেশন হতে পারে একটু আলাদা....নিজের রাজ্যের বেশ কিছু জায়গাকে দেখা আর চিনে নেওয়া সেই সব জায়গায় লুকিয়ে থাকা নানানা ঐশ্বর্যকে। বাঙালির চিরকালীন `দীপুদা` (দীঘা-পুরি-দার্জিলিং) বাদে এবারের ডেস্টিনেশন তাই `থোরা হটকে`। এই জায়গাগুলির অনেকগুলিই আজকাল অবশ্য নেট-দুনিয়ার দৌলতে অনেকেরই জানা, তবু যেন একবার মনে করিয়ে দেওয়া!


নিউল্যান্ড - সংকোশ - কালিখোলা


শুরু করলাম আলিপুদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের এই তিনটে জায়গা নিয়ে। নিউল্যান্ড মূলত চা-বাগান হলেও, বক্সা ফরেস্ট লাগোয়া বনবস্তিটি আজও যেন ভার্জিন স্পট। হাতের কাছে বক্সার ঘন জঙ্গল আর সন্ধ্যা হলেই নির্জন নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়া বস্তিতে বসে মনে হতেই পারে সভ্যতা থেকে যেন অনেক দূরে চলে এসেছি। রায়ডাকের বয়ে চলার শব্দও কানে আসতে পারে কখনও। চা-বাগানের পুরোনো বাংলোটি শতাব্দী প্রাচীন। অন্যদিকে সংকোশ চা-বাগানটি দেখলে টি-এস্টেট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা করা যায়। পাশেই বইছে বাংলা-অসম সীমান্ত নির্ধারণকারী নদী স্বর্ণ কোশ বা সংকোশ। আর কালিখোলার অপার সৌন্দর্যে পাগল হয় না কে! এস এস বি ক্যাম্পের চেক পোস্টে নিজের পরিচয় ঠিকঠাক লিখিয়ে চলে যাওয়া যেতে পারে ভুটানের সীমানায়। ফুন্টশেলিং দেখতে দেখতে অভ্যস্ত চোখ দেখে নিতে পারে ভুটানের স্বয়ংসম্পূর্ণ ছোট্ট গ্রাম। এখন থেকেও সংকোশের সৌন্দর্য অনবদ্য। বাড়তি পাওনা ভুটানের আতিথ্য। 




শামুকতলা - মহাকালগুড়ি - চিপড়া - তুরতুরি - হাতিপোতা - ফাঁসখাওয়া - ভুটানঘাট


ঠিক থাকবার মতো না হলেও, একদিনের আউটিংয়ে দেখা যেতেই পারে মহাকালগুড়ি নামের পরিচ্ছন্ন গ্রামটি। জনজাতি অধ্যুষিত এই গ্রামের বাড়িঘর, চার্চ, স্কুল সবকিছুই প্রাচীন। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বের চিপড়া অরণ্য বক্সার অন্তর্ভুক্ত হলেও নিজের মতো আলাদা। এখানকার ওয়াচ টাওয়ার থেকে বিস্তৃত দর্শন মেলে অরণ্যভূমির। জলাশয়ে রয়েছে পরিযায়ী পাখিদের দল। শামুকতলা থেকে আর একদিকে রয়েছে তুরতুরি, হাতিপোতা আর ফাঁসখাওয়া। বক্সা জঙ্গলের খুব কাছেই থাকা এই জায়গাগুলির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। জয়ন্তী চা বাগান, তুরতুরি চা বাগান ইত্যাদির সবুজ পরিবেশ তাদের যেন আরও আকর্ষণীয় করেছে। আর ভুটানঘাটের পিপিংখোলা না দেখলে বোঝা যাবে না এখানে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে!




বারবিশা শিলবাংলো - শিকিয়াঝোরা


নির্জনে ঘোলানি নদীর ধারে সময় কাটাবার শ্রেষ্ঠ জায়গা শিলবাংলো। রাত্রিবাস নিয়ে আসে অন্য মাদকতা। কপাল ভাল থাকলে দেখা যেতে পারে বনচরদেরও। আর উত্তরবঙ্গের মিনি সুন্দরবন শিকিয়াঝোরা তো এখন অত্যন্ত পরিচিত জায়গা। নৌকায় চেপে ঝোরা দিয়ে ঢুকে পড়া যায় গভীর অরণ্যে। বিভিন্ন ধরণের গাছের পাশাপাশি দেখা পাওয়া যেতে পারে বন্য পশুদের। তবে নৌকো চালকদের গল্পে কান দিয়ে নিজের মতো দেখে নেওয়াই ভাল সবটা। 



চিলাপাতা নলরাজার গড় - মেন্দাবাড়ি - কোদালবস্তি


অরণ্যের ভেতর দিয়ে উত্তরবঙ্গের দীর্ঘতম পথ দেখা যায় চিলাপাতায়। কিংবদন্তি অনুসারে নল-দময়ন্তীর কথা জড়িয়ে থাকলেও, ঐতিহাসিকরা মনে করেন বানিয়া নদীর তীরে গুপ্ত যুগে নল রাজার গড় তৈরি হয়। আপাতভাবে হয়তো কিছুই নেই। তবে এখানে কল্পনার চোখ ভেবে নিতে পারে অনেককিছু। মেন্দাবাড়ি গভীর জঙ্গলে থাকা ক্যাম্প। পাশের ঝোরাতে সন্ধ্যা থেকেই দেখা মেলে নানা প্রাণীর। দিনেও কমতি নেই তাদের। জঙ্গল পার করে কোদালবস্তি নির্জনে জঙ্গলের ধারে সময় কাটাবার আদর্শ জায়গা। অবশ্য সম্পূর্ণ চিলাপাতাকে ঘিরেই আজকাল প্রচুর থাকবার ব্যবস্থা রয়েছে। মনের মানুষ বা পোরো বস্তি অঞ্চলেও কোদালবস্তির মতো অসংখ্য হোম স্টে বা টুরিস্ট লজ। 



রাজাভাতখাওয়া - জয়ন্তী - বক্সা ফোর্ট - লেপচাখা


নতুন করে এদের সম্পর্কে বলবার প্রয়োজন নেই। খুব কম মানুষকেই পাওয়া যাবে যারা এখনও এই জায়গাগুলি যাননি। তবে রাজাভাতখাওয়ার মিউজিয়াম না দেখলে মিস করা হবে অনেককিছু।  জয়ন্তী বহু বর্ণনায় বিবৃত। মহাকাল মন্দির, পুখুরি ইত্যাদিও দেখা উচিত জয়ন্তী দর্শনে। রহস্যময় বক্সা ফোর্ট আর তার ওপরে লেপচাখা অবধি হেঁটে ওঠা এনে দিতে পারে অন্য স্বাদ। অবলীলায় কেটে যাবে কয়েকটা দিন।




কালচিনি - রায়মাটাং - সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগান - ছিপছিপি


কালচিনি হল সেন্ট্রাল ডুয়ার্সের অলিখিত রাজধানী। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে এই একের পর এক চা বাগান তৈরি হয়েছিল এই অঞ্চলে। আর সেই চা বাগানগুলির মধ্যমণি ছিল কালচিনি। ইউরোপিয়ান টি প্লান্টার্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানুষের এখানে আগমন হয় সেই সময়। সেই সময়ের বেশ কিছু নিদর্শন এখনও রয়েছে এখানে। কাছের হ্যামিল্টনগঞ্জ জায়গাটির নামকরণ হয়েছে রেলের ইঞ্জিনিয়ার হ্যামিল্টন সাহেবের নামে। হাসিমারা, রাজাভাতখাওয়া ইত্যাদিও কালচিনির খুব কাছে। আজকের কালচিনিতে কাজিমান গোলের সংগ্রহশালা অবশ্য দ্রষ্টব্য। তামাং সম্প্রদায়ের এই মানুষটি চা শ্রমিক হলেও ছিলেন স্বভাব কবি। বাকপা নৃত্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন তিনি আর একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন একটি সংগ্রহশালা। কালচিনির কাছে রায়মাটাং শান্ত নির্জনে কাটানোর আদর্শ জায়গা। নদী পেরিয়ে ওপারে গিয়ে যে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায় তা অতুলনীয়। সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগান এই অঞ্চলের অন্যতম সেরা সুন্দর চা বাগান। বাগান পার করে ছিপছিপি পৌঁছলে মনে হয় স্বর্গের কাছাকাছি যেন চলে এসেছি!



পাশাখা - ফুন্টশেলিং


পাশাখায় আপাতভাবে সেভাবে দেখবার কিছু নেই। তবে ভুটানের অন্যতম শিল্পকেন্দ্রা দেখে নেওয়া যেতেই পারে। ফুন্টশেলিং সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সকলেই জানি। জয়গাঁ সীমান্ত পার করে ফুন্টশেলিং পৌঁছলে ভুটানের শহর সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা হয়। গুম্ফা, ক্রোকোডাইল পার্ক, তাসি মার্কেট ইত্যাদি ফুন্টশিলিংয়ের অন্যতম আকর্ষণ। ২৩ সেপ্টেম্বর ভুটান গেট খুলবার পর নতুন কিছু নিয়ম চালু করা হয়েছে। ফুন্টশিলিংয়ে ঢুকবার জন্য ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যিক। এপারে জয়গাঁতে তোর্ষা নদীর শোভা দেখাও অন্য অভিজ্ঞতা। তোর্ষা চা বাগানের কাছে আজকাল নতুন কিছু স্পট হয়েছে নিজের মতো সময় কাটাবার। 


জলদাপাড়া - দক্ষিণ খয়েরবাড়ি - কুঞ্জনগর - টোটোপাড়া -    মুজনাই 


বিশ্ব বিখ্যাত জলদাপাড়া অভয়ারণ্যকে ঘিরে শালকুমার, মাদারিহাট ইত্যাদিতে থাকবার প্রচুর ব্যবস্থা রয়েছে। জলদাপাড়ার ভেতরে হলং টুরিস্ট লজ বা বাইরে সরকারি আবাসনে থাকতে গেলে অবশ্য আগে থেকে বন দপ্তরের মাধ্যমে বুকিং করতে হয়। কুঞ্জনগর, দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ইত্যাদিও জলদাপাড়ার অংশ। এসব জায়গায় ইকো পার্ক ও রেসকিউ সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। শালকুমারে শিসামারা নদীর ধরে বসে জলদাপাড়ার রহস্যময় সৌন্দর্য উপভোগ করা আলাদা অভিজ্ঞতা। মাদারিহাট থেকে খুব কাছের টোটোপাড়া পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্র আদিবাসী গোষ্ঠী টোটোদের বাসস্থান। পাহাড়ি ঢালে এই গ্রামের সৌন্দর্য অসামান্য। মুজনাই উত্তরের অন্যতম রহস্যময় নদী। মাদারিহাট থেকে টোটোপাড়া যাওয়ার পথে বা হাতে বাঙাবাড়ি ডিভিশনে দেখে নেওয়া যায় এই নদীর সারা বছরের জলের উৎস তিনটি প্রস্রবণ ও টিলার ওপর অবস্থিত সুন্দর শিবমন্দিরটি। 



লঙ্কাপাড়া - মাকড়াপাড়া - বান্দাপানি


টোটোপাড়ার খুব কাছে, পাহাড়ের অন্য ঢালে, রূপসী লঙ্কাপাড়া। তবে বীরপাড়া হয়ে যাওয়া ভাল। অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যের এই ছোট্ট জনপদ ডুয়ার্সের অন্যতম গর্ব। কাছের মাকড়াপাড়া কালীমন্দিরের জন্য বিখ্যাত হলেও, ভুটান সীমান্তের গুমটু ভুটানে সিমেন্ট তৈরির কারখানা দেখা যায়। পাহাড়ের ওপর রয়েছে ছোট্ট সুন্দর একটি গুম্ফাও। মাকড়াপাড়া থেকে যাওয়া যায় বান্দাপানি চা বাগানে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে পুরোনো চা গাছটিকে দেখতে। এটির বয়স একশোর ওপর। 



গয়েরকাটা - খুট্টিমারি - নাথুয়া 


গয়েরকাটার মধুবনী পার্ক এই অঞ্চলের সেরা আকর্ষণ। তাছাড়াও রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন রিডিং লাইব্রেরি। খুট্টিমারি অরণ্যটির সেভাবে প্রচার না থাকলেও, কোনও অংশে এটি বিখ্যাত নামি অরণ্যগুলির চাইতে কম নয়। খুট্টিমারি পেরিয়ে নাথুয়ায় দেখা মেলে জলঢাকা ও ডায়ানা নদীর সঙ্গম। 



চামুর্চি - লাল ঝামেলা বস্তি

 
জয়গাঁ - ফুন্টশিলিংয়ের মতো ভুটানে ঢুকবার আর একটি দ্বার হল চামুর্চি। অত্যন্ত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের এই জনপদ পার হয়ে ওপারে সামচিতে চলে যাওয়া যায়। দেখা যায় ভুটানের ছোট্ট পরিচ্ছন্ন গ্রাম। চামুর্চি থেকে চা-বাগানের ভেতর দিয়ে দেবপাড়ার কাছে হাই রোডে উঠে ডায়ানা নদী পার করে ডানহাতে ধরণীপুর চা বাগানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া যায় লাল ঝামেলা বস্তিতে। এখানকার সৌন্দর্য আর ডায়ানার জলের আওয়াজে পাথরের মতো শক্ত মনও গলে যেতে বাধ্য!


লাটাগুড়ি - মূর্তি - চাপড়ামারি 


ডুয়ার্সের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। নতুন কিছু বলবার নেই। বহু বর্ণনায় আর ভ্রমণে দিনদিন যেন নষ্ট হতে বসেছে এই বিখ্যাত অরণ্য দুটির অপার রহস্যময়তা। মূর্তি বলে পরিচিত জায়গাটিতেও বড্ড ভিড় বিরক্ত করে তোলে। তবে থাকা ও খাওয়ার অভাব নেই। প্রচুর টুরিস্ট লজ লাটাগুড়িকে ঘিরে। 



ঝালং - দলগাওঁ - জলঢাকা - প্যারেন - তোদে - বিন্দু


অসামান্য সব জনপদ। এইসব জায়গায় যারা থাকেন, তাদেরকে দেখে ঈর্ষা হয়। জলঢাকার অসামান্য সৌন্দর্য আর তাকে বিভিন্নভাবে দেখা এবং সঙ্গে পাহাড়ের রূপ নিজের হাতের মুঠিতে বন্দি করার এরকম সুযোগ কম হয়। ঝালং আর দলগাওঁ ভিউ পয়েন্ট ঠিক সেই সুযোগটাই করে দেয়।  তোদে অনেকটা ওপরে। ভার্জিন স্পট এখনও। কপাল ভাল থাকলে এখন থেকে নাথুলা পাহাড়ের দৃশ্যও দেখা যায়। প্যারেন যেন এক অসামান্য ভ্যালি। একবার পৌঁছলে ফিরতে মন চায় না। বিন্দুতে জলঢাকাকে বেঁধে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলছে। উত্তরবঙ্গের তো বটেই, ভারতের অন্যতম প্রাচীন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে দেখা প্রত্যেকেরই উচিত।  




কুমাই - রকি আইল্যান্ড - সুনটালিখোলা - সামসিং - 
মেটেলি - চালসা  


সর্বত্রই প্রকৃতি উদার হস্ত। কুমাই যেন উত্তরের লেক ডিস্ট্রিক্ট। অসামান্য এর শোভা। পিছিয়ে নেই রকি আইল্যান্ড ও সুনটালিখোলা। অন্যদিকে সামসিং-মেটেলি আর চালসার আবেদনও মোহময়ী। সর্বত্রই থাকবার ব্যবস্থা আছে। 


মালবাজার - গরুবাথান - অহেলা - ডালিমকোট - শাখাম - সৌরেনি 


ডুয়ার্সের অন্যতম প্রাচীন ফোর্ট ডালিমকোট দেখার আনন্দ যেমন, তেমনি অভিজ্ঞতাও অনন্য। মালবাজারকে ঘিরে চলে যাওয়া যায় এখানে। গরুবাথান কালিম্পঙ পাহাড়ের শুরুতেই ছোট্ট জনপদ। নিজের মতো অনন্য। অহেলা ভিউ পয়েন্ট থেকে যে দৃশ্য দেখা যায়, তার তুলনা সে নিজেই। তবে হাতিদের আঁতুরঘর শাখামের নির্জনতা আর নিঃসঙ্গতার বিকল্প সারা ডুয়ার্সে  আর দ্বিতীয়টি নেই। শাখাম থেকে যাওয়া যায় সৌরেনি গ্রামে। রয়েছে জলপ্রপাত। উড়ে আসে পরিযায়ীরা। 



লাভা - লোলেগাঁও - কোলেখাম - ছাঙ্গে - ন্যাওড়া ভ্যালি 


লাভা লোলেগাঁও সম্পর্কে সকলেই অবহিত। পর্যটক ভিড়ে আগের সেই ভাল লাগা অনেকটাই উধাও। তুলনায় কোলেখাম-ছাঙ্গে খানিকটা হালকা এখনও। ছাঙ্গের জলপ্রপাত দেখতে অবশ্য ভিড় বাড়ছে আজকাল। ন্যাওড়া ভ্যালির মধ্যে অবস্থিত এই সব কয়টি জায়গাই অত্যন্ত উপভোগ্য। 



গজলডোবা 


ডুয়ার্সের প্রথম চা বাগান এখানেই তৈরি হয়। অবশ্য সেই চা বাগান আজ আর নেই। তবে তিস্তায় বাঁধ দিয়ে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে অনিন্দ্যসুন্দর টুরিস্ট স্পট। পাশের বিরাট জলাশয় আর অদূরের বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল মিলে অসামান্য হল গজলডোবা। বোটিং, মাছ ধরা আর তিস্তা ও জলাশয়ে ভেসে বেড়ানো পর্যায়িদের দেখতে দেখতে কখন যে সময় কেটে যায়, বোঝাই যায় না! 



মোটামুটি মূল জায়গাগুলিকে ধরে একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম এই লেখায়। আজকাল নিত্যনতুন বহু জায়গায় হোম সাথে বা রিসোর্ট করে প্রচার চালানো হচ্ছে। আসলে উত্তরের প্রায় সব জায়গাই অত্যন্ত সুন্দর। তাই যে কোনও জায়গায় থাকা যায় স্বচ্ছন্দে। রানিছেঁড়া, লিস রিভার, বেদগুড়ির মতো চা বাগানগুলি যেমন অসাধারণ, তেমনি পাপরখেতি, লুকসান, বানারহাট  ইত্যাদি জায়গাগুলিও কম সুন্দর নয়। সাধ্য থাকলে তাই উচিত ডুয়ার্সের পথে পথে নিজের মতো বেরিয়ে পড়া। আর হ্যাঁ, ডুয়ার্স মানে কিন্তু তিস্তার পূর্ব তীর থেকে সংকোশের পশ্চিম তীর অবধি অঞ্চল। দার্জিলিং জেলা ডুয়ার্সের মধ্যে নয়।     


চিত্রস্বত্ত্ব - লেখক   

Comments

  1. অনবদ্য লেখা.. ডুয়ার্সকে নতুনভাবে চিনলাম..

    ReplyDelete

Post a Comment