বই কথা - সম্রাট সরকার


কবি সুবীর সরকারের সাম্প্রতিক কবিতাবই নিয়ে দু-চার কথা


অনেকে বলেন সুবীরের কবিতা ঠিক কমিউনিকেটিভ নয়। সরাসরি খুব অল্প প্রচেষ্টায় ওঁর কবিতা আপনার প্রতিভায় আলোকিত নাও হতে পারে। এবং তা আমার কাছে সত্যি। তাহলে ওঁর কবিতা একেবারে আনকোরা নতুন পাঠক পড়বে কেন, যে পাঠক সদ্য একটু কৌতুহল নিয়েই আজকের বাংলা কবিতা পড়ে দেখতে চাইছে? আসলে শুধু সুবীর নয় যেকনো কবি, যাকে একটু লক্ষ্য করতে ইচ্ছে করছে ইদানিং - তাঁকে সম্পূর্ণ পড়ে ফেলা ভালো। সে কবি যদি মাঝবয়সে এসেও সেই আনকোরা পাঠকের প্রতিভার কাছে ধরা দেন তাহলে তাঁর পুরনো সব বই পড়ে ফেলা ভালো। অভ্যস্থ হয়ে ওঠা যায়। যেকনো পাঠককেই একটু অভ্যস্ত হওয়া প্রয়োজন, কবিতার সঙ্গে। যেমন সে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে নতুন চাকরির সাথে, ব্যবসার সাথে, চপ্পলের সাথে, স্ত্রী-র সাথে, সন্তানের টিনএজের সাথে, শোকের সাথে, অপমানের সাথে, প্রতি নিয়ত নতুনতর জীবনের সাথে। এবং পাঠকের প্রতিভা এভাবেই অভ্যস্ত হয়। তবে তার সুযোগ দিতে হবে। যদি সুযোগ দেয় তবে কিছুদিন পর থেকে সেই অভ্যস্থতা আবার নিজেকেই আরেকটি সুযোগ দেয়। নিজেকে ভাঙার সুযোগ। এখন প্রশ্ন হল সেই সুযোগ কজন নেয় বিশেষত কবিতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য নিজের পাঠপ্রতিভাকে নতুনতর সাজানোর? যদি নেওয়া যায় লাভ আছে। পাঠক নিজেই অধিকতর কমিউনিকেটিভ হয়ে যাবেন তার সাহিত্য-সৃষ্টি পরিসরে।

যে পাঠক দশকের পর দশক কমিউনিকেটিভ হয়ে উঠেছেন বলে অনুভব করেছেন কবিতার সাথে তার কাছে কমিউনিকেটিভ নয় এমন কবিতা শুরুতেই খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা নয়। দূরে সরিয়ে তো দিতেই পারি। পাঠকের অনুশীলিত প্রতিভা রুখে দাঁড়ায় কিনা সেটাই প্রশ্ন।  

এই সূত্র ধরে আমি একটি পদ্ধতি মেনে চলেছি কবিতা পড়বার ক্ষেত্রে। যে কবি অন্ততপক্ষে পনেরো বছর লিখে চলেছেন একটানা বা ছাড়া ছাড়া, তাঁকে যদি এই মধ্যচল্লিশেও প্রথমবার ছুঁয়ে ফেলি তবে তাঁর বিগত সমস্ত বই পড়ে ফেলবার একটা রীতি নির্মান করেছি। তবে এই রীতির বাইরে আছেন কবি সুবীর সরকার। যেহেতু আমি তাঁকে প্রায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ থেকে পড়ছি। মধ্যবয়সে আবিষ্কার করিনি। তবে আমি এই আলোচনা থেকে ওঁর গদ্যকে আলাদা করছি। মুক্ত গদ্য বাদ দিয়ে ওর দুটি উপন্যাস আছে। সে দুটি আমার এখনও পড়ার সুযোগ হয়নি। গদ্যকে আলাদা করছি একটাই কারণে যে গদ্য ওঁর কবিতার থেকে খুব দূর দিয়ে বয়ে যায়নি। বিষয়বস্তু, ভঙ্গি ইত্যাদি বিচার করলে। কিছুবা পুনরাবৃত্তি আছে।  

আমি কিছুদিন আগে মনে করেছিলাম সুবীরের কবিতার মূল কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিগত প্রায় তিরিশ বছরে। কিন্তু এখন মনে হয় আমি একেবারে নির্ভুল ছিলাম না। কবি উত্তম দত্ত-এর মত আমারও মনে হয় কিছু পরিবর্তন হয়েছে। সেই কৌতুহল নিয়েই পড়তে চাইছিলাম তাঁর নতুন দুটি বই “বান্ধবীর ডান গালে রোদ” এবং “দোলনা ও হাসপাতাল”।  

                                  

সুবীরের প্রথম দিককার বই “সাদা ঘোড়া ও লোকপুরাণের কবিতা (২০০০)” বা “বরফবিষয়ক সেমিনার (২০০১)” বা “উনিশে এপ্রিলের কবিতা” থেকে বেশ কিছুটা সরে এসেছেন সুবীর তাঁর সদ্যপ্রকাশিত “বান্ধবীর ডান গালে রোদ” (২০২১)-এ।

এখন সুবীরের মত কবিকে বিভিন্ন ভাবে আবিষ্কারের আনন্দ যে পাঠকের প্রতিভা পেয়েছে তা প্রথমেই ধাক্কা খাবে একাধিক কবিতার পুনরাবৃত্তিতে। “বান্ধবীর ডানগালে রোদ” বেরিয়েছিল ২০২১-এর মে মাসে। প্রকাশক ‘অক্ষর সংলাপ প্রকাশন’। ঠিক দু-মাস বাদে জুলাইয়ে বেরোয় “দোলনা ও হাসপাতাল”। প্রকাশক ‘মৃত্তিকা প্রকাশন’। “দোলনা ও হাসপাতাল”-এ মোট আঠাশটি কবিতা আছে। দুটি বাদে ছাব্বিশটি কবিতা “বান্ধবীর ডানগালে রোদ” থেকে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। এমনকি ক্রমান্বয় পর্যন্ত এক কয়েকটি ক্ষেত্রে। কিন্তু বইয়ের শুরুতে এই সংক্রান্ত উল্লেখ নেই। দ্বিতীয় বইয়ে সমস্ত কবিতা শিরোনামহীন। শুধু ক্রমিক সংখ্যা রয়েছে। প্রথমোক্ত বইয়ে কবিতাগুলির শিরোনাম আছে। পুনর্মুদ্রিত কবিতাগুলোর এই যা ফারাক। এই পুনর্মুদ্রন কবি সুবীরের ক্ষেত্রে নতুন নয়। ২০১৮ তে ওঁর “বিবাহবাজনা” প্রকাশিত হয় ‘হাওয়াকল’ থেকে। ওই বইয়ের একাধিক কবিতা আবার “পর্যটকের টুপি ও অন্যান্য”-তে আছে। প্রকাশকাল ২০২১। প্রকাশক ‘কবিতা আশ্রম’। একই কবিতা বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থে বিভিন্ন নামে বা নামহীন হয়ে অন্তর্ভুক্ত করার অধিকার কবির রয়েছে। কিন্তু আজকের অনুশীলিত পাঠকের প্রতিভা এই পুনর্মুদ্রনে প্রমাদ গুনতে পারে। বিশেষত আজকের পাঠকের প্রতিভা। আমার অতিস্বল্প কবিতা পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে জানি একই কবিতা বিভিন্ন নামে বিভিন্ন বইয়ে পুনর্মুদ্রনের উদাহরণ কিছু কবির ক্ষেত্রে আছে। ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বা কবিতাসংগ্রহ’ ইত্যাদি অবশ্যই বাদ দিয়ে। খোদ জীবনানন্দ দাশের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ “মহাপৃথিবী”-র অনেক কবিতা তাঁর তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ “বনলতা সেন”-এর প্রথম সংস্করণ থেকে পুনর্মুদ্রিত। এবং বুদ্ধদেব বসু এ নিয়ে বেশ অখুশি ছিলেন। বুদ্ধদেব লিখছেন – “জীবনানন্দের নতুন কবিতা পড়বার আশায় যাঁরা মহাপৃথিবী খুলবেন তাঁরা রীতিমত নিরাশ হবেন।... মহাপৃথিবীতে কোনো নতুন সুর লাগেনি; বস্তুত এ বই ভিন্ন নামে বনলতা সেন-এরই পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ।“ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ও তেমন একজন। কিন্তু কেউ অবিশ্বাস করতে পারবেন না জীবনানন্দ-এর সময় থেকে শক্তির সময় আর সুবীরের সময় এক নয়। অতয়েব পাঠক তো নয় বটেই। 

তবে আগে যে উল্লেখ করেছি কাব্যগ্রন্থ থেকে কাব্যগ্রন্থ কবির একনিষ্ঠ সৎ পাঠক নিজেকে কবির মতই তাঁর কবিতার সঙ্গেই ভাঙতে চান এবং আবার নতুন করে গড়তে চান তার কি হবে? বারবার ক্লান্তিকর পুনর্মুদ্রন পড়ে আজকের পাঠক যদি সত্যিই ফাঁকি ধরে ফেলেন? মুখ ফিরিয়ে নেন? আমি কিন্তু বলতে পারি যাঁরা অন্তত পনেরো বছর কবিতা লিখছেন এই সময়ের নিরিখে, যাঁদের কাব্যগ্রন্থ সংখ্যা অন্তত দশ তাদের কাউকে বই থেকে বই হুবহু পুনর্মুদ্রন করতে দেখিনি।

তবে সুবীরের মত প্রতিভাবান কবি কেন করছেন? প্রতিষ্ঠিত কবিদের প্রতি প্রকাশকের চাপ? এখন এই বাংলায় শতশত প্রকাশনা। এর খুব ভালো দিক হল নির্দিষ্ট কিছু বড় প্রকাশনাগুলোর মোড়লগিরি কমেছে। বহু উল্লেখযোগ্য বই এইসব ছোট প্রকাশনা থেকে বেরোচ্ছে। কিন্তু টিঁকে থাকতে হুবহু পুনর্মুদ্রন পাঠককে থমকাতে বাধ্য করবে। আজকের পাঠক সুবীরের কবিতাকে ভালোবেসে যদি “বান্ধবীর ডান গালে রোদ” কেনে তবে তার দু-মাস বাদে “দোলনা ও হাসপাতাল” কিনে পড়ে প্রতারিত হবেন একথা ফেলে দেওয়া যায় না। আর কী আশ্চর্য্য দেখুন ‘বান্ধবীর ডানগালে রোদ’-এ সুবীর নিজেই লিখেছেন –

“ঘন হয়ে আসা নদীখাত।

আমি তোমার ঠান্ডা চোখের দিকে তাকিয়ে 

থাকি

বেসিক্যালি তুমি প্রতারক।

হিমশীতল মেকআপ বক্স।

আর হাসিরা বেরিয়ে আসছে হাসপাতাল

থেকে” 

তার কবিতার প্রতি আমার অভ্যস্থতা আমাকে দিয়েই যদি ঘুরিয়ে সেকথা বলিয়ে নেয়? 

আজকের ইন্টারনেটের যুগে এমনিই কবিদের নিভৃতি খুন হয়ে গেছে। সমীচীন আড়াল খসে গেছে। পাঠকের গরজের ওপর আর বিশ্বাস নেই কবিদের। উল্টে শুরু হয়েছে সর্বক্ষণ পাঠকের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে থাকার প্রলোভন। কম বেশি সমস্ত কবিদের মত সুবীরও কি সেই প্রলোভনে পা দিয়েছেন? তবে কি হবে পাঠকের সেই প্রতিভার যে প্রতিভা কবিকে, কবিতাকে খুঁজে খুঁজে ফিরে নিজেকে অনুশীলিত করে নিতে চায়! কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৪০-এ ‘উত্তর ফাল্গুনী’ বের করার তেরো বছর পর ১৯৫৩-তে ‘সংবর্ত’ প্রকাশ করেন। খ্যাতি জনপ্রিয়তার উচ্চশিখরে থাকার পরও। তেরো বছর তাঁর পাঠক অপেক্ষা করেছেন। ‘উত্তর ফাল্গুনী’ থেকে সম্পূর্ণ অন্যরকম ‘সংবর্ত’ পেয়েছেন তারা।

আমি তাই সুবীরের “দোলনা ও হাসপাতাল” কাব্যগ্রন্থ হিসেবে খারিজ করে দিচ্ছি। মাত্র দুটি নতুন কবিতা সম্বল করে এই বই নতুন কিছু দিতে পারে না। কথা বলতে চাই শুধু “বান্ধবীর ডান গালে রোদ” নিয়ে। 

বিক্ষত হৃদয়, অভিমান, ক্ষোভ আবার বিগত বিপন্নতাকে তুচ্ছ করে পরক্ষণেই তুমুল ফিরে আসা জীবনের আনাচে - সুবীরের কবিতা বরাবর আমাকে এই পথে নিয়ে বেড়ায়। এমন এক মায়াবী আর অনন্য কবিতাভাষা তিনি অর্জন করেছেন এই পথে যে ক্লান্তিহীন আমি পড়ে যেতে পারি তাঁর কবিতা। আমার মত যাঁরা সুবীরকে একটানা পড়ে আসছেন তাঁদের একটা মনে পড়তে পারে।  “Our idea of time is always blended with the idea of space” – (কোলরিজ)। ওঁর কবিতায় মুহূর্তের ধারণার মধ্যে মিশে যায় স্থানিক পরিসর। মুহূর্তই পরিসর হয়ে ওঠে। মুহূর্তের সঙ্গে জুড়ে থাকে অনুভূতি - রঙ - গন্ধ। আর পরিসর জুড়ে অসংখ্য দৃশ্যপট। দুটো এক জায়গায় মিলিত হয় আর সেই বিন্দুতে কবিতার ভাষা লেখেন কবি সুবীর সরকার। তাঁর নবতম কাব্যগ্রন্থ “বান্ধবীর ডান গালে রোদ” সেই কবিতাভাষায় লেখা। পরিচিত অথচ পড়তে ভালো লাগে।

ধরা যাক এই লাইন’টি – “হাওয়ায় দুলে ওঠে হাঁসের বহর”। হাঁসের ফুলে ওঠা শীতকালীন শরীর, তার ওপর হাওয়া এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে। হাঁসের ফুলে ওঠা শরীরের পরিসর ‘বহর’ শব্দটির মধ্যে দিয়ে অলস, স্থুল, স্থবিরতার সাথে ক্ষণিকের হাওয়াবিলাসের নির্লিপ্ত আয়েশে পৌঁছে দেয়। 

ধরা যাক এই কয়টি লাইন – “হাট থেকে বেরিয়ে আস মানুষ আসলে/ দীঘির প্রাচীন জলে ঘাই মারতে থাকে/ মাছ”। উত্তরবঙ্গে অনাবিল হাট ও হাটফেরত মানুষ জাগতিক পরিসর এবং আবহমান। এর সঙ্গে কী তুলনীয়? বহুকালের কোনো নদীর জলের প্রকান্ড মাছ। যে মাছ জলের নীচে মৃদু ঢেউ তুলছে। প্রাচীন নদী এবং প্রকান্ড মাছ দুটোই জাগতিক পরিসর এবং সেই কবে থেকে আবহমানের অনুভূতি বয়ে নিয়ে আসছে হাট ও হাটফেরত মানুষের মত।

ধরা যাক এই দুটি লাইন – “প্রত্যেক বিভাজিকায় লুকিয়ে থাকে/ গান/ পায়ের নখে কাদা”। পায়ের নখের কাদা প্রান্তজীবনের অমোঘ বহন। শত জলের আঁচরেও - শত ভ্রমণেও থেকে যায়। জাগতিক পরিসর। সেই প্রান্তজীবনেরই শরীরের প্রতিটি রোমকূপে খাঁজে যেভাবে লোকগানের সুর ও তার শিহরন বাহিত হয়।

ধরা যাক এই লাইনটি – “থই থই আস্তাবল”। কিলবিল সন্নিবিষ্ট ঘোড়াদের পিঠের ঢেউয়ের পরিসর ভরন্ত টইটম্বুর আস্তাবলের অনুভূতিতে পৌঁছে দেয় – যেন সাগরের মত থই থই জলতল।   

কবিতায় বারবার ফিরে এসেছে হরিপদ, জাহানারা পারভিন, নুরুদ্দিন নামের প্রান্তিক উত্তরজনপদের মানুষ। বারবার এসেছে মহিষ প্রসঙ্গ - উত্তরবাংলার অতিকায় ভদ্র ও বিষন্ন প্রাণীটি। আর আছে সুবীরের শব্দ যুগলের ব্যবহার। আগে লিখেছি। একটা বৈপরীত্য, কখনো অনুসারী ব্যঞ্জনা তৈরি করে। “চোখ ও চিরাগ”, “হিম ও হেমন্ত”, “বাজনা ও বিসর্জন”, “খাদ ও ফাঁদ”, “সুর ও স্বর”, “ভ্রম ও বিভ্রম” এমন কত! কবিতায় বারবার ফিরে এসেছে সুবীরের খোলামেলা জীবন। অনুজপ্রতিম কবিবন্ধুদের উষ্ণতা ও বিশ্বাস। যার সামনে মৃত্যু কী নিদারুণ অভিপ্রেত, সহজ। এই বই তাঁর হৃদয়ের চিত্রখানি। সেই বিক্ষত হৃদয় ফিরে ফিরে গেছে উত্তরবাংলার বিশদে। হাজার হাজার দৃশ্যপটে উদ্ভাসিত উত্তরের আশ্চর্য্যসুন্দর প্রকৃতির সুবীরবৃত্তীয় আবিষ্কারে। উত্তরবাংলার আবহমান দৃশ্য-পরিসর আর তার সঙ্গে মিশে গেছে ক্ষয়িষ্ণু হৃদয়ের হলুদ অনুভূতিমালা।

আর সারা বইটি জুড়ে হলুদ রঙ। সুবীরের বহু বহু কবিতায় প্রিয় হলুদ রঙের প্রসঙ্গ আছে। সেই রঙ এই বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে। আপনাদের মনে থাকতে পারে ‘সাদা ঘোড়া ও লোকপুরাণের কবিতা”-র (২০০০) উৎসর্গ পৃষ্ঠায় লেখাছিল –

“শ্রীমতি শিখা রুদ্র

প্রিয় বৌদি,

যার রান্নাঘর জুড়ে হলুদের গুঁড়ো,

রবীন্দ্রগান আর বড় বড় ঢেউ-এর

পাশে মনখারাপ”

সেই শুরু। পরবর্তী বাইশ বছরের কবিতা জীবনে বারবার ফিরে এসেছে সেই হলুদ রঙ, রোদ্দুরের রঙ। এই বইয়ে আরো বহুল ভাবে। “প্রতিদিন হলুদ” হচ্ছেন আর “হলুদ আলোয় ভরে ওঠে শহরের/ রাস্তাঘাট”। সুবীর দেখেন “আমাদের হলুদ রঙের পৃথিবী” আর কোথাও “হলুদ রঙের বেড়াল ডাকছে”। সুবীর লিখে চলেন “আঁচলে হলুদ মেখে তুমিও দেখ গো-মহিষের/ গাড়ি” আর “হলুদ রঙের ঘরবাড়ি থেকে ভেসে আসছে/ গান” ... এই এতরকমের হলুদ রঙ লিখে চলেন কাব্যগ্রন্থ জুড়ে! 

সুবীরের অনেক কবিতাবইয়ের মত এই বইয়েরও শেষ কবিতার নাম দিয়ে কাব্যগ্রন্থের নাম। বান্ধবীর ডাল গালে যে রোদ্দুর সেও যে হলুদ! কবি নীলাদ্রি দেব-এর প্রচ্ছদে একটু হলুদ রঙ খুঁজছিলাম আমি।    

Comments