গল্প - গৌতমী ভট্টাচার্য


যত কান্ড মঞ্জরীর 

      

            একটা না একটা অদ্ভুত কান্ড সবসময় বাঁধিয়েই থাকে মঞ্জরী। এই তো সেদিন দেওরের বিয়েতে নাচতে গিয়ে হাই হিল জুতো উল্টিয়ে মুখ থুবড়ে সিঁড়ির কোণে পড়ে গিয়ে সে কী কান্ড! বিয়ে দেখা ছেড়ে মঞ্জরীকে নিয়েই তখন সারা বাড়ির লোক এক হয়ে কেউ হলুদ-চুন লাগায়, কেউ পাখার বাতাস করে। যন্ত্রনায় কাতরাতে দেখে কেউ বা তাকে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। এরপর ক্রেপ ব্যান্ডেজের মোটা পড়োতে পা সেজে উঠল মমির মতো। তখন পেডিকিওর করা পা চুন হলুদের গন্ধে যেন বিদ্রূপ করছে। 

            নতুন বৌ চোখের জল মুছতে মুছতে গাড়িতে উঠছে শ্বশুড়বাড়ি যাবার জন্য।  মঞ্জরীকে তখন প্রায় পাঁজাকোলা করে গাড়িতে বসিয়ে শুভযাত্রা করে দেওয়া হল। 

             সেদিন ছিল জামাইষষ্ঠী। ঠাকুরঘরে সবাই তখন পুজোর যোগারে ব্যস্ত। মঞ্জরী ঘরের কাজকর্ম সেরে জামাকাপড়, গামছা, শ্যাম্পু, সাবান নিয়ে স্নানঘরে ঢোকে। পুরোহিত এসে যাবে। তাড়াতাড়ি স্নান সারতে হবে। মঞ্জরী চুলে শ্যাম্পু দিয়ে সারা মাথায় জল ঢেলে চুলগুলো নাড়াচাড়া করছে। কিন্তু কিছুতেই শ্যাম্পু থেকে ফেনা বেরোচ্ছে না। ব্যাপারটা কি ! শ্যাম্পু দেওয়া কম হয়েছে ভেবে আরো খানিকটা শ্যাম্পু শিশি উপুর করে ঢেলে মাথায় দিল। নাঃ কিছুতেই চুলে ফেনা হচ্ছে না। এবার টনক নড়ল মঞ্জরীর। --- এটা শ্যাম্পু তো ! চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে শিশির গায়ে লেবেলটা পড়ে চক্ষু চড়কগাছ। এ কী ! এটা তো লাইজলের শিশি ! এরকম নানা ঘটনা মঞ্জরীর জীবনে রচনাপঞ্জীতে বাঁধা। 

             মঞ্জরী একদিন ওর প্রতিবেশী দিদির সাথে বাজারে যাচ্ছে টুকটাক জিনিস কিনতে। বাড়ির খানিকটা দূরেই বাজার। পাহাড়ি এলাকা। একটু সন্ধ্যের অন্ধকার হতেই রাস্তাগুলো নির্জন হয়ে পরে। বাড়ি ফেরার পথে মঞ্জরীর সেই প্রতিবেশী দিদি হাঁটতে হাঁটতে সামান্য এগিয়ে পরে। ও কয়েক পা পেছনে। হঠাৎ মঞ্জরী অনুভব করছে কেউ যেন ওর কাঁধে গলায় হাত বোলাচ্ছে। কোন চেনা পরিচিতের মধ্যে কারো রসিকতা ভেবে মঞ্জরী মৃদু হেসে বলল,-- কে রে,  অ্যাই কে রে ! এই ফাঁকে বলে রাখি মঞ্জরীর চেহারাটা যথেষ্ট পেশীবহুল। কাজেই চট করে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখাটা বেশ কষ্টসাধ্য। কাঁধে তখনো সুড়সুড় করছে। এবার মঞ্জরীর খেয়াল হল ওর গলায় একটা মোটা সোনার চেন আছে। কোন সাড়া যখন দিচ্ছে না তখন চোর নয় তো ! হারটা খুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে নাকি ! যেমনি ভাবা ওমনি গলায় হাত দিতেই সোনার চেনটা টুপ করে মঞ্জরীর হাতে এসে পরল। 

             আওয়াজ আর বেরোচ্ছে না মঞ্জরীর গলা থেকে। অস্ফুট স্বরে চিৎকার করতে শুরু করল --- চোর ! চোর ! চোর !

Comments

  1. সুব্রত ভট্টাচার্যSeptember 27, 2022 at 2:48 PM

    ভালো লাগছিলো, কিন্তু হঠাৎ শেষ হলো মনে হলো l

    ReplyDelete

Post a Comment