সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল জুড়ে নিয়মিত চলছে কবিতাচর্চা। কবিতা নিয়ে প্রবল স্বপ্ন দেখা। বাংলা কবিতা লেখা হচ্ছে প্রান্তে প্রান্তে। অন্তর্জাল এবং মুদ্রিত পত্রিকার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেও কিছু ভালো আর সৎ কবিতার মুখোমুখি দাড়াতে পারছি আমরা। কত প্রানবন্ত নুতন কলম নুতন কবিতা লিখছেন। পাঠক হিসেবে আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এই উত্তর জনপদ জুড়েও অনেক তরুণতম কবি খুব নিবিড়তা নিয়ে লিখে চলেছেন বাংলা কবিতা।
তেমনই কিছু কবিকে নিয়েই এই লেখা লিখছেন
কবি সুবীর সরকার। আজ নবম কিস্তি।
কত রকমের কবিতা লেখা হয়।প্রতিদিন কত কত কবির কবিতার সাথে পরিচয় ঘটে।অবাক হয়ে বাঁকবদল দেখি।নানান স্বরের স্পর্শ পাই।সমৃদ্ধ হই।পাঠক হিসেবে নিজেকে তাজা রাখতে পারি।
কবি উত্তম দেবনাথ।এই তরুণ কবির বসবাস আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্য কামাক্ষাগুঁড়িতে।
বিচিত্র সব মানুষজন,উদার নিসর্গ,ইতিহাস মিথ,বর্নময় লোকসংস্কৃতি দিয়ে ঘেরা সেই জনপদে থেকেই কবিতা লিখছেন তরুণ কবি উত্তম দেবনাথ।
পাশাপাশি সামাজিক কাজ আর সম্পাদনা করছে উত্তম "কবিতা ও মানবতা" নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা।
প্রকাশিত হয়েছে দুটি কবিতার বই_"আত্মঅন্ধকার" এবং "নিজের অন্য মুখ"।
সেভাবে প্রচারের খুব কাছে না গিয়ে পেশায় শিক্ষক এই কবি নিজের লেখা পড়া নিয়ে নিজস্ব যাপনেই রয়েছে।
২.
উত্তমের কবিতা খুব নিবিড় ভাবে পাঠ করতে গিয়ে দেখি দুঃখ দুঃস্বপ্ন স্বপ্ন প্রেম সম্পর্ক প্রতিদিনের দেখা মানুষের ছায়া প্রকৃতি দেশ সময় মনের অন্দরের সব দ্বিধা_এই সব দিয়ে উত্তম তার কবিতার পরিসর সাজিয়ে রাখছেন তার পাঠকদের সামনে।
কোন কৃত্রিম নির্মাণ প্রয়াস উত্তমকে তাড়া করে না।উত্তম দেখেন_
"পথ দাঁড়িয়ে থাকে মানুষের অপেক্ষায়
মানুষ নিজেকে খরচ করে ফেলেছে পথে।"
কোন কঠিন শব্দ ব্যাবহার না করেই কি এক অদ্ভুত চিরায়ত জীবনদর্শন লিখলেন কবি।
আবার উত্তম লিখে ফেলেন_
আকাশকে বালিশ করে
"নীরবে শুয়ে থাকে অবহেলিত মাঠ
একদিন বুকের স্বপ্ন সবুজে সবুজ
হয়ে উঠবে বলে।"
কত সহজ করে অমোঘ কথাগুলিও বলা যায়!
৩.
মানুষ খুঁজতে গিয়ে জীবন খুঁজতে গিয়ে উত্তম এক অলৌকিক হাহাকার তুলে আনেন।সে মাটিকে খুঁজতে শুরু করে।
উত্তমের দেখা আর দেখানোর এক নিজস্ব লিরিক আছে।কোন এক জায়মান বিস্তারের যুক্তিফাটলের অনন্য আড়াল থেকে উত্তম দেবনাথ তার কবিতাকে নিয়ে যাচ্ছেন লৌকিক আর অলৌকিক এক পরিমণ্ডলের দিকে।
উত্তম আগামীতে লিখবে কারণ তার একটা আত্মপ্রস্তুতি রয়েছে।
মাননীয় পাঠক,আসুন আমরা বরং উত্তম দেবনাথের দুটি কবিতা পাঠ করে ফেলি_
কুড়িয়ে পাওয়া জীবন
উত্তম দেবনাথ
কলার মোচা,শাক,লাউ,ফুল বিক্রি করে
জীবন চলতে থাকে সমাজচ্যুত পিপীলিকার মতো,
একদিন কেউ এগিয়ে এসে দু'টো পয়সা না দিয়ে
সমাজের নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দেয় অভাগীর সংসারে।
রাস্তার পাশে নিজের স্বপ্ন বিক্রি করে
কম্পিত পায়ে দুঃস্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে প্রতিনিয়ত
শেখা হয় না নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার কলাকৌশল।
ঘুমে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে
পূর্বপুরুষ যেন ডাকছে শ্মশান থেকে ওঠে।
রাতের অন্ধকারে নিজেকে কুড়িয়ে বাজারে তোলে--
মনের উপনিবেশ
উত্তম দেবনাথ
আমরা যে পথে যাত্রা আরম্ভ করেছি
ফেরার সময় মন গতিপথ পাল্টে দেবে অজান্তে।
ডিমওয়ালা মাছ খেতে যেমন লাগে
তেমন ভাবে আমাদের চিবিয়ে খায় রক্ষক।
আমরা অন্ধকারে অল্প আলো নিয়ে
জোনাকির মতো এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই
অথচ দিনের বেলা মুখ লুকিয়ে রাখি সূর্যের ভয়ে।
এক একটি রাত কাটে
শিকারীর সামনে বৃষ্টি ভেজা মা পাখির মতো।
দেশ ভাগের মতো মানুষের মনে
ঔপনিবেশিক ভাগাভাগি চলতে থাকে।
একটি সুন্দর বিভাগ, নতুন কবি দের জানার এবং উৎসাহ দেবার জন্য l বর্তমান সংখ্যা র বিশ্লেষণ গুলি সুন্দর l শুভেচ্ছা l
ReplyDeleteখুব সুন্দর আলোচনা
ReplyDeleteদারুণ
ReplyDeleteNice
ReplyDelete