রঙ্গিলা দালানের মাটি - সুবীর সরকার

সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল জুড়ে নিয়মিত চলছে কবিতাচর্চা। কবিতা নিয়ে প্রবল স্বপ্ন দেখা। বাংলা কবিতা লেখা হচ্ছে প্রান্তে প্রান্তে। অন্তর্জাল এবং মুদ্রিত পত্রিকার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেও কিছু ভালো আর সৎ কবিতার মুখোমুখি দাড়াতে পারছি আমরা। কত প্রানবন্ত নুতন কলম নুতন কবিতা লিখছেন। পাঠক হিসেবে আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এই উত্তর জনপদ জুড়েও অনেক তরুণতম কবি খুব নিবিড়তা নিয়ে লিখে চলেছেন বাংলা কবিতা। 

তেমনই কিছু কবিকে নিয়েই এই লেখা লিখছেন 

কবি সুবীর সরকার আজ অষ্ঠম কিস্তি। 


কবি কৃষ্ণ দাস লিখলেন_

ঘরে ফিরছে অদ্রি...
ঘর হারা হচ্ছি ...
কোনো দিন সে ভুগেনি হোম সিক-এ
আজ সে ও আমি হোম সিক এ ভুগছি।

কতটা ভালোবাসা পেলে ঘর হয়
কত টা ভালোবাসায় মানুষ ঘর হারা হয়.…

আজীবন...
তার সাথে
তোমার সাথে 
আমার সাথে

 ঘর ও বাহির সম্পর্ক!! 
ভালোবাসা পেলে মানুষ,
অকারনে নরম হয়...

অকারনে সব কিছু মেনে নেয়...
অকাতরে সব কিছু কেমন...
বিলিয়ে দেয়।


২.....

আগামীকাল ধর্মঘট ডেকেছে জুকারবার্গ। 
আজ ইন্দ্রাসনে বসেছে সহস্রলোচন ইন্দ্র...
নুহুষ পড়ে আছে..অষ্ট-পদ-যানে..

আচ্ছা!!

মহর্ষি গৌতম কি আজও ভালোবাসে অহল্যা কে মনে প্রাণে?...


৩...
অদ্রির ঘুম ভেঙ্গেছে,
অথবা নতুন করে ঘুমিয়ে পড়েছে,...
আমার শোকের অথবা সুখের জন্মদিন।

ভালোবাসি বলে নির্লজ্জ হওয়া সাজে না।
শুধু ভালোবাসি বলেই...
সন্ন্যাস নেওয়া হল না।...


এই কবিতাটি পড়তে পড়তে আমি বিস্ময় নিয়ে দেখছিলাম কি অদ্ভুত এক মুন্সিয়ানা নিয়ে কবি কয়েকটি তীব্র মোচড়ে একটা যুক্তিফাটলের টিউনিং স্কেলে স্কেলে মেলে ধরছেন। এক তরুণ কলম মগ্ন হচ্ছেন তার সমস্ত মেধা,মনন,দেখা নিয়ে অপার এক শব্দভুবনের চিরায়ত চলনের ভিতর। কৃষ্ণ দাস। এই তরুণ কবির বসবাস আলিপুরদুয়ার জেলার তপসিখাতায়। প্রাণচঞ্চল কৃষ্ণ একেবারেই প্রচারবিমুখ। সে পড়তে ভালোবাসে। গ্রন্থের জন্য তার অনুসন্ধান আমি লক্ষ্য করি। একটা খোঁজ,একটা তাড়না, সমকাল, দেশ, রাজনীতি অস্থিরতার দিকে নিয়ে যায় তাকে।
কৃষ্ণ লেখে_

ভালোবাসি বলে কাছে আসা হয়নি....
ভালোবাসলে কাছে যেতে নেই।.....

বুকের ভিতর কার্ফিউ নিয়ে ঘুরতে হয়।...

কশ্চিৎ দেখা হলে....
অচেনার ভান করে....
মুখ ধুয়েমুছে রাখতে হয়।



কিংবা কৃষ্ণ একা একাই উচ্চারণ করে_

১.
আর মায়ের কাছে যেতে পারি না

২.
মায়ের চিতাস্থান থেকে তুলে আনি  
শৈশব।
খোলা আকাশ, বিরাগী বাতাস,শুধু স্মৃতির দরজা খুলে নিয়ে আসে,নিষ্পাপ আমিকে।

আমি বুক ভরে শ্বাস নেই
,মা আসলে প্রান বায়ু,
প্রতিনিয়ত শিখিয়ে যায়,
ভালোবেসে কি করে মিশে যেতে হয়।

৩.
কিছুটা পথ হামাগুড়ির পর পিছনে ফিরে দেখি,
মা আমাকে কোলে নিয়ে বসে আছে,
কিছুদিন পর,
মায়া কেটে সাঁতার কাটছি,
সাঁতার কাটছি,
পিছনে মায়ের মুখে বেদনা।
মায়ের কোলের কাছে,
আঁচলের খুট...কেটে ডানা মেলি,

৪.
ছুট ছুট ছুট,অনেক টা...সময়,
হঠাৎ দেখি সেই মুখ টা আর নেই,

আমি দেখলাম আমার শৈশবের লাশটি,বুকে আগলে নিয়ে
ছায়ার মতন  বসে আছে,মা।
হাজার কষ্টেও আর,ফিরতে পারছি না,.........
আর ফিরতে পারছি না......!

কৃষ্ণ দক্ষ ডুবুরির মতন তার জারণ বিজারণ গুলি তলদেশ থেকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে সাজিয়ে দিতে থাকে আর একটা ধাক্কা খাওয়া জীবনের গল্প বারবার বদলে বদলে যায় তার নির্মাণের কুশলতায়। নিজেকে মগ্ন আর যত্নবান করে তুলতে পারলে আগামীতে অনেক লিখবে কৃষ্ণ দাস। ওর কবিতার ওপর ঝুঁকে পড়তে পড়তে দেখি,কৃষ্ণ লিখছে_

প্রতিবার সার্কাসের সময়
চিড়িয়াখানা খুলে যায়...
বেড়িয়ে আসে রঙীন বাঁদর অথবা বাঁদরী।
অদ্ভুতদর্শন জীব....।
রঙ মেখে মিশে যায় জনতার ভীড়ে.


তারা নড়ে চড়ে বেড়ায়,
হাত পা নাড়ে...
মন্দিরে যায় 
নামাজ পড়ে..........


আর,আর...
খেলা হবে বলে শেষ রাতে লাশ ফেলে চলে যায়।


শুভকামনা,কবি কৃষ্ণ দাসের জন্য।

Comments

  1. খুবই সুন্দর

    ReplyDelete
  2. ধন্যবাদ কথা লহরীকে তৎসহ শ্রদ্ধেয় সুবীর সরকার মহাশয়কে।🙏

    ReplyDelete

Post a Comment