কবিতা - অদিতি তুলি


বাগানবাড়ি 


শৈশব কৈশোরে সঙ্গ দিয়েছিল একফালি বাগান বাড়ির উঠোন। 
মেয়েবেলায় সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো 
একজোড়া ঘুঘু,  উষ্কখুষ্ক চুলের সেই ধান শালিকটা আর ছাতিম গাছটির সাথে। 
একাকীত্বের সেই সোনালী দিনের সময়গুলো কেড়ে নিয়েছিল একখন্ড সবুজ বনায়ন। 
পুতুল খেলার সঙ্গীর অভাবই বোধহয় এমন চুপচাপ স্বভাবের তৈরী করেছিলো। 
লোকে যাকে বলে বোধহয় ইন্ট্রোভার্ট। 
তবে মেয়েবেলার সেই নিষঙ্গতা অনেক কিছু শিখিয়েছে। 
উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে আর পাঁচটা সাধারণ শৈশবের গল্পের চেয়ে বেশি। 
খুব বেশি কোলাহলে ক্লান্তি আসতো দুচোখে 
সমবয়সী পাড়ার ছেলেপিলের দুপুর রোদে ঘুম ফাঁকি 
খেলার মাঠে হইচই
আর তখন দরজা বন্ধ করে ফেলুদায় মুখ বুঝে থাকা  
প্রাচীরের ধারে জামরুলের শাখায়  ফুল আসবে কখন
ভোলা ভালা "চোখ গেল" কটা ডিম রেখে গেল খড়কুটোর বাসায়
নাম না জানা নতুন পাখি বাসা বেঁধেছে হিজলের কোন শাখায়


টুনটুনিটা জানালার কার্নিশে বসে রোজ জানিয়ে যেত
ঘাস কাটুনি উর্দি পড়া লোকটাই একমাত্র শত্রু


তার কোন বন্ধু ছিল না। 


প্রাচীর ডিঙ্গানোরও আদেশ ছিল না। 
সকল প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি মনখারাপের কথা জানতো ছোট্ট চড়ুইটা আর বেতফল। 
ওরাই সঙ্গ দিত
বড্ড মায়াজড়ানো সেই ছোট্ট বাগান
বন্ধুহীন এক প্রকৃতিকন্যা সপ্তসী মেয়ের গল্পের সমাপ্তি 
ছাতিম গাছটি উধাও হয়েছে 
ছোট্ট চড়ুই হয়ত অন্য কোথাও ঘর বেঁধেছে 
পোড়া বাড়ি ভাঙা প্রাচীর 
ছোট্ট বাগানবাড়ি 
আজকাল প্রমোটারদের পকেটভর্তি টাকা


বিকেলের সোনালী আলোয় দগদগে ক্ষত নিয়ে আজ ও পড়ে আছে একখন্ড বিধ্বস্ত বাগানবাড়ি

Comments