কবিতা - মাহবুবা লাভীন


ভুলে গেছি বৃষ্টি বন্দনা



আমি বৃষ্টি বন্দনা করি না তেমন
করতে পারি না
মনে পড়ে, বাবা রোজ একটা শার্ট পরে স্কুলে যেতেন
কতদিন বৃষ্টিতে ভিজে গেছে শার্ট 
একবার ভেজা শার্টেই কাটলো বাবার সারাদিন
বাড়ি ফিরে জ্বরে বাবার গা পুড়ে যায়
মুখ থেকে তখন বেরুচ্ছে গরম শ্বাস
মা বললেন, একটা রেইনকোর্ট তো কিনতে পারো
বাবার, গরম শ্বাস ভেদ করে বেরিয়ে আসলো-
মেয়েটার দু'মাসের টিউশন ফি বাকি
বৃষ্টি তখন আমার কাছে বাবার পুড়ে যাওয়া শরীর
বৃষ্টি তখন বাবার মুখ থেকে বেরিয়ে আসা গরম শ্বাস
বৃষ্টি তখন মায়ের চোখের গোপন করা জলের ফোঁটা
বৃষ্টি আমার অসহ্য এক যন্ত্রণার নাম
আমি বৃষ্টি বন্দনা করি না তেমন 
করতে পারি না
আমি তখন ক্লাস থ্রি কী ফোরে
সামনে হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষা 
তুমুল বৃষ্টির দিন 
পুরাতন ছাতাটায় চোখ দিলে ভেতর থেকে পুরো আকাশ দেখা যায়
মা বইগুলো পলিথিনে ঢুকিয়ে দিতে দিতে বলেন-
বইগুলো তো আর ভিজবে না, তুই এবার ছাতার ভেতর থেকেই আকাশ দেখতে পারবি, রংধনু দেখতে পারবি 
আকাশ দেখার লোভে, রংধনু দেখার লোভে 
ছাতাটাও আমার সঙ্গী হয়
একটা সকালে আকাশ তখন ফর্সা ভীষণ 
চকচক করছে আকাশের মুখ
কোথাও মেঘের টুকরো নেই 
সেদিন আর সঙ্গী হলো না ছাতা না পলিথিন ব্যাগ
স্কুল থেকে ফেরার পথে আকাশের গায়ে হঠাৎ কালো মেঘ
একটু পরপর আকাশের গায়ে বিদ্যুৎ চমকানো খেলা
ভালোই লাগছিলো আমার
এরপর পথিমথ্যে আচমকা বৃষ্টি 
আমি তখন রংধনু দেখার লোভে সরাটা রাস্তা আকাশের দিকে যেন তাকিয়ে হাঁটছি
তবুও দেখা গেলো না রংধনু 
বইগুলো ভিজে নষ্ট হয়ে গেলো
স্কুল থেকে আর আমাকে বই দেয়া হলো না
বই ছাড়া, ধবধবে আকাশ ছাড়া, রংধনু ছাড়াই কাটলো আমার বাকি ছয় মাস
বৃষ্টি তখন আমার কাছে আকাশ দেখা লোভের ফাঁদ
বৃষ্টি তখন আমার কাছে রংধনু দেখা লোভের ফাঁদ
বৃষ্টি তখন আমার কাছে বই ছাড়া ঠিক ছয়টা মাস
বৃষ্টি বন্দনা ভুলে গেছি আমি
মনে আছে-
বাবার পুড়ে যাওয়া গা
বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া আমার নতুন বইয়ের ছবি।

Comments