ভ্রমণ - সুব্রত ভট্টাচার্য


সবুজের কোলে

                                   

বেশ কিছুদিন ধরে একটা ইচ্ছা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল, এক দিনের জন্য সপরিবারে কোথাও ঘুরে আসা যাক। নদী, জঙ্গল, পাহাড় বা চা বাগান যেখানেই হোক। বাদ সাধছিল মে মাসের গরম। উত্তরবাংলার শহরগুলির আশেপাশে দেখবার জায়গা অনেক। কোথাও জঙ্গল, কোথাও চা বাগান কোথাও বা পাহাড়ি জায়গা। পছন্দ হলেই হলো, তারপর একদিন সপরিবারে ঘুরে আসা যাবে। পারিবারিক সফর, আলোচনা চলল বেশ কদিন। বেশ কিছু প্রস্তাব এলো, তবে একমত হওয়া বড় মুস্কিল। 


শেষ পর্যন্ত একমত হওয়া গেলো। মাত্র কিছুদিন আগে ঘুরে এসেছেন আমাদের এক আত্মীয়। তাদের কাছে বিস্তারিত কিছু তথ্য পাওয়া গেলো। টেলিফোনে যোগাযোগ করে সব কিছু ঠিক করে ফেলা হলো। গাড়ীও ঠিক হয়ে গেলো। শিলিগুড়ির কাছেই এক রিসোর্টে কাটিয়ে আসবো একটা দিন। রিসোর্টের কর্ণধারের সাথে কথা হলো। কজন মানুষ, কি খাবার পছন্দ করেন ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করলেন। বললেন – আসুন একবার। আশা করি আমাদের ব্যবস্থা আপনাদের পছন্দ হবে।      

   

নির্দিষ্ট দিনে সকাল সকাল আমরা তৈরি হয়ে নিলাম। সময়মত বাহন হাজির। আমরা যাত্রী পাঁচজন চেপে বসলাম। আমাদের গন্তব্য সিলিগুড়ি শহরের কাছেই ফুলবাড়িতে গাছগাছালিতে ভরা একটি  রিসোর্ট। গাড়ী শহরের  রাস্তাঘাট পার হয়ে ফুলবাড়ির দিকে চলল। যেভাবে বলেছিলেন ঠিক সেভাবেই ধীরে ধীরে তাদের রিসোর্টের গেট পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। বড় রাস্তা থেকে ভেতরে বেশ নির্জন পরিবেশে তাদের রিসোর্ট। গেটের সামনেই ছোট সাজানো শিব মন্দির। 


ফোন করে ভেতরে ঢুকে পরলাম। বেশ কিছু গাছ গাছালি পার হয়ে ঘরের কাছে পৌছুলাম। আমাদের আমন্ত্রন জানালেন কর্ণধার  মহাশয়। চারিদিকে সবুজের মেলা, মাঝখানে কয়েকটা ঘর। বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে কথা হলো কিছুক্ষন। একখানা ঘর খুলে  দেওয়া হলো। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, আধুনিক সুবিধাযুক্ত। জল এলো, চায়ের ব্যবস্থা হলো। আমরা খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।

 

বিশ্রাম পর্ব শেষ হতেই আমাদের ঘুরে দেখা শুরু। প্রায় ১২ একর জমির ওপর তৈরী রিসোর্ট।  বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে। আম, জাম, কাঠাল, লিচু, সুপারি, নারকেল, তেজপাতা, পাম আরও বিভিন্ন গাছ। আমগাছ গুলি থেকে ঝুলছে আম।  বাগানের মাঝে মাঝে গাছের ছায়ায় বসবার জায়গা। গাছের ছায়ায় একখানা সিমেন্টের বাধানো গোলঘর, সকলে মিলে বসবার জন্য। কর্ণধার সরকার বাবু কিছু কিছু গাছ চেনালেন। আরও যেসব গাছের কথা জানালেন সেগুলি হলো – আমলকী, হরতকী, বয়রা, কামরাঙা, বেল,  রুদ্রাক্ষ ইত্যাদি। বাগানে রয়েছে গোল মরিচ, বড় এলাচ এবং বেশ কিছু পাতি ও গন্ধরাজ লেবুর গাছ। 

  


রিসোর্টের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে চা বাগান আর ছায়াগাছ। কিছু কর্মী চাপাতা তুলে জমা করছে। সেগুলো সম্ভবত চলে যাবে কোনও চা বাগানে। রিসোর্টের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে একটি জলের ধারা। তার ওপর তিন চার জায়গায় তৈরী হয়েছে ছোট ছোট সাঁকো। ছবি তোলার বেশ আদর্শ জায়গা। রিসোর্টে রয়েছে বেশ কটা রাজহাঁস। সেগুলো কখনও জলে কখনও ডাঙ্গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে রয়েছে ছোট ছেলেমেয়েদের খেলার জন্য একটি পার্ক। বেশ কয়েকজন কর্মী ও তাদের পরিবার যুক্ত রয়েছে রিসোর্টের সাথে।   



ঘুরে দেখার সাথে সাথে ছবি তোলার পর্বও চলছে সকলের। কখনও চা বাগানে, কখনও বড় গাছের ছায়াতে, কখনও ফুল গাছের পাশে চললো ছবি তোলার পর্ব।   

 


তারপর সময় হতেই ডাক পড়ল দুপুরের খাবারের। হাত মুখ ধুয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা হাজির। বড় ডাইনিং হল। রিসোর্টের কর্ণধার নিজে এবং একজন কর্মী যত্ন নিয়ে আমাদের খাবার পরিবেশন করলেন। তাদের আতিথেয়তা বেশ মনে রাখবার মতো। বাগানের গাছের লেবু এবং আমের চাটনি সহযোগে দুপুরের খাবার সারা হলো।

 

রিসোর্টের কর্ণধার জানালেন, অধিকাংশ পর্যটক দিন এবং রাত্রির জন্যই রিসোর্ট বুক করেন। তবে অগ্রিম যোগাযোগ করে আসলে তারা দিনের জন্য ঘর ভাড়া এবং দুপুরের খাবারের এবং ঘুরে দেখবার ব্যবস্থা করেন। বেশ কটা এসি এবং নন এসি ঘর রয়েছে। রয়েছে বড় একটি হলঘর। সেখানে জন্মদিন, পারিবারিক অনুষ্ঠান বা অফিসের কনফারেন্স ইত্যাদির জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। ঘরগুলি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। ঘর ভাড়া এবং খাবারের দাম অন্যান্য রিসোর্টের সাথে মানানসই।

   

রিসোর্টের নিজস্ব শিব মন্দিরে পুরোহিত প্রতিদিন পূজো করেন। বছরে একবার বড় করে বার্ষিক পুজো হয়।

 

দুপুরের খাবারের পরে একটু বিশ্রাম করে আবারও একটু চলল ঘুরে দেখা। কর্ণধার বিকেলে চা খেয়ে যাবার নিমন্ত্রন জানালেন। একটু অপেক্ষা করতেই চা এলো। চা পর্ব আর গল্পগুজব চললো খানিকক্ষণ। চা খেয়ে সপরিবারে আমরা বেরিয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। কাছে পিঠে একদিনের ভ্রমণের সুখস্মৃতি নিয়ে ফিরে এলাম।   


**    **    **    **    **

কিভাবে যাবেন- টি লিফ রিসোর্ট। শিলিগুড়ি শহর থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ি। বিস্কফার্ম ফ্যাক্টরীর পাশেই বড় রাস্তা থেকে প্রায় এক কিমি ভেতরে। যোগাযোগ – সুভাষ সরকার, ফোন নং  ৯৪৩৪০ ১৬৫২৬, ৭৯০৮৭ ৫৯৪০৬।

Comments