কবিতা - পহেলী দে


টিপসই


তোমার বুকে ফুটে আছে রক্তজবা
                      কপালে সূর্যমুখী
কব্জিতে ঘুমায় শতাব্দীর মাস্তুল
চোখের তৃষ্ণায় স্নান সেরে ঈগল
সিল্কের নরোম রোদে পাখনা শুকায়।


তোমার মাংসে কাবাবের স্বাদ, রক্ত কোমল পানীয়
পেশীতে নিভে যায় করাতকল
হিংস্র লালায় জ্বলে ওঠে সভ্যতা, 
কী দারুণ দিয়ে যাচ্ছ তুমি!
বৃষ্টিতে ভেজা, রোদে পোড়া হাড়হাভাতে জীবন 
বিনিময়ে সেজে ওঠে পৃথিবীর সাজঘর
স্নানঘরের উষ্ণতায় প্রেয়সীর উন্মুক্ত শরীর
                       গড়িয়ে পড়ে শীতল জলে
তোমাকে গোগ্রাসে গিলে পুঁজির পেটে মুক্তো ফলে।


তোমার দেহ ঘামের সিন্ধু
                        চুলে ঝিমায় ধূলোর কাফন,
স্কুল পালানো শৈশব, গণিতের রক্তচক্ষু
এখনো তোমার পিছু ছাড়েনি
এখন তুমি নিউজপ্রিন্ট কাগজে মোড়া সস্তা শ্রমিক
বাঁকাতেরা অক্ষরে লেখা স্বাক্ষর 
অথবা বুড়ো আঙুলের টিপসই ও ক্ষুন্নিবৃত্তি 
                         এটুকুই তোমার সঞ্চয়।


চিরকালের গোল্লায় যাওয়া দুর্মর তুমি 
সংক্রামক সময়ের অলিন্দে ইটের পর ইট সাজিয়ে
বিংশ শতাব্দীর চূড়ায় আকাশ ফোটাও
আর পাথরের আয়ুরেখায় বর্ণহীন গন্ধহীন
                           দিনরাত্রি জ্বালাও।
এখনো কী সরল তোমার প্রবাহ!
প্রজন্মের ঢেউয়ে ঢেউয়ে বয়ে নিচ্ছ কালের খেয়া
ক্রীতদাস সকালের শবযাত্রা 
                          এবং জাতিসংঘের জ্বলন্ত চিতা।

Comments