রঙিলা দালানের মাটি - সুবীর সরকার

সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল জুড়ে নিয়মিত চলছে কবিতাচর্চা। কবিতা নিয়ে প্রবল স্বপ্ন দেখা। বাংলা কবিতা লেখা হচ্ছে প্রান্তে প্রান্তে। অন্তর্জাল এবং মুদ্রিত পত্রিকার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেও কিছু ভালো আর সৎ কবিতার মুখোমুখি দাড়াতে পারছি আমরা। কত প্রানবন্ত নুতন কলম নুতন কবিতা লিখছেন। পাঠক হিসেবে আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এই উত্তর জনপদ জুড়েও অনেক তরুণতম কবি খুব নিবিড়তা নিয়ে লিখে চলেছেন বাংলা কবিতা। 

তেমনই কিছু কবিকে নিয়েই এই লেখা লিখছেন 

কবি সুবীর সরকার আজ পঞ্চম কিস্তি। 



তার কবিতা শুনতে শুনতে,পড়তে পড়তে আমি সমাহিত এক সম্মোহনের জালে আটকে পড়েছিলাম!কি তীব্র এক বোধ,ঝকঝকে দেখবার চোখ আর শব্দ ব্যবহারে মুন্সিয়ানা!

দৃশ্যকে দৃশ্যের বাইরে নিয়ে গিয়ে এই তরুণ কবি অনৈতা রক্ষিত পাঠককে এক জায়মান বিস্তারের দিকে নিয়ে যায়।

মাননীয় পাঠক,আসুন আমরা অনৈতার কবিতায় ঝুঁকে পড়ি_



আম্রপালি


সে ঘুমিয়েছে কখন!
এপারে যুদ্ধ!
রক্ত, খুন, শরীর,
সৌন্দর্যায়নের প্রাপ্তি হয়তো।
রাতের সঙ্গী তালিকাভুক্ত,
জীবনসঙ্গী নয়!
ধুর পাগল!
মন আবার শরীরে থাকে নাকি?
স্বপ্নে কি রোজ পুষ্পকুমার আসে?
সম্মানীয় শরীরে কজন হয় নগরবধূ?
থোকা থোকা দৃষ্টি ভেসে আসে,
ওরা ভালোবাসাকে দূরে সরায়!
ঘৃণা করি তোমায়!
আমার কোনো মিথ্যা মুক্তি নেই!
আর দেখি না তোমায়,
অজাতশত্রু!


চিত্রাঙ্গদা


লড়াই থামেনি সেদিনও,
পৌরুষত্ব বনাম প্রেম!
পরিণতি?
নারীজন্মের পরিপূর্ণতা।
তীক্ষ্ণ তলোয়ারের আদর্শ ধূলিস্মাৎ!
সেই পাখির চোখ,
উত্তরাধিকারে মগ্ন প্রাণ 
কী পেলাম?
শাপ মুক্তির তরজমা!
আর?
অপেক্ষা!
সবই কি অদৃষ্ট?
কেমন প্রেমিক তুমি পার্থ?
কেমন পিতা তুমি?
শেষ তরফায় উষ্ণতা এলো,
কিন্তু ষোলো কলার মুখ দেখা হলো না।
আত্মসত্ত্বার নির্বাসন দেখলাম,
সঙ্গী শুধুই একজন!
দাসত্ব!



অশান্ত আতর


ছাড়তে জানার পাঁচিল আগলে আর কতকাল?
অধৈর্য খুব দামি হয়ে ওঠে।
আত্মগোপন অসাড় শরীর হাতড়ায়।
আকাশে ভাসা চিল জানে আসল সত্যি,
ছো‍ঁ দিয়ে খুবলে নেওয়া খুব সহজ নয়।
ওপারে শরীর-মন অভিসন্ধি,
ছেলেমানুষি রাত পোহায় অশান্ত আতরের মতো।
ফিরে তাকানো সহজ, 
অন্ধত্ব নয়।
পর্দা ঘেরা অতীত উজ্জ্বলতার ছায়ায় বাঁচে।
আমরা বাস্তু খুঁড়ি, 
শাপ একাই ঘর ভরিয়ে দেয়।
যাত্রা গুলো অস্পৃশ্য হোক।
স্বত্ত্বা ঋণ চায় খালি,
লক্ষ্যের চুম্বন একলসেরে।
তবুও সে আসুক
অসুখ করুক।
ভালোবাসুক।



বৈষম্য


অন্ধকারের অস্তিত্ব নিবিড় হোক
আমি জবানবন্দি করি আমার রক্তবিন্দু।
বোঝার দায় কেউ চায় না!
কবির কবরে খোদাই করে চলি ডাকনাম
কে ডাকে?
নিঃশ্বাস বোধহয়।
অনেকদিন ঘুম ভাঙায়নি কেউ!
তাড়া করেনি সবটুকু দুঃস্বপ্ন জুড়ে!
হঠাৎ করে রাতগুলো বদলে যাবে
আমি হবো রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা বেমক্কা শঙ্খচিল।
আমার চিৎকারগুলো উড়ে বেড়ায়,
ওরা পাহাড় ঠেকিয়ে আগলে রাখে।
আবার চৌচির হবে মধ্যরাত
বন্দিতা নই বন্দিনী হবো তার তৃষ্ণার!
ব্যর্থতার ইস্তেহার বইবে শিরা দিয়ে,
তবুও শেষবেলায় থামবো না,
ভালোবাসবো।
কতটা?
তোমার প্রতি ঘৃণার চেয়েও অনেক, অনেক বেশি।



পছন্দের বাইরে


লাল ছবিটার গন্ধ ছড়ায় আবার
শিরশিরিয়ে ওঠে ডাকনাম
মনগড়া চিঠি জানে রাজার ছদ্মবেশ
অনুভূতিরা মৃতপ্রায়।
না, শাস্তি নয়।
সমুদ্রের দায় কারোর থাকে না।
যান্ত্রিকতায় অস্তিত্ব অবিকল।
ঘরের ছাদ এখন অনেক শক্ত,
ঝড় আসে না তাই।
হিসেব চাই না আমি।
এত লজ্জা রাখবি কোথায়?
আমি বেইমান, ইতিহাস নয়।



মোহভঙ্গ


আঁজলা আঁজলা আগুন গিলে চলি,
বুকের পাঁজরে খোদাই করা সত্যতা।
পালিয়ে বাঁচি আর নিজেই হাসি।
সংসার আর মনের খিদে,
খুব অসম লড়াই।
গতকালের ভবিষ্যত পেরেক গাঁথে শরীরে,
রক্তের হাহাকার ছিনিয়ে নেয় অস্থিরতা,
চাওয়া শুধু ব্যর্থতার অবসর হয়ে দাঁড়ায়।
নখে লেগে থাকা রক্ত জানে গতকালের স্মৃতি।
অভ্যাস পোড়ে, মানুষ পোহায়।
ইতিহাসের বিবর্তন কঙ্কাল বিচার করে,
নিঃসঙ্গতা জ্বলে ওঠে।
ভালোবাসার মাত্রা বুঝি না,
হয়তো ভালোবাসাই বুঝি না।
কিন্তু নিঃশ্বাসের পরিবর্তন বুঝি। 
এ পাপের সাজা একটাই-
মোহভঙ্গ।



এক দূরাগত মেঘের মায়া আর অদ্ভুত কূহকের পরিসরে কবি আমাদের ট্রমা আর ট্রান্স উপহার দেয়।তার স্মার্টনেস আর জীবনে থাকবার পজিটিভিটি অনৈতাকে স্বতন্ত্র করেছে।

নিজেকে শ্রম আর নিরীক্ষায় সৎ রাখতে পারলে অনৈতা অনেক রাস্তা পাড়ি দেবে আগামীতে।

তার জন্ম ২০০২ সালের ১৯ শে অক্টোবর কোচবিহার জেলায়। ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় সুনীতি একাডেমী থেকে মাধ্যমিক এবং বর্তমানে কোচবিহার জেলারই একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে (DOOARS INTERNATIONAL PUBLIC SCHOOL) পাঠরতা। লেখালিখির পাশাপাশি আবৃত্তি চর্চা ও থিয়েটার নিয়ে কাজ করে। শখ বলতে সবরকম কবিতার বই পড়া, সমালোচনামূলক সাহিত্য ও ক্রিটিক রিভিউ দেখা, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো, গান করা এইসব।

অনৈতা রক্ষিতের জন্য অপার অপেক্ষা আর শুভেচ্ছা রইলো।

Comments

  1. খুব ভালো লাগল

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগল.. তরুণ কবিকে অনেক অভিনন্দন.. 💖💖💖

    ReplyDelete

Post a Comment