গল্প - মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ী


বত্রিশ বছর পর

 

বলি শুনছো? কান থেকে যন্তরটা নামাও সারাদিন কাপে কাপে চা দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেলাম পারবো না আর, এখন বয়স হয়েছে আমার সেই বত্রিশ বছর আগের তরুণীটি নই এখন! একা হাতে সব কিছু সামলানো, পারা যায়? চলে যাব একদম! বুঝবে তখন কত ধানে কত চাল! আয়েস করে বসে বইয়ে মুখ গুঁজে থাকা আর হরিসাধনের সাথে গপ্পো করা, বেরিয়ে যাবে তখন‐‐

উঁ‐‐

উঁ নয়, হুঁ এখনও আমার মাথার ওপরে মা আছে, চলে যাবো বিরাটীতে, তোমার ঘরবাড়ি তোমার থাক! কোনও দরকার নেই আমার ঘরগেরস্থির‐‐‐

আচ্ছা, ঠিক আছে যার যেমন ইচ্ছে আমার কোনও কিছুতেই অসুবিধে নেই ট্রেন কটায়?

অ্যাঁ!

কি! তুমি না রতনের বাড়িতে যাবে বলে বেরোলে? স্টেশনে এসে বসে আছো এখন!

যাব কোথাও!

কোথায় যাবে?

বিরাটী, আমার শ্বশুরবাড়ি

সেখানে তো বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমি‐‐, হয়রান হয়ে, তোমার থেকে দূরে থাকবো বলে! তুমি আবার সেখানে কেন? ওটা তোমার শ্বশুরবাড়ি, নিজের বাড়ি নয়

আমিও যাচ্ছি এখন থেকে ওখানেই থাকবো পারবো আমি! আমার কাছে যে চাবিটা ছিল ওটা হরিসাধনকে দিয়ে এসেছি  বেটা গরিব, তোমার সাজানো গোছানো বাড়িটায় মুগ্ধ হয়ে বসে তোমার গুণগান করতো, তোমার বানানো খাবার অমৃত আস্বাদনের সুখে খেত, থাকুক বেচারা বাড়িতে বাকি জীবনটা একটু আরামে কাটুক ওর ওই যে, ট্রেন আসছে!

থাক, হয়েছে, বুঝেছি আমি!  দুজনের জিনিস নিয়ে এখন বাড়ি ফিরে চলো বিরাটীতে গিয়ে তো আবার সেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় চা দিতে হবে তুমি লেজুড় হয়ে গেলে! ওখানে নতুন করে গেরস্থি পাততে হবে তার চেয়ে বাড়িই ভালো

হুমম! কিন্তু হরিসাধন কি এতো সহজে ছাড়বে ওর অধিকার?

তাহলে আর কি! হরিসাধনের জন্যেও রাতে খিচুড়ি আর ওমলেট হবে, খবর করো

Comments

Post a Comment