রঙিলা দালানের মাটি - সুবীর সরকার

সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল জুড়ে নিয়মিত চলছে কবিতাচর্চা। কবিতা নিয়ে প্রবল স্বপ্ন দেখা। বাংলা কবিতা লেখা হচ্ছে প্রান্তে প্রান্তে। অন্তর্জাল এবং মুদ্রিত পত্রিকার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যেও কিছু ভালো আর সৎ কবিতার মুখোমুখি দাড়াতে পারছি আমরা। কত প্রানবন্ত নুতন কলম নুতন কবিতা লিখছেন। পাঠক হিসেবে আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। আমাদের এই উত্তর জনপদ জুড়েও অনেক তরুণতম কবি খুব নিবিড়তা নিয়ে লিখে চলেছেন বাংলা কবিতা। 

তেমনই কিছু কবিকে নিয়েই এই লেখা লিখছেন 

কবি সুবীর সরকার আজ চতুর্থ কিস্তি। 




চুমকি দাস। কুচবিহার জেলার প্রত্যন্ত জনপদ ধুমপুর বালাসি গ্রামে তার যাপন ও বসবাস। এখন থেকেই চুমকি স্বপ্ন দেখছেন বাংলা সাহিত্য আর কবিতা নিয়ে।



তীব্র এক আত্মমগ্ন ঘোরের ভিতর কবিতা লিখছে চুমকি। বাংলায় স্নাতকোত্তর চুমকি আপন মনেই চলে এসেছে কবিতা লিখতে। ভবিষ্যতে বাংলা সাহিত্য আর কবিতা নিয়ে কাজ করতে চায় সে।

চুমকির কবিতা ভুবন জুড়ে অদ্ভুত এক মগ্নতা। একটা ট্রান্স আর ট্রমা তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।

নিজের চারপাশের পরিসর তাকে ভাবায়। চুমকি আত্মখনন করে নিজেকে।আর ছড়িয়ে দেয় এই অমোঘ উচ্চারণ_

১.

কান্নার নোনা স্রোতে

পলি জমলে এ বুকে 

কিচ্ছু যায় আসে না কারও...


চিতায় আগুন দেবার পর

মরা কান্না করে কি লাভ


যার জন্য ডুকরে কাঁদা

সে কি আর ফিরে আসে


মনকে শান্তনা দেওয়া তবু..


২.

বাবা বাবার মতো 

আমরা বোঝার মতো 

পাথর হয়ে ভালো থাকা খুঁজে নিয়েছি

এখন আর কিছুতে কষ্ট হয় না


মেয়ে হওয়াও কি অভিশাপ  মা


৩.

পথ চেয়ে বসে থাকতে থাকতে

নিভে আসে কুপি বাতির শেষ সলতে

ঘরে ফিরেন বাবা 


মায়ের ওভারটাইম শুরু..


সিলমোহরহীণ এই ডিউটির

পরিভাষা 

লেখা হয়নি কোনো অভিধানে


দিনকে দিন বোনাস গুনেন মা

নীরবে

চোখের জলে


৪.

ঠাকুরদা রামধনু ভীষণ ভালোবাসতেন

আর ভালোবাসতেন ঠাম্মার নকশিকাঁথা


'আমারে একটা রামধনু খ্যাতা বানাইয়া দিবা 

গাইত দিমু ...'          

             গেয়েই গেলেন শুধু

                                     গায়ে দেওয়া হয় নি আর !

ঠাকুরদাকে দেখা হয়ে ওঠেনি কখনো 

দেখেছি চশমা চোখে ঠাম্মাকে আজও

                                 নকশিকাঁথা জুড়তে..


৫.

স্বপ্ন দেখা ভুলিনি আজও

ভুলিনি অভিশাপ খুঁড়ে আশীষ খোঁজার

                                                      মন্ত্র


দেখেছি স্বপ্ন বেঁচে অশ্রু কিনে নিতে

আঁধার ঘোচাতে প্রদীপশিখা হতে 


ছাড়িনি বাবা, তোমার তুলে দেওয়া

স্বপ্নপাল। বাইছি আজও

দেখেছি

একটুকরো রোদ আর রাতে শান্তিভরা ঘুম 

                                              উপহারের স্বপ্ন


খুব মৃদু স্বর চুমকির কবিতায়। একটা নিমগ্ন নিমজ্জন। রয়েছে অন্তহীন জিজ্ঞাসা। নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে কবিতার খুব ভেতরে তীব্র এক কূহকের মধ্যে বুঝি আত্মগত হয়ে পড়ছেন এই তরুণ কবি।

নিজেকে যত্ন নিতে পারলে আগামীতে অনেক লিখবে চুমকি।

Comments