গল্প - সঞ্জয় কুমার নাগ



মিমির ফ্রেন্ড


কৌশিক নোটিশ করলো , ক'দিন ধরে মিমির মুখ ভার। পাপা কে কিছু একটা বলতে চায় ও।  মা সবসময় শাসনে রাখেন। তাই যত মনের কৌতুহল - গোপন কথা সব পাপার সাথে। গতবছরের মতো এ বছরও স্কুল বন্ধ। কোভিডের নতুন ওয়েভ এসেছে। এবার যেন মন্ত্রের মতো ছড়াচ্ছে করোনার জীবাণু। ছ'বছরের মিমি। এ বছর ইউ কেজি থেকে ওয়ান। কিন্তু কথা আর বুদ্ধিতে একেবারে পাকা বুড়ি। কৌশিক বুঝেও চুপ করে থাকে। ভাবে , সুমনা কিচেনে ব্যস্ত থাকলে মিমিকে নিয়ে ব্যালকনিতে যাবে। সব মনের কথা শুনবে। আজকাল আমরা যেন কেমন হয়ে গেছি। সেই গাছগাছালিঅলা বাড়ি - উঠোন - লন , সেসব হারিয়ে গেছে বিলকুল। ফ্ল্যাটের চার দেয়ালে সোনার খাঁচায় বন্দী শৈশব। নাঃ , মিমির সাথে কথা বলতেই হবে। সুমনা এসে ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেল। মিমির প্রিয় দুধ দিয়ে চকো কর্ণফ্লেকস্। দু' চামচের পর আর মুখেই তুললো না। ওরিও বিস্কুট নিয়ে এলো। তাও মাথা নাড়লো। নুডলস্ খাবে নাকি জিগ্যেস করলো। তাতেও না!! স্ট্রেইঞ্জ! দেখতে হচ্ছে তো - গজ্ গজ্ করতে করতে কিচেনে ফিরে গেল সুমনা। এই সুযোগে মেয়েকে কোলে নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে কৌশিক। সেখানে হরেক রকম ফুলের গাছ। যদিও সব‌ই সুমনার চেষ্টায়। বাহ্ ম্যান্ডেভিলা লতিয়ে বেশ হাত - পা ছড়িয়েছে তো ?! ফুল‌ও ফুটেছে বেশ ক'টা। মিমিকে কোলে নিয়ে বেতের সোফায় বসতেই পাপার কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো।

- কী হয়েছে সোনা?

- উঁহু উঁহু পাপা

- আমার সোনা মা কাঁদছে কেন? দেখিতো মুখখানা।

- পাপা , স্কুল বন্ধ কেন পাপা?

- তুমি তো কোভিডের নাম শুনেছো মা - একটা ভয়ঙ্কর মনস্টার। মানুষকে মেরে ফেলে বাইরে গেলে। ভীড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। তাইতো স্কুল বন্ধ মা। - - - ফ্রেন্ডদের জন্য মন কেমন করছে ? 

- তা তো করছেই। কিন্তু বড্ড মন খারাপ ঐ বার্ডদুটোর জন্য।

- বার্ড ?!!!

- হ্যাঁ পাপা , বার্ড। দুটো বার্ড। ওদের আমার টিফিন থেকে খেতে দিই । ফ্রুটস - কেক - বিস্কিট। ডেইলি ওরা আমার টিফিন থেকে খেত। এখন তো ওরা খেতে পাচ্ছে না পাপা -- কে দেবে ওদের খাবার ? স্কুল‌ই তো বন্ধ । ধ্যাৎ আমার ভালো লাগছে না ।

কৌশিক খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লো। এতটুকু বাচ্চা মেয়ে , কতটা সেনসেটিভ!! কী করবে ও এখন ? কেমন করে মিমিকে ঠান্ডা করবে ? শান্ত করবে ? 

- কী হলো পাপা ? কথা বলছো না যে ? ওদের জন্য ভীষন কষ্ট হচ্ছে আমার।

- ঠিক আছে , তুমি মন শান্ত করো। টুমোরো উই শ্যাল গো ।

- বাট্ হোয়্যার পাপা ?

- ইয়োর স্কুল ক্যাম্পাস । আই প্রমিস সোনা। বাট্ ইউ স্মাইল নাউ ।

- ওকে ডান। আমরা ফ্রীজ থেকে কিছু ফ্রুটস্ আর মিটসেফ থেকে কেক নিয়ে নেবো। ওরা কত্তোদিন খায়নি বলোতো!! মাম্মাকে কিছু বোলোনা কিন্তু।

- আই প্রমিস সোনা।

অনেকটা নর্ম্যাল হয়ে গেছে মিমি। খানিকটা স্বস্তি পেল কৌশিক। কিন্তু টেনশন একটা রয়েই গেল।কাল যদি পাখিদুটোর দেখা না পাওয়া যায় ? মেয়ে তো আরও ডিপ্রেসড্ হয়ে পড়বে । মিমিকে ব্যালকনির বেতের সোফায় বসিয়ে বাথরুমে ঢুকলো কৌশিক। আজ অফিসে যেতেই হবে। একটা জরুরী ফাইল ছাড়তে হবে। বাথরুমে ঢুকে যেই না সেভিং ফোম গালে মেখেছে -- ওমনি তাড়স্বরে চিৎকার

- পাপা পাপা পাপা --

সেভিং ফেলে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ে আসে কৌশিক। আনন্দে লাফাতে থাকে মিমি। আর হাততালি। পাপা ঐ দ্যাখো আমার ফ্রেন্ড। বার্ড। কৌশিক দেখে , দুটো শালিক ম্যান্ডেভিলার লতার উপরে নাচানাচি করছে।

মিমির মুখখানা ফুলের মতোই উচ্ছ্বল আনন্দে ডগোমগো।

Comments