নকল সাধু ও একটি খুন
ডাগর বিকেলে মুনিষরা সকলে কাজের ফাই ফরমাশি শুনে সোহাগী সকালে জমিতে গিয়ে সেইসব কাজ করতো। জমি দেখতে সকালে জলখাবার নিয়ে যেতো বাড়ির ছোটোরা। দুপুরে যখন মুনিষরা ভাত খেতো সে দেখার মতো ব্যাপার হতো। বড়ে বড়ো জামবাটি ভর্তি ভাত, একটা মোটা তরকারি, ডাল, মাছ, চাটনি, কাঁচালঙ্কা আর পিঁয়াজ। কী সুন্দর শৈল্পিক ছোঁয়া খাওয়ার মধ্যে। কেটিপতিরা খাবার সময় এই আনন্দ পায় কি? তমালদা বলতেন,আমার মনে হয় পায় না। খাওয়ার আনন্দ পেতে গেলে খিদে চিনতে হয়। আর খিদের মতো উপহার পেতে গেলে দৈহিক শ্রমের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়। তা বলে শুধু খিদের জ্বালায় জ্বলতে কার ভালো লাগে। কবে আসবে সেই দিন। সব খিদে পাওয়া মানুষগুলো পেট ভরে খেতে পাবে।
অনেক গ্রামবাসী মদনকাকার আশেপাশে বসে পড়েছে,গল্প শোনার জন্যে। কাকা গল্প বলার ফাঁকে ফাঁকে অনেক ভালো ভালো উপদেশমূলক কৌতুক কথাও বলে থাকেন। মুড তার সব সময়েই ভালো। কথায় কথায় বলেন, পেটে ক্ষিদে নিয়ে কিছু হয় না। ধর্ম, শিক্ষা, কাব্য,গল্প কিস্সু হয় না। নবীন বললো,ঠিক বলেছেন কাকা।আগে পেট তারপরে অন্যকিছু।
--- না না আপনি এড়িয়ে যেচেন। বলুন কেনে।
---- তাহলে শোন। এখন সাধু মানুষ, কোটিতে গুটি। সব সং সাজা সাধুু। তাই যারা সত্যিকারের সাধু তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে জয়ধ্বনি দিয়ে থাকি। ওই যে, মহাপুরুষের বাণী শোনো নাই। "সাধু হও, সাধু সাজিও না। সংসারী সাজিও, সংসারী হইও না।"
--- শুধু জানলেই হবে না। বাস্তবে,কাজে, কম্মে ব্যবহার দিয়ে দেখিয়ে দাও দিকিনি বাছা। তবেই বলবো বাহাদুর বাবা। খুবএকটা সহজ নয় বাবা।
আবার আগের প্রসঙ্গে ফিরে গিয়ে কাকা সবাইকে বললেন,তাহলে কি হলো ব্যাপারটা।আগের কথায় ফিরে যাই। ম্যান মেড ফ্ল্যাড। আর নয়, আধুনিক কবিতার মতো বাকিটা বুঝে নাও। বলো, জয় সাধুবাবা।সবাই বললো, জয় সাধুবাবা।
মানুষ মরছে বানে।আর উনি জয় সাধুবাবা বলে পাড়া মাত করছেন।আপন মনে বললো, পাড়ার শিবু কায়েত। শিবু কায়েত শিবে বলেই পরিচিত।
হঠাৎ কুটুম জনা বলে উঠলেন,দেখুন, ওই গোরের ঘাটে কে বসে । কাকা বললেন, তুমি জানো না কিন্তু আর সবাই জানে। ও হলো মানে মাল। ওকে শিবে, বলেই পাড়ার লোকে ডাকে। বুদ্ধি খুব। কথায় বলে না, কায়েতি কায়দা। বোঝে রসের রসিক। তুমি আমি ছারপোকা। বললেন মদন কাকা। ছোটো থেকেই চালাকি বুদ্ধি ছিলো তার অসম্ভব। লাষ্ট বেন্চের ছেলে। বড়োদের সম্মান করতো না। তাদের সামনেই সিগারেট ফুঁকে বাহাদুরি দেখাতো শিবে। বাবা, মা বড়ো আশা করে তাকে স্কুল পাঠান। কিন্তু স্কুলে র নাম করে সে মানুষকে জ্বালাতন করতো দিন রাত। তার জ্বালায় সকলেই বিরক্ত। এমনি করেই সে বয়সে বড়ো হলো। তার বাবা, মা একে একে মরে গেলো। এখন সে একা। তবু তার স্বভাব পাল্টালো না।
শিবু কায়েত বানের পরে সেই যে কোথায় নিরুদ্দেশ হলো কেউ জানে না। মদন কাকা বলেন, আমি জানি কিন্তু প্রকাশিত হবে ক্রমশ। একবারে নয়। আমি যেদিন স্তরবিন্যাস করেছিলাম, সেদিন শিবে চুপ কোরে গোরের ঘাটে বসে ছিলো। হুঁ, হুঁ বাবা আমি দেকেচি।ও আড়ালে আবডালে সুযোগ খোঁজে। আলোকে ওই বেটা ভয় পায়। আমাদের কায়েত বংশের কুলাঙ্গার। ভালো হলে আমরা আছি। আর খারাপ হলে মানুষ ছাড়বে না বাবা। তোমার সব সাত চোঙার বুদ্ধি এক চোঙায় যাবে। বাদ দাও, বাদ দাও। বলো, জয় ভবা, জয় সাধুবাবা।
সকলেই বললো, জয় ভবা, জয় সাধুবাবা।
মদন কাকা বানের পরে ক্ষতিপূরণবাবদ কিছু টাকা পেয়েছলেন। গ্রামের সকলেই পেয়েছিলেন।সেই টাকাতেই সকলের বছরটা চলেছিলো। নীচুএলাকা বলে খরার চাষটা এখানে ভালোই হয়।আর বর্ষাকালে ভরসা নাই। অজয়ের গাবায় চলে যায় বর্ষার ফসল। সেইজন্যে অনেকে নামলা করে চাষ দেয়। আর তাহলে কিছু ধান ঘরে ঢোকে। যতই বান বন্যা হোক চেষ্টাতো করতেই হবে। কঁথায় বলে, আশায় বাঁচে চাষা। মনে মনে কত স্বপ্ন,গাথা। জমি ফেলে রাখলে বাঁজা হয়ে যাবে। তাই গ্রামের কোনো মানুষ হাল ছাড়ে না সহজে।
কাকা গ্রামে সকালবেলা হাঁটতে বেড়োন। আর সকলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে কথা বলেন। কাকা হঠাৎ সকালে একদিন গ্রামে চুল দাড়ি ওয়ালাএক সাধুবাবাকে ষষ্টিতলার বোল গাছের নীচে তার আসন পাততে দেখলেন। সাধুকে সকলেই বিশ্বাস ক'রে চালটা, কলাটাএনে তার ঝুলি ভরলেন। খাবার সময় হলে খাবার পেয়ে যান। কোনো অসুবিধা তার হয় না।আর সাধুবাবা গ্রাম ছাড়েন না। কাকার সন্দেহ হয়। খুব চেনা চেনা মনে হয়। কিন্তু স্থিতধি মানুষ তো। তাই ভাবেন পরিবর্তনশীল এই জগতে অসম্ভব কিছু নয়। শুভ হোক সকলের। এই কথাই সকলের জন্য বলতেন। তাই বেশ খুশি মনে মদনকাকা বিকেল হলেইএকবার সাধুবাবার কাছে আসতেন। বসে নিজে কথা বলতেন আবার সাধুবাবার কথাও শুনতেন। কাকা শুধু ধর্মের কথা নয় অন্য কথাও বলেন। ভন্ডামি তার অসহ্য। কাকা বলছেন বর্ডারগুলো একেবারে কি যে হয়েছে। বলে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন। গরু পাচার, মানুষ পাচার, রত্ন পাচার কোনো আইন বা কাঁটতার আটকাতে পারছে কি? কোটি টাকার প্রশ্ন হে। সর্ষের ভেতর ভূত থাকলে কোন ভূত দেশ ছাড়বে বলো। খুব চিন্তায় তিনি। সাধুবাবা বললেন, জয় জয় জয়। কাকা বললেন কার জয়। সাধুবাবা ওইটুকু বলেন। বাকি কথা বুঝে নেয় মানুষ। নিশ্চয় ওর কথার মধ্যে কিছু আনন্দ আভাষ আছে। সাধুবাবার ভক্তসংখ্যা বেড়েই চলেছে। একদিন হরিনাম হলো। গ্রামের মানুষজন সকলেই মচ্ছব খেলো। কাকা বলেন, মহোৎসব থেকে মচ্ছব কথাটা এসেছে।
সুমিত বললো, আপনি তো ক্লাস সেভেন অবধি পড়েছেন।এত খবর কি করে রাখেন।
কাকা বলেন,আরে ক্লাসে পাশ না করেও বড়ো মানুষ হওয়া যায় রে মূর্খ। শুধু ভেতরের আলোটা জ্বেলে রাখবি। প্রদীপটা কোনো মতেই নিভতে দিলে হবে না বুঝলি।
সাধুবাবা জোরে হাঁক দিলেন, জয় জয় জয়। মানে কাউকে ডাকছেন।
সাধুবাবা আর কোনো মন্দিরে বা মসজিদে যান না তিনি বালুবাড়ির কাঁদরের ধারে আস্তানা গেড়েছেন। নিজের মূর্তি মাটি দিয়ে বানিয়েছেন। যোগাসন বিদ্যা, যৌনবিদ্যা সব কিছুতেই পারদর্শী বাবা। বললো অসীম। আর বলবি বল কাকার সামনে। কাকা শুধোলেন, তুই কি করে জানলি হতভাগা,ঘাটের মড়া। মার খাবি যে শিষ্যদের হাতে। সাধু আবার যৌন কারবারে কি করবে? যত সব বাজে কথা। কিন্তু সাধুবাবা যে কোন রসের রসিক তার তল পাওয়া সাধারণ লোকের সাধ্যের বাইরে।
সাধুবাবা দুর্বল চরিত্রের মানুষ নির্বাচন করেন প্রথমে । তারপর তাকে দিয়ে বিভিন্ন কাজ করিয়ে নেন। একদিন ডোমপাড়ার বিজয় ওরফে বেজা এসে সাধুবাবার চরণতলে পরলো। সাধুবাবা বললেন, বল্ কি বিপদ তোর। বেজা বললো, বাবা অনেক চেষ্টা করেও সন্তান হলো না। বাবা বললেন,তোর চেষ্টায় ত্রুটি আছে। তারপর হাজার রকমের কাজ দিয়ে বেজার মগজ বোঝাই করে দিলেন। বনে যাবি।উলঙ্গ হয়ে প্রতি শনিবার জবা ফুলের কুঁড়ি খাবি। জলে গোবোর গুলে খাবি। স্ত্রীর মুখদর্শন করবি না ছয়মাস। তারপর একবছর পরে দেখবি ঘর আলো করে আসবে আনন্দের ফেরিওয়ালা। তোর বংশের প্রদীপ। তবে হ্যাঁ, আর একটা কঠিন কাজ আছে। করতে পারবি।
বেজা বলে, বলুন, যত কঠিন হোক করবো আমি। সাধুবাবা বললো,সন্ধ্যা হলেই আমার আশ্রমে ওই পিটুলি গাছের পাতা তোর বউ দেবে আমার হাতে। কিন্তু কেউ জানবে না। তোর কথা শোনে বউ।
বেজা বলে, না না একেবারেই না। শুধু ঝগড়া করে। সাধুবাবার মুখ হাসিতে ভরে গেলো। তিনি বললেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। যা যা আমার কথা বল গিয়ে। তারপর আর মুখদর্শন করবি না।
তারপর থেকে বেজার বউ আসে রোজ রাতে। ভোর হলেই চলে যায় ক্ষেতে। গ্রামের লোক ভাবে, জমিতে কাজ করে।
প্রথম যে রাতে বেজার বউ সাধুর আশ্রমে আসে সেই রাতে সাধু বললে, সব শুনেছি। আমার কথা শোন। ওই খাটে বস। সে সরল বিশ্বাসে বসেছিলো। সাধু অন্ধকার ঘরে বলে, সন্তান তো এমনি এমনি হয় না। তোকে রাতে রোজ শুতে হবে। আমার সঙ্গে।
বেজার বৌ বলে, আপনি সাধু হয়ে কি কথা বলছেন।
--- ঠিক বলছি, যা বলছি তাই কর। তা না হলে তোর স্বামীর মৃত্যু নিশ্চিত।
বেজার বৌ বলেছিলো, জানি না রে মিনসে। তোর কাছে যেটা পেয়েচি,উয়ার কাছে পাই লাই। তোর কাছে তাই চলে এলাম। দে এবার যত পারিস তোর মন্ত্র তন্ত্র, ঝাড় ফুকের বিষ।তবু আমার সোয়ামীর যেন ক্ষেতি না হয়। আর সন্তান দিবি। তা না হলে তোর মরণ আমার হাতে।
একবার মেয়েদের ভয় ভেঙ্গে যাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকতো সাধু। তারপরের পথ কুসুমাস্তীর্ণ।
মদন কাকা আর আশ্রমে আসেন না। কানাঘুষোয় অনেক কথা শুনেছেন। তাই নিজের মধ্যেই নিজেকে নীরবতার আড়ালে ঢেকে রাখেন।
আর এদিকে সাধু একের পর এক শিষ্য বাড়িয়ে চলে আর তেষ্টা মেটায় নশ্বর শরীরের। কিন্তু নিজের সমাধির গর্ত অজান্তে কেটেই চলে।
অবিনশ্বর আত্মার কথা কেন কেউ শোনে না।
আকাশে বাতাসে দীর্ঘনিশ্বাসের মেঘছায়া নীরবে সত্যের দামামা বাজিয়ে চলে অবিরত। মানুষকুল শুনেও শোনে না কানে।
বিজয় গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলো। তারপর আবার তপশিলী। পুলিশের চাকরী একটা পেয়েছে বছর পাঁচেক হলো।
বেজার বৌ কিন্তু ভোলেনি বেইমানকে।একদিন ডেঙা পাড়ার মাম্পি, বেজার বৌকে বললো,সাধু আমার ইজ্জত লিয়েছে। চড়াম করে রাগ হয়ে গেলো বেজার বৌ এর। এর আগে বিধবা বৌ ওআরও অনেকে রিপোর্ট করেছে বেজার বৌকে। ওদের গ্রামে মেয়েরা মেয়েদের কাছে সমস্ত কথা শেয়ার করে। বেজার বৌ বললো, তু বাড়ি যা। আমি দেকচি...
চারদিকে খবরটা ছড়াতে বেশি সময় লাগলো না। লোকজন মদন কাকাকে সঙ্গে করে চলে এলো বিচার করতে। মদনকাকা বললেন,সেদিন গোড়ের ঘাটে তু আমার কথা শুনে সাধু হলি। তাও ভন্ড সাধু।
তখন শিবু বললো, আমি তোমাদের শিবু।আমাকে মাপ করে দাও। তোমরাআমাকে বাঁচাও কাকা।
মদন কাকা বললেন, তুমি এখন আমাদের নও শিবু। তুমি এখন আইনের হাতে অপরাধি শিবু।
শিবু বললো, আমি মেয়েটাকে বিয়ে করে সুখে রাখবো।
কাকা বললো, তোর মতো চরিত্রহীনকে কোনো ভারতীয় কন্যা বিয়ে করবে না।। সব চরিত্রহীনের মনে থাকা উচিত, এটা ভারতবর্ষ।
রাত পেরোলেই পুলিশ আসবে। হয়তো আজ রাতেই হাতকড়া পরবে শিবুর হাতে। শিবু তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে পালানোর জন্যে বেজার বাড়ির পেছনের জঙ্গল দিয়ে পালাচ্ছে। আজ বিজয়ের নাইট ডিউটি। তার বৌ ধারালো হেঁসো নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে সাধুকে। এবার বেজার বৌ আর সাধু সামনা সামনি। সাধু বললো, কি রে আমার সঙ্গে যাবি। সন্তান দোবো। মাথায় রক্ত উঠে গেলো বেজার বৌয়ের। চালিয়ে দিলো ধারালো হেঁসো সাধুর গলা লক্ষ্য করে। পাঁঠার মতো ছট্ফট্ করে স্থির হয়ে গেলো সাধুর শরীর।
সন্তান প্রাপ্তির আনন্দে শরীর নেচে উঠলো কালী পুজোর ঢাকের তালে তালে, বেজার বৌয়ের।
সবে আসর জমে উঠেছে আর তখনই খবর এলো সাধু খুন হয়েছে। বেজা ভাবছে সাধুর কথায় পাশ করা ছেলে হয়েও বনে বনে ঘুরে বেড়িয়েছে সে। ধিক তার শিক্ষাকে। ডাক্তারবাবু বলেছেন, ওষুধে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর দুবছরের মধ্যে তাদের ঘরে সন্তান, মা বাবার বুক আলো করে আসবে। কিন্তু সাধু খুন হওয়াতে একরাশ বৃষ্টির ছাট তার হৃদয় ভিজিয়ে দিলো।এখন খুনের তদন্তের দায়িত্ব পরেছে তার উপর। সে এখানকার লোকাল ছেলে। সব কিছুই তার নখদর্পণে। এখানকার প্রকৃতি সহজ সরল বেজার সঙ্গে কথা বলে। লাশের কাছে দলবল নিয়ে যেতে যেতে বিজয় বাবুর চোখের সামনে তার বৌয়ের মুখের আদলে একটা মুখ আলো হাসি মাখানো চোখে ভেসে উঠলো গ্রামের শান্ত সবুজ জুড়ে...
বিজয় যখন জঙ্গলে লাশ দেখতে গেলো, তখন নিজের বাড়িতে একবার টুকি মেরে দেখলো। কাউকে দেখা গেলো না। পাশের বাড়িতে জিজ্ঞাসা করেও বৌয়ের খোঁজ পেলো না। তারপর বাধ্য হয়ে জঙ্গলে গেলো।
খুন করার পরেই রক্তমাখা হেঁসো নিয়ে বিজয়ের বৌ থানায় এসে হাজির। সেএসেই বললো, আমি সাধুকে খুন করেছি। পাড়ার মেয়ে বৌ সকলে খবর পেয়ে থানায় এসে হাজির। সবাই সাধুর নামে ধর্ষণের অভিযোগ করলো। অফিসার গ্রেপ্তার করলেন বিজয়ের স্ত্রীকে। তারপর বললেন, যা হবে কোর্টে হবে। আপনারা সাক্ষী হিসাবে সকলে যাবেন।
মদন কাকা বলছেন,এই কেসে কিছু হবে না রে। ধর্ষকের কোনো মতেই বেঁচে থাকার অধিকার নেই। তবে নিজের হাতে আইন তুলে নিবি না। আইনে ভরসা রাখবি। তার হাত অনেক লম্বা। কিছু উঠতি ছেলে বলে উঠলো, শালাকে খুন করে ভালোই করেছে বেজার বৌ। কাকা বললেন, ঠিক বলেছো। কাল আমরা সকলেই কোর্টে যাবো, বুঝলে হে। সবাই রাজি হলো। কয়েক মাসের মধ্যেই শোনা গেলো বেজার বৌ এর দুবছরের জেল হয়েছে। কাকা বললেন, যারা অপরের জন্যে জীবনের বাজি রাখে, সমাজকে সুস্থ রাখে তারাই হলো প্রকৃত সাধু।
পাড়ার জটাই বাগ্দি বললো, বেজার বৌ ওই খচ্চরটাকে বলি দিলো বলেই গ্রামের মা বোনের ইজ্জত বাঁচলো। তা না হলি ওর কি দায় পরেছে জেল খাটার।
কাকা বললেন, ঠিক বলেছে জটাই। সবাইকে বাঁচাতে গেয়ে ওর এই অবস্থা। স্বাধীনতার যুদ্ধের বীরের মত আমাদের এই বেজার বৌ এর সাহস। ও আমার বয়সে ছোটো হলেও আজকে আমার মা বলে মনে হচে রে।ওকে একটা পেন্নাম ঠুকি।এই কথা বলে ধুতির খুঁট দিয়ে চোখের জলে ঝাপসা চশমার কাঁচটা মুছে নিলেন কাকা..
Comments
Post a Comment