গুচ্ছ কবিতা - নাদিরা

 

অভাব

ছোটোবেলায় আমাদের অভাব ছিল না 
মাটির ঘরের দেওয়ালে পোকা উঠত 
বর্ষা এলে সেই কাদাভেজা সিঁড়িতে ঠেস দিয়ে খেতাম জাম আর বৃষ্টির সুখ, 
শীত এলে ঘরে কুয়াশা ঢুকে বিছানা ঠান্ডা হয়ে যেত .... 
আমরা সকলে গা ঘেঁষে বসে উনুনের ধারে শুকনো রুটি খেতাম 
হাসতাম; খলখল শব্দে ঘর ভাসতো-- পৌষের উষ্ণ ওম এসে বুকে বসতো 
তখন আমাদের পায়রা ওড়া মেঘ ছিল... অভাব না শুধু নুন ভাত ছিল। 

এখন আমাদের ঘরগুলো নেই _ ইট কংক্রিট ও কান্নার দালান হয়েছে 
মাটি নেই _ শিমূল তুলোয় মোড়া হলদে দুপুর ও নিঃসঙ্গ কাক , 
এখন আর আমরা উবু হয়ে আগুনে মুখ উজ্জ্বল করিনা 
মুখে এখন ধোঁয়া ধোঁয়া... কালো ছায়া ভাঙাচোরা ভ্রু.... 
আমাদের পুরোনো ধূসর ছাপের আয়না চুরমার হয়ে গেছে, 
নতুন আয়নায় বুকের ভেতরের অসুখ -ঘাতকতা স্পষ্ট দেখা যায়।
এখন আমাদের খুব অভাব.... খিদের তাড়নায় কোকিলের বাসা ভেঙে দিই। 
অভাবে আমার চোখগুলো নদী হয়েছে... হাতের কাঁচের চুড়ি ভাঙা দাগ গভীর হচ্ছে 
এই অভাব আমার একার নয়। 
এই আলোর অভাব দিনদিন বাড়তে থাকে 
আমি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকব 
পায়রা শূন্য উঠোনে উড়তে উড়তে একদিন নিঃসঙ্গ শ্মশানে উড়ে যাবে....






বার্তা

ছায়ারা ধীরে ধীরে ছোটো হয় 
সম্পর্কের আলো বাদুরের ডানার মতো 
কিছুটা ভয় ও কিছুটা সৌভাগ্যে ঘেরা। 
আমরা কি করে পরের জন্মে আলাদা হবো জানিনা 
তবে এজন্মের মতো মাটি মেখে ঘুমানোর দিন শেষ। 
হাজার রহস্য ও জীবনের ছায়াবৃত্তের মাঝে ঘুমিয়ে থাকে দুপুরের কাক, 
শুনেছিলাম; সময়কে কখনো পুরোপুরি বিশ্বাস করতে নেই। 
এযাবৎ আমি রাত ও কান্নার ঘামকে বিশ্বাস করেছি... 
কারন; অন্ধকারই আলোর একমাত্র বার্তাবাহক...






সব সম্পর্ক আপেক্ষিক

এখন আমার আর কোনো কবিতা নেই 
সহজ কোনো গল্প বা গানের পালা নেই, 
সবটাই ঢুকে গেছে ভাত--ডাল ও মুড়ির পেটে। 
শীত বাড়ছে -- কমে আসছে ঠান্ডা বাতাসের চাহিদা;
অথচ এখন চুটিয়ে হাওয়া বইছে -- ভুল সময়ে 
চারপাশে এভাবেই অসময়ে অভাব মেটে। 
সম্পর্কের গায়ে ঘুনধরার সময় একধরনের ঘিন-ঘিন শব্দ হয় 
আমরা বুঝেও কান চুলকে মাথা নাড়াই, 
অথচ মানুষ গুলো কেমন যেন মুখোশের পর মুখোশ পরছে --
আমরা পরছি -- তোমরা পরছো -- খুলতে গেলেই লজ্জা হচ্ছে। 
আদতেই কবিতা গান কিছু আপেক্ষিক শব্দ 
প্রেমিক বা যেকোন ভালোবাসার গন্ধ একজীবনের বেশি থাকছে না। 
আমরা স্বীকার করতে চাইনা, সব সম্পর্ক আপেক্ষিক......

Comments