গুচ্ছ কবিতা - তাপস দাস চৌধুরী


গাছ - মানুষ


শব্দগুলি মুক্তি খোঁজে 
অনুভূতির উত্তরন যদি হয়!
মন হয় রাজহাঁসের পাখনা
গাছ-মানুষের অভাব আজ বড্ড বেশী।
শঙ্খচিলের  ডানায় চড়ে,
মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়ায় 
হলুদ-বৃদ্ধের এক  সবুজ-যৌবন।
মনের শৈশব-কৈশোরের মৃত্যু হলে,
সব পাতারা ঝরে পড়ে!
গাছ- মানুষ হয়ে ওঠা আর হয় না।
কিন্তু তবুও গাছ- মানুষদের  খুঁজে  ফিরি
ভীষণ প্রয়োজন একটি গাছ- মানুষের।





চুপ কথারা


আমি আর আমার একাকীত্ব 
নিঝুম রাতে তারারা ঘুমিয়ে পড়লে,
এক বুক মোমবাতি জ্বেলে আঁধার মেটাতে চাই
আত্ম-বিস্মৃতির দহনে পুড়তে থাকে মন।
স্মৃতির মনিকোঠায় সুক্তির জন্মমুহূর্তকে উদযাপন করি
ঝিঁঝিঁ  পোকার কনসার্টে, চাপা পড়ে দীর্ঘশ্বাস 
চোখের কার্নিশ ছুঁয়ে  যায়  ভরন্ত মেঘের চুম্বন 
সুনামীর রাতে হাল ধরে উত্তাল সমুদ্রে  একা নাবিক।
নোনা ঢেউয়ের ঝাপটায় তীর ভাঙ্গে অবিরাম
দুর থেকে দেখে যাই বিস্ফোরিত আগ্নেয়গিরির মশাল
দিক- নির্দেশনা সংকেত,যেন সোনার পাথরবাটি
জীবনের গলিপথে ঐ দেখা যায় সোনার হরিণ। 






মুখোশ


আজকাল সবার মুখ মুখোশে ঢাকা
মানুষ চেনা  যায় না,
কথাটা আজকাল নয়!
চিরকাল চিরদিন সব মানুষ মুখোশ পড়ে থাকে
বায়বীয় মুখোশে ঢাকা সেটা অদৃশ্য
যদিও মানুষকে কোন মানুষ
কবে সেভাবে চিনতে পেরেছে!
ছৌ নৃত্যে,নৃত্যরত পৃথিবী
মুখোশের নৃত্য পুরুলিয়া থেকে আফ্রিকার আদিমে
ছল, কপট, মিথ্যার মুখোশ ছিল, আছে, থাকবে।
সে মুখোশ আদিম এক প্রবৃত্তির পরিচয়ে----
সে মুখোশে ভরা থাকে অভিনয়, ঢাকা থাকে  কালো মুখ 
একটা যাদু আয়না চাই!  
যেখানে মুখ আর মুখোশ পৃথক হয়----


যেখানে মুখোশধারীর মুখোশ দৃশ্যমান হয়।





নীলকন্ঠ


সব পুরুষকেই সংসারে নীলকন্ঠ হতে হয়
সব নীলকন্ঠী পায় না, পার্বতীর সুধায় নির্বিষ হতে
মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেওয়াটা যতটা  অপমানকর
তেমনি উচিত সত্যটাও মুখের ওপর বলতে নেই
মনের আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে--
যে উষ্ণ সত্যের লাভা বেড়িয়ে আসে
এক খাতে বয়ে গিয়ে-----
এক ছাই ভষ্মের নদী গড়ে তোলে
যার এক প্রান্তে একটি মন অপর পাড়ে আর একটি মন।
অশ্রুরা তো বিন্দু বিন্দু---
হৃদয় হোক না কেন এক বিষাদ সিন্ধু, তার জলেও 
ছাই ভষ্মের নদীতে জোয়ার আসেনা
তাইতো সে নদীতে পরান মাঝির পাল তুলে 
গান গাওয়া আজও হলোনা! সোনা বন্ধুরে•••••।





বিভাজিকা


এক বুক জলে দাঁড়িয়ে ছিলাম
তোমার পায়ের পাতা ভিজলো না! 
এক আকাশ ছায়া দিলাম,
তুমি রোদ্দুরের খোঁজে ছুটে গেলে----
সবুজ পাতায় লিখেছিলাম,
মাড়িয়ে যাওয়া দুর্ব্বার কান্নার গল্প।
তুমি সহজপাঠে মন বসালে কই!
তুমি আজও অসমাপ্ত উপন্যাস
সেই যে আমার নিজের একটি নদী  ছিল!
মনের পরশের অনুভূতির ঝর্নায় পুষ্ট,
তার আকাবাঁকা গতিপথে---
তুমি হয়ে গেলে এক বিভাজিকা।

Comments

  1. কবি স্পষ্ট কথায় স্বচ্ছন্দ ।
    ভালো লাগলো ।

    ReplyDelete

Post a Comment