গুচ্ছ কবিতা - দেবশ্রী রায়


আলো 


যা কিছু মুছে যাচ্ছে যত প্রজ্জ্বলতা 
অথবা ঢেকে যাচ্ছে আকাশের নীল 
কালো করে চারিদিক উড়ছে ধুলো
দীর্ঘতর ছায়া, সরে যাওয়া আলো 
এসবের আড়ালে আছে 
                                  সত্য এক....

এই আড়াল এই অন্ধকার শাশ্বত নয়, 
                                 প্রতিসরণ নিছক

লাল নীল সাদা কালো আলো নিয়ন
ঐ দূরে বাতিওয়ালা, হাতে লন্ঠন। 





জল


সৃষ্টিবিন্দু থেকে জলের কাছে নিবিড় যাপন
গর্ভভর্তি জল, ভেসে থাকা 
অঞ্জলিবদ্ধ করপুট
মায়ের নীরব  আর্তির মধ্যবর্তী বিরতিতে
আমাদের থৈ থৈ জলজ জন্মক্ষণ। 
এখনো নৌকার মতো গায়ে লেগে আছে 
ঢেউছাপ জলছবি, উজানের গান 
প্রথম সাঁতার শেখার চিহ্ন 
                        আমরা জলজ সন্তান।





মাটি 


যতই থাকুক ইচ্ছে ডানা আসমানি রঙ 
মেঘ চড়াইয়ের তান 
মাটির বুকেই ঘর বেঁধেছি সুর সেধেছি
গাইছি মাটির গান
আমাদের সব গোপন আছে আজীবনের
মাটির কাছে ঋণ
মাটির মানুষ মাটির শরীর মৃত্যুর পর
মাটির বুকেই লীন।




ঘর


চোখের যতটা কাছে একটা নদী ভাবা যায় 
ঠিক ততটা বুকের কাছে একটা ঘর
এক জানালা মেঘলা আকাশ 
আর এক ফালি খোলা বারান্দা
অনেকটা লঘু করে তোলে 
বসবাসের উপযোগী সব আয়োজন
ব্যস্তদিনের রৌদ্রহীনতা, রাতের ফিসফাস  
কোটোরে কোটোরে বৃষ্টিদিনের অনুরণন।
শুধু পিছুটান আছে বলেই ক্লান্ত বিকেল
সিঁড়ি ভেঙে চলা অকারণ।

 



পথ 


হতে পারে 
সরল কিংবা আঁকাবাঁকা, ঘূর্ণায়মান  
চলে গেছে কোনও অন্ধ ভিক্ষুক
                       দিশাহীন ভিক্ষাপাত্র হাতে 
অথবা স্বপ্ন জড়ানো গভীর দুচোখে 
হেঁটে গেছে কোনও তিব্বতি লামা 
                 অজানা দেশে কোনও এক রাতে।

এ পথ নাকি পথিক চেনে শুধু, 
                         কতখানি তার সমর্পণ 
এবার তো শুরু হোক অনন্তের পানে
                        আমাদের অমোঘ ভ্রমণ।

Comments

  1. সৃষ্টিবিন্দু থেকে নিবিড় যাপন কবির ।
    দারুন লেখা ।

    ReplyDelete

Post a Comment