গুচ্ছ কবিতা - বিটু দাস



কদাচিত স্বপ্ন নয়


পথে পথে গল্প ফলে থাকে
পথের বাসিন্দা তুমি হৃদ-বাচ্য হতে
ক্রমশ ফসল তুলে নাও
শিখণ্ডী যেমন তুলে নেয় প্রভুত সাম্রাজ্য


দণ্ডাদেশ প্রভু
বায়ুর প্রলাপ হতে পাখির মধুর উহ্য হয়
কখনোবা দেশ ভাসে জ্বলন্ত সম্বলে


এতদিন মগ্ন ছিল যে-বসতি ভরা নৌকো
তাতে মাটির অঝোর লেগে থাকে


শিহরিত অন্ধকারে ঘাস-জমি আলো হয়
ঝাঁকে ঝাঁকে বৃষ্টি নয়; চাঁদের কৌশলে।





এক নিঃস্ব মানুষ


এই যে আলোর খেলা এত; এত গান উচ্চারণ
কে বলে ত্যাগের নিয়তি ছাড়াই তুমি চলে যেতে পারো?


দেখো সমস্ত ভারত খুলে যাচ্ছে অংশীদারে
আর ব্রতের আরাধ্যা হয়ে হৈ হৈ সদর বাংলায়
ধীরে অপাপ সকালে বৃষ্টি-স্বরে তুমি গান ধরো
মাটি ঝরে কোমল বৈশাখে,
রোদের সেতার জানি, তুমি যেন আসন্ন শরৎ


তোমার তরণী ধ্রুব, তোমার গন্তব্য বিভাজিকা
স্রোতে সরস রশ্মি ফলায়
জীবন এমনই - ধুলোরা ধারালো হলে
নাবিকের মতো সঙ্গী-পথে তারায় তারায় 
যে যেমন খুশি নিঃস্ব হয়ে 


ক্রমে স্বজাতি হারায়।




নদীর হরফ শিখি


তোমার চুলগুলো বল্গাহীন হরিণের মতো,
লাফিয়ে আমার সমস্ত রোদ্দুর আর 
শ্রাবণলোক পার করে, আমাদের অর্জিত ক্ষুধার
শাবকেরা শুয়ে থাকে আর তাদের ফসল নিয়ে
শুয়ে থাকে বৃষ্টিমাতা, তথাপি সমুদ্র থেকে
বায়ুর কাঁপন আসে, ভঙ্গুর শীতরক্ষির মতো
দেহজ বিকার ছিন্ন হয়।


পৃথিবীর গভীরতম পীড়া যেন সারারাত ধরে
গল্প বিনুনি শেখায় আর গানের মতলব সেরে
ঘুমিয়ে রাখে তাদের খোকাসমূহকে,
সেই মনখারাপের প্রদেশে তোমার সহজ নিয়ে
আমার গোপনতম গল্পের পৃষ্ঠদেশ আঁকি।


আমার রক্তস্নাত স্রোতের বাসনা নামাই
নদীর হরফ শিখি
ক্লান্তিও এমনই হয় প্রিয়, বিচ্ছেদও কামনার সোপান
সমাপ্তি শুরুরই হয়
বরফ তো জলেরই প্রমাণ!




 ভাঙন

 
গোত্র নেই শুধু জলে-পূর্ণ মায়া রাত
পিছনে প্রবল ঋতু
ঘাসে ঘাসে মৃত্যু লেগে থাকে


মায়ের শখের কাছে সরে আসে ছেলের কাফন


দেখো কত উষ্ণ ভেঙে থাকে,
অন্ধকারে কথা সেদ্ধ হয়
প্রচণ্ড নগর থেকে শুভ্র সেতু নামে
শিরায় শিরায় উদ্ভিদের ছায়া


আয়ু শূন্য হয়
মাঠে মাঠে আলোদায়ী ধান
উলু বাক্য জমে থাকে 
শীত গল্প আলোর রেখায়


পত্র পুষ্প দিতে এসে ভুলে
আমি শুধু আগুন কুড়াই।





যথোচিত বয়ান

 
যদি খুলে নিতে মন চায়, খুলে নিবে পাখির কূজন?


যখন তখন...
এই মহাদেশে প্রভু, গুঁজে দিতে পারনি তো
সহজাত আভূষণ!


এই পাঠ দিতে এসে, কেড়ে নাও ললিত শ্রাবণ
জুড়ে ফেল রক্তাভ নদী,
যমক প্রলাপ, ভূয়সী কথন


এই প্রাণ সত্য নয়? উপন্যাস সব মিছে বলে?
তুমি তাই ঘুরে ফিরে তুলে নাও,
গায়ে মাখো জবার মাখন...
উৎসবে বয়ান রাখো, ইতিহাসে ভুলে রাখা ডানা


আলো তো তুলসী হয়,
সেকথাটি দেবতার জানা!

Comments

Post a Comment