অণুগল্প - গৌতমী ভট্টাচার্য


শূন্যতা 

  

পিয়ালির আজকাল বড় অসহায় লাগে। বাবা রোগশয্যায়। ডাক্তার জবাব দিয়ে গেছে। দেয়ালে মায়ের মালা পড়ানো ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে একরাশ শূন্যতা নিয়ে -- "মা তুমি তো কবে চলে গেছ; মনেও পড়ে না তোমাকে। আর এখন বাবাও..." বলতে বলতে কেঁদে দেয় পিয়ালি।  
 
 
ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় সে। দাদা বিয়ে হয়ে অন্যত্র সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। সাদাসিধে নির্বোধ গোছের দিদির বিয়ে হয় উচ্চবিত্ত সংসারে। সারাদিন মানিয়ে গুছিয়ে চলতেই ব্যস্ত সে। বাপের বাড়ির কর্তব্যে তেমন উপায় না থাকলেও মাঝে মাঝে পিয়ালিকে নির্দেশ উপদেশ দিতে অভাব রাখে না। ছোটবোন সরকারী চাকরী করে। কর্তব্যের খাতিরে কিছুটা সচল। ব্যবহারে একটা রুক্ষতা। সবার সাথে বনিবনা করে চলতে অনভ্যস্ত প্রায়।  মাঝে মাঝে পিয়ালির সাথে মতভেদ, কথা কাটাকাটি। দেমাকি কথাবার্তা আজকাল শূলের মতো বেঁধে পিয়ালির। বোনের বিয়ে হয় এক সাধারণ পরিবারে। একমাত্র নিজের জেদের বশেই বিয়ে করে নি পিয়ালি। বাবার অবর্তমানে পিয়ালিকে দেখবে না সে কথাও জানিয়ে দেয় সকলেই। পিয়ালিকে সবাই হাতের পুতুল বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রতিবাদী পিয়ালি রুখে দাঁড়িয়েছে। 
 
 
বাবার দেখভাল পিয়ালিই করে। মাঝে-মাঝে ভাই বোনেরা আসে। অনেক নির্দেশনামা শুনিয়ে যায় --"এটা করবি ওটা করবি" বাবার জন্য ফল, মিষ্টি, প্রোটিন পাউডার এসব সঙ্গে নিয়ে আসতে ভোলে না কেউ-ই। বাবাকে সবাই ভালবাসে। আসে দেখে চলে যায়। পিয়ালি একা বসে রাত জাগে বাবার পাশে আর চোখের সামনে আলো-আঁধারী ছায়ায় খেলা করে ভবিষ্যৎ। চারপাশে সবাই আছে। কিন্তু বাস্তবে সে একা। বড় একা।



Comments