গল্প - অনসূয়া সরকার বিশ্বাস



চাঁদ শুধু তুমি



 

মিঠে রোদমাখা সকালের কলকাতাকে পেছনে ফেলে দুর্বার গতিতে ছুটছে দুরন্ত এক্সপ্রেস, তার আপন গন্তব্যে।ঘষা কাচের ওপার থেকে রেলকলোনীর চৌহদ্দিগাছপালাঅস্থায়ী দোকানপাট, ব্যস্ত চলমান জীবন সবটাই ছোটছোট আবছা কোলাজ হয়ে সামনে  আসছে,আবার দৃশ্যপটের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোথায় খোলা হাওয়া এসে একেবারে আছড়ে পরবেচোখে, মুখে, চুলে! তা নয়! চারদিকে ঝালর দেওয়া পর্দা আর হিমশীতল বাতানুকুল ব্যবস্থা। অপসিটের আপারে একজন  বয়স্ক ভদ্রলোক ছাড়া কেউ নেই তেমন! বোর লাগছে খুব বৈদেহীর! বিকেল গড়িয়ে গেছে কখনসামনেই তো বিলাসপুর স্টেশন। স্টেশনে নেমে আশপাশ টা দেখবে নাকি বৈদেহী? একটু নামলে ক্ষতি কি!

 


 

 _"একটু শুনবেন?"

 

চকিতে চোখ ফেরায় বৈদেহী। বৈদেহী বসু। বয়স চল্লিশ ছাড়িয়েছে অনেকদিন। কিন্তু ছিপছিপে গড়নে বোঝার উপায় নেই। পরনে সবুজ কুর্তি, কালো ডেনিমের প্যান্ট। হাইলাইট করা স্টেপকাট চুলে  বেশ ঝকঝকে তন্বী সে। সহসা মনে হল একজন মাথায় কালো রুমাল বাঁধা,ফ্যাকাশে মুখেরশীর্ণকায়া মহিলাপর্দা সরিয়ে মুখ বের করে ইশারায় কিছু বলছেন।

 

_"আমায় বলছেন?"

 

_"হ্যাঁ.. যদি কিছু না মনে করেনআমাকে একটু ধরে নিয়ে যাবেন.. ওই টয়লেটে আর কি…"

 

_"অবশ্যই..আমার হাতটা ধরুন।"

 

_"আপনি কার সঙ্গে এসেছেন?"

 

_"হাসব্যান্ডের সাথে।  চেকআপে। কেমো নেওয়ার পর হঠাৎ করেই অসুস্থ।"

 

_"ওহ্।"

 

_"আসলে হাসব্যান্ড ঐদিকে গেলো,সবসময় বিরক্ত করতে ভালো লাগেনা! যতটুকু পারি আর কি.."

  

 

 

ধীরেধীরে লোয়ার বার্থটাতে শুয়ে পড়ে ভদ্রমহিলা। শীর্ণশিরা বের

 

 হাতটা দিয়ে চাদরটা টেনে নেয়। বৈদেহীকে  ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞাসা করে,

 

_"আপনার সঙ্গে কে এসেছে?"

 

_"একাই।"

 

 _"একটু বসবেন। একাএকা ভালো লাগেনা। যদি আপনার তাড়া না থাকে…"

 

_ "না না! আমার আর কি তাড়া!"

 

 

_আপনার আমার জন্য কাজটা হলনা না?

 

_ একদমই না।

 

_ আচ্ছা! আপনি অনেকদিন ধরেই অসুস্থ? বাড়ী কোথায়?

 

_  "শিলিগুড়িতে। লাংসে ক্যান্সার।প্রথমে বুঝিনি। আর্থরাইটিস নিয়ে কাবু ছিলাম, লাস্ট স্টেজেই… "

 

_"বুঝেছি। মনে জোর রাখুন। জানেন, আমিও জলপাইগুড়ি থাকতাম। সে অবশ্য অনেক কাল আগে।"

 

_"ওহ।"

 

_"আপনার হাসব্যান্ড এখনও এলেন না তোট্রেন তো ছেড়ে দিল!"

 

_"অন্য কম্পার্টমেন্টে গেছেন হয়তো। কতক্ষন আর ভালো লাগে! এমনি তো রোগী নিয়ে গোটা জীবন গেলো। আমিও ডাকিনা। থাকুক 

 

একটু ক্ষণ নিজের মত।"

 

_"কি যে বলেন!"

 

_"বলছি দিদি আমাকে একটা ব্যাগ পাড়তে হেল্প করবেন? ওই ওপরেই আছে। আসলে ওষুধ না খেলে দেরি হয়ে যাবে!"

 

_"অবশ্যই। আমি  বের করে দিচ্ছি। আপনি শুয়ে থাকুন।"

 


 

পর্দা সরিয়ে মধ্য চল্লিশের এক সুদর্শন, ছফুট হাইটের ভদ্রলোক প্রবেশ করেন। চিবুকে টোল, সাদাকালোর মিশেলে চাপ দাড়ি।

 

_"শ্রী! ফ্লাক্স থেকে জল ঢালতে গিয়ে জল ফেলেছো? জানো তো কিছু করার মুরোদ নেই! তবে কাজ দেখাতে যাও কেনসারাজীবন তোমাকে নিয়ে  জ্বলে পুড়ে শেষ!"

 

_"অনি! উনি আছেন যে! প্লিজ!"

 

ধীরেধীরে একটা মেডিসিন বক্স নিয়ে আপার বার্থ থেকে নেমে আসে বৈদেহী। চকিতে চোখ চলে যায় ছফুট হাইটের ভদ্রলোকের দিকে। এতক্ষণ ট্রেনের ঝাঁকুনি কেউ অনুভব করেনি। হঠাৎ মনে হলো ট্রেনটা প্রবল জোরে ঝাঁকুনি  দিলশ্রীতমা পরিচয় করিয়ে দেয় তার স্বামী অনিকেত সেনগুপ্তর সঙ্গে বৈদেহীর।

 

অমনি   মুহূর্তরা থমকে যায় আর বৈদেহী পিছিয়ে যায়  টাইম মেশিনে চব্বিশ বছর আগে

 

আর অনিকেত? সেও তো ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যায় পুরনো ক্যাম্পাসে, গোপাল দার চায়ের দোকানের বেঞ্চটাতে। যেখানে সুমিত, প্রতাপ আর সৌমিকের সঙ্গেওই ছেলেটা কে? অনিকেতই তো ! ওই যে, গোলাপীআশমানী, ফিরোজা ওড়নাদের দৃষ্টি বিনিময়  আর এগিয়ে যাওয়াশৌভিকের গলায় ব্যাকগ্রাউন্ডে  একটা ধুন "আরে রে আরে ইয়ে কেয়া হুয়া, ম্যানে নেহী জানা!" সবটা স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে তো!



 

রাত এগারোটা পঁয়ত্রিশ। নাগপুর স্টপেজ। স্টেশন চত্বর ঘেঁষে সারি দেওয়া ঘুমন্ত গুলমোহর! সুন্দর মৃদুমন্দ একটা হাওয়া। আর অবশ্যই ব্যস্তময় চলমান জীবন। সারিসারি মানুষ চলছে অনেক সুখদুঃখ পার করে নিজের নিজের গন্তব্যে। লক্ষ্যহীন ভাবে বৈদেহী হেঁটে চলেছে দাঁড়িয়ে থাকা কম্পার্টমেন্টের গা ঘেঁষে। স্টেশনের ফ্লুরোসেন্ট আলোর ঝলকানি, হাঁকডাক কে অতিক্রম করে বৈদেহী এগোতে থাকে ক্রমশ 1A, 2A, ছাড়িয়ে! দূরে আকাশে একাকী একফালি চাঁদ আছে শুধুঅনেক টাই এগিয়ে এসেছে বৈদেহী। না  ফিরতে হবে  দ্রুত। ওই তোশ্রীতমা চাদর মুড়ি দিয়ে উদাসীন চোখে ঘষা কাচের ওপার থেকে তাকিয়ে আছে! কি আছে ওর দৃষ্টি তেশূন্যতা আর গ্লানি! বৈদেহী দৃষ্টি কি কাউকে খুঁজছেনাকি নিজেই খুঁজে বেড়াচ্ছে হারিয়ে যাওয়া আশমানী ওড়নার মেয়েটিকে?

 


 

_"এত রাতে প্লাটফর্মে ঘুরতে ভয় করছেনা ম্যাডাম!"

 

_"ওহ্ তুমিবাব্বা! আমি তো চমকেই গেছি। ভাবছি কে না কে!"

 

 _ "সেই! সুন্দরী মহিলা! তায় এত রাত! আশিক বা শিকারী কারোরই অভাব নেই!"

 

_ "উফ্! পারো বটে! শিকারীর ভয় এখনকার যুগে ৬৫ তেও আছে। তবে আশিকের ভয় মধ্য চল্লিশে আর নেই!"

 

_"কি যে বলো লাইফ  বিগাইন্স অ্যাট ফর্টি, আর তুমি তো বিউটি দিয়ে সময় কে আটকে রেখেছো!"

 

 _"চিনতে পেরেছো তাহলে? ভাবলাম বেমালুম ভুলেই গেছো!"

 

_ "তোমাকে কী ভোলা যায়? একই আছো, বরং আরো অ্যাট্রাকটিভ!"

 

_ "রিয়েলি!"

 

_"আসলে শ্রী মানে আমার মিসেসের একটু সাইকো প্রব্লেমও আছে! তাই আর পুরনো গল্প করিনি। বুঝতেই পারছো..."

 

_ "ইটস ওকে!"

 

_ "আরে ! ট্রেন মিস করবে নাকি! চলো চলো...."

 

বলেই হ্যাঁচকা টানে বৈদেহীর হাত ধরে ট্রেনে উঠে পড়ে অনিকেত।

 

_"আরে এটা তো 2B, আমাদের কোচ অনেক আগে তো!"

 

_ "তাতে কি! করিডোর দিয়ে গেলেই হলো!

 

দেখো  কি সুন্দর একটা হাওয়া! ট্রেনটা এখনই ছাড়বে! এসো, আকাশে চাঁদটা দেখো! আজ কিন্তু একই রকমএকটু দাঁড়িয়ে যাই।আমি কিন্তু আজ ভুলিনি জানো!"

 

_"কী ভোলোনি ?"

 

_"এই যে তুমি চাঁদ দেখতে খুব ভালোবাসতে! এখনো চাঁদ দেখতে দেখতে হারিয়ে যাও?"

 

_ "বলি মশাই হোলো কি? ঘড়ি টা দেখো! তোমার বউ ভেবে ভেবে হন্যে হচ্ছে যেদেখো কান্না কাটি জুড়ল বলে!"

 

_" ধুর! ছাড়ো তো! জানে দেরী হবে! চাঁদ টা দেখোএকদম সেদিনের মত! ওই যে একটা গান ছিল না" সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা" মনে পরছেতুমিও তো গাইতে। একবার গাইবে?"

 

_"মাথা খারাপ! এখানেএসি থেকে বেরিয়েছ মশাইআমার তো গরম লাগছে খুবআমি বাবা আমার সিটে গেলামতুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাব্য করো। বউ ধাতানি দিলে জানিনা কিন্তু! চললাম!" 

 

_"আরে আড্ডা মারবো ভেবেছিলাম!"

 

_"তবে এসো আমার সিটে। আমি চললাম!, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিতে আর পারছিনাদরজার সামনে দাঁড়িয়ে উল্টে পড়ে মরি আর কি!"

 

_ "না হয় মরলেই আমার সাথে!"


 

 

_"তোমার চেহারার জৌলুস কিন্তু ফিকে হয়ে গেছে। সেই হার্টথ্রব অনিকেত সেনগুপ্ত কে পাচ্ছিনা!"

 

_"সেই অনিকেত কবে হারিয়ে গেছে!"

 

_ "রোমান্টিক স্বভাবটা যায়নি!"

 

_"ধুস! সব গেছে! দুটো মানুষ বসে থাকি শুধু! আর অনেকটা নিস্তব্ধতা! অসুখ সর্বস্ব জীবন এখন।"

 

_ "ভালোবেসেই তো বিয়ে করেছিলে! মনের মানুষ পাশে আছে এর চেয়ে বেশি কি চাই!"

 

_ "ভালোবাসা! "

 

_ "তাইতো শুনেছিলাম। তবে লিলির সাথে ব্রেকআপ হবে তোমারএটা ভাবিনি!"

 

_ "জীবনের মোড় কোথায় যে বেঁকে যায়! আমিও শুনেছিলাম তোমার  সব কথা।"

 

_ "কোন কথা?"

 

_এই তোমার বিয়ে ভেঙে যাওয়াশ্বশুর বাড়ীর অত্যাচার। তোমার মত মেয়ের সঙ্গে এসব! ভাবাই যায়না!"

 

_ "আমার মত মেয়ের সঙ্গে সব ভালই হওয়া উচিত বলো?"

 

_ "তুমি আজও একাই তেইশটা বছর কাটিয়ে দিলে! ভাবাই যায়নাএত পরিপূর্ণ তুমি তাও?"

 

_ "কি করে বুঝলে একাই?" 

 

_ "তোমার ফাঁকা  সিঁথি! আর!

 

_"আর?"

 

-"আমি তোমাকে জানি!"

 

_"বদলাইনি বলছো? ইস্টাইল তো হতে পারে!"

 

_ "আমি সত্যি চাইনি সেদিন ওভাবে তোমাকে বলতে...… আবেগের বশে সেই রাতে বলেছিলাম... পরে লিলি এলোএকটা কনফিউশন... লিলির সাথে প্রব্লেম... আমি  যে ওকে ভালবাসিনা বুঝতেই পারিনিলিলি খুব বাজে ক্যারেক্টারের... পরে যখন.. অনেক দেরী হয়ে গেছে.. তোমাকে অনেক খুঁজেছি জানো.. আজ এত বছর পর দেখা হলোসব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে.. মনে হচ্ছে আবার যদি নতুন করে বাঁচার সুযোগ পাওয়া যেতআজ খুব আফসোস হচ্ছে। এই বিয়েটা তো মায়ের ইচ্ছেতে! সারাজীবন একদিনও শান্তি পাইনি।"

 

_"তবে আমি চেয়েছি জানো একবার আমাদের দেখা হোক। আজ যে আমারও সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে বৈদেহী


_"তোমার ফোন বাজছে অনিকেত। প্লিজ ধরো।  বারবার কেটে দিওনা। শ্রী চিন্তা করবে।"

 

_"তোমাকে  যে  কিছু বলা হলনা বৈদেহী!"

 


 

প্ল্যাটফর্মে  নেমে ধীরেধীরে জনসমুদ্রে মিশে যাচ্ছে বৈদেহী! অনেক ভীড়েও একটা মুখ কে সে খুঁজছে , আর সেই হাতটা! যে তাকে অনেক বঞ্চনার শেকল ভাঙতে শক্তি যুগিয়েছেসেই হাতটাকে আরো শক্ত করে তাকে ধরতে হবে। অনেক শক্ত করে! মুঠোফোনটার  ডাটা অন করার সঙ্গেসঙ্গেই  হুড়মুড়িয়ে আসতে  থাকে একের পর এক অনিকেতের বার্তা।

 


 

শ্রীতমাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে সারাদিন প্রচুর চাপ গেছে অনিকেতের। কিন্তু কাজের মাঝেমাঝে একজনকেই শুধু খুঁজেছে অনিকেত। একজনকেইআর এখন সেই অপেক্ষার অবসানমুম্বাই  মেরিন ড্রাইভরাত প্রায় নটা। অনেক কপোত কপোতী জোড়ায় জোড়ায় বসে রয়েছে ঘনিষ্ঠ ভাবে। অনেকে আবার কানে ইয়ার ফোন দিয়ে জগিং ব্যস্ত। একটা জোৎস্নালোকিত রাত! মুহূর্তগুলো বছর মনে হচ্ছে যেন! কখন আসবে বৈদেহী? তার যে আসার কথা! এই অচেনা শহরে। অনেক না বলা কথা  বলতেশুনতে!

 


১০

 

১৪ নম্বর কেবিনে শুয়ে আছে আফতাব মুখটা শুকনো হলেও মুখের হাসিটা অনাবিল।রাতের খাবারের ক্যাসারোলটা টেবিলে রেখে টুল টা টেনে আফতাবের সামনে এসে বসে বৈদেহী। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

 

_" চিন্তা করোনা। কালকের কেমোটাও খুব সাকসেসফুল হবে। তুমি একদম ভালো হয়ে যাবে। আমার আর মীমের জন্য।"

 

_" ঠিক বলছো বৈদেহীসব ঠিক হয়ে যাবে?"

 

_ "একদম! "

 

কেবিন থেকে বেরিয়ে, নার্সিংহোমের লন পেরিয়ে বড়ো রাস্তায় গিয়ে ওঠে  বৈদেহী। রাত প্রায় নটা। একবার হাত ঘড়িটা য় চোখ বোলায়। না অনেটাই দেরী হয়েছে!

 

ইউক্যালিপটাস গাছের নীচে দাঁড়িয়ে দ্রুত মোবাইল অ্যাপসে  ক্যাব বুক করে ফেলে বৈদেহী। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আকাশে রুপোর থালার মত সেই পূর্ণিমার চাঁদ। আজ এক আছে। বছর মাস সব কেটে গেছে।কিন্তু চাঁদ টা আজ একই। একজীবনের কত সুখদুঃখের সাক্ষী সে। এমনই জোৎস্না ছিল সেদিন ও। চব্বিশ বছর আগে। ল্যান্ডফোনে সেই ছেলেটা  তাকে বলেছিল জ্যোৎস্না রাতে সে অপেক্ষা করবে,মনের কথা বলতে। ঝমঝম বৃষ্টি মাথায় ছুটেছিলো  সেদিনের বোকাকাজল কালো চোখের আশমানী ওড়নার মেয়েটা। কাউকে খুঁজে পায়নি। পরের দিন দুপুরে ম্যাটিনি শো থেকে বেরোতে দেখেছিল তাকে, ফিরোজা ওড়নার সঙ্গে। বন্ধুদের ঠেকে উত্তেজিত বোকা মেয়েটি কলার চেপে ধরেছিল 'ফুট হাইটের। ছেলেটি শ্লেষ মিশিয়ে বলেছিল "একটু আড্ডা মারতে ডেকেছিতুমি তো স্বপ্ন দেখে ফেললে।"

তারপর কত সুখদুঃখ পার করেছে। সম্পর্ক ভেঙেছেসংসার, স্বপ্ন সব। আবার হাসতে হাসতে বেঁচেছে। আফতাব, মীম কে পেয়েছে। কিন্তু ভরা রাস্তার  অপমানটা দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে বেড়িয়েছে বরাবর। মুঠোফোনে নজর দিতেই বৈদেহী দেখে মুঠোফোনের ডাকবাক্স ভরে গেছে অনিকেতের বার্তায়। কল লগ জানান দিচ্ছে অনিকেতের উৎকণ্ঠা।কোনো দিকে না ভেবে দ্রুত টাইপ করে ফেলে  বৈদেহী,

 

"স্বপ্ন দেখছ নাকি?"

 

ব্লু চিন্হ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার সঙ্গেই ব্লক করে দেয় নম্বরটাআর সেই সঙ্গে ওই বিশেষ নম্বর টা কে ব্ল্যাকলিস্টে  পাঠিয়ে দেয় বৈদেহী। ক্যাবের জানলা খুলে একবার মায়া ভরা চাঁদটাকে দেখেস্নিগ্ধ মুখেও ক্রুর হাসি খেলা করে।  আর অনিকেত? সে হয়ত মেরিন ড্রাইভে চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে চাঁদটা মুখ টিপে হাসল না তো!

 

 


Comments