বই কথা - সৌরদীপ বর্দ্ধন



বই - লুব্ধক 
লেখক - নবারুণ ভট্টাচার্য
পাবলিকেশন-অভিযান পাবলিশার্স

 


লুব্ধক প্রকৃতপক্ষে একটা অবক্ষয়ের ছবিমানুষ অথবা মানবতার শেষ মূহুর্তের ছবি, চিরদিন দাবিয়ে মারা হত্যাকারির স্তব্ধ হয়ে যাবার ছবি।



শতাব্দির পর শতাব্দি বিছানায় শুয়ে অথবা বৈঠকখানায় এলিয়ে বসে আমরা সুইচ টিপে সভ্যতা দেখেছি, একের পর পিঁজরাপোল ভরতি করে অসহায়তা প্র্যাক্টিস করিয়েছি। প্রতিবাদের গলাকে সাঁড়াশি দিয়ে ধরে হাতুড়ির এক বাড়িতে মেরে দিয়েছি অথবা ছিঁড়ে দিয়েছি গলায় নলি;রক্তাক্ত মাথাটা আবেগ নয় বরং অভ্যাসবশত খানিক নড়ে চুপ করে গিয়েছে।সেইসাথ উল্লাস করেছি বিজ্ঞানের, আমরা সভ্য তো বটেই!



কিন্তু গল্প অন্যমোড় নেয় হঠাৎ এসে দীর্ঘদিনের কামড়াকামড়ি ভুলে একের পর আর্দ্র, স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার জায়গাগুলি দখল হয়।প্রথমে ভয় তারপর আক্রমণ,তারপর অসহায়তা আর শেষে মৃত্যু-ক্রমশ ভারী হয়ে ওঠে শহরের বাতাস।সর্বশক্তিমানের প্রার্থনা ছাড়া উপায়ই বা কি?প্রাথমিক কাজটুকু সারা শেষে প্রার্থনায় কাজ হয় ।অবশেষে প্রবল তুফান নিয়ে আসে ভয়ঙ্কর নির্দেশ।তোলপাড় করে নগরের রাস্তাঘাটে একটা প্রতিবাদের স্রোত, বিরুদ্ধপক্ষের চোখরাঙানিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বয়ে চলে শহর থেকে বাইরে।প্রকৃতপক্ষে মানবতা আর নিরপরাধী সত্ত্বা ধীর অথচ জমাট পায়ে এগিয়ে চলে যায়,ছেড়ে যায় সভ্যতাকে যা একদিন কনসেনন্ট্রেশন ক্যাম্প কিংবা অসউইৎজের মড়া পোড়াবার চুল্লি অথবা মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে মাথা,শরীর থেঁতলে দিয়েছিল।



স্বর্গদূত নেমে আসে ভয়ঙ্কর পরিণতি নিয়েধংসের প্রাক্ মূহুর্তের স্তব্ধতা নিয়ে।

নবারুণ ভট্টাচার্য সারাজীবন দিয়ে ঠিক তার মতন করেই লিপিবদ্ধ করেছেন সমাজকে। উচ্চস্তরের অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, হাতিয়ার করেছেন কলমকে। তার প্রতিবাদী সত্ত্বার এক সার্থক উদাহরণ 'লুব্ধক' সারমেয়সমাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের গল্প বলতে চেয়েছেন,বলতে চেয়েছেন চিরকাল চলে আসা নিয়মের কথা।



পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক আজ ফের তার সুরে সুর মিলিয়েই যেন বলতে ইচ্ছে করে "জ্বেলেছ কি জ্বালাব/আগুন খুনের বদলা জেনো খুন/নাচালেই বেয়াদব ঝুঁটি/ঝুলব কামড়ে ধরে টুঁটি।"



ফিরে আসো আনুবিসফিরে আসো লুব্ধকলাইকার নির্দেশে ফের আগুন জ্বালাও শহরের মাঝে।

 


Comments