গল্প - অনসূয়া সরকার বিশ্বাস


এক রোদের জন্মদিন

   

|| ১ ||

প্রিন্টেড স্লীভলেস টপ আর কালো পালাজো পরা  মেয়েটি। কাজল দিয়ে স্মাজ করা  মায়া চোখে স্মোকি ইফেক্ট, মাথায় রঙিন বাঁধনি কাপড়ের ফেট্টি, নাকে রুপোর ছোট্ট-রিং। হাতে গীটার নিয়ে, সে গাইছে রবীন্দ্রসঙ্গীত আর রক মিউজিকের ফিউশন্  “প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে মোরে আরো আরো দাও প্রাণ" একটি  টেলিভিশন চ্যানেলের প্রোগ্রামে। মেয়েটি ঋতজা সেনগুপ্ত। উঠতি গায়িকা, নিজস্ব ব্যান্ড আছে। বেশ কয়েকটি মিউজিক অ্যালবামও রিলিজ করেছে।

 

|| ২ ||

নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার মুখে সংকল্পের মোবাইলের স্ক্রিনে  একটা অতিপরিচিত নম্বর ভেসে ওঠে।

_ “ হ্যালো"  

_“বলছি... বাবা, তোমার শ্বশুর মশাই মানে... নন্দার বাবার এখনও অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮৭।  লাংস অ্যাফেক্টেড। তুমি যদি একবার ডাক্তারবাবুর সাথে..."

_"শুনুন ! আমার কথা হয়েছে। ডক্টররা যথাসাধ্য চেষ্টা 

করছেন!…. আর. টি. পি সি. আর নেগেটিভ।  বাট পোস্ট কোভিড নিউমোনিয়া! আপনি একটু শক্ত ভাবে ট্যাকেল করুন... আমি তো আছিই।"

_"জানি বাবা! কিন্তু তোমাকে বিরক্ত করতে মন চায়না। আর বলছিলাম যে দাদুভাই ভালো আছে তো? যদিও দাদুভাই খুব অ্যাডজাস্টিং! মানেহঠাৎ করে  নতুন পরিবেশনতুন মানুষকেমন আছেআসলে এখনতো স্কুল নেই.. পুরো একটা বছর আমার কাছেই ছিল..  … সবই আমার অদৃষ্ট.."

_"চিন্তা করবেননা। আমি আপনার সাথে পরে কন্টাক্ট করছি। এখন রাখছি।"

 

|| ৩ ||

প্রচন্ড গুমোট লাগছে সংকল্পের।  কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে সংকল্প। সার্জিকাল মাস্ক টা খুলে ফেলে। ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। মাঝেমাঝে আদির কাছে নিজেকে খুব অপরাধী আর স্বার্থপর মনে হয়। দার্জিলিঙের 'সেন্ট অ্যান্থনি রেসিডেনসিয়াল' স্কুলে আদিকে মাত্র চারবছরেই ভর্ত্তি  করতে  হয়েছিল সংকল্পকে। একদিকে নন্দিনীর  ভায়োলেন্ট ফেজ্, অশান্তি, অন্যদিকে নার্সিংহোম। ভালোবাসার ভাষা সবাই অনুভব করতে পারে। সংকল্প যে প্রথম থেকেই একতরফা ভাবে ঋতজাকে ভালোবেসেছিলোহাজার চেষ্টা করেও বাড়ির পছন্দ করা নন্দিনী কে ভালোবাসতে পারেনি, সেটা নন্দিনী বুঝতে পেরেছিল। সংকল্প কিন্তু নন্দিনীকে ঠকাতে চায়নি। বন্ধুর মতো মন উজাড় করে সব বলেছিল, যদি সব বুঝে বন্ধু হয়ে পাশে থাকতো, তবে হয়তো সবই অন্যরকম হতে পারত। স্কিৎজোফ্রেনিয়াশব্দটা ছোট্ট হলেও এর লেলিহান শিখায় নিজেকে দাহ্যবস্তুর মতো জ্বালিয়ে রাখ্ করে দিয়েছিল নন্দিনী। একবারও ছোট্ট আদির কথা ভাবেনি। সরমা দেবী আর রথীন বাবুকে ফেস করতে কেমন যেন একটা অস্বস্তি হয় সংকল্পের। অথচ ওনারাও তো নন্দিনীর অসুখের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল না হয়েই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। আজও  মনে পরে সে দিনটাচেম্বারে এসেছিল ঋতজা, কন্সালট করতেই। সদ্য স্টেটস থেকে  এসে অনিকেতের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে একটু ডিপ্রেসড ছিল। সেই সূত্রেই নতুন করে দেখাসাক্ষাৎ, ফোনে কথাবার্তা। এটাই হয়তো নন্দিনীর সুপ্ত উত্তেজনা কে প্ররোচিত করেছিল! সংকল্প তো  নন্দিনী  আর আদিকে নিয়েই থাকতে চেয়েছিল। সত্যি কি তাই? নাকি তৃপ্তিহীন দাম্পত্য থেকে ক্ষণিকের মুক্তি চেয়েছিল সে? ঋতজার মতো স্বাধীনচেতা, উচ্চাকাঙ্খী মেয়েও কি তাকে আঁকরে ধরতে চায়নি? সারাজীবনের কাঙ্খিত ভালোবাসা যখন নিজে ধরা দিয়েছিল সংকল্প কি পেরেছিল নিজেকে গুটিয়ে নিতে? প্রশ্ন গুলো আজ নিজের কাছে মেলাতে পারেনা।

 

|| ৪ || 

সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। আদিটা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। স্টাডি টেবিলে একটা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে চিকেন বিরিয়ানি রাখা। বেডরুমে ঢুকতে গিয়ে দেখলো ট্রাইপডে ডি.এস.এল.আর  সেট করে মিউজিক ভিডিও করছে ঋতজা। বেরোতে যাবে তখন  পেছন থেকে ঋতজা  জড়িয়ে ধরে আদুরে সুরে বললো

ওহ্ মাই লাভআই আম সো হ্যাপী! কালকের লাইভ ভিডিওটা 3k ক্রস করেছে! কিন্তু তোমার মুখটা গোমড়া কেন? কি হয়েছে?"

সংকল্প নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু  শুকনো হাসি হেসে বলল, “কনগ্র্যাটস  ঋতু! তেমন কিছুনা।ঠিক আছি।

ওহ্, মাম্মা লাঞ্চ পাঠিয়েছে, কিচেনে আছে, একটু আভেনে গরম করে নাও প্লিজ। খুব টায়ার্ড লাগছে। লাইভ থাকলে খুব প্রেসার পরে যায়!”

আদি লাঞ্চ করেনি দেখলাম?”

উফ  ডিসগাস্টিং! ভীষণ স্ট্রাবন। কতবার খেতে বললাম। কিছু কথার উত্তর তো দিলইনা, খাবার খেলনা। একভাবে বসে থাকলো।

বিরিয়ানি খায়না ঋতু।

তো? এখন আমি তোমার ছেলের জন্য পঞ্চব্যঞ্জন রাঁধব? দুদিন ধরে কুক, মেইড  কেউ নেই... তোমার নার্সিংহোম। বাসনকোসন! ডাস্টিং, রান্না  ক্যান ইউ ইমাজিন?”   

ঋতু একটু বোঝ,আদি একটা সাত বছরের বাচ্চা।

দেখো আদিকে টেক কেয়ার করা আমার পক্ষে ইম্পসিবল। আমার রিহারসাল আছে। তুমিই বলেছিলে হোস্টেলে থাকবে।” 

জানি ঋতু সব বুঝি। একটু অ্যাডজাস্ট করে নাও প্লিজ।

দেখো সংকল্প আর পাঁচ জনের মতো আমার জীবন না। আমার একটা কেরিয়ার আছে।নাহলে অনিকেতের সঙ্গে আমার বিয়েটা ভাঙতনা। আর আমিও ইস্যু না নেবার ডিসিশন  নিতাম না।

সংকল্প ঋতজার হাত ধরে বলে, “দেখো এখন হোস্টেল বন্ধ। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমি কী করবো বলো?”

 

|| ৫ ||

সকাল থেকে গিটার নিয়ে হাজার চেষ্টা করেও কিচ্ছু হচ্ছেনা ঋতজার। বছরটা খুব ভালো ভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্যান্ডেমিকে সব শো বাতিল হয়েছে। ওদিকে পামেলা সেন, তিলোত্তমা মজুমদাররা একের পর এক লাইভ ভিডিও করে চলেছে! অদৃশ্য ইঁদুর দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পরেছে ঋতজা। এর মধ্যে আবার আদি? উউফ্! কে ফোন করলো কে জানে!

_হ্যাঁ, ...বলো.. আদি পাশের ঘরে।

_কি বলছ সংকল্প? কখন ঘটেছে এই  মিসহ্যাপ টা?

_তুমি কি শশ্মানে আছো?

_নাআদি কে  কিছু বলছি  না... বাট আমি কিভাবে  আদিকে সাপোর্ট করবো? আমার সাথে কতটা ওর ইন্টিমেসি

_না প্লিস, আমি আদির সঙ্গে রুমশেয়ার করতে পারবোনা! _এটা পসিবল না প্লিজ! কিছু প্রাইভেসি নেই নাকি?

_ কে, রাখছি।

..ফোনটা ডিসকানেক্ট করে ধপ করে বসে পরে ঋতজা। বাচ্চা ছেলেটা কবেই মাকে হারিয়েছে।দাদু চলে গেলেন। মোটে সাতবছর বয়স! কিন্তু সেকি করবে? এসব ভেবে তার কি লাভ? তার এখন নিজের কেরিয়ার ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় নেই! তার জীবনে একটাই এইম। সেটাতেই কনসেনট্রেট করবে। ইসস এদিকে সিঙ্ক ভরা    বাসনমালা আসছেনা কাজেমায়ের কাছে থাকা কালীন কত ঘন্টা সে রেওয়াজ করতো আর এখন? সংকল্প যতই কোঅর্পারেট করুক বড্ডো ডাইভার্ট হচ্ছে মনটা। ধুর! এখন আর রান্না করার এনার্জি নেই! মাম্মা কে বলবে লাঞ্চ পাঠাতে? সে মহারাজ খাবে কি না কে জানে! আগের দিন তো রিফিউজ করলো! আজ  ঋতজা সাফ জানিয়ে দেবে এখানে অত নখরাবাজি চলবেনা! ওগুলো দিদিমার বাড়ী যেয়ে করুক! ভদ্র মহিলা ছেলেটাকে প্যামপার করে মাথায় তুলে দিয়েছেন। ইসস   আদি নির্ঘাত টয়লেটের স্লিপার টা বেডরুমে নিয়ে গেছে! যা খুশি করুক! অসহ্য! সকাল থেকে গলাটা কেমন খুসখুস করছে গার্গলটা করতেই হবে মনে হচ্ছে। জলটাও ফুটে গেছে কেটল এ। ছেলেটা কোনো ম্যানারস শেখেনি।

 " উফ মা গো! আহ"

"কি হলো আন্টি? ইস! গরম জলে তোমার হাত টা তো পুরো…. দাড়াও‌… ঠান্ডা জলে হাতটা ডুবিয়ে রাখতে হবে। আইস কিউব  প্রেস করতে হবে।"

"আঃ পারছিনা। খুব জ্বলছে!তুমি কি জানো সব? সংকল্প  কে কল করো।"

"আন্টি এই অয়েলমেন্টটা লাগাও কমবে দেখো! পাপার তো সার্জারি আছে আন্টি!  আমি তোমাকে অপসিট বিল্ডিংয়ে সেন আংকেলের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। উনি তো সার্জেন!"

 

|| ৬ ||

যতটা সহজ ভেবেছিল ঋতজা ততটা নয়। রেগুলার ড্রেসিং করতে হবে। তবে ওইটুকু বাচ্চাছেলে দিব্যি কেমন টেম্পোরারি ড্রেসিং করে দিলো! ডক্টর সেন পর্যন্ত স্টান্ড হয়ে গেছেন! ইস কিচেনটার যা হাল! সংকল্পের চাপ হয়ে যাবে।

কিন্তু একি! ডক্টর সেনের চেম্বার থেকে এসে তো স্নান সেরে রেস্ট নিচ্ছিল সে। চোখটা লেগে গেছিল। এর মধ্যে মালা এসেছিল নাকি? উফ! আদিটা এত পাকা

"আদি! আদিসিংকের প্লেট গুলো কোথায়? খালি জলের বোতলগুলো ভরাসবজির ব্যাগটাও দেখছিনা! ডিসগাস্টিং! নিশ্চই মালা এসেছিল! ওকে ঢোকালে কার পারমিশন নিয়ে? ওর তো জ্বর! আমি ওকে অফ করেছি কদিন!"

"মালা পিসি আসেনি আন্টি! আমিই ধুয়েছি প্লেটগুলো। জল ভরেছি অ্যাকোয়াগার্ড থেকে। ব্যাগ থেকে বের করে সবজি গুলো আমিই ফ্রিজে রেখেছি।"

"হোয়াট! তুমি কেনো? আর ইউ ক্রেজি?"

"তোমার শরীর খারাপ! পাপা তো আসতে দেরি হবে! এসে কখন করবেআমি তো পারি। রাগ করলে? "

 

|| ৭ ||

সেই  লক্ষ কোটি বছর আগের থেকেই তো গ্রহগুলো ছুটছে তার আপন কক্ষপথে, নিজের ছন্দে। হঠাৎ করে যদি একটা ধুমকেতু বা মহাজাগতিক বস্তু প্রবলবেগে ধেয়ে আসে তখন কি হয় গ্রহগুলোর? এভাবেই কি ছন্দপতন হয়?আজ কি হলো ঋতজার ? প্রবল বেগে কে তাকে ঝাঁকুনি দিল? নিজেই নিজের মিউজিক নিয়ে উন্মত্ত ছিল। সেই কবে  থেকেই! অদ্ভুত একটা নেশায় দিক বিদিক হারিয়ে ছুটছিল শুধু! এক সম্পর্ক ভেঙে অন্য সম্পর্কে এসেছে! কিন্তু কেউ তো এভাবে ঝাঁকায়নি? সংকল্প না!

_" আন্টি কি হলো? রাগ করলে?"

_"শোনো! এদিকে এসো!"

_"কী বলো? আমি কিছু ভুল করেছি?"

 _“তোমার আমার উপর খুব রাগ তাইনা?” 

_“উহু। রাগ কেন হবে, আমি পাপা কে খুব ভালোবাসি। আমার পাপা _খুব ভালো।” 

_ “কাল বিরিয়ানি খেলেনা কেন ?”

_“আমার মা  বিরিয়ানি করতো, গন্ধ পেলেই মায়ের কথা খুব মনে পরে।

 

|| ৮ ||

"নন্দিনী আমি আদির ক্ষতি চাইনা। সংকল্প তুমি নন্দিনী কে বোঝাও! তুমি নিজে  তো ডাক্তার সংকল্প! তাহলে পারলেনা কেনো? আদির কেনো এমন হলো! .. আমি ওর খারাপ চাইনি, ট্রাস্ট মি। নন্দিনী যেওনা প্লিজ! দাড়াওএকটু শুনে যাও,! নন্দিনী! নন্দিনী!"

লাফ দিয়ে উঠে বসে ঋতজা। ঘুমটা ভেঙে যায়। এত বাজে স্বপ্ন!

আজ আর ঘুম আসবেনা! নন্দিনী আজ তাকে স্বপ্নে তাড়া করে বেড়ায়! সেই একজোড়া চোখ! আর সেই চাউনি

সংকল্প ঘুমে বিভোর! সারাদিন বড্ড চাপ যায় বেচারার! সবটা সামলে নেয় শুধু ভালোবাসে বলেই তো! ছেলেকে পরশু দিদির বাড়ি রেখে আসবে! অথচ সে! আদি নিশ্চই ঘুমিয়ে পরেছে! নাকি জেগে আছে! দাদুকে ভালোবাসতো কত! আজ ওর একা থাকা উচিত ছিলনা। সংকল্প অবশ্য ঘণ্টা দুই হলো ঘরে এসেছে। তবুও! আজ কি আদিকে একটু কেয়ার করা উচিত ছিলনা ঋতজার? এসি টা অফ করে জানালা খুলে দেয়। মুহূর্তে হারিয়ে গেলো ঋতজা! সেই ছোট্টবেলার মত  চোখ বুজলেই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ব্রিজ কাপিয়ে ট্রেন চলার শব্দটা! মনে হলো যেন একটা জন্ম পার করে খোলাজানালা দিয়ে বকুল ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে! সেই ছোটবেলায় ঝড়জলের রাতে লোডশেডিং এর সময় জানালা খুললে যেমন ফুরফুরে হাওয়া দিত সেরকম লাগছে! ব্যালকনির জানালা দিয়ে একফালি চাঁদ! সবই তো একই আছে! কিছু বদলায়নি তো!

 

|| ৯ ||

কি শান্তভাবে  ঘুমিয়ে আছে আদি। অবিকল সংকল্পের মুখের আদল। মায়ায় বেঁধে ফেললো ঋতজাকেও? টেবিলে নন্দিনীর ছবি। এই মুখটার থেকেই তো পালিয়ে বেড়ায় ঋতজা কিন্তু তবুও দুস্বপ্নে তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় আর ভয়ংকর স্মৃতিগুলো গিলে খেতে আসে। একঘর লোকের সামনে স্টুডিওতে, সংকল্পের চেম্বারে, রাস্তায়, গানের অনুষ্ঠানে কিভাবে অসভ্যতা করেছিল নন্দিনী। ছবিটা যেন ডাগর চোখে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ঋতজার দিকে। মনেমনেই  বলে ওঠে ঋতজা, “আমি তোমার  সংসার ভাঙতে চাইনি ট্রাস্ট মি!…” কোনোভাবে চোখটা মুছে ছুটে ঘর থেকে বেরোতে যাবে হঠাৎই আদি বলে ওঠে, “আন্টি যেওনা প্লিস একটু থাকো। আমি পরশু পিসির বাড়ি চলে যাচ্ছি। স্কুল যতদিন না খোলে! দিদানের এখানে আসলে দেখা করবো কেমনমন দিয়ে  প্র্যাকটিস করো কিন্তু। নতুন অ্যালবাম বেরোলে বোলো প্লিজ!”  জড়িয়ে ধরে আদিকে ঋতজা।দুজনের চোখ জলে ভরে যায়।  আদি চোখ মুছে বলে, “টিভিতে যে গানটা গেয়েছিলে একবার গাইবে? তোমার গান  আমার খুব ভালো লাগে! কক্ষনো বলা হয়নি।

 

|| ১০ ||

একছুট্টে অ্যাপার্টমেনটের ছাদে চলে এসেছে সংকল্প। এখান থেকে ভোরের শহরটা ভীষণ সজীব দেখাচ্ছে। চোয়াল চাপা ব্যস্তজীবন এখনও শুরু হয়নি। একটা শিরশিরে ঠান্ডা বাতাস। একটু একটু করে নতুন সূর্য উঠছে। ঋতুর সুরের মূর্ছনায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। পবিত্র সুরধ্বনিতে নতুন সকালের আবির্ভাব। কানে ভেসে আসছে, “আরো প্রেমে, আরো প্রেমে, মোর আমি ডুবে যাক নেমে।সুধাধারে আপনারে, তুমি আরো আরো  করো দান।।"

কিছুক্ষণ আগেই  দরজার আড়াল থেকে যা কানে এসেছে তাতে সমস্ত পৃথিবীটা থমকে গিয়েছিলো যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য। খুব বেশী কিছু চাইবার নেই সংকল্পের। সব যদি ভালো মত মিটে যায় তবে কোচবিহারে দিদির কাছে রেখে আসবে আদিকে। চোখ গুলো কেমন জড়িয়ে আসছেতবুও অদ্ভুত একটা শান্তি,ঋতুর গান কখন  যে থেমে গেছে! ওই তো ! সিড়ি বেয়ে  ধাপেধাপে ছুটে আসছে ঋতু। পেছনে আদি। আর তো মাত্র কয়েক পা! মনেহচ্ছে অনেকগুলো জন্ম ধরে এই মুহূর্তটার অপেক্ষায় ছিল সংকল্প। ঠিক সিনেমায় যেমন হয়! স্লো মোশনে, নায়িকা যেমন ছুটে আসে ক্লাইম্যাক্সে সব প্রতিবন্ধকতা কে পেছনে ফেলে! তেমনি একটা সিকোয়েন্স যেন! এক্ষুনি খুব কাছে এসে স্বভাবসুলভ ভাবে বলে উঠবে "এখন এই পরিস্থিতিতে কারোর কোথাও যাওয়া হবেনা। আদি এখানেই নিজের বাড়িতে থাকবে।"

অদ্ভুত ঘোর লাগছে একটা। সব স্বপ্ন না তো!

Comments