অনুগল্প - গৌতমী ভট্টাচার্য


 তানপুরা


তানপুরাটায় অনেকদিন ধরে ধুলো জমছে। ধুলো জমার কারণ অব্যবহার। ওই তানপুরাটায় অনেক অভিমান তিতিরের। মা কিনে দিয়েছিল। কিন্তু তানপুরাটা কেনার 'দিন পর মায়ের হঠাৎ সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়। যমের সাথে লড়াই করে মা চলেই গেল শেষ পর্যন্ত।গান শেখার ইচ্ছেটা মরে গেল তিতিরের।

 

 

কিন্তু কী অদ্ভুত ঘটনা! সেদিন দুপুরে খাওয়া- দাওয়া সেরে একটা গল্পের বই পড়তে পড়তে কখন যেন তিতির ঘুমিয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে গভীর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে কোন নিশানা নেই। যাচ্ছে...যাচ্ছে...যাচ্ছে। হঠাৎ দূরে একটা একটা আলো হীরের মতো জ্বলজ্বল করছে। আলোটা ক্রমশঃ কাছে আসছে তিতিরের। আর সেই আলোতে মায়ের মুখটা পরিস্কার হয়ে উঠছে। তিতির মা বলে চিৎকার করতেই মায়ের কোমল হাতখানা তিতিরের মাথায় গালে কপালে ঘুরতে লাগল।

 

 

"তানপুরাটা ফেলে রেখেছিস কেন? তোকে গাইতে হবে তো। ওটাতে সুর ধরবি না মা? আমার যে বড় সাধ ছিল তোকে গান শেখাবার। তোকে অনেক বড় শিল্পী হতে হবে, আমি যা পারি নি আমি তোর মধ্যে তা দেখতে চাই মা।"

 

 

ঘুম ভেঙে যায় টুংটাং শব্দে। ধরমর করে উঠে বসে তিতির। চমকে উঠে তানপুরাটার দিকে তাকায়। বাতাস দিচ্ছে। জালনার ভারী পর্দাটা তানপুরাটার তারে লেগে টুংটাং শব্দ করছে। জলে ভেজা দু'চোখে তিতির তানপুরাটা হাতে নিয়ে বালিশের তোয়ালে দিয়ে পরম যত্নে মুছতে লাগল।


Comments