দীর্ঘ কবিতা - সৈকত সেন



 আত্ম-কথা


এই যে বিক্ষিপ্তঅগোছালো 

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা 

এটুকুই শেষ থাকা নয়

তার পরেও নিভৃতলোকের গোপনে 

একটা ভেতর ঘর থাকে 

থাকে একান্ত একাকী হয়ে যাওয়ার 

বেশ কিছু আয়োজন

আর থাকে দীর্ঘ সুড়ঙ্গ পেরিয়ে

আত্মমগ্নতার এক যজ্ঞশালা 

যার ধোঁয়ায় আবছা হয়ে যেতে থাকে

এক মোহিনী অবয়ব

আঁচল জুড়ে থাকে মুক্তির গান

ভীষণ রকম নিজের করে তোলে 

মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সমস্ত সত্ত্বা 

আনত সমর্পণ রেখে

আমি পথিক হই পথের খোঁজে।

 

 

ভেতর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখি

কত পথ কত বাঁক নিয়ে

কত দিকে চলে যায় 

সব পথে হেঁটেও জেনেছি

কোথাও আসলে স্থায়ী ঠিকানা নেই কোনও

ফিরে আসি আবার 

নিজেকে পুষি গোপনে নিজের মতো 

প্রতিটি সূর্যোদয় জানিয়ে দেয় 

নিয়মাবলী অতিক্রম করে

প্রতিটি ডাকনাম আসলে একেকটি ঋণ 

আর যা কিছু মনস্তাপ

যা কিছু মৃত্যুভয় জড়িয়ে পায়ে পায়ে  

শেকড়ের কাছে যেতে যেতে

রোজ আমি  গাছ হই

শিখে নিতে থাকি আভ্যন্তরীণ শোষণ 

ঋণ বেড়ে চলে আঁকড়ে থাকা মাটির কাছে।  

 

 

মাটি আঁকড়েই দাঁড়িয়ে থাকা 

ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে 

দিন রাত্রির এই যুদ্ধ টুকুই শেষ নয়

মাটির ভেতরেও ক্রমাগত শোষণের লড়াই

অন্তর্জালের মত শেকড় ছড়িয়ে 

শক্তি সঞ্চয়ের পারস্পরিক প্রতিযোগীতা

বাইরে শ্যাওলা আগাছাদের ভিড়

তবুও ফুল ফোটে-পাখি আসে-গান গায়

ডেকে নিতে চায় আদিম খেলায়

প্রতিরাতের ক্ষুধার্ত মিছিল উপেক্ষা করে

কেবল সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়  

চোরাশিকারীদের চোখ এড়িয়ে 

অণু থেকে পরমাণু জীবন 

খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকে পড়ে প্রথম বীজ

জমিয়ে রাখা রুগ্ন বীজ চাষ হলে

জেগে উঠবে  হলুদ সভ্যতা।

 

 

আরও গাছ-আরও পথ...

অবশেষে আবারও একটা ভেতর ঘর...

শেকড়ের অচ্ছেদ্য মায়াজাল কাটিয়ে

পথে পথে ঘুরে ফিরে আসা আবার

মায়ের গর্ভের সমান্তরাল জলস্তর মেপে

প্রতিটি পরিজন্মের আত্মকথন।


Comments