ভ্রমণ - মেঘ ভট্টাচার্য

এক একাকী পর্যটকের কলমে
বৌদ্ধ পীঠস্থান (নেপাল)

Tour Diary of a Solo Traveler
The Land of Buddha (Nepal)

(প্রথম পর্ব)


প্রথম দিন - লুম্বিনীর উদ্যেশ্যে যাত্রা।


হাওড়া থেকে  গোরখপুর পৌঁছে, স্টেশন এর যাত্রীনিবাস এ একরাত কাটিয়ে পরদিন সকাল সকাল প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে যাবার কথা নৌতনওয়া, সেখান থেকে নেপাল সীমা পার। 


দৌড়াদৌড়ি করে সকাল আট টার ট্রেন ধরার উদ্যেশ্যে  প্লাটফর্ম এ এসে যা দেখলাম তাতে চক্ষু চড়কগাছ।  সকাল ৭ টার ট্রেন, বোর্ড লেখা আছে arrived অথচ ট্রেন তখনও ৪ নম্বর প্লাটফর্ম এ দাঁড়িয়ে, এবং তার পর ওই প্লাটফর্ম এই আরো দুটো ট্রেন এলো। যার প্রথম টা অঘোষিত। কেন এলো জানি না, কি ভাগ্গি দেখলাম ট্রেন এ যা লেখা আছে তা আমার ট্রেন নয়। সেটিও চলে যাবার আরো এক ঘন্টা পর এলো আমার ট্রেন। যার সময় ছিল সকাল ৮ টা। কিন্তু ছাড়লো সকাল ১০ টা। এই ছিল নেপাল ভ্রমণ এর অদ্ভুত শুরুওয়াত। ট্রেন এ কথাবার্তা বলে জানলাম গোরাখপুর থেকে সব সাধারণ ট্রেন ই এরকম দেড় দু ঘন্টা দেরিতে ছাড়ে। 


নৌতনওয়া, একটা প্রান্তীয় স্টেশন। হল্ট ও বলা যায়। নেমে  টেম্পো করে ১২ টাকা ভাড়া দিয়ে ৭ কিমি দূরে গেলাম  নেপাল সীমান্ত, Sunauli (সুনাউলি)। সেখান থেকে রিকশা করে পার করে দিলো সীমান্ত। ভাড়া ৪০ টাকা।


এই প্রথম বিদেশের মাটিতে পদার্পণ। এবং মুঠো ফোন যন্ত্রটি অচল। বেশ খানিকক্ষণ অসহায় লাগছিলো, কারণ মুঠোফোন আজকাল আমার বেশ সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।


রিকশা করে পার হবার সময় এই স্বাগতম বাক্য চোখে পড়লো, খুব ই সাদামাটা একটা তোরণ। বেশ রোমাঞ্চ হচ্ছিল।




 লুম্বিনী তখনও পৌঁছইনি....


রিকশা তো সুনাউলি (Sunauli) ছেড়ে দিয়ে গেল। এবার শুরু হলো নেপালি টাকা আর ভারতীয় টাকা নিয়ে হিসেব নিকেশ। বারবার ভাবা সত্ত্বেও সীমা পার হয়ে  টাকা exchange করতে ভুলে গেলাম। সে এক মজার অভিজ্ঞতা। সুনাউলি থেকে share  এ যেতে হবে ভৈরওয়া । যেখান থেকে লুম্বিনী যাবার বাস। সেখানে বাস এ উঠেই প্রথম চোখে পড়লো lumbini gate।


ভৈরওয়া তে লোকাল বাস এ উঠলাম এবং শেষ ও একমাত্র বসার জায়গাটি পেলাম। সে এক সাংঘাতিক অভিজ্ঞতা। যেমন গরম তেমন ভিড়, আর তেমন রাস্তা। খুব কষ্ট করে নেপাল এর পিছিয়ে পড়া দেখতে দেখতে লুম্বিনী পৌঁছলাম। ছোট্ট একটা গ্রাম্য শহর। দেখে কোনো রোমাঞ্চ হলো না, বরং সব কিছু দেখে একটু চিন্তিত হলাম, যে কোথায় এসে পড়লাম। কারণ সেখানে home stay নিয়েই জানতে পারলাম  সকাল থেকে  সেখানে লোডশেডিং। কখন আসবে কেউ জানে না। প্রায় অভিশাপ মনে হলো। খুব গরম ছিল। যাই হোক, একটু ফ্রেশ হয়ে চা সিঙ্গাড়া সহযোগে late lunch সেরে রওনা হলাম হাঁটাপথে , Mayadevi Mandir, the birth place of BUDDHA.
এখন থেকে শুরু হলো .............. রোমাঞ্চ, শিহরণ।


লুম্বিনী তে.....

ভগবান বুদ্ধের জন্মস্থান এর দিকে পায়ে পায়ে চলা। আর ভেতরে কি যে হচ্ছিল তা ঠিক বর্ণনীয় নয়। সেই সময়কার প্রাসাদের কিছু ধংসাবশেষ সংরক্ষিত আছে এখনো। আর ভেতরে যেখানে বুদ্ধদেব জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সেখানে একেবারে সেই সময়কার ভগ্নাবশেষ...গায়ে রীতিমতো কাঁটা দেয়। Mayadevi Temple, এই মায়াদেবী ছিলেন গৌতম বুদ্ধের মা। বুদ্ধের জন্ম স্থানকে ওই নামেই ডাকা হয়।
বুদ্ধের জন্মস্থান



প্রাসাদ এর ধ্বংসাবশেষ, যেখানে মায়াদেবী ছিলেন এবং গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান


এই স্থানটি প্রথম চিহ্নিত করেন রাজা অশোক। এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটান। পরবর্তী পোস্ট এ সেই তথ্য আসছে। লুম্বিনী তেই। প্রথম দিন চলছে।


রাজা অশোক খ্রীষ্ট পূর্ব তৃতীয় শতক এ লুম্বিনী তে এসেছিলেন। উদেশ্য ভগবান বুদ্ধ, যাঁর ভাবাদর্শ  তাঁকে চণ্ডাশোক থেকে  ধর্মাশোক এ রূপান্তরিত করল, তাঁর  জন্মস্থান পুণ্যভূমি তে একবার আসা। সেই সময় উনি এই স্তম্ভ টি নির্মান করেন। 




এখন মত ১৯ টা এরকম স্তম্ভ আছে যাতে শিলালিপি আছে। এবং তার বেশিরভাগ ই ভারতবর্ষে। এই স্তম্ভ তেও তা দেখা যায় ।

রাজা অশোকের বৌদ্ধধর্ম প্রচার সার্থক হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই লুম্বিনী একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এবং বৌদ্ধদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। যেখানে Buddhism এর অলোচনাও এসে যাওয়া বিচিত্র নয়।


লুম্বিনী দ্বিতীয় দিন....

প্রচন্ড গরম তখনও চলছে, কারণ বিদ্যুৎ তখনও আসেনি। অবাক হলাম,দুদিন ধরে লাগাতার কি করে এটা সম্ভব এরকম একটা আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। 


দুপুর বারোটায় ঘর ছেড়ে দিয়ে বেরোলাম। উদ্যেশ্য বাকি টা ঘুরে দেখা। কারণ পুরো লুম্বিনী শান্তি উদ্যান এ বিভিন্ন দেশ বৌদ্ধ বিহার (Monestry) তৈরি করে রেখেছে, যেখানে নিয়মিত বৌদ্ধধর্ম  চর্চা হয়। 


একটা সুন্দর রিকশা ভাড়া করে শুরু হলো ভ্রমণ। রিকশা টা খুব সুন্দর, অর্ধেক ব্যাটারি অর্ধেক ম্যানুয়াল। বেশ মজার।আর খুব সুন্দর হাওয়া পাওয়া যায়।(সেদিন আসলে হাওয়ার খুব দরকার ছিল, কারণ দুদিন ধরে পাখার হাওয়া নেই)



নেপাল এ ঢুকে প্রথম দুদিন পাখা এবং ইন্টারনেট ছাড়া খুব কঠিন কেটেছে। সেই দুপুর বারোটায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে, লুম্বিনী পার্ক ঘোরা শেষ করে আবার অপেক্ষা সেই প্রচন্ড গরমে। পোখরা যাবার বাস বিকেল পাঁচটায়।  কোনোরকমে  এদিক ওদিক করে সময় কাটিয়ে বাস এলো, উঠে পড়লাম। এবং অদ্ভুতভাবে জীবনে প্রথম দেখলাম বিকেল পাঁচটার বাস পনেরো মিনিট আগে পৌনে পাঁচটায় ছাড়লো। সেটা কেন, সেটা অনেক পরে পোখরায় আবিষ্কার করলাম। সেটা পরে বলছি। পোখরার উদ্যেশ্যে রওনা হলাম.. তখনও জানিনা আমার জীবনের একটা উল্লেখযোগ্য রাত অপেক্ষা করে আছে সামনে!

লুম্বিনী স্তুপ


একটা তথ্য মিস করে গেছি, নেপাল এ ঢোকার পর থেকে সব হিসেব নেপালি টাকায় লিখেছি। Rs. 100/- = Nepali rs. 160/- কাজেই ভাড়া বা কিছু দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ভারতীয় টাকায় কমই।

নেপালি টাকা



বি.দ্র, এক সুন্দর পারিবারিক আবহে, মনের আনন্দে ভ্রমণের জন্যে ভ্রমণপিপাসুদের ভরসাস্থল  Sparrow D' Tur #You Pack We Plan এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ভ্রমণে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ব্যবসায়িক মানসিকতা নয়, আন্তরিক পরিষেবাই এঁদের বিশেষত্ব। সনাতন ভারতীয় ঐতিহ্য  "বসুধৈব কুটুম্বকম" এ এরা পরম বিশ্বাসী।

ক্রমশ.....

Comments

Post a Comment