গল্প - অনিন্দিতা গোস্বামী


শিল্পী

খবরটা শুনে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না আমি। এ-ও কি সম্ভব! নিবারণ জ্যাঠাদের তো আজ থেকে জানিনা। এমন একটা ঘটনা যে ঘটতে পারে স্বপ্নেও ভাবিনি। মা ফোন করে বলেছিল, আমি তখন থম মেরে কিছুক্ষ্ণণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোন কথা বলতে পারি নি। মা বলেছিল তোর আসার দরকার নেই, ঝামেলার মধ্যে না জড়ানোই ভালো। আমরাও আর এসব ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছি না, শুধু নতুন কারিগর খুঁজতে হবে এই যা। সেই বলে ফোন টা রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু মা যতই বলুক মাথা থেকে ব্যাপারটা ঝেড়ে ফেলতে পারছিলাম না। আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বিশ-পঁচিশ বছর আগের দেখা চিত্রাবলী।


দুই প্রজন্মের পুরনো দুর্গা পুজো আমাদের।ঠাকুর দালানে দুর্গা প্রতিমা তৈরী হতো। মাটি এনে ফেলত নিবারণ জ্যাঠাই। সব দ্বায়িত্ব তার। কাঠামো বাঁধা, খড় চাপানো তারপর একটু একটু করে মাটির প্রলেপ। জ্যাঠার বড় ছেলে সবসময় থাকতো বাবার পাশে পাশে। হাতে হাতে সাহায্য করত। মাঝে মাঝে আসতো জ্যাঠার ছোট ছেলেও। সে অনেক ছোটো। একটু দূরে আদুল গায়ে একটা ইজের পরে পা ছড়িয়ে বসে সে দু'হাত দিয়ে কাদা ছেনত। আমরাও দুই ভাই ছুটি ছাটা পেলেই গিয়ে হাজির হতাম সেই দালানে। হাফ প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াতাম জমিদারী ঢঙ্গে। এটা ওটা প্রশ্ন করতাম জ্যাঠাকে, জ্যাঠাও বেশ মান্যি গন্যি করতো আমাদের। আমাদের এহেনো আচরণে জ্যাঠার বড়ো ছেলে সেন্টু বেশ রেগে যেত। সে পড়ত আমাদেরই স্কুলে আমার চেয়ে এক ক্লাস নীচে। পড়াশোনাতেও সে ছিল বেশ তুখোড়। পড়াশোনা বাদ দিয়ে তাকে বাবার কাজে সাহায্য করতে হচ্ছে এমনিতেই তার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকতো। ছোটজন একটু বড়ো হতেই বাবার কাজে আসা বন্ধ করলো সেন্টু। বাবার কাজে হাত লাগালো নান্টু।


প্রথমে এ ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলো আমার বাবা। বলেছিলো, অতোটুকু ছেলেকে দিয়ে তুমি কাজ করিয়ো না নিবারণদা। ওতে আমাদের অমঙ্গল হবে।নিবারণ জ্যাঠা কিছু উত্তর দেবার আগেই জোরে জোরে ঘাড় নেড়েছিল নান্টু, আমার ভালো লাগে। বাবা তাতে আমল না দিয়ে বলেছিল সেন্টু কোথায় গেলো? নিবারণ জ্যাঠা কাঁচুমাচু মুখে বলেছিলো, আর বলবেন না দাদাবাবু, সেন্টুর শুধু লিখাপড়ায় ঝোঁক, তার নাকি এসব কাজ করতে মানে লাগে। আরে ঠাকুর গড়বি, এতো তোর আশীর্বাদ রে। তো কে শোনে কার কথা! আর এ ছেলে এক্কেবারে উল্টো, পেয়েছে বংশোধারা, আমার পাছু লেগে থাকতে চায়, কাজ শিখবার চায়। এসব কথার মধ্যেই আমি লক্ষ্য করতাম নান্টু আপন মনে দেবী মায়ের পায়ের আঙ্গুল গড়ছে।


সেবার রথের দিন থেকেই নিবারণ জ্যাঠার  ঘুসঘুসে জ্বর। ওদিকে কাঠামো পুজোর পর শুরু করতে হবে মূর্তি গড়ার কাজ। নান্টুর হাত ধরে নিবারণ জ্যাঠা এসে দাঁড়ালো বাবার সামনে, বলল এবার ওই করুক কাজটা। বাবা প্রায় হাঁই হাঁই করে উঠল, ওই টুকু বাচ্চা দুর্গা মূর্তি গড়বে মানে! একি ছেলে খেলা নাকি! নিবারণ জ্যাঠা বলল ও কাজটা শিখেছে দাদাবাবু, নাহলে কত্তাবাবুর আমলের পুজো আমি কি ওর হাতে ছাড়ি? খানিকটা নিরুপায় হয়েই বাবা মেনে নিলেন ব্যাপারটা। আমরা রগর দেখবার জন্য রীতিমত তৈরী হয়ে রইলাম।  মা দুগ্‌গা দুগগা বলে দুবার হাত ঠেকালো কপালে।


কাজ শুরু করলো নান্টু। একাগ্র চিত্তে সে খড়ের কাঠামো গড়লো, তারপর লাগালো মাটির প্রলেপ। তার একনিষ্টতা দেখে আমরা খানিক ভেবলে গেলাম। ছোট্ট নান্টু হাত পাচ্ছিলো না দেখে সে উঁচু টুলের ওপরে উঠে কাজ করছিলো। সুনিপুণ হাতে মাদুর্গার নাক তুলছিল, মুখের ডৌল ঠিক করছিল। তারপর যখন রঙের কাজ শুরু হলো আমরা হাঁ করে দেখছিলাম ওর হাতের কাজ, তুলির টান। বাবা বলল এতো সুন্দর কাজ শিখেছে ছেলেটা ওকে আর্ট ইস্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে নিবারণদা। 


কিন্তু আর্ট ইস্কুলে ভর্তি করতে গেলেও যেটুকু পড়াশোনা করতে হয় সেটুকু করবার দিকেও তার মন নেই। সে বাড়িতে চুপচাপ বসে নানা রকম মূর্তি গড়ে। সাত চরে রা কাড়ে না। ভারি নম্র ভদ্র। পাঁচটা প্রশ্ন করলে একটা উত্তর দেয়। বাবা তাও তাকে জোর করে আর্টের ডিপ্লোমা ট্রেনিং এ ভর্তি করে দিল। সেখানে সে কিছু কাজকম্ম শিখল। এমন কি কোনও একটা সংস্থার উদ্যোগে একবার আমেরিকাতেও ঘুরে এল। আমরা সকলেই খুব খুশি হলাম। পাকাপাকি ভাবেই নিবারণ জ্যাঠা আমাদের বাড়ির দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজ ছেড়ে দিল নান্টুর ই হাতে। 


দিন গড়িয়ে গেলো। আমরা বড়ো হয়ে  গেলাম। চাকরি বাকরি পেয়ে দুই ভাইই চলে গেলাম অন্যত্র। তবে দুর্গা পুজোর সময় বাড়ি আসতাম প্রতিবার। এসে খুঁজে বেড়াতাম নাণ্টুকে। এমন প্রতিমা গড়ত সে যে চোখ ফেরানো যেতো না। কতো লোক আসতো আমাদের বাড়ির প্রতিমা দর্শনে! নান্টুর প্রতি মুগ্ধতা তৈরী হচ্ছিল আমাদের। বেশ একটু নাম ডাক হয়েছিলো নান্টুর। ওদের বাড়িতেই কয়েকটা বাচ্চা আসতো ওর কাছে আঁকা শিখতে। তবে আয় খুব একটা ছিলো না। এদেশে তো শিল্পের অর্থমূল্য নেই। সেন্টু একটা প্রায়মারী স্কুলে চাকরি পেলো। বিয়ে থা করে আলাদা হয়ে গেলো অচিরেই। নিবারণ জ্যাঠার বউ নান্টুর বিয়ে দেবার জন্য অস্থির হয়ে উঠল।


ততদিনে আমরাও বিয়ে থা সেরে ফেলেছি। মা-ও বলল হ্যাঁ নিবারণদা এবার তোমার নান্টুর বিয়ে দাও, ছেলেটা সারাদিন চুপচাপ থাকে, বউ পেলে একটু খুশি থাকবে। বিয়ে হলো নান্টুর। তা কদিন সত্যিই খুশি  ছিলো সে। সেবার পুজোর সময় আমাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে গেলো। আমি মনে মনে হাসলাম, যাক বউ তাহলে নান্টুর মুখে কথা ফুটিয়েছে! নান্টুর বউটা সত্যি খুব ভালো হয়েছে। ঢলঢলে মুখের মধ্যে টানা টানা চোখ, যেমন মিষ্টি তার চেহারা তেমন মিষ্টি তার ব্যবহার। জ্যেঠিমাও খুব খুশি। সবার সঙ্গে সে মেয়ে বেশ মানিয়ে গুছিয়ে চলে। দেমাকি বড়ো বউ নিয়ে যে দুঃখ ছিলো জ্যেঠিমার সে দুঃখ ঘুচেছে। আমাদের বাড়িতেও সে আসে মাঝে মাঝে। আমার মায়ের সঙ্গেও তার ভাব। মা বলে গরীব ঘরের মেয়েতো তাই সবার কষ্ট বঝে। মায়ের এই কথার মধ্যে যে আমার বউয়ের প্রতি প্রচ্ছন্ন খোঁচা থাকে তা আমি বুঝি। সংসারে সব কথা অতো কান করতে নেই।


পুজোটা ভালো ভাবেই কাটলো। পুজোর পরে বেশ কিছুদিন হলো নিজের চাকরিস্থলে চলে এসেছি। হটাৎ মায়ের ফোন। মা কথাগুলো বলে যাচ্ছিল, আমার যেনো মাথায় সবকিছু ঢুকছিল না ঠিকমতো। এ-ও কি সম্ভব! ফোন টা রেখে দেবার পর থেকে আমার শুরু হলো এক অদ্ভূত উপসর্গ। শুধু গা-গুলাচ্ছিলো, কিছু খেতে পারছিলাম না। আমার স্ত্রী কারণ জিজ্ঞাসা করলে আমি কোনো উত্তর দিচ্ছিলাম না। অথচ ঘুমালে আবছা তন্দ্রার মধ্যে চোখে ভাসছিল অপূর্ব সেই মাতৃ মূর্তি। 

ঠিক করলাম বাড়ি যাব। মায়ের কথা শুনবো না। স্ত্রী বলল হটাৎ বাড়ি যাচ্ছ? আমি বললাম, মায়ের শরীর টা ভালো না, তাছাড়া বাড়িও খুব টানছে আমাকে। একা একাই টিকিট কেটে চেপে বসলাম ট্রেনে, এবার আর বউ ছেলেকে সঙ্গে নিলাম না। আমি নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছিলাম নান্টু আমার কে? নান্টুর জন্য অতটা উতলা হওয়া আমার মানায় না। আমি শুধু বাড়ি যাচ্ছি নিজেকে শান্ত করতে। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা কাকে ঠাকুর গড়ার কাজ দেবো সে আলোচনা করতে। যদিও আমি জানি সে আলোচনা করার জন্য এখনো অনেক সময় পড়ে আছে।


ট্রেনটা দুলছিল। ভাবছিলাম কি করে নান্টুর মুখোমুখি হব। আদৌ হবো কি! কি যেনো  বলছিলো মা, নান্টু তার পোয়াতি বউকে দা দিয়ে কুপিয়ে মেরেছে! রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো বিছানা! তেমন কোনো ঝগড়া ঝাটির কথাও নাকি কেউ জানে না। কেনো এমন করলো নান্টু? নান্টুর কি তবে অন্য কোনও প্রেম ছিলো? ও ছেলে যে সাত চড়ে রা কারে না! কি জানি কার পেটে পেটে কি আছে! নাকি বউটারই কিছু ফষ্টিনষ্টি ছিলো! কিন্তু যাই থাক ও ছেলে যে কাউ কে খুন করতে পারে এত ভাবাই যায় না! যাক গে, বাড়ি গেলেও এসব ব্যাপারে আমি কিছু মাথা দেবো না। নিবারণ জ্যাঠার কাছে গিয়েও একবার দাঁড়ানো দরকার। এতো বড়ো ধাক্কা! এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো ভোরে, ট্রেন ঢুকলো নির্দিষ্ট স্টেশনে।


বাড়ি পৌঁছতেই পা টা যেন কেমন ভারী হয়ে উঠলো। আমাদের উঠোন পেরিয়ে দু পা গেলেই নিবারণ জ্যাঠাদের একচালা। সেদিকে তাকিয়ে গা টা কেমন ছমছম করে উঠলো। দরজা খুলে দিতে দিতে মা বলল, সেই তুই এলি! মাকে দেখতে তো এমন সাত তাড়াতাড়ি আসিস না! সিড়ি ভেঙে উঠতে উঠতে ই মা বলল, নান্টুকে সেই যে এরেস্ট করে নিয়ে গেছে, তারপর থেকে তো সে চুপ, কোনো কথাই বলছে না। ওকে আর মনে হয় বাঁচানো যাবে না। নিবারণদা আর বৌদি ভয় পেয়ে চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করে ফেলেছে না! সবাই দেখেছে ওই বিভৎস দৃশ্য। ওরম শান্ত শিষ্ঠ ছেলে কেন যে অমন করলো কেউ বুঝতে পারছে না। তেমন কোনও অশান্তি ও ছিলো না দুজনের মধ্যে। তবু নিবারণদারা ওর প্রান বাঁচানোর চেষ্টা করবে একবার। কিন্তু সে ছেলেকে তো বলতে হবে কেন সে এমন কাজ করলো। পাগল ও তো ছিলো না বল? একদমে এতগুলো কথা বলে থামলো মা। আমি চুপ করে রইলাম।


আমি হাত মুখ ধুয়ে চা খেতে খেতে বললাম, কোথাও তোমাদের ভুল হচ্ছে না তো মা?

মা  বলল, মনে হয়াহয়ির তো ব্যাপার না, সবাই দেখেছে ঘটনাটা।

কি দেখেছে?

এই রক্তমাখা কাঠারি হাতে সে বসে আছে বৌয়ের পাশে।

তো, তাতেই প্রমান হয়ে গেলো নান্টু ওর বোউকে মেরেছে!

নাতো কি?

এমনও তো হতে পারে ওর মা বাবার পাপের দায় ভালমানুষ নান্টু কাঁধে নিয়েছে।

যাঃ, তাই আবার হয় নাকি, নিবারণদারা অমন মানুষই না।

ওরম মনে হয় মা। এমন তো হতেই পারে জ্যাঠা জ্যেঠি বউটাকে চাপ দিতো বাপের বাড়ি থেকে টাকা পয়সা আনার জন্য। তাই নিয়েই হয়তো অশান্তি ছিল।

কিছুক্ষ্ণণ চুপ করে থেকে মা বলল, কি জানি বাবা, তাহলে ওরাই এমন চেঁচামেচি করবে কেনো, আর এরকম ভালো মানুষ ও কি কেউ হয়?

হয়তো নিজেদের আড়াল করবার জন্যই অমন চেঁচামেচি করেছে। আর নান্টু যে আর পাঁচটা মানুষের মতো নয় এ তো তোমরা সবাই জানো।

মা কোনও উত্তর করলো না, চলে গেলো নিজের মনে কাজ সারতে। আমি বিছানার ওপর টানটান হয়ে শুয়ে তাকিয়ে থাকলাম ছাদের দিকে।

কিছুক্ষ্ণণ বাদে তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। মা জিজ্ঞেস করলো কই যাস?

আমি বললাম, দেখি কোথায় যাওয়া যায়।

মা বলল, গোয়েন্দা হবার শখ হয়েছে নাকি?

আমি বললাম, হলে মন্দ কি! 

মা রেগে উঠে বলল, আমি তোকে বারণ করেছিলাম, কি থেকে কি হয়, তখন ঠেলা সামলাতে পারবি তো?

আমি বললাম, চিন্তা করো না মা, কিচ্ছু হবে না। আমি নান্টু না।


প্রয়োজনীয় কাজ কম্ম গুলো করে ফেলে আমি অনুমতি পেলাম নান্টুর সঙ্গে দেখা করার। যে নান্টু ছিলো আমার খুব কাছের সেই নান্টুর সঙ্গে দেখা করতেই আমার গা টা ছমছম করছে। তবু যে উদ্যেশে আমি এতো দূর ছুটে এসেছি সে কাজ আমাকে করতেই হবে। আমার বিশ্বাস নান্টু এ কাজটা করে নি। আমাকে ওর মুখ দিয়ে এই কথাটা বলাতে হবে।


গিয়ে দাঁড়ালাম নান্টুর সামনে। ও যেন অপেক্ষাই করছিলো কাউকে বলবার জন্য কথাগুলো। আমি যেতেই চেপে ধরলো আমার হাতদুটো। আমি বললাম,তুই কি একাজ সত্যিই করেছিস?

সে ঘাড় নাড়লো, হ্যাঁ।

আমি প্রায় কঁকিয়ে উঠে বললাম, কেন করলি এমন? পারলি তুই একাজ করতে?

ও মাথাটা নীচু করলো, ঝপঝপ করে ওর চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো, তারপর ধীরে ধীরে ও যা বলল তা আমাকে স্তম্ভিত করে দিলো। আমি কোনও দিন মরবিড গল্প লিখিনি। এই প্রথম আমায় তা লিখতে হলো।


ও বলল। দাদা কি যে হয়ে গেলো মনের মধ্যে। বৌটা প্রেগনেন্ট হয়ে থেকে কি এক অস্থিরতা। একটু একটু করে পেট বাড়ছে বৌয়ের, আর আমি যেন অস্থির হয়ে উঠছি। বৌয়ের পেটের ওপর দিয়ে হাত বুলাই, বৌ পুলোকিত হয় আর আমার শরীরের রক্ত গরম হতে থাকে। আমার মনে হতে থাকে আমার সন্তান তৈরী হচ্ছে আর আমি জানতে পারছিনা সে ছেলে কি মেয়ে, কেমন তার নাকটা, কেমন তার চোখ দুটো! আমাকে বাদ দিয়ে সব তৈরী হয়ে যাচ্ছে! আমি কিনা মাদুর্গার মুখ গড়ি, চক্ষু দান করি আর আমার বাচ্চার মুখ চোখ গড়বে অন্য কেউ! কাউকে বলতে পারিনা এমন কথা, দাদা তুমি থাকলে হয়তো বলতে পারতাম। জানি আমার বীজেই বাড়ছে গাছ, কিন্তু আমি তো মানুষ গড়তে চেয়েছি, অনুপম মানুষ। তক্কে তক্কে ছিলাম, বাচ্চাটা কে বের করে নিতে হবে ওর পেট থেকে।তারপর সেলাই করে দেবো ওর পেট। নতুন ধারালো দা বানালাম এই কাজের জন্য।কিন্তু বৌটা যে এতো তাড়াতাড়ি মরে যাবে ভাবিনি জানো। ভেবেছিলাম আমি না পারলে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো পেট সেলাইয়ের জন্য। আর এত রক্ত আমি সেই মাটির দলাটা খুঁজেই পেলাম না। আমার পু্তুল গড়া হলো না।


মাটির পুতুল গড়া গেলেই কি মানুষ গড়া যায়! ও একমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাজ। আমি খোদার ওপর খোদকারি করতে গিয়েছিলাম, তাই আমার সব চলে গেলো। এই তো দেখো এখন আমার কেমন বুদ্ধি খুলেছে, তখন অমন কেন হলো বলো? বলে আমার হাত দুটো আরোও শক্ত করে ধরলো চেপে, বলল আমার একটা কাজ করবে দাদা, বাবা চাইছে আমার ফাঁসিটা যেন না হয়। তুমি দেখো আমার ফাঁসিটা যেন বাবা না আটকাতে পারে। রক্ত আমাকে ডাকছে দাদা, আমার ফাঁসি আটকালে সমূহ বিপদ। 


হাত দুটো ছাড়িয়ে নিয়ে আমি প্রাণপন ছুটে পালাতে চাইছিলাম ওর ত্রিসীমানা থেকে। আমার মাথার মধ্যে ঘুরছিলো এক ঐতিহাসিক সত্য, হিটলার ও খুব ভালো ছবি আঁকতেন।             

Comments