বসন্তের অপেক্ষায়
ফাল্গুন চৈত্র এই দুই মাস বসন্তকাল। বসন্ত ঋতুর আর এক নাম ঋতুরাজ। প্রকৃতি এ সময় তার সম্পূর্ণ রূপ মেলে ধরে। সারা বছর ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘুরে ঘুরে আসে ঋতুগুলি। শীতের শুরুটা বেশ মজাদার। কিন্তু প্রাবল্য বাড়তে থাকলেই আমাদের অসুবিধা বাড়তে থাকে। তখন মানুষ চায় এ কষ্টের শেষ হোক। মানুষ অপেক্ষায় থাকে কখন বসন্ত আসবে।
বসন্তের শুরুতে শীতের প্রাবল্য কমে আসে । গাছে গাছে নতুন পাতার মেলা। আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। মৌমাছি প্রজাপতির আগমন বেড়ে যায়। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে নতুন বাসা বাঁধে। গাছে গাছে ফুটে উঠে রঙ বেরঙের ফুল। অশোক, পলাশ, শিমূল, মহুয়া, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কাঞ্চন আরও কত কি। কোকিলের মধুর কন্ঠ ভেসে আসে। দখিনা বাতাস বইতে শুরু করে। এর পরেই ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় রঙের উৎসব দোল। দোল উৎসবে আবির আর রঙে মানুষের মানুষকে আপন করে নেওয়া। শিশু কিশোর তরুন, তরুনী, যুবক যুবতী সবাই এই উৎসবে আনন্দে মেতে ওঠে। তারপরেই পুরোনো বছর কে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানো।
প্রকৃতি প্রেমী এক অগ্রজ এই বসন্তে ঘুরতে গিয়েছিলেন জঙ্গলে। ফিরে এসে বললেন – শিমূলের যে এত রঙ হয় জানা ছিল না। চেনা লাল, কালচে লাল, ফ্যাকাশে লাল, পলাশ রঙা আর হলদেটেও।
সকলেই কি আর আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতে পারেন ? গত এক বছর ধরে সারা সারা পৃথিবী এক গভীর রোগে আক্রান্ত। অনেকে বন্ধু বান্ধব আত্মীয় নিকটজন কে হারিয়েছেন। যারা নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছেন তাদের প্রায় নতুন জীবন ফিরে পাওয়া। দুঃস্বপ্নের স্মৃতি তাদের মনে থেকে যাবে বহুদিন । এখনও সে গভীর অসুখ একেবারে শেষ হয়নি। একটু নিয়ন্ত্রিত আর কি। পরবর্তী ছোবল আবার দেবে কিনা সে কথা ভেবে মানুষগুলি আতংকে আছেন। সে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা , আত্মীয় স্বজন , নিকটজন হাসপাতালে অথচ দেখবার সূযোগ নেই। অনেকে উপযুক্ত চিকিৎসা পাননি । অনেকে মৃত্যুর পরও দেখতে পাননি নিকটজনের শেষযাত্রা। যাই হোক, নিয়ন্ত্রনের পর মানুষের মনে আবার হাসি ফিরে আসছে।
সারা দেশ জুড়ে অন্য শহরে বা রাজ্যে, কাজ করা মানুষজন বহু কষ্টে ফিরে এসেছেন নিজের গ্রামে, বাড়ীতে । অনেকে আর ফিরতেই পারেনি। বেশ কিছুদিন কষ্টের পর কিছু মানুষ কাজ ফিরে পেয়েছেন। অনেকে আবার পান নি। যারা জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন তারা হলেন – ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী, সাফাই কর্মী, পুলিশ, ব্যাঙ্ক কর্মী এবং আরও কিছু মানুষ।
সাধারন ভাবে রাজ্যে এবং রাজ্যের বাইরে কাজ কর্মের সূযোগ কমে গেছে। অনেকে আবার মাইনে খুব কম পাচ্ছেন।
আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসমে অনেক মানুষ ষড়যন্ত্রের শিকার। দেশ স্বাধীন হবার আগে এবং পরে আসা মানুষগুলিকে রাষ্ট্রহীন করার চক্রান্ত চলছে। অনেকেরই বৈধ কাগজ পত্র মানা হয়নি। একটি বিশেষ ভাষিক গোষ্ঠীই নির্যাতনের লক্ষ্য। নির্যাতনে কিছু মানুষ মারা গিয়েছেন। কিছু মানুষকে রাখা হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। মানুষের হয়রানি দিন দিন বাড়ছে। দেশের মানুষ তাদের পাশে দাঁড়ালেই তারা সুবিচার পাবেন। চক্রান্তকারীরা পরাস্ত হবেন। মানুষের এখনও বিশ্বাস তারা একদিন ন্যায় এবং সুবিচার পাবেন। তাদের জীবনেও বসন্ত আসবে।
এই মানুষ গুলির সুখের দিন আসবে কি ? তারা কি শান্তি ন্যায় সুবিচার পাবেন? প্রকৃতির নিয়মে শীতশেষে বসন্ত আসবে। প্রকৃতি শোভা দেখিয়ে আবার চলেও যাবে। যাদের সমস্যা কম, অভিযোগ কম তারা দুচোখ ভরে বসন্তের শোভা দেখবে। সমস্যাদীর্ণ মানুষগুলি কি তাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠে মনের খুশিতে হাততালি দিয়ে বলে উঠতে পারবে – আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফুটে, কত পাখি গায়।
খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।👍👍
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteশুভ্রকান্তি মজুমদার