গল্প - শান্তনু রায় চৌধুরী


হলুদ ট্যাক্সি


কান্না এখনো বন্ধ হয়নি। প্রানপন চেষ্টা করা সত্ত্বেও চোখের কোণ ভেজা অনিমার। স্বাভাবিক হওয়া দরকার! বিরাট লবিতে প্রচুর লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, অন্তত তাদের নজরে পড়া যাবে না। দ্রুত লবি পেরিয়ে সামনের পোর্টিকো তে এসে দাঁড়াল অনিমা। 


পেছনে ডায়নামিক ইন্টারন্যাশনালের বিশাল অফিস। কতগুলো ফ্লোর কে জানে! মাথা হেলিয়ে দেখার চেষ্টা করল ও, কেমন ধাঁধা লেগে গেল ওর। কোন ফ্লোরে গেছিলো ও,নাইন্থ না টেন্থ? ফের চোয়াল শক্ত হলো অনিমার, নাঃ স্বাভাবিক হতে হবে, অত ভাবলে চলবে না।


একটু দূরে রাস্তার ওপারে দুলাল দাঁড়িয়ে আছে, তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে! জানোয়ার কোথাকার! অনিমা বেশ রাগী রাগী মুখ করে রাস্তা পেরিয়ে একটা সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়াল। দুলাল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অনিমার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে বিশ্রী ফিসফিসে গলায় বলল, "দেখলেন কত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল? আপনি বেকার বেকার ভয় পাচ্ছিলেন। আমি জানি তো বুড়োর দম। খিক খিক।"


"আরো পাঁচ বাকি!", অনিমার গলা এখনো স্টেডি না। "কি বলছেন? মোবাইল দেখুন, ম্যাসেজ ঢুকেছে",  দুলালের মুখে সেই মিটিমিটি হাসি। অনিমা হাতব্যাগ থেকে মোবাইল বের করল, "হ্যাঁ মেসেজ এসেছে।" দুলালের হাসিটা অসহ্যকর।মোবাইলটা ব্যাগে চালান করে রাস্তায় নেমে পড়ল অনিমা। পেছেন থেকে দুলাল চেঁচাল, "শনিবার ফোন করব, তাহলে?" 


অনিমা উত্তর না দিয়েই একটা হলুদ ট্যাক্সিতে একরকম ঝাঁপিয়ে উঠে পড়ল। আরেকবার মোবাইলের মেসেজটা চেক করল অনিমা। ঠিকই আছে, সামনের সপ্তাহে বাবার বায়োপসির টাকাটা অন্ততঃ মজুদ।


ট্যাক্সিওয়ালা ফোনে কথা বলছিল।বয়স্ক লোক। অনিমার কানে কয়েকটা কথা টুকরো ভেসে এল,"মেয়ে তো থার্ড ইয়ারে,খুব খাটছে,বলেছে বাবা তোমার বয়েস হয়েছে আর ট্যাক্সি চালাবে না,আমি চাকরি পেয়ে যাব...পরের বছর ওদের কলেজে সব কোম্পানি আসবে,চাকরি দেবে...."


অনিমার কান্না  বন্ধ হয়নি। প্রানপনে চেষ্টা করা সত্ত্বেও চোখের কোণ এখনো ভেজা। থামার কোন লক্ষণই নেই।

Comments