প্রবন্ধ - নীহারুল ইসলাম


স্মরণ 
কৃষ্ণনাগরিক 
[১৯৩৪-২০২০]


তাঁকে জানতাম। সামনাসামনি দেখা হয়নি। তা বলে সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগেনি। আমার মাস্টারমশাই ড. শ্যামল রায়ের মাস্টারমশাই ছিলেন তিনি। শ্যামলবাবু সেই কবেই পড়িয়েছিলেন তাঁর ‘সদর মফস্বল’ বইটি। তারপর নিজে সংগ্রহ করে আরও অনেক বই। 

আমি ‘যুগাগ্নি’ পত্রিকার দায়িত্ব পেয়ে তাঁর ঠিকানায় পাঠিয়েছিলাম এক কপি। তিনি গ্রামের পত্রিকা বলে অবহেলা করেননি, আমাকে চিঠি লিখে মতামত জানিয়েছিলেন ... 

সবিনয় নিবেদন,                                        কৃষ্ণনগর                                       ৩০/৮/৯৪

              আপনার চিঠি পেয়ে খুশি হলাম।                          

     ‘যুগাগ্নি’ পেয়ে ভাল লেগেছে। সম্ভাবনাপূর্ণ। এত তাড়াতাড়ি মতামত/মন্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না। আরো কটা সংখ্যা বেরুক। 

                আমার শুভেচ্ছা রইল। 

                                      বিনত

                                সুধীর চক্রবর্তী


দুই

সেই নব্বই দশকের একেবারে প্রথমেই এক কৃষক-সন্তান কৃষি কাজের পাশাপাশি যে সাহিত্যচর্চা করেন- এই খবর তাঁর উদ্যোগই আমাদের সম্মুখে আসে। আমরা পরিচিত হই আমাদের প্রিয় আনসারউদ্দিনদার সাহিত্যের সঙ্গে। ব্যাপারটা ভোলার নয় এবং ভুলিও নি। তাই আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ যখন (১৯৯৬) প্রকাশিত হয়, তাঁকে পাঠিয়েছিলাম। সংক্ষিপ্ত হলেও মতামত জানিয়েছিলেন। আমি ধন্য হয়েছিলাম ...   

  

প্রীতিভাজনেষু,                                              কৃষ্ণনগর                                                  ১২/৭/৯৭ 

              আপনার পাঠানো বই ২ কপি যথাসময়ে পেয়েছি। পরে চিঠিটাও।

              গল্পগুলি আমার ভাল লেগেছে। তবে অসাধারণত্ব তেমন কিছু নেই। 

           কলকাতার ‘বারোমাস’ সম্পাদককে আপনার বই সমালোচনার জন্য দিইছি। বছরে ২বার বেরোয়। হয়ত ৯৮ এর নববর্ষ সংখ্যায় মতামত পাবেন। নমস্কার।

                                 সুধীর চক্রবর্তী   



তিন

তখন তাঁর বইগুলি এক এক করে পড়ছি। সঙ্গে সাময়িক পত্রে তাঁর প্রবন্ধ। ‘বারোমাস’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ পড়ে এতই আপ্লুত হয়ে উঠলাম, তাঁকে চিঠি লিখলাম। আগের মতোই উত্তর পেতে দেরি হল না ...   


নীহারুল ইসলাম                                        ৬/৫/৯৮                                             কৃষ্ণনগর      

 

প্রীতিভাজনেষু,                                                                        

               আপনার চিঠি পেয়ে ভাল লাগল। আমার লেখাটি ভাল লেগেছে জেনে কৃতজ্ঞ বোধ করছি। বারোমাসে এ ধরণের লেখা আমি ১৫টা সংখ্যায় পরপর লিখেছি। ‘মানুষ মানুষ’ পর্যায়েই এটা ৫ম লেখা। আমার বই ‘পঞ্চগ্রামের কড়চা’ ও ‘নিবাস’ পড়লে ভাল লাগবে আপনার। সদর-মফস্বলের চেয়ে ঢের ভাল বই এ দুটি। পড়তে পারলে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। তরুণদের মন্তব্য সর্বদাই মূল্যবান মনে করি। 

               আপনার বইটি বারোমাস দপ্তরে আগেই দিয়েছি। হয়ত পুজোয় বেরোবে। খোঁজ নেব। শুভেচ্ছা।

                                                                                                    সুধীর চক্রবর্তী



‘আপনার বই’ বলতে আমার ‘পঞ্চব্যাধের শিকার পর্ব’, সুধীরবাবু আলোচনা লিখে ‘বারোমাস’ পত্রিকায় ছাপতে দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে সেটা প্রকাশিত হয়নি। তা বলে সুধীরবাবুর মতো মানুষের লেখা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখিনি। একের পর এক বই পড়ে সমৃদ্ধ হয়েছি। যার শুরু হয়েছিল ‘সদর মফস্বল’ থেকে। ‘বারোমাস’ তো ছিলই সঙ্গে আরও নতুন নতুন বই এবং সাময়িক পত্রের লেখাগুলি। 

এই তো ক’দিন আগেই পড়লাম, বন্ধু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে ‘দেশ’ পত্রিকায় তাঁর লেখা ‘আমার বন্ধু পুলু’। যার একেবারে শেষে তিনি বলেছেন, “আমার নিজস্ব টেলিফোনে সেই অম্লান ব্যারিটোনে আর তো শুনতে পাব না নেপথ্য থেকে বর্ষিত শুভেচ্ছা ও আনন্দকণ্ঠ। তার মোবাইল নম্বরটি কাছে থাক তবু- যদি হঠাৎ শুনি: ‘কী রে কেমন আছিস?’”

স্যার, আপনার লেখাগুলিও আজীবন আমাদের সঙ্গে থাকবে। কেমন আছি না আছি খোঁজ নেবে এই ‘গভীর নির্জন পথে’র আমাদের মতো আরও অনেক অনেক পথিকের। 

Comments