বই কথা - রঞ্জন রায়


সনির্বন্ধ মনস্তাপ : স্বেচ্ছানির্বাসিতের যাপনকথা



বিশ শতকের নয়ের দশক ছিল বাংলা কবিতায় এক ঝাঁক তরুণ কবির আবির্ভাব কাল। তখনও মোবাইল ফোন কিম্বা সোশ্যাল মিডিয়ার এতো বাড়বাড়ন্ত হয় নি। একের সঙ্গে অন্যের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল মূলত চিঠিপত্র। এই পত্রের মাধ্যমেই দূরের বন্ধুদের সঙ্গে অন্তরের নিবিড় সংযোগ গড়ে উঠতো অনায়াসে। সেই সোনালী আবহেই উত্তর থেকে দক্ষিণ --- তরুণ প্রজন্মের কবিকুল নিজ নিজ প্রয়াসেই পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে তাঁদের সাহিত্য প্রতিভার স্ফূরণ ঘটাতে পেরেছিলেন। এই কালপর্বে উত্তরবঙ্গে যে কয়েকজন তরুণ প্রতিভা উঠে এসেছিলেন মাটির কাছাকাছি জীবন থেকে তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন কবি আবদুস সালাম সমু। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দক্ষিণ দিনাজপুরের আত্রেয়ী নদীর তীরবর্তী হরিপুর গ্রামেই কেটেছে সমুর শৈশবের দিনগুলি। গ্রামের স্কুলের পাঠ শেষে কবি ভর্তি হয়েছিলেন বালুরঘাট কলেজে, সেখান থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশুনা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বালুরঘাটের বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব হরিমাধব মুখোপাধ্যায়, কথাকার অভিজিৎ সেন এবং পীযুষ ভট্টাচার্যের স্নেহধন্য কবির সাহিত্য প্রতিভার বীজ ক্রমেই অঙ্কুরিত হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মূলত 'মধ্যবর্তী নির্বাচন', 'সংবর্ত', 'দেশ', 'সানন্দা', 'নন্দন', 'গণশক্তি' প্রভৃতি পত্র-পত্রিকার মধ্যদিয়ে।


নয়ের দশকের মাঝামাঝি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগে' স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করতে আসেন কবি সমু। ক্যাম্পাসের মাগুরমারি নদীর মতোই শান্ত এই তরুণের জনৈক বন্ধুর হাতে কবি করা কবিতা 'দেশ' পত্রিকায় পাঠানো হলে সেটি নির্বাচিত হয়। নাতিদীর্ঘ সেই কবিতাটি ছিল,

'হু হু করে ঢালছে না শুধু মেঘ উপুড় হয়েছে
মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঘোর, সারাদিন নিদ্রাহীন
চুমুকে-চুমুকে বিষ আর মৃত্যু নিয়ে খেলে যাই

আহত ব্যাঙের মতো লাফ দিই মনীষার ঘরে।'

কবিতাটি পড়ার পর বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সমালোচক অধ্যাপক অশ্রুকুমার সিকদারের মতো গুরুগম্ভীর মানুষ পর্যন্ত উচ্ছাস চেপে রাখতে পারেন নি। এরপর কবিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি। তিনি সেই বয়সেই রামকুমার মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত দুই বাংলার তরুণ কবিদের কবিতা সংকলন 'পরবর্তী শব্দাবলি'তে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন। রামকুমার তাঁর গ্রন্থের সম্পাদকীয়তে লিখেছেন,
'রবীন্দ্রনাথের জগতের সঙ্গে বর্তমানের সমাজ-রাষ্ট্রের পদে পদে অমিল। সেকথা যেমন বাংলাদেশের জহির হাসানের কবিতায় ফুটে ওঠে তেমনই পশ্চিমবঙ্গের জয়দেব বসুর পংক্তিতে। মারজুক রাশেল তাঁর 'মাল' কবিতায় শ্রমজীবী মানুষের যে অমানবিক জীবনযাপনের কথা লেখেন তারই অন্য এক ছবি আবদুস সালাম সমুর 'কৃষক' কবিতায়।' 


কবি সমু তাঁর যাপিত জীবনে দক্ষিণবঙ্গের খররৌদ্র তাপিত ব্যস্ত মুখর জীবনের চাইতে অনেক বেশি স্বস্তি পান উত্তরের মুক্ত বাতাসে। এই বিপন্ন সময় কবিকে নানাভাবে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। তারই একমাত্র ফসল কবির 'সনির্বন্ধ মনস্তাপ' (২০০১) কাব্যটি। কাব্য পাঠে সংবেদনশীল পাঠক অনায়াসেই বুঝতে পারেন 'সকল লোকের মাঝে বসে নিজের মুদ্রাদোষে' কবি 'একা' হয়ে পড়েছেন। তাঁর চোখেই কেবল গতানুগতিক জীবন অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আত্রেয়ী আর ইছামতীর জল দিয়ে বয়ে গেছে সবুজ সুন্দর গ্রাম জীবন। নস্টালজিয়ায় ভেসে ওঠা গ্রাম হারিয়ে গেছে জীবন থেকে। শৈশবের অপুর চোখ দিয়ে দেখা গ্রাম আমূল বদলে গেছে।হারিয়ে গেছে সেই চেনা পৃথিবী। নিশ্চিন্দিপুরের অপু-দুর্গা আর নেই। তাদের সহজ-সরল মন্থর জীবনে লেগেছে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীর দূষণের ছাপ ফুটে উঠেছে। স্বভাবতই কবি লিখেছেন,

'অবৈধ কুঙ্কুম মেখে দুর্গা আজ শহরগামিনী
ঘোলাজলে ডুবে যায় ডুবে মরে অপুর জীবন
অনন্ত পাঁচালী জুড়ে নেচে ওঠে ভিডিও বিতান

রেলগাড়ি কতদূর, তুমি জানো, বিভূতিভূষণ।'
(অপু ও দুর্গার কবিতা)

নগর সভ্যতার প্রবল ধাক্কায় একদিন গ্রামীণ জীবনের পাড় যে ভেঙে পড়বে, তা কবির চোখে খুব স্পষ্ট করেই ধরা পড়েছিল। সেই ভাঙনের কথা বলতে গিয়ে কবি লিখেছেন,

'এই গ্রাম একদিন ভেঙে যাবে, আমরা বিলীন
হবো জটিল শহরে। আমাদের বাড়িটিও বিক্রি
হবে। কিনে নেবে কেউ, হয়তো বা পাশের জমিল
মায়ের স্নেহের চিহ্ন, মুছে যাবে আব্বার শাসন।'
(মফস্বল চরিত /২)

এই ভাঙন কবিকে নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের হারানো অপুর জীবনের মতো ঘোলা জলে ডুবিয়েছে। তিনি দেখেছেন শহরের ছিদ্রপথে ছিন্নমূল সব মানুষের ভিড়। ইছামতীর তীরের কাশবন ছেড়ে মানুষগুলো শহরের ক্ষুদ্র ঠিকানা ফ্ল্যাটবাড়িতে বন্দী। তাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে মাছরাঙা, মাটি, ঘাস, প্রতিবেশী মন আর --

'প্ৰিয়জনেষু যারা পাশে ছিলো তারা সব
গোধূলি বাতাসে ভাসে। দেখি পুরনো সকল বন্ধু
অনেক সাফল্য নিয়ে সূর্যহাসি আকাশে ছড়ায়
তাদের জীবন রাফ এন্ড টাফে নক্ষত্রখচিত।'
(মফস্বল চরিত /১)

এই গ্রামেই কবি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন 'শিমুলে-পলাশে'।

প্রতিদিনের জীবনে আপামর মানুষ মাত্রেই, তথাকথিত শিক্ষিতের মধ্যে অনেক বেশি করে লক্ষ্য করা যায় কৃত্রিম কুশল বিনিময়ের এক ধুসর রোগ। আপাদমস্তক মেঘ, হিমযুগ আর ভেঙে পড়া কান্নার টুকরোগুলো সরিয়ে রেখেছেন কবি অনিরপেক্ষ এই একুশ শতকের জমে ওঠা ক্লেদপুঞ্জের ভেতর। এই বোধের কথা কবি ব্যক্ত করেছেন কাব্যের প্রথম কবিতাতেই --

'... আমি সরিয়ে রেখেছি কালোদিন, অশুভ আঁতাত আর নিরবচ্ছিন্ন অসমীকরণ। অভ্যাসজনিত চোখে চোখ, অনর্থক কৌতূহল, দেখা হলে এইসব 'ভালো আছো' গোছের ছ্যাবলামি আমার আর ভালো লাগে না, 'বিপন্ন ট্যুরিস্ট বলে মনে হয় সমূহজীবন।'
(ট্যুরিস্ট)

যেন এর থেকে 'অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ঢের ভালো'। এ জীবন ব্যবহৃত ব্যবহৃত হতে হতে জীর্ণ, নিয়ত গ্লানির-পঙ্কে নিমজ্জিত সব কোমল বোধগুলি। তাই কবি আক্ষেপ করে বলেছেন,

'আমার ঘাড়ের কাছে প্রেত নিঃশ্বাস
আলপিন ভরা এই জটিল শহরে, ওগো ধারাপাত।'
(সবিনয়ে নিবেদন)

এই বোধ নিয়ে জ্বলন্ত অগ্নির কাছে হাঁটু মুড়ে বসে শবের সাধনা করতে গিয়ে কবি দেখেন, 'সন্ন্যাসীর নেই কোনো দাম কঠিন সমাজে'।
বৃহত্তর ভারতবর্ষে ধর্মীয় বিভেদের মধ্যে কোনোকালেই ঐক্যসূত্র গড়ে ওঠে নি। ওঠা সম্ভব ছিল না কিম্বা আজও সম্ভব নয়। কবি যতই 'এক বৃন্তে দুটি কুসুমের' গান করুন না কেন। কবি সমুর এই বীক্ষণ যথার্থ। এবং এই বোধের গভীরে ডুবে থেকে এই বিভেদের কাঁটায় জর্জরিত কবিকে তাই নিজের কাছেই প্রশ্ন করতে হয়েছে বারবার,

'প্রণয় পরিখা জুড়ে এত শোক, এত হাহাকার
অনিবার্য এই বর্ণ-দ্বেষ -- এই অভিশাপ, আর
খুবলে নেওয়া পিঠের মাংস আজ আমি
কোথায় লুকোবো?'
(৬ই ডিসেম্বর)

আবার প্রেমের রং লাল, গোলাপের লালিমা প্রেমের অনিন্দ্য সুন্দর উপমা। কিন্তু তবু মুসলমান কবির রক্তে অনিন্দিতারা প্রেমের রং দেখতে পায় নি কিম্বা চায় নি। তাই আক্ষেপ আর বেদনায় জর্জরিত কবিকে উচ্চারণ করতে হয়েছে,

'আমার শরীর ঘিরে গন্ধকের রেণু, আগুনের ফণা
পরীরা আমার থেকে দূরে সরে থাকে, কলঙ্কের ভয়ে
কেন না যদি কিছু রটে যায় প্রকাশ্য শহরে।'
(বড়শি)

এই যন্ত্রণার সমান্তরালে মুসলমান সমাজেও আছে বিচ্ছিন্নতার অসুখ। এ প্রসঙ্গেও কবি লিখেছেন,

'তোমার বেণীর ভাষা,গূঢ়তত্ত্ব আজও আমি
বুঝতে পারি নি বলে, চেয়ে দেখি দূর থেকে
জাতীয় পতাকা বলে মনে হয় তোমার কামিজ!
ছুঁতে চাই শীর্ষদেশ, ছুঁতে চাই শুদ্ধতম প্রণয় মহিমা।
(জাতীয় পতাকা)

এই অন্ত:ক্ষরণ চরমসীমায় পৌঁছেছে যখন দেখি উপমহাদেশের গর্ভে জন্ম নিয়ে কবি নিছক দ্বিজাতি তত্ত্বের শিকার হয়ে একক ও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।

গড়পড়তা মানুষের বৃত্তে বাস করেও কবির ভেতরে, নিয়ত বেড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র ভাবনার এক পূর্ণাঙ্গ মানবসত্তা -- যার রয়েছে একটি নিজস্ব প্রেম চেতনা। এই স্বতন্ত্র প্রেম চেতনা থেকে 'অবিবাহিতের দলিল' কবিতায় কবি লিখেছেন,

'মৃত্যুকে লুন্ঠন করে জেগে ওঠা আয়ু আমি তাকে শুদ্ধতম প্রেম বলে জানি। জানি কুমারীর বুক লক্ষ্য করে ডুবে যাওয়া মুখের নিমজ্জন এক দ্বিতীয় উত্থান। আদি ও অন্তিম এই সেই জৈবনিক বিচ্ছুরণ, অমোঘ নির্যাস মুহুর্মুহু ঝড় আর অনন্ত প্লাবন।'

এই ঝড় আর প্লাবনে কবি ভেসে গেছেন। বর্তমান অবক্ষয়ের কালে দাঁড়িয়েও কবি বিশ্বাস করেন, প্রকৃত বামপন্থার মৃত্যু নেই। কেবল ক্ষুধার্ত, ভোগবাদী মানবিকতার কারণে তথাকথিত বামপন্থীদের সাদা বস্ত্র লেগেছে দূষিত রক্তের দাগ। সেই নয়ের দশকে দাঁড়িয়েই কবি বুঝতে পেরেছিলেন বামপন্থীরা আদৰ্শচ্যুত হয়ে পড়েছে। 'বিপ্লব বিষয়ক' কবিতায় এবিষয়ে লিখেছেন,

'নিহিত শূন্যের ফণা দুলে ওঠে দিগন্তেরেখায়
সঙ্ঘ ছেড়ে স্বাভাবিক, সরে যায় শান্ত মুখগুলি
এখন লেনিনপুর কেবলই হিংসার কথা বলে
বুকের বাঁদিকে আজ প্রেম নয়, প্ররোচনা শুধু।'

অথচ একজন প্রকৃত বামপন্থী হিসেবে তিনি প্রত্যেক্ষ করেছেন পৃথিবীর প্রতিটি কৃষক কবির চোখে 'লাল মেঘদূত'। সেইসূত্রেই সমুর কবিতায় যাবতীয় হতাশা কাটিয়ে শেষপর্যন্ত উচ্চারিত হয়েছে সঙ্ঘবদ্ধতার কথা, ভালোবাসার কথা। সেই ভালোবাসায় ঋদ্ধ কবি শেষপর্যন্ত উপনীত হতে চেয়েছেন প্রত্যাশার তীরে,

'... এ যুগ হতাশার সংলগ্ন ভয়ের অধীন
মিথ্যে কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, ছত্রভঙ্গ উন্মত্ততা নয়
প্রস্তুতি পাঠের এ যুগ
হে মানুষ ভালোবাসো, সঙ্ঘবদ্ধ হও।'
(গণতান্ত্রিক কবিতা)

এরই অনুষঙ্গে কবি 'বলশেভিক কবিতা' শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন 'উপমহাদেশে জাগো খিদে ও লেনিন'।--
এই ভাবনার মধ্যেই সমুর অনন্যতা।

বিষয় ভাবনার পাশাপাশি কবিতার আঙ্গিক নির্মাণেও সমু তাঁর নিজস্বটার স্বাক্ষর রেখেছেন। ছন্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি মূলত গদ্য ছন্দে সাবলীল হলেও অক্ষরবৃত্ত ছন্দ সৃষ্টিতেও যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। 'বিপ্লব বিষয়ক' কবিতাটিতে সেই ছন্দচাতুর্য আমরা লক্ষ্য করি,

'নিজস্ব বিপ্লব ছাড়া / অন্য গান বিশ্বাস করি না ৮+১০
মানুষের ইতিহাস / ব্যক্তিগত নিয়তি নির্ভর । ৮+১০

আবার কবির 'মফস্বল চরিত' কবিতাটি একটি উৎকৃষ্ট রীতির সনেট হয়ে উঠেছে। ছন্দের পাশাপাশি অলংকার ও চিত্রকল্প নির্মাণেও কবির কৃতিত্ব লক্ষ্য করার মতো। তিনি একেবারে মাটিঘেঁষা জীবন থেকে যাবতীয় অলংকার চয়ন করেছেন। যেমন,

'আগুন খেয়েছি আমি মায়ের দুধের মতো জ্ঞানে'
--- উপমা

'ডিমের কুসুমের মতো হলুদ রোদ'
--- উপমা

'চতুর্দিকে ধানশিশু, জেগে ওঠে সামন্ত শহর'
--- রূপক ও বিরোধাভাস

'শান্ত ঝাউয়ের বনে থাবা দিল ঘাতক বাতাস'
--- সমাসোক্তি

'প্রতিটি কৃষক যেন পৃথিবীর লাল মেঘদূতদঢ'
--- উৎপ্রেক্ষা

'বুকের বাঁদিকে আজ প্রেম নয়, প্ররোচনা শুধু'
--- অপহ্নতি

'এতো কোলাহল তবু আমার গন্তব্য নেই কোনো'
-- বিরোধাভাস ইত্যাদি।

কবি নির্মিত অসাধারণ কয়েকটি চিত্রকল্প এরকম,
'জাতীয় পতাকা বলে মনে হয় তোমার কামিজ'
'কষ আর কুয়াশা পীড়িত ঘর'
'কম্পিত প্রশ্নের মতো ঝুঁকে আছে নশ্বর ভুবনে'
'তোমার উরুর ভাঁজে ডুবে গেছে অনন্ত নাবিক'
'জেগে ওঠে সামন্ত শহর'
'ধ্যানস্থ বকের মতো স্থির জলে প্রসিদ্ধ আঁধার খেলা করে'
'অনন্ত পাঁচালি জুড়ে নেচে ওঠে ভিডিও বিতান' ইত্যাদি।

এরই সঙ্গে কবি বেশ কিছু কথ্যভাষার শব্দ নিয়েও খেলেছেন যেন অনায়াসে। যেমন, 'আমি তো পথে পথে লটর পটর', 'জমানো চাঁদির মতো খরচ করেছি', 'মুছে যাবে আব্বার শাসন', 'নদী তীরে মুথা ঘাস', 'উর্ধে ঠ্যাং তুলি আর সহসা', 'অচানক বাইরে এসে', 'মাধুরীর ত্বকের নিচে ন্যাংটো বাস্তুশাপ' ইত্যাদি ইত্যাদি। এইভাবে বিষয় আর আঙ্গিকের মেলবন্ধনে কাব্যটি নিছক কবির যাপণকথা শুধু নয়, একটা বিশেষ সময়ের সামাজিক দলিলও বটে

কবি আবদুস সালাম সমু

Comments