অনুবাদ গল্প - শ্যামলী সেনগুপ্ত

স্কুল অটো - অমিয় বেজ
মূল গল্প : ওডিআ

              
        ও দেখেই চিনে ফেললো। বললো, পাপা! আমাদের স্কুলেরঅটো। বাজাজের কালো রঙের অটো। শয়ে শয়ে চলছে বড়ো রাস্তা, অলিগলিতে। ছেলেটা পেছন দিক থেকে চিনতে পারলো কী করে!
        তুই কি নম্বর মুখস্থ রেখেছিস? কই পড়া তো মনে থাকে না! আমি একটু ঠাট্টার ছলে বললাম ফটিককে।
         না না মুখস্থ করিনি। অটোর পেছনে ঐ ছবিটা...
         মুখ ফুলিয়ে বললো সে।   
        জোড়হস্ত মুদ্রার ছবিটি বোধহয় অন্য কোনো অটোর পেছনে নেই, তাই সহজেই চিনতে পারলো ফটিক।
      ওখানে একটা মোপেড গ্যারেজে অটোটি ছিল, পেছনের চাকা খোলা, ইঞ্জিনও।সম্ভবতঃ মেইনটেন্যান্সে আছে। প্রায়  ন'মাস হয়ে গেল, ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর, মেইনটেন্যান্সে চলে গেছে পৃথিবী। কেউ কেউ সেরে উঠে ফিরে এসেছে, কারও আবার দরকার পড়েনি। শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিঃশ্বাস আর ভেতরে আসা প্রশ্বাসের যাতায়াতে কোনও ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিড়ম্বনা শুধু এটাই যে, ওসবের ব্যতিক্রম না ঘটার পেছনে একটা ক্ষিদে আছে আর সেই ক্ষিদের জন্য জরুরী হলো খাদ্য। আর এই খাবারের জোগাড়ের জন্য পৃথিবীর সেরে ওঠা খুব জরুরী।
        পাপা! একটু ঐ অটোর কাছে চলো।
        কেন রে?
        অটো আঙ্কেলের সাথে দেখা করব।
        বাচ্চা ছেলের মন!নরম, সরল।
        আমি গাড়ি দাঁড় করালাম ঐ গ্যারেজের সামনে। একদিকে কাত করে রাখা হয়েছে জোড়হস্ত মুদ্রার তিন চাকার গাড়িটি। যেন শারীরিকভাবে অক্ষম  কেউ  হাতজুড়ে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর মালিকের সামনে। এই অটোর মালিক আসলে কে?
অটোওয়ালা, ফটিক না আমি?
         ফটিকের অনলাইন ক্লাস চলছে। দু'এক ঘন্টা মোবাইলের পর্দায় পড়াশুনো। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের ভাব বিনিময়। সেই বিনিময়ের মূল্য দিতে মুখে মাস্ক বেঁধে আমরা বাবা আর ছেলে বেরিয়েছি স্কুল কাউন্টারে।
         সূর্যের সামান্য আলো পৃথিবীতে পড়েছে। স্থাবরজঙ্গমে সামান্য চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
         আচ্ছা এই অটো কি খারাপ হয়ে আছে?
         না, মেইনটেন্যান্সে আছে স্যার। বিক্রি হবে।
         বিক্রি?
       আমরা দু'জনে পরস্পরের দিকে চাইলাম। ফটিক আমার দিকে, আমি ফটিকের মুখের দিকে। জানতে চাইলাম, অটোর মালিক এখন কোথায়।
         করোনার জন্য সব স্কুল তো বন্ধ  হয়ে গেল স্যার। কিস্তি দিতে অসুবিধা। হয়তো এটা বিক্রি করেই লোন শোধ...
         ওহ্!
         লোন কিস্তি এসব বোঝার বয়স নয় ফটিকের। ও হয়তো এটুকুই বুঝেছে, রোজ স্কুলে নিয়ে যাওয়ার বাহনটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, ওকে আর স্কুলে নিয়ে যেতে আসবে না। ওর সরল নরম মন হয়তো এটাই  বুঝেছে যে, স্কুল খুলে গেলে পাপা কিছু ব্যবস্থা করবে।
         অটোটি তো নিজেকে বিক্রি করে ঋণমুক্ত হবে কিন্তু পা মুড়ে সবিনয়ে জোড় হাত করে দাঁড়িয়ে আছে ওই অটোওয়ালা?
         ফটিকের মনে কি এরকম কোনো অবাধ্য নিরীহ বিনম্র  প্রশ্ন
আছে?
         যদি বা থাকেও, তবে আমার কাছে তার উত্তর নেই।
'তেরে  মাসুম সওয়ালোঁ সে পরেশান হুঁ মৈঁ।'

*******

লেখক পরিচিতি  : অমিয় বেজ

জন্ম ১৯৭৭ এর ২৭ জুন এ, ওডিশার কেন্দুঝর জেলার ঘটগাঁয়। পেশায় ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার, খড়্গপুর রশ্মি মেটালিক্সএ এ.জি.এম.। চারটি গল্প গ্রন্থ প্রকাশিত। লেখকের কিছু গল্প বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। 

সম্প্রতি তাঁর 'বিষ' গল্প আমার দ্বারা অনূদিত হয়ে 'সংবর্তিকা' র শারদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

Comments

  1. চমত্কার গল্প । অনবদ্য অনুবাদ ।
    মূল গল্পকার অমিয় বেজ এবং অনুবাদিকা শ্যামলী সেনগুপ্ত দিদিমনি কে অজস্র অভিনন্দন এবং শুভকামনা ।

    ReplyDelete

Post a Comment