গুচ্ছ কবিতা - তৃষ্ণা বসাক

কো-এডুকেশন 


মুখে পুরুষাঙ্গ ঠুসে 

যারা আমাদের বছরের পর বছর ধরে 

স্বরাঘাত কৌশল শিখিয়ে এসেছে, 

শিখিয়েছে কীভাবে কবিতা কিংবা গবেষণাপত্র লিখতে হয়, 

চালাতে হয় দপ্তর অথবা বিমান, 

কীভাবে আলোকিত মঞ্চে এসে বিনম্র ভঙ্গিতে দাঁড়াতে হয়, 

কিংবা হাঁটতে হয় মিছিলে, 

মুখে পুরুষাঙ্গ ঠুসে মেঝেতে চিৎ করে ফেলে 

যারা আমাদের ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস থেকে 

সম্মোহন -সমস্তটা শেখাতে চেয়েছে,

ভেবে দেখো, 

তোমরাই ভেবে দেখো, 

ওদের কাছ থেকে আরো কিছু শেখার বাকি থেকে গেল, 

নাকি তোমরাও কিছু শেখাবে এবার?


সৌপ্তিক পর্ব


মৃত্যুর ভগিনীর মতো ভয়ঙ্কর এক অস্ত্র

আমার বুকের মধ্যে ঢুকে এল,

আমি কী করব ভেবে পেলাম না,

হৃদয় বহুকালের এক বেদনাকে

কীভাবে কৃষ্ণবটের মতো সঞ্চয় করে রেখেছে!

আমার কোথাও যাবার নেই, কখনো  ছিল না...


সেই ঘোর যুদ্ধের কথা

আমার মনে ছিল,

মনে ছিল একবার যুদ্ধের ফাঁকে 

সৈন্যরা কেমন অল্পক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিল, 

আর তাদের পটে আঁকা ছবির মতো দেখাচ্ছিল,

রাত্রিকালীন যুদ্ধে পদাতিকরা বাতি ধরেছিল,

রথে, অশ্বে, গজে সর্বত্র প্রদীপ

তবু কি অন্ধকার, কি নিঃসীম অন্ধকার!

বেশ্যাশিবিরগুলিও সেই অন্ধকার দূর করতে পারেনি যাজ্ঞসেনী,

যাজ্ঞসেনী, তুমি তো জেগে ছিলে, 

তোমার প্রতিশোধস্পৃহা তোমায় জাগিয়ে রেখেছিল,

এত বছর পরে,  অনেক ঘুম, জাগরণ ও বিভ্রম পেরিয়ে

তুমি  এবার হয়তো বলতে পারবে,

কেন তোমার পাতালস্পর্শী চুলও এতগুলো শবদেহ ঢাকতে পারল না?


সরসতিয়ার স্বপ্ন 


ইউনিসেফের পোস্টার গার্ল সরসতিয়া 

ফুটপাথে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে -

তার মাথার নিচে জুটে গেছে একটা বালিশ,

বালিশ মানে একটা স্লেট,

ভাত হচ্ছে সাদা চক 

আর ছাদ মানে গোটা একটা ইস্কুল! 


সরসতিয়ার হাতে এভাবেই 

বর্ণপরিচয় লেখা হচ্ছে,

মেয়েটার এত পড়ার ইচ্ছে দেখে 

গদি থেকে গণেশ তাঁর ইঁদুরটাকে পাঠিয়ে দিলেন,

সে এখন সরসতিয়ার মাউস হয়ে ব্রহ্মাণ্ড দৌড়ে বেড়াচ্ছে !

বীণার সুরনির্ঝর mp3 তে ডাউনলোড করতে করতে 

সরসতিয়া জেনে যাচ্ছে 

পুরোটাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি-

এই ফুটপাথ,রাতের খাকি ও নিখাকি তোলাবাজি,

বাপ শিউচরণকে ছেড়ে মার চলে যাওয়া,

সব ঝুট, চোখের ধাঁধা, 

সত্যি শুধু তার মাথার নিচে স্লেট,

মুখ ভর্তি চক

আর মাথার ওপর গোটা একটা ইস্কুল!

Comments

Post a Comment