হুগো বলের কবিতার অনুবাদ
আখ্যানগাথা
মেরি মাতার উজ্জ্বল এক ছবির সামনে
এক ভিখারি বেহালা বাজাচ্ছিলো।
হেমন্তের শস্যক্ষেত্রে গান গেয়ে ফিরছিলো পাখিরা।
দ্রুত ফুরিয়ে আসছিলো দিনের আলো।
লোকটা এভাবে বাজাচ্ছিলো,
মনে হচ্ছিল লোকটার কপালের উপরে
গুচ্ছ গুচ্ছ রসালো আঙুর ঝুলে আছে।
লোকটা এভাবে বাজাচ্ছিল- যেন
ওর হাতে আছে ফলভারে আনত আপেলগাছের শাখা
কিম্বা পাহাড়ের তুষারস্ফটিকে ঢাকা ফার্নের লতাগুল্ম।
লোকটার বাজনার সঙ্গে সঙ্গে ওর চোখে
ঝিলিক দিয়ে উঠছিল নীল হ্রদের আলো।
লোকটা বাজাতে বাজাতে গেয়ে উঠেছিল,
নানা সুরের গান। তবুও যেন ভেবে পাচ্ছিল না
বেহালার সঙ্গে কোন সুরটা মানাবে।
তার পরে লোকটা গেয়ে উঠলো
‘দ্য মুন অ্যান্ড দ্য স্টারস’
লোকটা সর্বস্ব দিয়ে দিতে পারে সুরের জন্য...
তারপরে একাকী অরণ্যের শান্তিতে লোকটা কাঁদবে।
বেহালাটা পান করবে তার অশ্রু।
লোকটা বাজাচ্ছিল আর গাইছিলো
খেয়ালও করেনি যে ইতিমধ্যে
মেরিমাতা একটু নড়ে চড়ে বসেছেন।
লোকটা খেয়াল করেনি যে
মেরিমাতা নিজের হাতে সরিয়ে দিচ্ছেন
তার মাথায় ঝরে পড়া তুহিনশুভ্র কণা।
লোকটা সামনে পিছনে দুলে দুলে,
চারপাশে ঘুরে ঘুরে বাজাতে শুরু করলো,
যাতে লোকটার চিবুকের নিচে রাখা
কাঠের তন্ত্রী থেকে চারপাশের হাওয়ায়
ছড়িয়ে পড়তে পারে অপূর্ব রূপকথা!
তখন মেরিমাতা নেমে এলেন
ছবির ঐ সাজানো আসন থেকে,
পিছু নিলেন ঐ ভিখারি বেহালাবাদকের।
কাঁটাঝোপ আর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে
ঢালু পথে ওঠানামা করতে দেখা গেলো
ভিখারি বেহালাবাদক এবং মেরিমাতাকে।
মাঝরাতে মোরগের ডাক শোনা গেলো,
লোকটা তখনও বাজাচ্ছিল।
রাত দুটোয় লোকটা বাজিয়েছিল
‘এঞ্জেল’স টাং’
রাত তিনটেয় বেজেছিল ‘ট্রিনিটি’
ততক্ষণে ছিঁড়ে গিয়েছিল বেশ কিছু তার।
সবার শেষে লোকটা বাজিয়েছিল
মাটির গোপন গন্ধমাখা লোকগানের সুর।
মেরিমাতা কোট দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন
ভিখারির শীতার্ত শরীর,
যখন অবশেষে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল
শাশ্বত ভিক্ষার অপেক্ষায়।
(‘Legende’ ‘লেগেন্ডে’ কবিতা অবলম্বনে লেখা)
কবি পরিচিতি : হুগো বলের জন্ম হয়েছিল ১৮৮৬ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি জার্মানির পিরমাজেন্স্ শহরে। মিউনিখ ও হাইডেলবার্গে পড়াশুনা করেন সমাজতত্ত্ব এবং দর্শন নিয়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জুরিখকে কেন্দ্র করে ইউরোপে যে ডাডা আন্দোলন শুরু হয় কলা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে, তার পথিকৃৎ ছিলেন হুগো। মাত্র ৪১ বছর বেঁচেছিলেন তিনি। জীবনের মধ্যবর্তী সময় মাত্র দশ বছর সময় সৃষ্টিশীলতায় এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে কাটালেও জার্মান সাহিত্য তাকে কোনওদিন ভুলবে না।
![]() |
চিত্র - শ্রীহরি |
Comments
Post a Comment