গল্প - রম্যাণী গোস্বামী

বৃষ্টির সঙ্গে দেখা 


(১)

আর ঠিক দু’দিন পরেই মহালয়া। যদিও আকাশ দেখে কিচ্ছুটি বোঝার যো নেই। গত চার-পাঁচদিন ধরেই লাগাতার বৃষ্টি হয়ে চলেছে। মেঘের গুরুগম্ভীর ডাকে রোজই ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যায়। জানলার পাল্লা খুলে দেখতে পাই যেন ঘষা কাচের আবরণে ঢেকে আছে পৃথিবী। পাশের বাড়ির ছাদে ভিজছে কাপড় মেলার জন্য টান টান করে সমান্তরালে মেলে রাখা দড়িগুলো। ঝাপসা আলোয় ডুবে আছে নিঝুম গলিটা। মানুষজন কেউ কোথাও নেই। চোখ তুলি উপরে। ধোঁয়াটে রঙা আকাশের ঝাপসা চাদর ফুঁড়ে বৃষ্টির ফোঁটা ঝরে ঝরে পড়ছে কেবল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের পাতা বুজে আসে আবারও। বালিশের পাশেই রাখা স্মার্টফোনের স্ক্রিন আঙুলের ছোঁয়ায় জেগে ওঠে। বুচান আর দিদিয়ার হাসিমুখ ছবিটার উপরে জ্বলজ্বল করে ঘড়ির সংখ্যাগুলো। পাঁচটা আঠেরো। আজ পনেরোই সেপ্টেম্বর। তারিখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতেই টকাস করে মনে পড়ে যায়। আরে! আজই তো মঙ্গলবার। বিডিও অফিসে যেতে হবে। শার্প দশটায়। আমাদের গ্রুপ সি পরেশদা ওখানে অপেক্ষা করে থাকবে আমার জন্য। 

সে না হয় গেলাম। কিন্তু ওরা? আমার বাচ্চাগুলো? ওরা আসতে পারবে তো এই ঝুম বৃষ্টিতে? চা বাগানের ভিতর দিয়ে প্রায় কুড়ি কিলোমিটারের নির্জন রাস্তা। যে রাস্তায় চলে না কোনও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। সেটা পেরিয়ে তারপর পড়বে হাইরোড। ইস। এই বৃষ্টিতে কীভাবেই বা আসবে ওরা বলও দেখি? অথচ ওদের জন্যই তো এত উদ্যোগ। কথাটা মনে হতেই ঝপ ঝপ করে চোখের সামনে মুখগুলো ভেসে আসে। সনেকা দাস, নিরুমা খাতুন, রুমা কুজুর, সুজাতা রায়, কারমিলা খারিয়া, অঞ্জলি মুণ্ডা, অনিমা ওঁরাও, রজনী নাগেসিয়া, টেরেসা খালকো... সারি সারি কচি মুখগুলো মনের ফ্রেমে দ্রুত ভেসে উঠেই কেঁপে কেঁপে সরে যায়। 

গতকাল রাতে ঘুমোতে বড্ড দেরি হয়েছিল। প্রথমে নাগপুরে দিদিয়ার সঙ্গে ফোন। খিচুড়ি বসাব। বৃষ্টির দিনে মায়ের হাতের সেই বিখ্যাত ঝাল ঝাল পাতলা মুগ ডালের খিচুড়ি নিয়েই ওর সঙ্গে চলল এক ঘণ্টারও বেশি বকরবকর। তার মধ্যেই প্রেশারে সিটি পড়ে গেল। খিচুড়ি আর বেগুনভাজা প্লেটে বেড়ে ফেলা হল। সঙ্গে কড়কড়ে করে লঙ্কা ভাজাও তৈরি শেষ। তখনও কানে ফোন ধরা, মাথাটা বেঁকে আছে ঘাড়ের কাছে। অনেক খুঁজে খুঁজেও হেডফোনটা পেলাম না। শেষে দিদিয়ার ধমকে ফোন রেখে খাওয়া শেষ করলাম। বিছানায় যাওয়ার আগে প্রতিদিনের মত বাবা মায়ের সঙ্গে একটু ফোনালাপ। সারাদিনের সালতামামি। শেষে সুনীলের ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ বইখানা হাতে সোজা বিছানায়। তখনই আরম্ভ হল আলোর ঝলকানির সঙ্গে দুমদাম বাজ পড়া। সে কী বিকট আওয়াজ। আতঙ্কে কানে তালা ধরে যায় যেন। 

অগত্যা উঠে পড়লাম বিছানা ছেড়ে। খোলা জানলা দিয়ে ভেজা বাতাস এসে কাঁপিয়ে দিচ্ছে শরীরের প্রতিটি রোমকূপ। প্রথমেই গেলাম টিভির প্লাগ খুলতে। তারপর শোবার ঘরের জানলার পাল্লাদুটো টেনে টেনে বন্ধ করলাম। কানে বালিশ চাপা দিয়ে পাতলা কম্বলটা দিয়ে নিজেকে আপাদমস্তক মুড়ে আবারও শুয়ে পড়লাম গুটিসুটি মেরে। কিন্তু ঘুম আর আসে না। কী অশান্তি! আবার এদিকে একটু বেলা অবধি যে ঘুমিয়ে নিয়ে পুষিয়ে নেব, তারও উপায় নেই। কাকভোরে মেঘেদের এত ডাকাডাকি যে হুট করে ঘুমটা গেল ভেঙে। ফের ঘুমিয়ে পড়ি বরং। আর যদি সময়মত উঠতে না পারি? আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বিডিও অফিস। সবুজ সাথী প্রকল্প। নীল সাইকেলের চোখ ঝলসানো দ্যুতি। লম্বা বারান্দার করিডোরে সার দিয়ে বসা স্টুডেন্টদের মিডডে মিল খাওয়া। এমনি আরও কত কী। 

জলপাইগুড়ি শহর ছাড়িয়ে অনেকটা দূরে নদী আর চা বাগানের মাঝে আমার স্কুল। জায়গাটির নাম রংধামালী। দেড়শ বছর আগে এখানে ছিল গহন এবং আদিম অরণ্যভূমি। রাজার আমলে এখানে ছিল বনবিভাগের বীট অফিস। ছিল সেটেলমেন্ট অফিস। পাতকাটা মৌজার রাজস্ব আদায় হত সেখানে। এখন আর সে সবের চিহ্ন নেই। গাছ কেটে তৈরি হয়েছে জনবসতি। সম্প্রসারিত হয়েছে নগর। তবুও প্রকৃতি যেন নিজেকে পুরোপুরি উজার করে দিয়েছে এখানে। দিদিয়ার কথায় এই স্কুলই আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। আশৈশবের চেনা জায়গা, বাবা মা সবাইকে ছেড়ে এতদূরে চাকরি করতে এসেছি। আমার যাবতীয় মনোকষ্ট মিটিয়ে দিয়েছে এই স্কুল আর তার পরিবেশ। আমারও একই মত। ভাগ্যিস ব্যস্ত শহরের কোনও ঘিঞ্জি এলাকায় হয়নি চাকরিটা। তাহলে কবেই তাজা শ্বাসের অভাবে মিইয়ে যেতাম আমি। 

সর্বাঙ্গে আলসেমি মেখে বিছানায় এপাশ ওপাশ করতেই মনের পর্দায় ফুটে উঠল স্কুলে যাওয়ার সময়কার চা বাগানের সেই নির্জন রাস্তাটা। ঘন সবুজ ঢেউয়ের মাঝখানে চলে গেছে কালো পিচের লম্বা টানা পথ। চারপাশে পাখির কলকাকলি। কতদিন যে ময়ূর আর ময়ূরীকে দেখেছি ঘুরে বেড়াতে চা বাগানের ভিতরের সরু মেঠো চিলতে পথে। একদিন দেখি বিশাল এক দাঁড়াশ রাস্তা পারাপার করছে। সন্তর্পণে খানিক দূরেই স্কুটি থামিয়ে দিয়ে আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে। ওর সর্পিল চলার পথের সামনে পড়ল বর্ষার জলে ফুলে ফেঁপে ওঠা আমাদের সেই ক্ষুদ্র ঝোরার উপরের সিমেন্টের তৈরি কালভার্টের উঁচু রেলিংখানা। নিমেষে তড়াক করে লেজে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে দাঁড়াশ। পলক ফেলতে না ফেলতে রেলিং টপকে মুহূর্তের মধ্যে হাওয়া। আমি স্কুটারে স্টার্ট দিয়েছি আবার। 

আমার মাথার উপরে এখন নীল সামিয়ানা। সঙ্গী চা বাগানের কোল ঘেঁষে চলা বারুণী নদীর আঁকাবাঁকা গতি। এবার চোখের সামনে আমার স্কুলের মাঠ। বাচ্চারা খেলছে। ওদের চিৎকার ভেসে আসছে। স্পোর্টস এর দিন বিরাট হইচই। ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। ছোট বড় মাঝারি মন্ত্রীরা এসেছেন। হেড মাস্টারমশাই নগেন’দার গলা সাঙ্ঘাতিক ভেঙে গিয়েছে। কীভাবে আপ্যায়ন করবেন অতিথিদের ভেবেই পাচ্ছেন না। মাইকে গান বাজছে। উদ্বোধনী সঙ্গীত। আমি হারমোনিয়ামে। আমার দুপাশে দুজন দিদিমণি। কিছু ছাত্রী। বাচ্চারা লাইন দিয়ে ড্রিল করছে। ধামসা মাদলের তালে তালে নাচছে একদল আদিবাসী কিশোরী। দড়ি টানাটানি চলছে শিক্ষক ছাত্রদের মধ্যে। আর ফুটবল টুর্নামেন্ট। ভিক্ট্রি! ভিক্ট্রি! আবার পরক্ষণেই সব শান্ত। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে মাঠে বসে টিফিন খাচ্ছি। কোলের কাছে একখানা বই। কী নিস্তব্ধতা! আবার দৃশ্যেরা বদলে গেল। পরীক্ষার ডিউটি দিচ্ছি। ক্লাস রুমের ভিতরে গাঢ় নৈশব্দ। শুধু ভেসে আসছে ক্লাসঘর লাগোয়া বাঁশবনের গায়ে বাতাসের আঘাতে তৈরি হওয়া ঝিরঝির একটানা শব্দ। সেই ঝিরঝির শব্দটার মধ্যে কেমন একটা ঘুম পাড়ানিয়া গানের মত ব্যাপার আছে। ঘুম পাড়ানিয়া গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি আবার। 

(২) 

বিডিও অফিসটি শহরের ভিতরেই। আমার ভাড়া বাড়ির থেকে বেশি দূরেও নয়। টোটোতে মিনিট দশ। পরেশদা আগেই এসে গিয়েছে। ছাতা মাথায় এক হাতে শাড়ির কুঁচি খানিক উপরে তুলে সাবধানে কাদা ছপছপে রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছনো গেল অফিসের মূল বাড়ির একটা অংশে। আমি আর পরেশদা এখন বেকুবের মত বসে আছি একতলার একটা বড় ঘরের ভিতরে। জায়গায় জায়গায় চেয়ার, টেবিল পাতা রয়েছে। পরেশদার হাতে একতাড়া কাগজ। ওতে স্টুডেন্টদের নামের লিস্ট। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে চলেছে। একটু আগে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় ফোন করেছিল ক্লাস নাইনের পিয়ালি। ওর গলায় আশঙ্কা। ওদের বাড়ির পুরুষেরা সকলেই নাকি কোন সকালে কাজে বেরিয়ে গেছে। বাবা, দাদা, কাকা কেউ নেই। বাড়ির লোক ছাড়া এলে পাওয়া যাবে তো জিনিসটা? 

কেউ নেই? সেকী! পাঁচ ছয়জন স্টুডেন্ট পিছু একজন গার্ডিয়ানও নেই? তাহলে কীভাবে হবে? চেঁচিয়ে কথাটা বলতে গিয়েই সম্বিৎ ফেরে আমার। আমাদের স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই তো চা বাগান বেল্টের বাসিন্দা। ওদের বাড়ির লোকেরা সকলেই বাগানে কাজ করে। দিনমজুরিও করে কেউ কেউ। একদিনের কাজ বাদ দেওয়া মানে তো প্রচুর লোকসান। 

ম্যাডাম, আমরা পাব তো সাইকেল? পিয়ালি আবার জিগ্যেস করে।  

হ্যাঁ, তোরা আয় তো আগে। দেখছি। কিন্তু কীভাবে আসবি বল তো এই বৃষ্টিতে? 

ফোনের ভিতরে ঘসঘস একটা শব্দ হতে থাকে তারপর। ওপাশের কথা কিচ্ছুটি বোঝা যায় না। তারপরই ফোনটা কট করে কেটে যায়। ওই অঞ্চলে এমনই রীতি। নেটওয়ার্ক আপ ডাউন করে খুব। তার উপরে আজ এই বাঁধভাঙা বৃষ্টি। উঠে গিয়ে দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিই। অন্য স্কুলের স্যার ম্যাডামরাও এসেছেন কয়েকজন তুমুল বর্ষণকে উপেক্ষা করে। কিছু কিছু ছাত্রীও এসেছে তাদের স্কুলের। নথিপত্র মিলিয়ে নিয়ে সাইকেল বিতরণের কাজ আরম্ভ হয়েছে। অফিসের দুজন মানুষ রয়েছেন। নতুন সাইকেল নিয়ে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে কিশোরীরা। মোবাইলে ছবিও তুলছেন কোনও কোনও গার্ডিয়ান। ছাত্রীদের মুখের হাসিটুকু উপভোগ করতে বেশ লাগছিল আমার।      

একটু লেবু চা খাবেন নাকি ম্যাডাম? আমাদের তো কেউ এখনও এল না। অপেক্ষা করা ছাড়া তো উপায় নেই। দেখি কজন আসতে পারে এই বৃষ্টিতে। চিন্তিত মুখে বলল পরেশদা। আমার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল ওর কথায়। 

মূল বাড়ির পাশেই টিনের চাল দেওয়া ঘুপচি ঘরে চলছে সাইকেল বানানোর কাজ। আধো অন্ধকারে ঘাড় হেঁট করে বসে দুজন মানুষ কাজ করছেন। সাইকেল বানানো, অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন পার্টসগুলো জুড়ে জুড়ে আস্ত সাইকেলটা দাঁড় করানো। যথেষ্ট পরিশ্রমের ব্যাপার। সময় কাটছিল না। নিজের অজান্তেই পায়ে পায়ে কখন যেন এগিয়ে যাই ছেলেদুটোর দিকে। জিগ্যেস করি, বাড়ি কোথায় ভাই আপনাদের? 

মাঝবয়সী ছেলেটি মুখ তুলে চাইল। জবাব দিল, দিনহাটায়। 

দিনহাটা! সে তো যথেষ্ট দূরে। তা এখন কোথায় আছেন?

এখানেই ঘর দিয়েছে কোম্পানি। খাওয়া দাওয়া হোম ডেলিভারি থেকে আসে।

কত মজুরি পান একটা সাইকেল বানিয়ে? 

মুখ নামিয়ে নিল ছেলেটি। তারপর ধীরে ধীরে বলল অনেক কথাই। প্রায় এক বছর পরিবার স্বজন ছেড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা পেটের দায়ে। সদ্য সদ্য রাজস্থান থেকে ফিরেছে। এখানকার কাজ সেরেই চলে যাবে শিলিগুড়ি। তারপর সোজা চেন্নাই। আমার কবে ফেরা হবে কে জানে? এখন কোম্পানির দেওয়া যে ঘরে আছে তার ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ছে। হোম ডেলিভারির খাওয়া দাওয়াও ভালো নয়। নিজেরা যে একটু ভাত ফুটিয়ে খাবে তার উপায় কী? হাতে সময় আছে ওসবের? একটা সাইকেল বানাতেই লেগে যায় আধঘণ্টারও বেশি। মজুরি মাত্র পঞ্চান্ন টাকা। কতদিন হয়ে গেল নিজের বোনটাকে দেখেনি ও।  

জানেন দিদিমণি? আমি কিন্তু গ্র্যাজুয়েট পাস। আর কোনও চাকরি না পেয়ে... মুখের কথা শেষ না করে ছেলেটি ফিকে হাসল।  

বাইরের ঝুম বৃষ্টিটা কি ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ল কোনওভাবে? ওর ভেজা চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আমি টের পেলাম আবছা অন্ধকারে মুছে যাচ্ছে আমার চোখের সামনের সবকিছু। পা দুটো যেন শীতে জমে যাচ্ছে আমার।  

এমন সময় শুনতে পেলাম বাইরে থেকে পরেশদা ডাকছে আমাকে, ওরা সবাই চলে এসেছে ম্যাডাম। আসুন। আসুন। 

ওই যে, আপনার স্কুলের স্টুডেন্টরা চলে এল বোধহয়। আমার বোনটাও ক্লাস নাইনে পড়ে। জানেন দিদিমণি? ওকে ফোনে সবসময় বলি, ভাল করে পড়াশোনা করবি। আমি তো আছি। তোর কোনও অভাব হতে দেব না। বইখাতা যখন যা লাগে বলবি, কিনে দেব। অনেক বড় হতে হবে তোকে। অনেক বড়... হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে আবারও কাজে মন দেয় ছেলেটি। 

আমি মাথা নিচু করে বাইরে বেরিয়ে আসি। আমার দু চোখ ছাপিয়ে গাল বেয়ে এখন বৃষ্টিধারা। বাইরে এসে মুখটা ঈষৎ উপরের দিকে তুলি। ঝিরঝিরে বৃষ্টি এসে মিশে যায় নোনা জলে। মিহি মিহি কুয়াশার ফিনফিনে আস্তরণ ভেদ করে এগিয়ে আসে উজ্জ্বল একঝাঁক প্রজাপতির মত আমার ছাত্রীরা। সনেকা, রজনী, কারমিলা, আরও সবাই। তিনটে টোটো ভাড়া করে এসেছে ওরা। বাকিরাও আসছে পিছু পিছু। পরেশদা হাসিমুখে লিস্টে দাগ দিচ্ছে। ঝকঝকে সাইকেলগুলো এখন ওদের হাতে প্রাণ পেয়ে নড়ছে চড়ছে। ঘণ্টা বাজছে টুং টুং...  

কই? লেবু চা খাওয়ালেন না তো? হেসে উঠে বললাম পরেশদাকে। অঞ্জলি এগিয়ে এসে হাত আঁকড়ে ধরে আমার। বলে, দিদিমণি তোমার সঙ্গে একটা ছবি উঠাব না আমরা?  

একজন গার্ডিয়ান এগিয়ে আসেন ফোনের ক্যামেরা অন করে। প্রিয় মুখগুলোকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিই। হালকা লাগে খুব। এক ঝলক তাকিয়ে দেখি, আকাশের কোণে মেঘের কোণা ছিঁড়ে কেমন একটা আলো আলো ভাব ফুটেছে। কী মায়াবী সেই আলো। 

আচমকাই মনে পড়ে যায়, আর কদিন বাদেই যে পুজো! ওই স্নিগ্ধ জ্যোতির্ময় পথ ধরেই তাহলে মা আসছেন!


চিত্র - শ্রীহরি

Comments

Post a Comment